ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা কমছে, দ্রুত গ্রেপ্তারও হচ্ছে না: আইনমন্ত্রী
সরকারের পদক্ষেপের কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা কমে যাচ্ছে জানিয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, মামলা করলে দ্রুত গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে না।
মঙ্গলবার (৩১ মে) সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে গণমাধ্যমকর্মী আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও ডাটা সুরক্ষা আইন নিয়ে আয়োজিত ‘বিএসআরএফ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) এ সংলাপের আয়োজন করে।
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের যেসব জায়গায় সমস্যা আছে, সেখানে সংশোধনের কথা জানিয়েছিল সরকার, সেটির অগ্রগতি কতদূর- জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, '২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ জাতিসংঘের রেসিডেন্স কো-অর্ডিনেটরের মাধ্যমে জেনেভায় জাতিসংঘের হাই-কমিশন ফর হিউম্যান রাইটসের অফিসের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমরা দুই পক্ষই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের দিক থেকে একটি কমিটি করে দেওয়া হবে, তাদের দিক থেকে একটা কমিটি থাকবে। সারা বিশ্বের যে বেস্ট প্র্যাকটিস সেগুলো দেখব দেখার পর, কোনটা বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রযোজ্য হয়, সেটা আমরা গ্রহণ করব। আমরা লেজিসলেটিভ সচিবের নেতৃত্বে একটা কমিটি করে দিয়েছি।'
তিনি বলেন, 'তারা একটা বৈঠকও করেছেন। গত পরশুদিন আমার সঙ্গে যে আলাপ হয়েছে, সেখানে শুনেছি দ্রুতই আরেকটি মিটিং হবে।'
'এই যে মিটিং চলছে, সেখানে কিন্তু এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এরপরও আপনারা যে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়ে অপব্যবহারের কথা বলছেন সেটা কী চলতে থাকবে? সেজন্য আমরা অপর একটি ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের কোন মামলা সরাসরি নেওয়া হয় না। এখন মামলা একটা নির্দিষ্ট সেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।'
আইনমন্ত্রী বলেন, 'আমার মনে হয় আপনারা ইতিমধ্যে দেখেছেন। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মামলাও কমে যাচ্ছে। আবার মামলা করলে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।'
তিনি বলেন, 'আমরা যে অবস্থানটা নিয়েছি, এটা গ্রাউন্ড লেভেল পর্যন্ত যাচ্ছে, তাতে মিস ইউজ এবং অ্যাবিউজ- এটা বন্ধ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।'
'ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করা হয়েছে সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। আমরা সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার এমন কোন আইন করবে না, যে আইন স্বাধীন সাংবাদিকতা কিংবা স্বাধীন সংবাদ পরিবেশনের দায়িত্বকে খর্ব করে।'
আনিসুল হক বলেন, 'আমরা জনগণকে সেবা করতে এসেছি, এর মাধ্যমে যদি কোনো ত্রুটি বিচ্যুতি হয়, সেটা যদি জনগণ বলতে চায় আমরা সেটা শুনবো প্রতিকারের প্রয়োজন হলে আমরা সেটা করব।'
তিনি বলেন, 'ইউনূস (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) সাহেবের বিরুদ্ধে শ্রমিকরা মামলা করেছিলেন। সেই মামলা প্রত্যাহার হয়েছে। যে ৪৩৭ কোটি টাকা নিয়ে বিরোধ ছিল সেটা ইউনূস সাহেব পরিশোধে রাজি হয়েছেন, সেই প্রেক্ষিতেই মামলা প্রত্যাহার হয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মামলা প্রত্যাহার নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়াতে কি গেছে- কার কত ক্ষমতা?' বলেই হেসে ফেলেন মন্ত্রী।
ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্ট
ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্টের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, 'মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আমার সঙ্গে দেখা করে তাদের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো বলেছেন। আমি অবহিত হয়েছি। আমি মাননীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আগামীকাল ১ জুন আমি তার সঙ্গে বসবো। তিনিও বলেছেন আমরা এটা (ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্ট) পর্যালোচনা করব।'
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, 'কথা উঠেছে এই (ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্ট) আইনটির বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা হয়নি। আমি নিশ্চিত করবো স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে যেন আলোচনা করা হয়।'
'সারা পৃথিবীতে ডাটা প্রটেকশন আইন নিয়ে কি কি আছে এটা পর্যালোচনা করার জন্য আমি সব আইন আনাচ্ছি। যারা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তাদের সঙ্গে আমি আলাপ আলোচনা করছি।'
গণমাধ্যমকর্মী আইন
আনিসুল হক বলেন, গণমাধ্যমকর্মী আইন সাংবাদিকদের জন্য দরকার রয়েছে। তারপরও এই আইনের বিষয়ে আপনাদের বক্তব্যটা যাতে দিতে পারেন সেটার জন্য আমি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে ইতিমধ্যে কথা বলেছি। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকেও আমি বলে দেবো যাতে তারা সাংবাদিকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
সাংবাদিকদের অনুরোধ জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, 'আপনারা আইনটি পরিস্কার করার কথা বলেন, বাতিল করার কথা বইলেন না। আইনটিতে আপনাদের সুবিধা হবে।'
'আপনারা তিনটি আইনের কথা বলেছেন। এর সঙ্গে রয়েছে ওটিটি এবং বিটিআরসি রেগুলেশন, আমি সব গুলোর ব্যাপারে আলোচনার মধ্যে আছি।'
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসআরএফের সভাপতি তপন বিশ্বাস। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএসআরএফের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।