মন্ত্রী বললেন তদন্ত হচ্ছে
বাতিল হচ্ছে আমির হামজার পুরস্কার!
সাহিত্য ক্যাটাগরিতে স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া মো. আমির হামজার পুরস্কার বাতিল হতে পারে। এমন আভাস পাওয়া গেছে বিভিন্ন সূত্রে। ইতোমধ্যে তার সাহিত্য বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে এবং তার লেখা বইগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এজন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এবং জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক আ ক ম মোজাম্মেল হক বুধবার (১৬ মার্চ) রাতে ঢাকাপ্রকাশ-কে জানিয়েছেন, আমরা অভিযোগ শুনেছি। পর্যালোচনা করছি। বিষয়টি যেহেতু আমার একক নয়, সে কারণে এখনই কিছু বলতে পারছিনা। আমরা কমিটির সদস্যরা বসব।
তিনি বলেন, আগামী তিন দিন সরকারি ছুটি। ছুটির পর আমরা বসব, তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, আমির হামজার সাহিত্যকর্ম ও বই পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
২০২২ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) ঘোষণা করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা সার্কুলারে জানানো হয়, এই বছর বিভিন্ন পর্যায়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য সরকার দশজন ব্যক্তি এবং একটি প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই দশজনের মধ্যে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ অবদান রাখার জন্য ছয় জনকে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য দুইজনকে, সাহিত্যে একজনকে ও স্থাপত্যে একজনকে এবং প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।
এ বছর সাহিত্যে যিনি পুরস্কার পেয়েছেন তার নাম মো. আমির হামজা। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মাগুরার শ্রীপুরে গড়ে ওঠা শ্রীপুর বাহিনীর একজন সদস্য। তার উল্লেখযোগ্য তিনটি বই হচ্ছে 'বাঘের থাবা', 'পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব' এবং 'একুশের পাঁচালি'। তার এই তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে যথাক্রমে ২০১৮, ২০২০ এবং ২০২১ সালে।
জানা গেছে, আমির হামজার ছেলে খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মো. আসাদুজ্জামান বাবার অপকর্মকে আড়াল করতে তার বাবার পালাগান বা গীতিকাব্য নিয়ে তিন বছরে দ্রুততার সাথে তিনটি বই প্রকাশ করেন। এসব বইয়ের সূত্র ধরে তিনি তার বাবাকে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদানের জন্য আবেদন জানান। তার সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ জাতীয় পুরস্কার কমিটির কাছে আমির হামজার নাম সুপারিশ করেন।
উল্লেখ্য যে, বাণিজ্যসচিব পুরস্কার কমিটির একজন সদস্য।
এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যে আমির হামজার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রয়েছে। বরিশাহাট গ্রামে ১৯৭৮ সালে শাহাদত ফকির নামে একজন কৃষক এবং শিল্পী নামে আড়াই বছরের একটি শিশু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। এ ছাড়া ২০০৭ সালেও স্থানীয় একটি গ্রাম্য মারামারির ঘটনায় তিনি আসামি ছিলেন বলে জানা গেছে।
হত্যা মামলায় আট বছর সাজা ভোগের পর ১৯৯১ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের মন্ত্রী মজিদুল হকের সহায়তায় তিনি জেল থেকে ছাড়া পান বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করার পর সাহিত্যে আমির হামজার পুরস্কার প্রাপ্তি নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা দেখা দেয়। বিশেষ করে সাহিত্যাঙ্গনের লোকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমির হামজার পুরস্কার নিয়ে তীর্যক মন্তব্য করেন।
মঙ্গলবার এ নিয়ে ঢাকাপ্রকাশ-এ প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক সহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট লেখক ও সাহিত্যিক তাদের মতামত তুলে ধরেন এবং বলেন যে আমির হামজা নামে তারা কোন সাহিত্যিককে চিনেন না। এই নামে কোন সাহিত্যিকের বই তাদের পড়া হয়নি। তারা প্রায় প্রত্যেকেই আমির হামজার বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এরপর বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
বিষয়টি সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বুধবার (১৬ মার্চ) রাতে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, 'আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তদন্ত করা হচ্ছে। আমির হামজার লেখা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।'
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়েছিল এস এম রইজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে। ওই বারও পুরস্কার প্রদানকে ঘিরে তুমুল বিতর্ক তৈরি হলে সরকার রইস উদ্দিন এর পুরস্কার বাতিল করে।
/এএস