সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া আমির হামজা কে?
১০ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২২’ দিচ্ছে সরকার। আজ মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) সকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সাহিত্যক্ষেত্রে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে মরহুম মো. আমির হামজাকে। এই আমির হামজার পরিচয় কী, কী তার সাহিত্যকর্ম? এ নিয়ে কৌতুহল দেখা দিয়েছে।
সাধারণত জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতি বছর স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে। এটিই রাষ্ট্রে সর্বোচ্চ পদক।
সাহিত্যিক হিসেবে মো. আমির হামজা নামের কারো সন্ধান পাওয়া যায়নি। গুগলে সার্চ দিয়েও এই নামের কোনো সাহিত্যিকের খোঁজ পাওয়া যায়নি। দেশের কবি-সাহিত্যিকদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়েও কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
আমির হামজা সম্পর্কে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার কাছে জানতে চাইলে তিনি এই নামে কোনো সাহিত্যিকের নাম শুনেননি বলে ঢাকাপ্রকাশকে জানান। এই নামের ব্যক্তিকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে জানানো হলে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এরই মধ্যে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। অনেকেই এ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন।
নাট্যজন অলক বসু লিখেছেন, ‘সাহিত্যে এবার স্বাধীনতা পুরস্কার পেলেন মরহুম মো. আমির হামজা। কে এই আমির হামজা? নামই শুনিনি। কেউ কি আমাকে তার সম্পর্কে বলবেন?’
লিটলম্যাগ ‘ক্ষ্যাপা’র সম্পাদক পাভেল রহমান লিখেছেন, ‘সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পেলেন মরহুম মো. আমির হামজা। উনার বই পড়তে চাই। কেউ উনাকে চিনলে বইয়ের নাম উল্লেখ করেন। উনাকে ঠিক চিনতে পারছি না। শুনেছি, সেলিম আল দীনের জন্য এবার আবেদন জমা পড়েছিল। সেলিম আল দীনকে স্বাধীনতা পুরস্কার না দিয়ে আমির হামজাকে দেওয়া হয়েছে। নিশ্চয় তিনি অনেক বড় সাহিত্যিক। নাকি সয়াবিন তেলের সিণ্ডিকেটই এবার স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকা করেছে? তাই কি সয়াবিন তেলের প্রভাব পড়েছে স্বাধীনতা পুরস্কারে।’
কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান লিখেছেন, ‘এর আগে সাহিত্যে রইজ উদ্দিনকে স্বাধীনতা পদক দিয়েই দিচ্ছিল। প্রতিবাদের মুখে বাতিল করতে বাধ্য হয়। এবার একই ক্যাটাগরিতে দেওয়া হচ্ছে মরহুম মো. আমির হামজাকে। কে এই আমির হামজা? সাহিত্যে কী তার অবদান? একটি রাষ্ট্রীয় পুরস্কার নিয়ে আমলারা এসব ইয়ার্কি কবে বন্ধ করবে? এই মূর্খ আমলাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।’
লেখক-সাংবাদিক মোস্তাফা হোসাইন লিখেছেন, ‘আমির হামজা নামের একজন সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২২ পেলেন। তাঁর কোনো লেখা পড়ার সুযোগ পাইনি। নাম শুনেছেন এই লেখকের?’
এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মো. আমির হামজাকে সাহিত্য পুরস্কার দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
আমির হামজার পরিচয়ে তার ঠিকানা মাগুরার শ্রীপুর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্য কর্ম হিসেবে তিনটি বইয়ের নাম দেওয়া হয়েছে। এ গুলো হলো–‘বাঘের থাবা’ (২০১৮), ‘পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি’ (২০২০) ও ‘একুশের পাঁচালি’(২০২১)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘বাঘের থাবা’ বইটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিবেদিত কাব্যগ্রন্থ। আর ‘পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি’ বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত ৫২টি গানের সংকলন। এটি প্রকাশ করেছে অন্যপ্রকাশ। এই বইয়ের ফ্ল্যাপ লিখেছেন জনপ্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণ।
ফ্ল্যাপে দেওয়া তথ্য অনুসারে আমির হামজার জন্ম ৩ মে ১৯৩১। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি। তিনি মুক্তিযুদ্ধে শ্রীপুর বাহিনীর যোদ্ধা ছিলেন। ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ সালে তিনি প্রয়াত হন। তাঁর সাহিত্যিক পরিচয় হিসেবে কবি, গীতিকার ও সুরকার বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, ‘কবি আমির হামজার বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা গানে দেখা যায়, তিনি প্রকৃতির সান্নিধ্যে শেখ মুজিবকে খুঁজছেন। আবার নিজের অস্তিত্বেও তিনি বঙ্গবন্ধুকে অনুভব করেছেন। আমি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবি আমির হামজার গানগুলোর বহুল প্রচার কামনা করি।’
এ বছর পুরস্কার পাওয়া অন্যরা হচ্ছেন–স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী, শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা (বীর বিক্রম), আব্দুল জলিল, সিরাজ উদ্দীন আহমেদ, প্রয়াত মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন বিশ্বাস এবং প্রয়াত সিরাজুল হক।
চিকিৎসাবিদ্যায় পুরস্কার পাচ্ছেন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ও অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল ইসলাম।
স্থাপত্যে প্রয়াত স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন।
গবেষণা ও প্রশিক্ষণে পুরস্কার পাচ্ছে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিডাব্লিউএমআরআই)।
পুরস্কারজয়ী প্রত্যেকে পাবেন ১৮ ক্যারেট মানের পঞ্চাশ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, পাঁচ লাখ টাকার চেক ও একটি সম্মাননাপত্র।
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতিবছর স্বাধীনতা পুরস্কার দিচ্ছে সরকার।
এসএ/