রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ৬

শরণার্থীর সুবর্ণরেখা

ওরা যশোর-সাতক্ষীরা রোড পার হওয়ার সময় পাকসেনাদের গাড়ি দেখতে পায়। ওরা তাড়াতাড়ি গরুর গাড়ি থেকে ওরা যে কয়জন ছিল সবাই বিভিন্ন দিকে পালিয়ে যায়। রাস্তার পাশের গর্তে নেমে পানির মধ্যে লুকিয়ে থাকে। ধানক্ষেতে গিয়ে নিজেকে আড়াল করে শুয়ে পড়ে। এরপরে পাক সেনাদের গাড়ি চলে গেলে আমরা হেঁটে সীমান্ত পার হই। আল্লাহর রহমত যে ওরা আমাদের দেখেনি। সেজন্য গুলি ছোঁড়েনি। এখন যতদিন লাগে দেশের স্বাধীনতার জন্য অপেক্ষা করব। আর শরণার্থী হয়ে বেঁচে থাকব।

–হ্যাঁ, এমন কথা আমাদের সবার জন্য একই রকম।

–ঠিকই বলেছেন। আপনি কোথায় আছেন?

–আমি এই যশোর রোডেই তাঁবু পেয়েছি।

–তাহলে আপনি তাঁবুতে চলে যান। আমরা ওদেরকে নিয়ে বনগাঁ যাব। আমি অসিত, অধর ও দীপক ও অজয়।

–ঠিক আছে পরিচিত হয়ে খুব খুশি হলাম। তারপর দেখলাম ওরা একটা ট্রাকে উঠে চলে গেল।

–ভালোই সময় কাটিয়ে এসেছেন আব্বা। আপনার খিদে পেয়েছে।

–অসিত ওদেরকে দুধ-পাউরুটি খাইয়েছে। একই সঙ্গে আমাকেও দিয়েছে। সেজন্য তেমন খিদে পায়নি।

–ঠিক আছে, আমরা তাঁবুতে যাই। আপনার জন্য ভাত রাখা হয়েছে। আপনি খাবেন।

–চলো যাই। মেয়েটার দিকে তাকালে বুক ভেঙে যায়। কষ্টে নিজেকে ধরে রাখতে পারিনা।

–এসব কথা থাক আব্বা। আমারওতো একই কষ্ট হয়।

–হ্যাঁ, হবেই। তা জানি। চলো এই গাছের নিচে একটু বসে থাকি। তারপর তাঁবুতে যাব। চারদিক থেকে ছুটে আসে মৃদু বাতাস। সামনে দিয়ে বয়ে যায় ছোট নদী বাতাসে তরঙ্গ তুলে। হঠাৎ রবিউল দূরে তাকিয়ে বলে, মারুফ দেখো নদীর ধারে একটি মেয়ে পড়ে আছে।

–তাইতো, তাইতো –বলতে বলতে মারুফ উঠে দাঁড়ায়। পরে বলে, আব্বা চলেন দেখি মেয়েটার কি হয়েছে।

–হ্যাঁ, চলো।

তারা দ্রুতপায়ে হেঁটে মেয়েটির কাছে এসে দাঁড়ায়। দেখতে পায় মেয়েটি নড়াচনা করে না। তাহলে কি ও অসুস্থ? নাকি মরে গেছে?

মারুফ পাশে বসে কপালে হাত রাখে। একদম ঠান্ডা হয়ে আছে শরীর।

–আব্বা মনে হয় মেয়েটি মরে গেছে।

–বলো কি? ওর সঙ্গে কেউ নেই? বাপ-মা-আত্মীয়স্বজন?

–নিশ্চয়ই আছে। মেয়েটিতো একা সীমান্ত পাড়ি দেবে না।

–চলো, আমরা সরে যাই। ওকে খুঁজতে কেউ এখানে এলে আমাদেরকে দেখে সন্দেহ করবে। কিভাবে মেয়েটি মারা গেল। কে জানে?

রবিউল ও মারুফ আবার সেই গাছতলায় গিয়ে বসে। তখন দেখতে পায় পূর্ণিমা এদিক-ওদিক তাকাতে তাকাতে হাঁটছে। একসময় মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ছুটে যায়। কাছে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে ওর ওপর গড়িয়ে পড়ে। চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে। চারদিক থেকে নানা লোক এগিয়ে আসে। রবিউল আর মারুফও যায়। সবাই দাঁড়িয়ে থাকে। পূর্ণিমা চিৎকার করে বলে, আমার মেয়েটাকে কে মেরে ফেলল?

কারো মুখে কোনো কথা নেই।

–আপনি ওকে আপনার সঙ্গে রাখেননি কেন?

–রেখেছিলামতো। কেউ একজন ডাকলে ও তার পিছে পিছে যায়। লোকটি বলে, কিছুক্ষণ পরে ওকে আমি দিয়ে যাব।

–ওই লোকের সঙ্গে ওকে যেতে দিলেন কেন?

–ওতো আমাদের সঙ্গেই গ্রাম থেকে এসেছে।

–মেয়ের বাবা কোথায়?

–পথে মরে গেছে। অসুখ ছিল। হাঁটতে পারছিলনা। পূর্ণিমা আবার চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে। কাঁদতে কাঁদতে মেয়ের মাথা কোলে উঠিয়ে নেয়।

–আপনার মেয়ে কি একটাই?

–দুটো ছেলে আছে। মেয়ে একটাই।

–ওরা রাস্তার ধারে বাবাকে মাটির নিচে শুইয়ে দেয়ার জন্য রয়ে গেছে। শেষ করে আসবে। এখানে দাহ করা যাবে না। নাহলে তো বনের জন্তুরা খেয়ে শেষ করবে।

–আপনি কি করছেন?

–আমি রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করছি।

–মেয়েকে মাটি চাপা দেয়ার ব্যবস্থা করবেন?

–কেমন করে করব? আমি জানিনা।

–আমরা এখানে একটা গর্ত খুঁড়ে দেব?

–না, দরকার নাই। আমি নদীতে নেমে মেয়েকে ডুবিয়ে দেব। ও নদীর তলে গিয়ে শুয়ে থাকবে। ওকে তো দাহ করা যাবেনা।

–নদীতে আপনার নামতে হবেনা। ওকে নদীতে ভাসিয়ে দিলেই হবে। ডুবে যাবে।

–হায় ভগবান, স্বামী গেল মাটির নিচে। মেয়ে যাবে জলের নিচে। যুদ্ধ, যুদ্ধ। যুদ্ধ আমাদের স্বাধীনতা। দিলাম স্বামীকে, দিলাম মেয়েকে। কারো জন্য শ্মশান নাই।

মারুফ পাশে বসে বলে, আমার ছেলেটিকেও মাটি চাপা দিয়েছি। ওটাকে কবর দেয়া বলেনা। এই সময়ে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবারই একই অবস্থা হবে। বিশেষ করে আমাদের মতো শরণার্থীদের।

–তুমি মেয়েটার পা ধর। আমি মাথা ধরি। চলো নদীতে নামাই। আমার মেয়ের নাম মালতী।

মারুফ ওর পা বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে। পূর্ণিমা মাথা জড়িয়ে ধরে নদীতে নেমে যায়। মারুফ ছেড়ে দিলে পূর্ণিমা ওকে জড়িয়ে ধরে। দুজনে ভেসে চলে যায়। একটু পরে আর কাউকে দেখা যায়না। তলিয়ে গেছে নদীতে।
রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা লোকেরা দুহাত উপরে তুলে বলে, জয় বাংলা। শরণার্থী শিবির মুখরিত হয় জয় বাংলা ধ্বনিতে।

(চলবে)

এসএ/

শরণার্থীর সুবর্ণরেখা: পর্ব ৫

শরণার্থীর সুবর্ণরেখা: পর্ব ৪

শরণার্থীর সুবর্ণরেখা: পর্ব ৩

শরণার্থীর সুবর্ণরেখা: পর্ব ২

শরণার্থীর সুবর্ণরেখা: পর্ব ১

Header Ad
Header Ad

উত্তরায় সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় তরুণ-তরুণীর মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরায় সেলফি তোলার সময় ট্রেনের ধাক্কায় এক তরুণ ও এক তরুণী প্রাণ হারিয়েছেন। শনিবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উত্তরা পূর্ব থানার ৮ নম্বর সেক্টরের শেষ প্রান্তের রেলক্রসিং এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে তরুণ-তরুণী রেললাইন দিয়ে হাঁটছিলেন এবং সেলফি তুলছিলেন। এ সময় ঢাকাগামী ও টঙ্গীগামী দুটি ট্রেন একযোগে রেলক্রসিং অতিক্রম করছিল। এ সময় টঙ্গীগামী ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই তরুণী মারা যান।

গুরুতর আহত অবস্থায় তরুণটিকে প্রথমে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নেয়া হয় এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই রাত ৮টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, উত্তরা থেকে আহত অবস্থায় এক তরুণকে হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মরদেহ জরুরি বিভাগে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে রেলওয়ে থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে।

তবে দুর্ঘটনায় নিহতদের নাম-পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Header Ad
Header Ad

জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক ত্রুটিতে ১০ জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১০টি জেলা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জের আমিনবাজার এলাকায় জাতীয় গ্রিডে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় এই বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। রাত ৮টার পর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হতে শুরু করে এবং পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হচ্ছে। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরও কিছু সময় লাগবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিদ্যুৎ না থাকায় এইসব অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বিদ্যুৎনির্ভর সব ধরনের কাজকর্মও ব্যাহত হয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৪ সালে দেশে বড় ধরনের একটি গ্রিড বিপর্যয় ঘটেছিল। সেবার ভারত থেকে আসা বিদ্যুৎ সরবরাহ কয়েক সেকেন্ডের জন্য বন্ধ হয়ে পড়ায় সারাদেশ প্রায় ৩০ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল।

Header Ad
Header Ad

আবারও দুই ধাপে ৬ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা

ছবি: সংগৃহীত

বিভিন্ন দিবস, উৎসব এবং সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে নির্বাহী আদেশের সুবিধা কাজে লাগিয়ে আবারও ছুটি কাটানোর সুযোগ পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। মে মাসে দুই দফায় টানা তিনদিন করে মোট ছয়দিনের ছুটির সুযোগ আসছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি ছুটির প্রজ্ঞাপন অনুসারে, আগামী ১ মে (বৃহস্পতিবার) আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকবে। এরপর ২ ও ৩ মে যথাক্রমে শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় সরকারি কর্মচারীরা টানা তিনদিনের ছুটি উপভোগ করতে পারবেন।

এছাড়া, আগামী ১১ মে (রবিবার) বুদ্ধ পূর্ণিমার ছুটি রয়েছে। এর আগে ৯ ও ১০ মে যথাক্রমে শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় আবারও টানা তিনদিন ছুটি মিলবে।

এর আগে গত মার্চ-এপ্রিল মাসে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি চাকরিজীবীরা টানা নয়দিন ছুটি কাটানোর সুযোগ পেয়েছিলেন। সরকার ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ঈদের ছুটির সঙ্গে নির্বাহী আদেশে আরও একটি অতিরিক্ত ছুটি যুক্ত করেছিল।

ছুটির বিধিমালা অনুযায়ী, দুই ছুটির মাঝে নৈমিত্তিক ছুটি নেওয়ার নিয়ম নেই। তবে অর্জিত ছুটি বা পূর্বনির্ধারিত ঐচ্ছিক ছুটি নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বছরের শুরুতে নিজ ধর্ম অনুযায়ী তিনদিনের ঐচ্ছিক ছুটি অনুমোদন নিয়ে ভোগ করার নিয়মও চালু আছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

উত্তরায় সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় তরুণ-তরুণীর মৃত্যু
জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক ত্রুটিতে ১০ জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট
আবারও দুই ধাপে ৬ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা
পাকিস্তানি হামলার আশঙ্কায় বাঙ্কারে আশ্রয় নিচ্ছেন ভারতীয়রা
চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করলো বিএনপি
আওয়ামী লীগ ভারতের গোলামী করা দল : নুরুল হক নুর
ইরানের রাজাই বন্দরে শক্তিশালী বিস্ফোরণ, আহত ৫১৬ জন
প্রায় দুই ঘণ্টা পর মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক
গোবিন্দগঞ্জে মৃত আওয়ামী লীগ নেতার নামে জামাতের মামলা
গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেফতারের দাবি পুলিশের
নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই বাসীর গলার কাঁটা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অবশেষে সংস্কার
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ
গোবিন্দগঞ্জে গাঁজাসহ ট্রাকের চালক-হেলপার গ্রেপ্তার
আদমদীঘিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা তোহা গ্রেপ্তার
নাটকীয়তা শেষে রাতে ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল-বার্সা
মাদকাসক্ত ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করলেন বাবা
গরমে লোডশেডিং নিয়ে সুখবর দিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত: সৌরভ গাঙ্গুলি
র‍্যাফেল ড্রতে ৯ কোটি টাকা জিতলেন দুই প্রবাসী বাংলাদেশি
৬২ জন পুলিশ সদস্য পাচ্ছেন বিপিএম ও পিপিএম পদক