চালের বাজার অস্থিতিশীল, আসতে পারে কঠোর সিদ্ধান্ত
ঘুরে ফিরে চালের অবৈধ মজুতের কথাই উঠে এসেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক সভায়। মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বিকল্প চিন্তাভাবনাও করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে সোমবার (৩০ মে) মন্ত্রিসভা বৈঠকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হবে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে ধান কিনে মজুত করার অসুস্থ প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সবাই প্রতিযোগিতা করে ধান কিনছে, ভাবছে ধান কিনলেই লাভ। এ অসুস্থ প্রতিযোগিতা ভালো পরিণতি আনবে না বলে তিনি ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ ও বাজার মনিটরিং সংক্রান্ত অনলাইন মতবিনিময় সভা’ রবিবার (২৯ মে) অনুষ্ঠিত হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মজিবর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি তার দপ্তর থেকে ভার্চ্যুয়ালি সভায় যুক্ত হন।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, অধিকাংশ মিল মালিক বাজার থেকে ধান কিনলেও তারা উৎপাদনে যাচ্ছেন না। যার ফলে বাজারে নতুন চাল এখনও আসছে না। এখন বাজারে যে চাল পাওয়া যাচ্ছে তা গত বছরের পুরাতন চাল। তাহলে নতুন ধান যাচ্ছে কোথায়? মিল মালিকদের প্রতি এ প্রশ্ন রাখেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, এ অবস্থা চলতে দেওয়া হবে না। কে কত পরিমান ধান কিনছেন এবং কে কত পরিমান চাল ক্র্যাসিং করে বাজারে ছাড়ছেন তা খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের রিপোর্ট আকারে প্রেরণ করতে হবে।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন কর্পোরেট হাউস ধান চালের ব্যবসা শুরু করেছে। তারা বাজার থেকে ধান কিনে মজুত করছেন এবং প্যাকেটজাত করছেন। প্যাকেটজাত চাল বেশি দামে বাজারে বিক্রিও হচ্ছে। এসময় ধান চালের ব্যবসায় সম্পৃক্ত কর্পোরেট হাউসগুলোর সঙ্গে দ্রুততম সময়ে বৈঠক করতে খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
এসময় মন্ত্রী বলেন, ভারত থেকে গম দেওয়া বন্ধ হচ্ছে গুজব ছড়িয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। অথচ শুধু ভারত নয় বিশ্বের অনেক দেশ বাংলাদেশকে গম দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে চিঠি পাঠিয়েছে।
তিনি বলেন, বোরো সংগ্রহ সফল করতে হবে পাশাপাশি বাজার মনিটরিং চালিয়ে যেতে হবে। কেউ যাতে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কে কোন দল করে সেটি বিবেচ্য নয়, কেউ চালের বাজার অস্থিতিশীলের চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলে ঝড় ও বৃষ্টিতে ধানের ক্ষতি হয়েছে। কোন জেলায় কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক হিসাব জানা জরুরি। উৎপাদন হিসাব ও ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা না গেলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে না।
এজন্য তিনি সঠিক তথ্য প্রেরণের জন্য কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
বৈঠকে যুক্ত হয়ে নওগাঁ ধান ও চাউল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা চন্দন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্য সংকট তৈরি হবে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। যার কারণে অনেকেই ভাবছেন আমাদের দেশে চালের ক্রাইসিস তৈরি হবে। সেকারণে অনেকেই অবৈধ মজুত করছেন। এধরনের অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান এই ব্যবসায়ী।
সভায় খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেনসহ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলা প্রশাসকরা, কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালকরা, খাদ্য বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও মিল মালিকরা ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
এনএইচবি/আরএ/
