আমির হামজার স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিল
আমির হামজাকে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া নিয়ে ঢাকাপ্রকাশ-এ প্রকাশিত দুইটি প্রতিবেদন। দুইটি বিষয়েই প্রথম সংবাদ প্রকাশ করে ঢাকাপ্রকাশ।
সমালোচনার মুখে মরহুম মো. আমির হামজাকে দেওয়া স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিল করা হয়েছে। সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত আমির হামজার নাম বাদ দিয়ে শুক্রবার (১৮ মার্চ) সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
ছুটির দিনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা সংশোধিত প্রজ্ঞাপনে সাহিত্যে পুরস্কারপ্রাপ্ত আমির হামজার নাম বাদ দিয়ে ৯ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) সকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ১০ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২২’ প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে মরহুম মো. আমির হামজাকে সাহিত্যক্ষেত্রে পুরস্কার দেওয়া হয়।
পুরস্কার ঘোষণার পর আমির হামজার পরিচয়, যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। দেশের কবি-সাহিত্যিকরা এই ব্যক্তির পুরস্কারপ্রাপ্তিতে বিস্ময় প্রকাশ করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমালোচনার ঝড় ওঠে।
জানা যায়, আমির হামজার বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর। জন্ম ৩ মে ১৯৩১। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি। তিনি মুক্তিযুদ্ধে শ্রীপুর বাহিনীর যোদ্ধা ছিলেন। ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ সালে প্রয়াত হন। তাঁর সাহিত্যিক পরিচয় হিসেবে কবি, গীতিকার ও সুরকার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্য কর্ম হিসেবে তিনটি বইয়ের নাম দেওয়া হয়েছে। এ গুলো হলো–‘বাঘের থাবা’ (২০১৮), ‘পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি’ (২০২০) ও ‘একুশের পাঁচালি’(২০২১)। ‘বাঘের থাবা’ বইটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিবেদিত কাব্যগ্রন্থ। আর ‘পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি’ বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত ৫২টি গানের সংকলন। এই বইয়ের ফ্ল্যাপ লিখেছেন জনপ্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণ।
পুরস্কারের জন্য এই নামের প্রস্তাব পাঠান আমির হামজার পুত্র মো. আসাদুজ্জামান। তিনি খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী। পুরস্কার কমিটিতের আমির হামজার প্রস্তাবের পক্ষে সুপারিশ করেন ‘জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র সদস্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
এ নিয়ে ঢাকাপ্রকাশ ১৫ মার্চ সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া আমির হামজা কে? শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
জানা যায়, আমির হামজা তাৎক্ষণিকভাবে গান বানানো ও গাওয়ার জন্য ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক গান করেছেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকাকালে তাকে নিয়েও গান গাইতেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সুদৃষ্টি আকর্ষণ ও বিশেষ সুবিধা আদায়ের জন্য আমির হামজার পুত্র মো. আসাদুজ্জামান পিতার লেখা বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা ও গানের সংকলন প্রকাশ করেন।
এরপর বেরিয়ে আসতে থাকে আরও নানা তথ্য।
এর মধ্যে জানা যায়, আমির হামজা ১৯৭৮ সালে বরিশাহাট গ্রামে শাহাদত ফকির নামে একজন কৃষক এবং শিল্পী নামে আড়াই বছরের একটি শিশু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। ২০০৭ সালেও স্থানীয় একটি গ্রাম্য মারামারির ঘটনায় আসামি ছিলেন। একটি হত্যা মামলায় আট বছর সাজা ভোগের পর ১৯৯১ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের মন্ত্রী মজিদুল হকের সহায়তায় জেল থেকে ছাড়া পান।
এ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে ঢাকা প্রকাশ। এ পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ মার্চ রাতে ঢাকাপ্রকাশ মন্ত্রী বললেন তদন্ত হচ্ছে : বাতিল হচ্ছে আমির হামজার পুরস্কার! শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
আমির হামজার আগে ২০২০ সালেও সাহিত্যে এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদ নামক একজনকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার পর বিতর্কের মুখে সেটিও বাতিল করা হয়েছিল।
স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২২ পেলেন যারা :
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী, শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা (বীর বিক্রম), আব্দুল জলিল, সিরাজ উদ্দীন আহমেদ, প্রয়াত মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন বিশ্বাস এবং প্রয়াত সিরাজুল হক।
চিকিৎসাবিদ্যায় পুরস্কার পাচ্ছেন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ও অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল ইসলাম।
স্থাপত্যে প্রয়াত স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন।
গবেষণা ও প্রশিক্ষণে পুরস্কার পাচ্ছে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিডাব্লিউএমআরআই)।
পুরস্কারজয়ী প্রত্যেকে পাবেন ১৮ ক্যারেট মানের পঞ্চাশ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, পাঁচ লাখ টাকার চেক ও একটি সম্মাননাপত্র। জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতিবছর স্বাধীনতা পুরস্কার দিচ্ছে সরকার। প্রতি বছর ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার প্রদান করে থাকেন।
এনএইচবি/এপি/