রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান

সবাই ওখানে জমায়েত হলে আশপাশের বাড়িগুলোর সামনের বাগানের মরচেধরা বেড়ার ওপরে ব্যাট বাড়ি দিতে দিতে সবাই ছুটে চলত। তাদের চলার শব্দ লোকজনকে জাগিয়ে তুলত আর লতা গাছপালার নিচে শুয়ে থাকা বিড়ালগুলো ঘুম থেকে জেগে উঠে লাফিয়ে পড়ত। রাস্তা পার হয়ে ছুটতেই থাকত তারা। একজন আরেকজনকে ধরার চেষ্টা করত; ততক্ষণে তাদের সবার শরীর ঘেমে উঠত। কয়েক রাস্তা পরে তাদের স্কুল; সেখান থেকে খুব কাছেই একটা সবুজ মাঠ ছিল; সেই মাঠের দিকে ছিল তাদের যাত্রা। কিছুদূর এগিয়ে সামনে একটা অকেজো পানির ফোয়ারা ছিল; সেখানে গিয়ে সবাই থেমে পড়ত।

বড় গোলাকার জায়গাটাতে ফোয়ারার বেসিন বৃষ্টির পানিতে ভরে থাকত। সেই পানির ভেতর পড়ে থাকত পুরনো শ্যাওলা, তরমুজের খোসা, কমলালেবুর খোসা এবং সব ধরনের আবর্জনা। সূর্যের আলো সেই পানি শুষে না নেওওয়া পর্যন্ত কিংবা সেচে ফেলে দেওয়ার জন্য কর্পোরেশনের লোকদের টনক না নড়া পর্যন্ত পানি জমাটবদ্ধ হয়ে থাকত। বেসিনের তলায় অনেক দিন ধরে জমে থাকত নর্দমার ময়লার মতো পদার্থ। সেই পদার্থও ওভাবেই পড়ে থাকত যতদিন না সূর্যের আলো সেটাকে শুকিয়ে ফেলার গরজ না দেখানো পর্যন্ত কিংবা ঝাড়ু–দারের শলাকা শুকিয়ে যাওয়া ময়লাকে ধূলি আকারে চার পাশের ডুমুর গাছের চকচকে পাতায় পৌঁছে না দেওয়া পর্যন্ত। গরমের দিনে যেভাবেই হোক বেসিনটা শুকনো থাকত। চকচকে কালো পাথরের কিনার হাজার হাজার হাত আর ট্রাউজারের ঘষা খাওয়ার ফলে পিছলে হয়ে যেত। জ্যাক, পিয়েরে এবং তাদের বন্ধুরা নাইটদের মতো যুদ্ধ যুদ্ধ খেলত আর কিনারার ওপর দিয়ে ঘুরতে থাকত। ঘুরতে ঘুরতে এক সময় অবশ্যই বেসিনটার অগভীর তলায় পড়ে যেত। তখন নাকে আসত সূর্যালোকের গন্ধ আর মুতের ঝাঁঝ।

খেলার এরকম অবস্থায় তাদের পায়ে এবং স্যান্ডেলে ধূলির এক প্রস্থ সাদা আস্তরণ পড়ে যেত। কড়া তাপের মধ্যে তারা দৌড়তে থাকতো সবুজ মাঠের দিকে। ব্যারেল তৈরির কারখানার পেছনে ওই মাঠটা ছিল একটা ফাঁকা জায়গা। সেখানে মরচেধরা আংটা আর ব্যারেলের পচনধরা তলদেশের ভেতর দিয়ে ফ্যাকাশে ঘাস গজাত। কোথাও কোথাও সাদা রঙের গুচ্ছ গুচ্ছ ঘাসের চাপড়াও দেখা যেত। হৈচৈ করতে করতে ঘাসের গুচ্ছগুলোর মধ্যে তারা গোল দাগ তৈরি করত। তাদের একজন ব্যাট হাতে ওই গোল দাগের মধ্যে দাঁড়াত। বাকিরা সিগার আকারের কাঠের টুকরোটাকে বৃত্তের মধ্যে ছুড়ে মারত। কাঠের টুকরোটাকে কেউ দাগের বৃত্তের মধ্যে ফেলে দিতে পারলে ব্যাট হাতে সে দাঁড়াত মাঝখানে। তখন তার পালা হতো বৃত্তটা আগলানো। খেলোয়ারদের মধ্যে যার দক্ষতা বেশি সে কাঠের টুকরোটাকে বলিষ্ঠ হাতে দূরে পাঠিয়ে দিত।

সে ক্ষেত্রে টুকরোটা যেখানে পড়েছে অন্যরা সেখানে গিয়ে ওটা ব্যাট দিয়ে শূন্যে পাঠিয়ে দিত। কেউ হয়তো ব্যাট মারতে ব্যর্থ হতো কিংবা অন্য কেউ শূন্যের ওপর থেকেই টুকরোটা ধরে ফেলত। তখন বৃত্ত রক্ষক তাড়াতাড়ি ফিরে এসে তার বৃত্তে দাঁড়াত যাতে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়রা বৃত্তের মধ্যে টুকরোটা ছুড়ে মারতে না পারে। এটা ছিল আসলে গরিবের টেনিস খেলা; তবে টেনিস খেলার চেয়ে তাদের নিয়ম কানুন ছিল আরও জটিল। এই খেলায় তাদের পুরো বিকেলটাই শেষ হয়ে যেত। সবচেয়ে ভালো খেলত পিয়েরে। জ্যাকের চেয়ে হালকা পাতলা এবং আকৃতিতে ছোট পিয়েরে ছিল খুবই পলকা, মাথায় সোনালি আর তামাটে চুলের সমান মিশ্রণ, চোখের ভ্রু পর্যন্ত নেমে আসত চুল। সেই চুলের নিচে তার চোখের চাহনি ছিল সোজাসাপটা এবং নাজুক, কিছুটা যেন বেদনার্ত আর বিস্মিত; চালচলনে আনাড়ি মনে হলেও কাজের ক্ষেত্রে ছিল নিশ্চিত এবং নির্ভুল। অন্যদিকে জ্যাক অসম্ভব রকমের প্রতিরোধ তৈরি করতে পারলেও ব্যাকহ্যান্ড খেলায় লক্ষ্য ঠিক রাখতে পারত না। প্রতিরোধের দক্ষতা থাকার কারণে তার বন্ধুরা তার খেলার প্রশংসা করত এবং জ্যাক মনে করত, সে-ই সবার চেয়ে ভালো খেলে। এতে তার মধ্যে অহংকারের একটা ভাবও চলে আসত। আসলে পিয়েরের কাছে সে সব সময়ই হেরে যেত। তবে পিয়েরে এ বিষয়ে কিছুই বলত না। অবশ্য খেলার পরে সে অহংকারের ভাব ছেড়ে সোজা হয়ে বন্ধুদের প্রশংসায় মনে মনে হাসত।

যখন আবহাওয়া কিংবা তাদের নিজেদের মনের অবস্থা রাস্তাঘাট আর ময়লা আবর্জনাময় জায়গায় দৌড়াদৌড়ির ব্যাপারে সায় দিত না তখন প্রথমত সবাই জমায়েত হতো জ্যাকদের বাড়ির হল রুমে। সেখান থেকে পেছনের দরজা দিয়ে একটা উঠোনের মতো জায়গায় নেমে যেত। জায়গাটা বাড়ি ঘরের দ্বারা তিন দিক থেকে বন্ধ। খোলা পাশটাতে ছিল একটা বিরাট কমলালেবু গাছ। গাছটার প্রশস্ত ডাল পালা ছড়িয়ে ছিল পাশের একটা বাগানের দেয়ালের ওপর পর্যন্ত। গাছটাতে যখন ফুল ফুটত হতদরিদ্র বাড়িগুলো সুবাসে ভেসে যেত। সুগন্ধটা ভাসতে ভাসতে তাদের হল রুম পর্যন্ত এবং ঊঠোনের পাথুরে সিঁড়ি পর্যন্ত চলে আসত। উঠোনের এক দিকে পুরোটা এবং অন্য দিকের অর্ধেকটা পাশ জুড়ে ছিল একটা ইংরেজি এল আকৃতির ভবন। সেখানে থাকত এক স্প্যানিস নাপিতের পরিবার। লোকটার দোকান ছিল রাস্তার পাশে। ওই ভবনের আরেক অংশে থাকত এক আরব পরিবার। সে পরিবারের গৃহিনী কোনো কোনো সন্ধ্যায় উঠোনে কফি তৈরি করত। তৃতীয় দিকের বাসিন্দারা কাঠ আর তারের বেড়া দিয়ে তৈরি উঁচু ভাঙাচোরা খাঁচায় মুরগি পুষত।

চতুর্থ দিকের ভবনের ভূগর্ভস্থ ঘরের কালো গর্ত সিঁড়ির দুপাশে হা করে থাকত। ওই গুহার মধ্য থেকে বের হওয়ার কোনো পথ ছিল না; আলোর কোনো ব্যবস্থাও ছিল না; মাটি কেটে কোনো রকম বেড়া না দিয়েই তৈরি। সব সময় আর্দ্রতার ঘাম বের হতো সেখান থেকে। সবুজ ছাতলা ঢাকা গর্তের কাছে পৌঁছতে চার কদম ফেললেই হতো; সেখানকার বাসিন্দারা যখন তখন অতিরিক্ত জিনিসপত্র স্তুপ করে রাখত; তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়; পুরনো বস্তা পচত ওখানে, সিন্দুকের ভাঙা টুকরো, ফুটো ওয়াশবেসিন, আর যেসব জিনিস ভাগাড়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় এমনকি যেগুলো হতদরিদ্র মানুষদেরও কোনো কাজে আসে না তেমন জিনিসপত্র। জ্যাক এবং তার খেলার সঙ্গীরা ওখানেই জড়ো হতো। স্পেনীয় নাপিতের দুই ছেলে জাঁ এবং যোসেফ ওখানে খেলতে অভ্যস্ত ছিল। জায়গাটা তাদের জীর্ণ বাড়ির দোর গোড়ায় ছিল বলে এটা ছিল তাদের নিজস্ব এলাকা। নধর চেহারার যোসেফ ছিল হাসিখুশি স্বভাবের এবং তার যা কিছু ছিল সব অন্যদের বিলিয়ে দিতে কোনো কার্পণ্য ছিল না তার।

অন্যদিকে খাটো এবং পলকা জাঁ বাইরে ছোটখাটো পেরেক কিংবা স্ক্রু থেকে শুরু করে যা কিছু পেত কুড়িয়ে সংগ্রহ করত। খুবানির বিচি এবং মার্বেলের ব্যাপারে জাঁ ছিল অতিশয় কৃপণ। ছোটদের অন্যতম প্রিয় খেলায় এগুলোর দরকার হতো। এই ভ্রাতৃজুটির চেয়ে বিপরীত স্বভাবের আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। পিয়েরে, জ্যাক এবং ম্যাক্সের মতো সঙ্গীদের নিয়ে তারা ওই আর্দ্র এবং দুর্গন্ধময় গর্ত-ঘরের মধ্যে ঢুকত। সাদা তেলাপোকাকে তারা বলত গিনিপিগ। পচনধরা ছেঁড়া বস্তা থেকে সাদা তেলাপোকা তাড়িয়ে মরচে ধরা খাড়া লোহার খণ্ডের ওপর বিছিয়ে দিয়ে তারা নিজেদের একটা জায়গা তৈরি করত। অবশ্য তখন কারোই এমন কোনো ঘর কিংবা বিছানা ছিল না যেটাকে তারা নিজের বলতে পারত। কুৎসিত ওই তাঁবুর নিচে গিয়ে তারা আগুন জ্বালাত। কিন্তু ওখানকার স্যাঁতসেতে বাতাসে আগুন নিভে যেত এবং প্রচণ্ড ধোঁয়া তৈরি হতো। ফলে তাদের বাধ্য হয়ে ওই গুহা থেকে বের হয়ে আসতে হতো। উঠোন থেকে মাটি খুঁড়ে নিয়ে গর্তের মুখ বন্ধ করে দিত। শেষে তারা ছোট জাঁর কাছ থেকে যুক্তিতর্কের অনেক কসরতের পর পুদিনার স্বাদ জড়ানো মিঠাই, শুকনো লবণাক্ত বাদাম, মটরদানা, লবণ জড়ানো এক ধরনের গোখাদ্যের ফল ইত্যাদি চেয়ে নিত। আরও ছিল গাঢ় রঙে পরিণত হয়ে যাওয়া জবের চিনি। এটা বিক্রি করত আরব দোকানদাররা।

নিকটবর্তী সিনেমা হলের সামনে চাকাঅলা গাড়িতে কাঠের তৈরি বাক্সে করে মাছি ভনভন একটা স্ট্যান্ডের ওপরে খোলা অবস্থায়ও বিক্রি হতো জবের চিনি। খুব বেশি বৃষ্টি হলে উঠোনের পানি গড়িয়ে পড়ত ওই গর্তসদৃস ঘরে। খোলা আকাশ আর সমুদ্রের হাওয়া থেকে বহু দূরে নিজেদের দারিদ্রের রাজ্যে জ্যাক এবং তার বন্ধুরা পুরনো বাক্সপেটরার ওপরে দাঁড়িয়ে রবিনসন ক্রুসো সাজত।
তবে তাদের খেলার সবচেয়ে ভালো সময় ছিল গরমের মৌসুমে। কোনো না কোনো অজুহাতে, মিথ্যে বলে তারা দুপুরের ঘুম ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে পড়ত। তখন তাদের কাছে ট্রলি-বাসে ওঠার মতো টাকা থাকত না বলে তাদের অভিজ্ঞতার পর্যবেক্ষণ চালানোর জায়গা বলে পরিচিত যে বাগানটা ছিল সেখানে যেতে গোটা পথ তাদের হাঁটতে হতো: কাছাকাছি এলাকার হলুদ আর ধূসর রাস্তা পেরিয়ে, ঘোড়ার আস্তাবলপূর্ণ এলাকা পিছে ফেলে, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কিংবা ব্যক্তি মালিকানাধীন ঘোড়ার গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রেতাদের দোকান পার হয়ে যেত তারা। ঠেলা দিয়ে খোলার মতো সব দরজার পেছনে মাটিতে ঘোড়ার পদশব্দ শোনা যেত, নাক থেকে হঠাৎ ফোঁস ফোঁস নিঃশ্বাস পতনের ফলে ঘোড়াগুলোর ঠোটের ওপরে জোরে শব্দ শোনা যেত।

ঘোড়ার গলার লোহার শিকল জাবনাপাত্রের কাঠের সঙ্গে বাড়ি লেগে শব্দ হতো। ওইসব জায়গা পার হয়ে যেতে যেতে বিষ্ঠার জৈব সার, খড়, ছোটদের জন্য নিষিদ্ধ ওই এলাকা থেকে উত্থিত ঘামের গন্ধ তারা আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করতে থাকত। এমনকি ঘুমের মধ্যেও জ্যাকের নাকে আসত ওইসব গন্ধ। আস্তাবলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের গতি মন্থর হয়ে যেত; সেখানে ঘোড়াদের দেখাশোনা করা হতো; বড় বড় খুরঅলা ঘোড়াগুলো ফ্রান্স থেকে আনা; রোদের তাপ আর মাছিদের কাছে ঘোড়াগুলো কাবু হয়ে থাকত। ঘোড়াগুলোর চোখের দিকে তাকালে বোঝা যেত নির্বাসনে এসেছে। তারপর গাড়োয়ানরা তাদের তাড়িয়ে দিলে তারা বিরাট একটা বাগানের দিকে দৌড়ে চলে যেত; ওই বাগানে বিরল প্রজাতির গাছপালা জন্মানো হতো। বিরাট জলাধার আর ফুলের ভেতর দিয়ে সমুদ্রের দৃশ্য দেখা যেত একটা বড় পায়েচলা পথ দিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে। সেখানেও বাগানের প্রহরীরা তাদেরকে সন্দেহের চোখে দেখত।

যারা আস্তে ধীরে হেঁটে বেড়াতে আসত তাদেরও হাঁটার ধরন বদলে যেত ছোটদের উপস্থিতির কারণে। তবে আড়াআড়ি পথের প্রথমটাতে এসে তারা বাগানের পূর্ব পাশের দিকে পথ ধরত। ওদিকটায় যেতে হতো বিরাট বিরাট ঘন ম্যানগ্রোভ গাছের ভেতর দিয়ে; গাছগুলোর ছায়ায় দিনের বেলাতেই রাত নেমেছে মনে হতো। এরপর তারা বড় বড় রাবার গাছ পেরিয়ে যেত; হরেক রকমের শিকড়ের গাছগুলোর প্রথম ডাল থেকে আরও সব ডালাপালা বের হয়ে মাটি ছুঁয়ে আছে দেখা যেত। সেখান থেকে আরও এগিয়ে যাওয়া লাগত তাদের অভিযানের আসল গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য: তালগাছের মতো লম্বা গাছের মাথায় বড় বড় গোলাকার কমলা রঙের ফলগুলো খুব ঘন হয়ে ঝুলে থাকত। ফলগুলোকে তারা বলত কোকোসেস।

ওখানে পৌঁছে প্রথমে দেখতে হতো আশপাশে কোনো প্রহরী আছে কি না। তারপর শুরু হতো অস্ত্র খোঁজা, মানে ঢিল। পকেট ভর্তি ঢিল যোগাড় করে সবাই ফিরে এলে গাছে গাছে উঁচুতে ঝুলে থাকা থোকাগুলোতে ঢিল ছুড়ত তারা। একেকটা ঢিলে বেশ কয়েকটা করে ফল পড়ত। যার ঢিলে যে ফলগুলো পড়ত সেগুলোর মালিক হতো সেই। তার ফলগুলো কুড়ানো পর্যন্ত অন্যরা অপেক্ষা করত; এরপর আসত তাদের পালা। জ্যাকের হাতের লক্ষ্য খুব পাকা ছিল বলে এই খেলায় সে পিয়েরের সমকক্ষ ছিল। তবে যাদের হাতের লক্ষ্য অতোটা পাকা ছিল না তাদের সঙ্গে জ্যাক এবং পিয়েরে নিজেদের ফলগুলো ভাগাভাগি করে নিত। এই খেলায় সবচেয়ে খারাপ হাত ছিল ম্যাক্সের; তার চোখের দৃষ্টি ছিল দুর্বল এবং চোখে চশমা পড়ত সে। গাট্টাগোট্টা চেহারার ম্যাক্সকে তারা যেদিন প্রথম মারামারির দৃশ্যে দেখেছিল সেদিন থেকে সবাই তাকে সমীহ করে চলত। অন্যরা, বিশেষ করে জ্যাক, মারমুখি মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাস্তায় মারামারির সময়ে প্রচণ্ড বেগে হাত পা ছুড়ে সর্বশক্তি দিয়ে তাকে আঘাত করার চেষ্টাতেও ঝুঁকির মধ্যে থাকত। কারণ মারের প্রতিবাদে ম্যাক্সও কষে মার লাগাতে ওস্তাদ ছিল। ম্যাক্সের নামের উচ্চারণে জার্মান ভাষার ছোঁয়া ছিল বলে কষাইয়ের ছেলে যাকে অন্যরা গিগট বলে ডাকত সে একদিন ম্যাক্সকে ‘শালার হান’ বলে গালি দিয়েছিল। সেদিন উত্তেজনা প্রকাশ না করেই ম্যাক্স চশমা খুলে যোসেফের কাছে রেখে মুষ্টিযোদ্ধাদের স্টাইলে দাঁড়িয়ে গেল; খবরের কাগজে সে মুষ্টিযোদ্ধাদের ওরকম করে দাঁড়ানোর ছবি দেখেছিল আগেই। তারপর গিগটকে তার গালি পুনরায় আওড়াতে আহ্বান করল।

সামান্যতম ঘাম না ঝড়িয়েই গিগটের প্রত্যেকটা আঘাত এড়িয়ে তাকে আচ্ছা মতো কয়েক বার করে ধোলাই দিয়ে দিল। ওদিকে গিগট তাকে আঙুল দিয়ে ছোঁয়ার সুযোগও পেল না। শেষে ঘুষি মেরে গিগটের চোখের কোণে কালো দাগ ফেলে দিয়ে ম্যাক্স সর্বোচ্চ বিজয়লাভ করেছিল সেদিন। সেদিন থেকেই তাদের ক্ষুদে দলে ম্যাক্সের জনপ্রিয়তা সুনিশ্চিত হয়ে গেল। ফলের রসে পকেট আর হাত বোঝাই হয়ে গেলে তারা বাগান ছেড়ে সমুদের দিকে এগোতে থাকত। বাগানের সীমানা পার হয়ে গিয়ে তাদের ময়লাজীর্ণ রুমালে বিছিয়ে ফলগুলো খেতে থাকত। দাঁতের নিচে ফলগুলো যেন বিজয়ের মতোই কড়া মিষ্টি আর রসালো লাগত। তারপর তারা সমুদ্র সৈকতের দিকে ছুটে যেত।

(চলবে)

এসএ/

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১

Header Ad

বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস

ফাইল ছবি

বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস। সরকারি সফরের অংশ হিসেবে ভারতীয় উপমহাদেশে আসার পরিকল্পনা করছেন তিনি। চলতি বছরের শুরুর দিকে শরীরে ক্যানসার শনাক্ত হওয়ার পর বিদেশ সফর থেকে বিরত রয়েছেন ব্রিটিশ এই রাজা। তবে কিছু দিনের মধ্যে তিনি বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান সফর করতে পারেন বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিররের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস ও তার স্ত্রী রানি ক্যামিলা অদূর ভবিষ্যতে ভারতীয় উপমহাদেশ সফরের পরিকল্পনা করছেন। রাজা তৃতীয় চার্লস ক্যানসার থেকে ধীরে ধীরে সেরে ওঠায় শিগগিরই এই সফরে বের হতে পারেন। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটেনের রাজার সফরের পরিকল্পনাকে তার শারীরিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতির লক্ষণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ঠিক কবে নাগাদ ব্রিটিশ রাজা ও রানির এই সফর শুরু হতে পারেন, সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য জানায়নি ডেইলি মিরর।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তৃতীয় চার্লস সব ধরনের সফর বাতিল করতে বাধ্য হন। তবে ভারতীয় উপমহাদেশের তিন দেশ—বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তান সফরের এই পরিকল্পনার মাধ্যমে পুনরায় তার সফর শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্রেক্সিট পরবর্তী বিশ্বে তাৎপর্যপূর্ণ অর্থনৈতিক সংযোগ প্রতিষ্ঠা করতে চায় ব্রিটেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্রিটিশ রাজা ও রানির সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

দেশটির একটি সূত্র বলেছে, ‘‘রাজা এবং রানির জন্য এই ধরনের সফরের পরিকল্পনা করাটা অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক। ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের একটি সফর শুরুর কথা রয়েছে; যা বিশ্ব মঞ্চে ব্রিটেনের জন্য রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ হবে। এই সময়ে ব্রিটেনের জন্য রাজা এবং রানিই জুতসই রাষ্ট্রদূত।’’

ডেইল মিরর বলছে, রাজ সফরের জন্য সম্ভাব্য আয়োজক দেশগুলোর সাথে আলোচনার করতে ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তান সফরের খসড়া তৈরি করা হচ্ছে। গত বছর ভারত সফর বাতিল করার পর রাজা ও রানিকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে দেশটিতে ব্রিটিশ রাজা ও রানির সফর নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। গত মাসে ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলনে সাক্ষাৎ করেছিলেন এই দুই রাষ্ট্রনেতা। এছাড়া গত মঙ্গলবার ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার ‘‘কৌশলগত অংশীদারত্বে’’ স্বাগত জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। যদিও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইউক্রেন যুদ্ধ ‘‘শান্তিপূর্ণভাবে শেষ’’ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছিলেন।

২০০৬ সালে ক্যামিলাকে সঙ্গে নিয়ে ওয়েলসের যুবরাজ হিসেবে এক সপ্তাহের জন্য পাকিস্তান সফর করেছিলেন চার্লস। সেই সময় শুভাকাঙ্ক্ষীদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আপনাদের কাছে পৌঁছাতে আমার প্রায় ৫৮ বছর লেগেছে। তবে এটা যে চেষ্টা করার অভাবে নয়, তা আমি বলতে পারি।’’

Header Ad

নির্বাচনের ফাঁকা মাঠ ভেবে খুশি হচ্ছেন, সাবধান হন : তারেক রহমান

ছবি: সংগৃহীত

যেসব নেতাকর্মী সামনে নির্বাচনের ফাঁকা মাঠ ভেবে খুশি হচ্ছেন। তারা সাবধান হন। সামনে ভয়ংকর অন্ধকার দেয়াল আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) বিকেল পাঁচটায় রাজশাহী জেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠানটি ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলার বিষয়ে আইনজীবীর প্রশ্নের উত্তরে তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচার পড়ে গেছে, পালিয়ে গেছে। তারা তো বসে নাই, তারা ষড়যন্ত্র করছে। যদি তাদের ষড়যন্ত্র সফল হয়- মামলা তো উঠবেই না বরং নেতাকর্মীদের নামে জ্যামিতিক হারে ২০টা মামলা হয়ে যাবে। সেই সম্ভাবনাও আছে। সেই সম্ভাবনাকে যদি নস্যাৎ করে দিতে হয়, তাহলে আজকে থেকে আপনাদের প্রত্যেকেই সতর্ক হতে হবে।

তিনি বলেন, আপনাদের একটাই টার্গেট হতে হবে। জনগণ, জনগণ অ্যান্ড জনগণ। এর বাইরে যদি কিছু চিন্তা করেন। তাহলে পতিত স্বৈরাচার সফল হবে। তারা সফল হলে আইনজীবী সহকর্মীর বক্তব্য অনুযায়ী মামলা আপনাদের মিটবে না। বরং মাথার ওপরে আরও ১০টি, ২০টি মামলা চেপে বসবে। আপনাদের নিজেকে যদি বাঁচাতে হয় তাহলে উপায় একটাই- জনগণের আস্থা অর্জন করেন। আপনার পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করতে হলে উপায় একটাই জনগণের আস্থা আর্জন করেন।

তিনি বলেন, ফারাক্কা বাঁধের বিষয়ে আমাদের একটি ধারণা আছে। এটি একটি আন্তর্জাতিক বিষয়। বিএনপির বাইরে অন্য সরকার যখন ক্ষমতায় এসেছে, তারা যথাযথভাবে এটা দেখেনি। পতিত স্বৈরাচার সরকার প্রতিবেশী দেশকে খুশি করার জন্য ইচ্ছা করেই করেনি। আমরা সময়মতো অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কাজ করবো। আমাদের ন্যায্য হিস্যা আদায়ের জন্য প্রয়োজনে দেশের স্বার্থে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়েই কাজ করবো।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে পাঁচ বছরে পাঁচ কোটি বৃক্ষরোপণের ইচ্ছে আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের পানি বাড়ছে। গবেষণায় উঠে আসছে বাংলাদেশের অনেকাংশ, অর্ধেক বা তার কম অংশ ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এই দেশের মানুষকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। খালেদা জিয়া সরকারের সময় আমরা বৃক্ষমেলা করতাম। আমাদের যেভাবেই হোক, এই কর্মসূচি আবার শুরু করতে হবে। সবাইকে উৎসাহ দিতে হবে বৃক্ষরোপণের জন্য। গাছ প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ব্যক্তিগতভাবে আমার একটা পরিকল্পনা আছে। আগামী দিনে আমরা সুযোগ পেলে পাঁচ বছরে আমরা পাঁচ কোটি বৃক্ষরোপণ করব।

এর আগে সকাল ১০টায় প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয়। এসময় বক্তব্য দেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, চেয়ারপারসনের বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. মাহাদী আমিন।

কর্মশালায় আলোচনা করেন, বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রাশিদা বেগম হীরা ও কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা হাবিব। সভাপতিত্ব করেন, বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত।

বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব এবিএম মোশাররফ হোসেনের সঞ্চালনায় কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় নেতা ওবায়দুর রহমান চন্দন, আমিরুল ইসলাম আলীম প্রমুখ।

Header Ad

গোপনে দুইজনকে বিয়ে, কাউকেই অধিকার বঞ্চিত করেননি জান্নাতুল

ছবি: সংগৃহীত

একইসঙ্গে দুই স্বামীর সঙ্গেই সংসার করছেন জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক নারী। স্ত্রীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করেননি দুই স্বামীর কাউকেই। গোপনে মন জয় করে চলছিলেন দুই স্বামীর। প্রায় দুই বছর দুই স্বামীর সংসার করার পর অবশেষে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

চার বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে হলফনামার মাধ্যমে গোপনে বিয়ে করেন রাজবাড়ী সদরের আলীপুর ইউনিয়নের ইন্দ্রনারায়ণপুর গ্রামের আবু হানিফ শেখের ছেলে ইউটিউবার সাগর শেখ ও আলীপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম ভূঁইয়ার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস।

বাবা, মা ও ভাই প্রবাসে থাকায় বাবার বাড়িতে একাই বসবাস করতেন জান্নাতুল। সেখানে যাতায়াত করতেন স্বামী সাগর শেখ। সংসার জীবন ভালোই চলছিল এ দম্পতির। হঠাৎ জান্নাতুলের বাবা প্রবাস থেকে দেশে ফেরায় শ্বশুরবাড়ি যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায় সাগরের। এরই মধ্যে প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে পরিবারের সিদ্ধান্তে অন্য এক যুবককে দ্বিতীয় বিয়ে করেন জান্নাতুল।

এদিকে স্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের বাড়িতে তুলে না নেয়ায় শ্বশুরবাড়ি গিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত সময় কাটান জান্নাতুলের দ্বিতীয় স্বামী। প্রথম স্বামী সাগরের দাবি, প্রায় দুই বছর ধরে তার সঙ্গেও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ঠিক রেখে চলছিলেন জান্নাতুল।

স্ত্রীর পরিবার তাকে মেনে না নেয়ায় তার বোনের বাসাসহ বিভিন্ন স্থানে একান্তে সময় কাটাতেন স্বামী-স্ত্রী। চলতি মাসের ২ নভেম্বর তারা একসঙ্গে নিজেদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী পালন করেছেন বলেও দাবি করেন সাগর।

তবে দুই সপ্তাহ আগে স্ত্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় স্বামীর ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে জানতে পারেন সাগর। আর এতেই বাঁধে বিপত্তি। তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন জান্নাতুল। এখন দ্বিতীয় স্বামী নিয়েই সংসার করতে আগ্রহী তিনি। বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে ফিরে পেতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দায়েরের পাশাপাশি আদালতে মামলা করেছেন সাগর।

সাগর শেখ বলেন, জান্নাতুল ও আমার বিয়ের বিষয়টি জান্নাতুলের মা ও বোন জানতো। বিয়ের পর আমাদের সংসার জীবন ভালোই কাটছিল। তবে হঠাৎ করে জান্নাতুলের বাবা প্রবাস থেকে দেশে ফেরায় তাদের বাড়িতে আমার যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের বিয়ের চার মাসের মাথায় আমি ভিডিও কন্টেন্ট তৈরির কাজে কয়েকদিনের জন্য রাজবাড়ীর বাইরে যাই।

কাজ থেকে এসে শুনি আমার স্ত্রী জান্নাতুল অন্য এক ছেলেকে বিয়ে করেছে। আমি আমার স্ত্রীকে প্রশ্ন করলে সে বলে, ‘পরিবারের চাপে বিয়ে করেছি। ওই ছেলের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক হয়নি। আমি তোমার স্ত্রী আছি, তোমারই থাকবো। আমার আম্মু দেশে আসলে আমি তোমার কাছে চলে আসবো।’

সাগর বলেন, ‘আমি জান্নাতুলদের বাড়ি যাতায়াত করতে না পারার কারণে বিভিন্ন সময় আমরা রাজবাড়ী শহরে আমার বোনের বাসায় ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতাম। ওর কলেজে আনা-নেয়াসহ সবকিছু আমিই করতাম। এমনকি গত ২ নভেম্বরও আমরা আমার বোনের বাসায় আমাদের দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকী পালন করেছি।

তবে বিবাহ বার্ষিকী পালনের দুদিন পরে আমি জানতে পারি জান্নাতুলের সঙ্গে ওই ছেলের (দ্বিতীয় স্বামীর) ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চলছে। ওই ছেলে নিয়মিত জান্নাতুলের বাবার বাড়িতে এসে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সময় কাটাচ্ছে। এ বিষয়ে আমি জান্নাতুলকে প্রশ্ন করলে সে আমাকে গালাগালি করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এক পর্যায়ে সে আমার সঙ্গে সংসার করবে না বলেও জানায়।’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি জান্নাতুলের মা প্রবাস থেকে দেশে ফিরেছে। তিনিও এখন আমাকে মেয়ের জামাই হিসেবে অস্বীকার করছেন। অথচ তার মেয়ের সঙ্গে আমার প্রেম থেকে শুরু করে বিয়ে পর্যন্ত সবকিছুই তিনি জানতেন।

এখন বাধ্য হয়ে আমি আমার স্ত্রীকে ফিরে পেতে আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে গত ১১ নভেম্বর লিখিত অভিযোগ করেছি। এছাড়া ১৭ নভেম্বর রাজবাড়ীর বিজ্ঞ ১নং আমলি আদালতে মামলা করেছি।’

সাগর আরও বলেন, ‘আমাকে ডিভোর্স না দিয়ে আমার স্ত্রী অন্য আরেকজনকে বিয়ে করে আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। সে আমাকেও ম্যানেজ করে চলেছে, একইভাবে তার দ্বিতীয় স্বামীকেও ম্যানেজ করে চলেছে।

এটা আইন ও ধর্মীয় দুই দিক থেকেই অপরাধ। এছাড়া আমি এ পর্যন্ত আমার স্ত্রীর পেছনে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করেছি। তারপরও আমি আমার স্ত্রীকে ফেরত চাই। তাকে আমি আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।’

এদিকে, বিষয়টি নিয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজী হননি জান্নাতুলের দ্বিতীয় স্বামী। তবে তার দাবি, জান্নাতুলের সঙ্গে সাগরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে তিনি জানতেন। সাগরের সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি তিনি জানতেন না।

জান্নতুলের দ্বিতীয় স্বামীর বাবা বলেন, ‘কোন এক সূত্রে আমার শ্বশুর জান্নাতুলদের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে তাকে পছন্দ করে। পরে আমি গিয়ে তার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিলে বিয়ের দিন ধার্য হয়। বিয়ের আগের দিন সাগর নামে এক ছেলে আমার ছেলেকে ফোন করে বলে জান্নাতুলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক আছে।

সে জান্নাতুলের সঙ্গে নিজের একটি ছবিও আমার ছেলেকে পাঠায়। এরপর আমি ওই এলাকায় আমার আত্মীয়দের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি জান্নাতুলের সঙ্গে সাগরের কোন সম্পর্ক ছিল না। এছাড়া জান্নাতুলকেও আমি সরাসরি প্রশ্ন করলে সেও সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করে।

পরে ঘরোয়া আয়োজনে জান্নাতুলের সঙ্গে আমার ছেলের বিয়ে হয়। এখন সাগর নামে ছেলেটি জান্নাতুলকে তার স্ত্রী হিসেবে দাবি করছে। আমি যতদূর জেনেছি সাগরের স্ত্রী ও সন্তান আছে। এখন বিষয়টি আইনগতভাবেই সমাধান হবে।

আর জান্নাতুল ফেরদৌসের সঙ্গে কথা বলতে তার বাবার বাড়িতে গেলে ভেতরে ঢোকার অনুমতি মেলেনি।’

বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে তার মা হাচিনা বেগম বলেন, ‘সাগরের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছিল৷ তবে বিয়ের দুই মাসের মাথায় তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। আমার মেয়ে তো ছোট বুঝে নাই, যে কারণে সেসময় ওরা ডিভোর্সের কাগজ ছিঁড়ে ফেলেছে। এর ৪/৫ মাস পরে আমার মেয়ের আবার বিয়ে হয়েছে। সাগর আমার মেয়েকে চাপে ফেলে এতোদিন তার সঙ্গে সময় কাটাতে বাধ্য করেছে।’

আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক জানান, ‘সাগর ও জান্নাতুলের বিবাহ বিচ্ছেদ হলে তার নোটিশের একটি কপি ইউনিয়ন পরিষদে আসার কথা। এরকম কোন কপি কখনো পাননি তারা।’

তিনি বলেন, ‘সাগর আমার ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করেছে। আমিও খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি সাগর জান্নাতুলের প্রথম স্বামী। সে সাগরকে তালাক না দিয়েই বিয়ের চার মাসের মাথায় অন্য এক ছেলেকে বিয়ে করে। প্রায় দুই বছর সে চালাকি করে দুই স্বামীর সঙ্গেই সংসার করেছে। সাগরের কাছ থেকে জান্নাতুল অনেক টাকা-পয়সা খেয়েছে বলেও আমি জানতে পেরেছি।’

আবু বক্কার বলেন, ‘সাগরের অভিযোগের ভিত্তিতে আমি জান্নাতুলের বাবাকে নোটিশের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদে ডাকি। তবে নোটিশ পেয়ে তিনি তার ছোটভাই ও তাদের এলাকার ইউপি সদস্য আবুল কালামকে সঙ্গে নিয়ে আমার বাড়িতে এসে বলেন, আমি যেন পরিষদে বসে বিষয়টি সমাধান করে দেই। তবে এর ১/২ দিন পরে তিনি জানান, এ বিষয়ে তারা বসতে চান না।

আইনগতভাবে তারা বিষয়টি সমাধান করতে চান। পরে আবার তারা বসতে সম্মত হলে জান্নাতুল ও তার বাবা এবং তাদের এলাকার ইউপি সদস্য আবুল কালামসহ পরিষদের অন্য সদস্যদের নিয়ে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ইউনিয়ন পরিষদে বসেছিলাম। সাগরও সেখানে ছিল। তবে সেখানে জান্নাতুল বলে দিয়েছে সে কোনভাবেই সাগরের সঙ্গে ঘর সংসার করবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পুরুষ শাসিত সমাজে নারীরা নির্যাতিত হয়। কিন্তু ছেলেরা যে কতোটুকু নির্যাতিত হয় তা এই সম্পর্কের জের দেখলে বোঝা যায়। আমাদের সমাজে ছেলেরা আরও বেশি নির্যাতিত হচ্ছে। সেটা নীরবে নিভৃতে ছেলেরা সহ্য করে যাচ্ছে। আমি আশা করবো আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা বিষয়টি তুলে ধরবেন।

আপনাদের সংবাদের মাধ্যমে মানুষ যাতে সচেতন হতে পারে। আজকে আমার ইউনিয়নে এমন ঘটনা ঘটেছে। আর কোন ইউনিয়নে যেন এমন ঘটনা কোনদিন না ঘটে।’

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস
নির্বাচনের ফাঁকা মাঠ ভেবে খুশি হচ্ছেন, সাবধান হন : তারেক রহমান
গোপনে দুইজনকে বিয়ে, কাউকেই অধিকার বঞ্চিত করেননি জান্নাতুল
শহীদ আব্দুল্লাহর বাড়িতে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন
বিরামপুরে আদিবাসী নারীর লাশ উদ্ধার
বিএনপির কাঁধে অনেক দ্বায়িত্ব: তারেক রহমান
'জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়া উচিত'- তোফায়েল আহমেদ
৩ মাসে জ্বালানি খাতে সাশ্রয় হয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা : জ্বালানি উপদেষ্টা
জুটি বাধলেন মিঠুন চক্রবর্তী-আফসানা মিমি
দেশ ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই : তারেক রহমান
২৪ ঘণ্টার মধ্যে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের আশঙ্কা
অক্টোবরে সড়কে প্রাণ গেছে ৪৭৫ জনের
গায়ানায় দলের সঙ্গে যোগ দিলেন সাকিব
আইপিএল নিলামের আগেই নিষিদ্ধ হলেন ভারতের ২ ক্রিকেটার
গাজীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
কবে বিয়ে করবেন জানালেন তামান্না ভাটিয়া
পঞ্চগড়ে ৫০০ টাকায় সন্তান বিক্রি, অতঃপর যা ঘটল...
অ্যান্টিগায় প্রথম দিন শেষে স্বস্তিতে টাইগাররা
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন পরীমণির প্রথম স্বামী
বিচারের আগে আ.লীগের মাঠে থাকার সুযোগ নেই: উপদেষ্টা নাহিদ