শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ১৭

বিষাদ বসুধা

পত্রিকায় মোহিনীর একটি ছবি ছাপা হয়েছে। ছবির সঙ্গে বড় হেডলাইনে খবর। অবহেলিত মানুষের পাশে মোহিনী। খবরটি দেখে মোহিনী খুবই বিব্রত। পত্রিকা হাতে নিয়ে তিনি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। মোহিনী যেন একটা পাথরের মূর্তি। তিনি মনে মনে বলেন, কে করল এই কাজটা? কেন করল? যে করেছে সে নিশ্চয়ই আমার ভালো চায় না। নিশ্চয়ই কোনো স্বার্থের জন্য কাজটি করেছে। ছবি ছাপা হবে মন্ত্রী-এমপিদের; যারা রাজনীতি করেন। আমি তো রাজনীতি করি না। রাজনীতির ধারেকাছেও যাই না। আমার ছবি কেন পত্রিকায় ছাপা হবে?

মোহিনীর ভাবনা মিলিয়ে যেতে না যেতেই তার মোবাইল ফোনের রিং বাজে। এই সাত সকালে কে ফোন করল? ফোন ধরতে ইচ্ছা করছিল না তার। দুতিনবার রিং বাজার পর তিনি ফোন কেটে দিয়ে নিজের কক্ষের দিকে যান। টেবিলের উপর পত্রিকা ছুড়ে ফেলে তিনি খাটের উপর বসেন। খবরটি নিয়ে ভাবেন।

আসলে আত্মপ্রচার মোহিনী পছন্দ করেন না। ভালোও লাগে না। তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও পত্রিকায় খবরটি এসেছে। তার অফিসের লোকরাও জানত না, মোহিনী এতো এতো মানুষকে সহায়তা করেছে। পত্রিকায় খবর দেখে অনেকের চোখ কপালে ওঠে। মনে মনে গর্ববোধ করে। অনেকে মোহিনীর অফিসে এসে আবার অনেকে টেলিফোনে তাকে ধন্যবাদ জানায়। এতেও মোহিনী বিব্রত হয়। এটা অবশ্য মোহিনীর ধাতে সওয়ার না। সইবেও না কোনোদিন। কারণ, তার বাপ-দাদার চরিত্রও এমনই। তারাও আত্মপ্রচার একদম পছন্দ করতেন না কিংবা করেন না। মোহিনীর দাদাকে বলা হতো দাতা হাতেমতাই। কারণ তিনি দুই হাতে মানুষকে বিলাতেন। নিজের বা পরিবারের সুখ-শান্তির কথা তিনি ভাবতেন না। তার কথা, যতক্ষণ পর্যন্ত হাতে টাকা থাকবে ততক্ষণ বিলিয়ে যাও। একজন দানবীর হওয়া সত্ত্বেও তিনি তা কাউকে বলতেন না। গোপন রাখতেন। এক হাতে বিলালে অন্য হাত তা জানতে পারত না। পবিত্র কোরআনে নাকি মহান সৃষ্টিকর্তা এরকম নির্দেশনাই তার বান্দাকে দিয়েছেন।

মোহিনীর বাবাও সেই অভ্যাস পেয়েছেন। তিনিও দুই হাতে মানুষকে বিলান। সেই রক্ত মোহিনীর শরীরে বহমান। কাজেই ধাতে সইবে কেন?

অনেকেই আছেন সামান্য সহায়তা করতে গিয়ে বিশাল ঢাকঢোল পেটান। সহায়তা দেওয়ার আগ থেকে শুরু হয়। টানা এক সপ্তাহ দুই সপ্তাহ চলতে থাকে। আত্মপ্রচার কাহাকে বলে তা তারা বুঝিয়ে দেন। ভাবখানা এমন যেন না জানি কি করে ফেলছেন। অথচ তাদের চেয়ে অনেকগুণ বেশি সহায়তা করেও অনেকে কাউকে তা বলেন না। বরং বলতে লজ্জাবোধ করেন। মোহিনী এমনিতেই প্রচারবিমুখ মানুষ। তার ওপর আবার নিজের দান-খয়রাতের কথা অন্য জানাবে! মোটেই না।

মোহিনীর মোবাইলে আবার রিং বাজে। তিনি মনে মনে বিরক্ত হন। কে আবার ফোন করেছে? কেন বার বার ফোন করছে? মোহিনী মোবাইল হাতে নিয়ে দেখেন। নম্বরটা অচেনা। তিনি আবার ফোন কেটে দেন। তিনি বুঝতে পারছেন তার মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে আছে। এসময় ফোন ধরা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তাই তিনি ফোন ধরা থেকে বিরত থাকেন। তিনি ফোনটা হাত থেকে টেবিলের ওপর রাখতে যাবেন এমন সময় ম্যাসেজ আসার টোন পান। তিনি ম্যাসেজ খুলে দেখেন, আসিফের ম্যাসেজ। সে-ই বার বার তাকে ফোন দিচ্ছে। মোহিনী নিজেই ওই নম্বরে ফোন দেন। আসিফ ফোন ধরেই বলেন, সরি তোমাকে সাত-সকালে বিরক্ত করলাম।
না না। বিরক্ত কেন বলছ?
কয়েকবার ফোন দিলাম তো! তুমি ধরোনি। তাই ভাবলাম তুমি বিরক্ত হচ্ছ কি না।
এটা যে তোমার নম্বর সেটাই তো জানি না।
ওহ! তোমাকে এই নম্বরটা দেইনি না?
না তো!
তোমার ওপর একটা লেখা পড়লাম। ভীষণ ভালো লাগল। এটা জানানোর জন্যই তোমাকে ফোন দিয়েছি।
কোথায় পড়েছ?
প্রথম আলোতে।
তাই নাকি?
হুম।
কি লিখেছে?
তুমি পড়ে দেখ। খুব ভালো লিখেছে। সত্যিই খুব ভালো লিখেছে। আমি তোমাকে কতবার বললাম, তুমি যে মানুষকে সহায়তা করছ এটা নিয়ে একটা লেখা ছাপি। তুমি বললে না। আত্মপ্রচার তুমি পছন্দ করো না। আমি নিজেও অবশ্য জানি। তুমি পছন্দ করো না বলে আমি খুব বেশি চাপ দিইনি।
কাজটা কে করল বলতে পার?
আমি জেনে দিতে পারব। তুমি জানতে চাও?
হুম। জানতে চাই। যে করেছে সে হয়ত না জেনেই করেছে।
জেনে করুক আর না জেনে করুক; কাজটা যে খুব ভালো করেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

মোহিনী কোনো কথা বলেন না। তিনি চুপ করে আছেন। মোহিনী কোনো কথা বলছেন না দেখে আসিফ আহমেদ বললেন, কি ব্যাপার! কিছু বলছ না যে! তোমার ওপর আমরা একটা আর্টিকেল করে দিই?
না না। কোনো দরকার নেই। এটা বাবা দেখলে ভীষণ রাগ করবেন। তাকে যে কি করে সামলাবো সেটা নিয়ে ভাবছি।
হুম। উনিও তো আত্মপ্রচার একদম পছন্দ করেন না।
হ্যাঁ। আমার চেয়ে কিন্তু বাবা অনেক বেশি সহায়তা করছেন। অথচ কেউ জানেও না। আসলে বাবা জানতে দেন না। আমারটা দেখলে উনি কি ভাববেন কে জানে?
তুমি তো আর নিজে করাওনি! তুমি এটাই তাকে বলে দেবে।
হুম। তারপর তোমার কথা বলো। কেমন আছ?
আর বোলো না। আয়-রোজগার একেবারেই কমে গেছে। বেসরকারি বিজ্ঞাপন একেবারেই নেই। কিছু সরকারি বিজ্ঞাপন পাচ্ছি। তার টাকা কবে পাওয়া যাবে তার কোনো ঠিক নেই। এদিকে ঠিকমতো বেতন দিতে পারছি না।
সে কী! বেতন দিতে পারছ না মানে? এতো বড় প্রতিষ্ঠান! আর তোমরা বেতন দিতে পারছ না? এটা কেউ বিশ্বাস করবে?
সেটাই তো কথা। মানুষ ভাবে, আমরা না জানি কত সুখে আছি। বড় কোম্পানিতে চাকরি করি। টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই। যত বড় ঝড় আসুক তা সামাল দেওয়া কোনো ব্যাপার না। অথচ আলোর নিচে যে অন্ধকার তা কেউ বুঝতে চায় না। আরও সমস্যা কি জানো?
কি?
বেসরকারি বিজ্ঞাপনদাতারা বলে, এতোবড় কোম্পানির পত্রিকা! আমরা কেন বিজ্ঞাপন দেব? ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন থেকে আমরা বঞ্চিত। ব্যাংকগুলোর বিজ্ঞাপন পাই না। কারণ, আমাদের মূল প্রতিষ্ঠান প্রায় সবগুলো ব্যাংক থেকেই ঋণ নিয়ে বসে আছে। কত যে ঝামেলায় আছি তা যদি বুঝতে?
তাই বলে এই সময় বেতন না দিলে..মোহিনী আমতা আমতা করে বললেন।
সে কথাই তো তোমাকে বলছি। এরা কতই বা বেতন পায়। অথচ আমরা ঠিকমতো বেতন দিতে পারছি না। সবার মধ্যে দুশ্চিন্তা ভর করেছে। কারো মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।
তোমার চেয়ারম্যানকে বলো, বেতনের টাকাটা অন্তত দিক। তোমরা তো মূল প্রতিষ্ঠানের অনেক বিজ্ঞাপনও ছাপো। তাই না?
হ্যাঁ। কিন্তু সেই টাকা চাওয়া যাবে না। বুঝতে পারছ? সেই টাকা চাইতে গেলেই দোষ।
এখন তো একটা বিপদের সময়। তুমি বুঝিয়ে বললে নিশ্চয়ই দেবে।
আসিফ আহমেদ বললেন, তুমি কি ভেবেছ আমি বলিনি? অনেকবার বলেছি। চেয়ারম্যান বললেন, এক পয়সাও আমি দিতে পারব না। আমি দেবো কোত্থেকে? বরং এই পত্রিকা করে আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। কেন যে জেদের বশে পত্রিকা করতে গেলাম! অথচ এই পত্রিকার কারণে যে তারা টিকে আছে সে কথা বেমালুম ভুলে গেছে।
কি আর করবে? ধৈর্য ধরো। এছাড়া আর কি বলব?
ধৈর্য কত ধরা যায়? ধৈর্যেরও তো একটা সীমা আছে। সরি, তোমাকে অনেক কথা বলে ফেললাম মোহিনী। কিছু মনে কোরো না।
না না! কি বলো! শোনো, আমাদের কাছে বিজ্ঞাপনের কোনো টাকা পাওনা থাকলে আমাকে বোলো। আমি দিয়ে দেব।
আসিফ আহমেদ সন্তুষ্টির সঙ্গে বললেন, ধন্যবাদ মোহিনী। অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থেকো। সাবধানে থেকো।
হুম। সাবধানে তো থাকতেই হবে। তা না হলে সবকিছু যে ওলোটপালোট হয়ে যাবে। তুমিও ভালো থেকো। ধন্যবাদ।

মোহিনী টেলিফোন রেখে আবার পত্রিকাটা হাতে নেন। প্রতিবেদনটা ভালো করে দেখেন। এরমধ্যেই রহিমাবিবি হন্তদন্ত হয়ে মোহিনীর কক্ষে ঢুকে বলল, আপামনি, আপামনি! আপনারে খালু ডাকতাছে?
মোহিনী রহিমাবিবির দিকে তাকিয়ে রইলেন। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর তিনি বললেন, বাবা কি করছেন রে?
নাশতা করতেছেন। আপনারে ডাকতেছেন।
মা কোথায়?
খালাম্মাও নাশতা করতেছেন।
ও। আচ্ছা যাচ্ছি।
রহিমাবিবি চলে যায়। মোহিনী ভাবেন, বাবা কি পত্রিকাটা দেখেছেন? আমার নিউজটা তার কি চোখে পড়েছে? এ বিষয়ে বাবা আমাকে কিছু বলতে পারেন। নিশ্চয়ই বলতে পারেন। তা বলুন। আমি তো নিজের থেকে নিউজটা করাইনি। ওরা নিজেরাই করেছে। আমি জানিও না। এ কথাই বাবাকে বলব।
মোহিনী খাবার ঘরে পা রেখেই বললেন, শুভ সকাল বাবা। কেমন আছো?
শুভ সকাল। আমি ভালো আছি মা। তুমি কেমন আছো? ঘুম হয়েছে তো?
হ্যাঁ বাবা। হয়েছে। ভালো ঘুম হয়েছে। বাবা, আজ একটা কাণ্ড ঘটে গেছে।
মোহসীন আহমেদ মুখের খাবার এপাশ ওপাশ করে গিলে ফেললেন। কি ঘটেছে মা?
ও তুমি দেখনি!
দেখেছি। তুমি কি কাণ্ড ঘটেছে সেটা আগে বলো!
বাবা, প্রথম আলো পত্রিকায় আমাকে নিয়ে একটা ফিচার লিখেছে। এটা দেখেছ?
হুম। দেখলাম। তুমি করিয়েছ নাকি?
না না বাবা! আমি কেন করাতে যাব? পড়ে কি তোমার তাই মনে হয়েছে?
না। তা মনে হয়নি।
আনোয়ারা বেগম বললেন, কি লিখেছে রে?
মোহসীন আহমেদ বললেন, ওকে নিয়ে পত্রিকায় একটা ফিচার করেছে। বেশ ভালো লিখেছে। ওর মানবিক কাজের স্বীকৃতি দিয়েছে আর কি!
তাই নাকি! দেখিনি তো! আজকের পত্রিকায়?
মোহিনী বললেন, হ্যাঁ মা। ওরা নিজেরাই করেছে। আমার সঙ্গে কথাও বলেনি।
মোহসীন আহমেদ বললেন, আমি জানতাম, তুমি নিজের থেকে এটা করাবে না। করাতে পার না। আফটারঅল, তুমি আমার মেয়ে।
এই! শুধু আমার মেয়ে কেন বললে? আমি কি মানবিক নই?
সরি সরি। আমাদের মেয়ে।
ঠিক বলেছ বাবা। আমি সব সময়ই সে বিষয়ে সতর্ক। আমি নিজেও আত্মপ্রচার পছন্দ করি না। অনেকেই আমার সাক্ষাৎকার নিতে চেয়েছে। আমাকে অনুরোধ করেছে। আমার এক বন্ধু আছে পত্রিকার সম্পাদক।
তোমার বন্ধু সম্পাদক!
হ্যাঁ বাবা।
কে সে?
আসিফ আহমেদ।
ও তাই নাকি! ও তো খুব ভালো ছেলে! খুবই ভালো সাংবাদিক।
হ্যাঁ বাবা। ভীষণ সৎ।
ও কি বলে? মোহসীন আহমেদ জানতে চাইলেন।
মোহিনী বললেন, আমাকে নিয়ে একটা লেখা লেখাতে চেয়েছিল। আমি রাজি হইনি।
ধন্যবাদ। তারপর, তোমার ব্যবসার কি অবস্থা?
চলছে বাবা। বাইরের কিছু অর্ডার পেন্ডিং আছে। অসুবিধা হবে না আশা করছি।
বেশ বেশ।
বাবা, আমার কাজকর্ম ঠিক আছে তো?
হ্যা মা। একদম ঠিক আছে। ঠিক না থাকলে বলতাম।
ধন্যবাদ বাবা।
মোহিনী পত্রিকাটা তোর কাছে আছে?
হ্যাঁ মা। আমি তোমাকে দেখাচ্ছি।

মোহসীন আহমেদ দরাজ গলায় রহিমাবিবিকে ডাকলেন। রহিমাবিবি, রহিমাবিবি! আজকের পত্রিকাটা নিয়ে আয় তো!
রহিমাবিবি পত্রিকা নিয়ে দৌড়ে খাবার ঘরে এসে মোহসীন আহমেদের হাতে পত্রিকা দেয়। তিনি মোহিনীকে নিয়ে লেখা প্রতিবেদনটি বের করে আনোয়ারা বেগমের হাতে এগিয়ে দেন। তিনি গভীর মনোযোগে পড়তে শুরু করেন। মোহিনী চায়ের কাপ হাতে নিয়ে নিজের কক্ষের দিকে এগিয়ে যান।

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১৬

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১৫

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১৪

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১২

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১১

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১০

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৮

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৭

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৬

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৫

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৪

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১

আরএ/

 

 

 

Header Ad
Header Ad

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন—এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এ নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক, যা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (এএনএফআরইএল)-এর একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।

প্রতিনিধিদলে ছিলেন—সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ব্রিজা রোসালেস, বাংলাদেশ নির্বাচন ও গণতন্ত্র কর্মসূচির পরামর্শক মে বুটয়, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার থারিন্ডু আবেরত্না, প্রোগ্রাম অফিসার আয়ান রহমান খান এবং প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট আফসানা আমেই।

এএনএফআরইএল হচ্ছে এশিয়ার একটি নির্বাচনভিত্তিক নাগরিক সংগঠন, যারা বিগত দুই দশক ধরে সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং নাগরিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে।

সাক্ষাতে প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে তাদের চলমান কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করে। তারা জানান, বাংলাদেশে একটি স্বাধীন ও নাগরিকচালিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা স্টেকহোল্ডার ম্যাপিং ও প্রয়োজন নির্ধারণমূলক কর্মকাণ্ডের কথাও তুলে ধরেন, যা দেশের সুশীল সমাজের কার্যকর সম্পৃক্ততা ও নির্বাচনের স্বচ্ছতা বাড়াতে সহায়ক হবে।

প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।

Header Ad
Header Ad

বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী

ছবি: সংগৃহীত

ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ভারত দাবি করছে—বাংলাদেশ নাকি ধ্বংস হয়ে গেছে, এ দেশ আর টিকে নেই। এসব বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই, এটি দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।

শনিবার দুপুরে নাটোর জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে জিয়া পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। রিজভী বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাদের জাতীয়তাবাদ, স্বাধীনতা ও আত্মপরিচয়ের ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন। সেই পথেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আজও জনগণের দল হিসেবে টিকে আছে। বিএনপি এমন একটি দল, যাকে কোনো ষড়যন্ত্র দিয়ে দমিয়ে রাখা যায় না।

ভারতকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না, তারা চায় এই দেশ ভারতের অনুগত হয়ে থাকুক। তাই তারা একটি তাবেদার রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখেছে। শেখ হাসিনার মাধ্যমে তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনের ছত্রছায়ায় এই সরকার গুম, খুন, দমন-পীড়নের রাজনীতি চালিয়ে গেছে। সেই শাসনব্যবস্থাকে রক্ষা করতে ভারত মদত দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন—ভারতকে যা দিয়েছেন, তারা তা সারা জীবন মনে রাখবে। জনগণ এখন সেই কথার অর্থ বুঝতে পেরেছে। দেশের সম্পদ লুটপাট, টাকা পাচার, বিরোধীদের দমন—সবই করা হয়েছে ভারতের আশীর্বাদে। এখন ভারত তাদের সহানুভূতি দেখাচ্ছে, কারণ তারা চায় বাংলাদেশকে নিজেদের প্রভাবাধীন রাখতেই।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন নাটোর জিয়া পরিষদের সভাপতি আহমুদুল হক চৌধুরি স্বপন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. শফিকুল ইসলাম।

প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। আরও বক্তব্য রাখেন জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী মহাসচিব প্রফেসর ড. মো. এমতাজ হোসেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, রাজশাহী বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সালাম বিপ্লব, নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ, সদস্য সচিব মো. আসাদুজ্জামান আসাদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

বক্তারা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বিদেশি প্রভাবের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার আহ্বান জানান।

Header Ad
Header Ad

ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন ভূঞাপুর ছাড়াও আশপাশের গোপালপুর, ঘাটাইল ও কালিহাতী উপজেলার অসংখ্য মানুষ। তবে জনগুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটি বর্তমানে নিজেই এক অসুস্থ প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে।

বছরের পর বছর ধরে চলে আসা নানা অব্যবস্থাপনা, জনবল ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ—সব মিলিয়ে এই সরকারি হাসপাতালটি এখন রোগীদের ভোগান্তির আরেক নাম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ভিতর ও বাইরের পরিবেশ একেবারেই নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা থেকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ, যা রোগী ও তাদের স্বজনদের দীর্ঘ সময় ধরে সইতে হচ্ছে। বিশেষ করে টয়লেটের অবস্থা ভয়াবহ; অধিকাংশ টয়লেট ব্যবহারের অযোগ্য এবং পরিচ্ছন্নতার কোনো ব্যবস্থাই নেই। পুরুষ ও নারী ওয়ার্ড উভয়ের রোগীরা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

 

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় হাসপাতাল কার্যত অন্ধকারে ডুবে যায়। হাসপাতালে একটি জেনারেটর থাকলেও তা চালু করা হয় না এবং সেটিও বহু পুরনো। হাতে গোনা কয়েকটি চার্জিং বাল্ব থাকলেও সেগুলোর অনেকগুলোর আলো টিকেই না, কিছু সময় পর বন্ধ হয়ে যায়। শিশু ওয়ার্ডের (ডায়রিয়া) মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চার্জিং বাল্ব পর্যন্ত নেই। ফলে রাতের বেলায় এক ভয়ংকর ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আলো না থাকায় নার্সদের মোবাইল ফোনের ফ্ল্যাশলাইট ব্যবহার করে সেবা দিতে দেখা গেছে।

চরম গরমে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা। শিশু ওয়ার্ডে থাকা আটটি ফ্যানের মধ্যে তিনটি সম্পূর্ণ নষ্ট, আর যেগুলো সচল রয়েছে, বিদ্যুৎ না থাকায় সেগুলোও চলে না। ফলে শিশু রোগীরা ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস করছে, তাদের স্বজনরা হাতপাখা বা চার্জার ফ্যান নিয়ে চেষ্টা করছেন কিছুটা স্বস্তি দিতে।

হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রবেশ করে দেখা যায়, মেঝেতে ময়লার দাগ, দেয়ালে থুতু, কফ ও পানের পিকের ছিটা। শয্যা ও ওষুধ রাখার ট্রেগুলোতেও দেখা গেছে মরিচা ও জমে থাকা ময়লা। এসব স্থানে মাছি ঘুরে বেড়াচ্ছে অবলীলায়, যা পুরো হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকে আরও প্রকট করে তুলেছে।

এমন পরিবেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী, যিনি হাসপাতালের বারান্দায় ফ্যানহীন পরিবেশে ভর্তি রয়েছেন। অভিযোগ করে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেওয়ার পরও কোনো বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়নি। টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগিতা নিয়েও তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তিন মাসের শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোজিনা বেগম বলেন, টয়লেটের অবস্থার কারণে তিনি পানি ও খাবার খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন, যেন টয়লেট ব্যবহার না করতে হয়। টয়লেটে ঢোকা তো দূরের কথা, পাশে দাঁড়ানোও কষ্টকর হয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে।

গোপালপুর উপজেলার বড়শিলা গ্রামের রোগীর স্বজন সাজেদা বেগম বলেন, এখানে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীর স্বজনরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কোনো অভিযোগ করার সুযোগ নেই, আর কেউ কিছু বললেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

স্থানীয়দের দাবি, ২০২২ সালে ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) হিসেবে যোগদানের পর থেকেই হাসপাতালের এই বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নার্স জানান, ডা. সোবহান কর্তৃত্ববাদী মনোভাব পোষণ করেন। তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থাকলেও প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো অভিযোগকারীরা বদলি বা হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

তবে আরএমও ডা. খাদেমুল ইসলাম বলেন, “সমস্যা যে নেই, সেটা বলছি না। তবুও আমরা সীমিত জনবল ও সামর্থ্যে কাজ করে যাচ্ছি। শতভাগ কাজ সম্ভব হয় না।”

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান বলেন, “জেনারেটর থাকলেও সেটি চালাতে সরকারি বরাদ্দ নেই। মাঝেমধ্যে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালানো হয়। ক্লিনার মাত্র একজন, মাঝে মাঝে বাইরে থেকে লোক ডেকে এনে পরিষ্কার করাতে হয়। আর ফ্যান বা লাইট যেকোনো সময় নষ্ট হতে পারে, যখন জানা যায়, তখনই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” বীর মুক্তিযোদ্ধার বারান্দায় চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কেভিনের ব্যবস্থা রয়েছে। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সার্বিকভাবে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা যে ভয়াবহ নাজুক অবস্থায় রয়েছে, তা এই চিত্রগুলো স্পষ্ট করে দেয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ নজরদারি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিলে, এই হাসপাতাল রোগীদের সুস্থতার জায়গা হয়ে না থেকে এক ভয়াবহ দুর্ভোগের কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী
ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!
জাতীয় পার্টি কোনো সুবিধাবাদী দল নয়: জিএম কাদের
প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে আইসিইউতে পরিচালক সৃজিত মুখার্জি
জুলাই গণঅভ্যুত্থান যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয় : নাহিদ ইসলাম
আ.লীগের মিছিল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশ
হাসিনা-কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন
নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর সেই শিশু সেহেরিশের লাশ উদ্ধার
আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাজ করছে সরকার
লাল কাপড়ে ঢাকা হবে দেশের সব পলিটেকনিকের ফটক
৬০ বছর বয়সে বিয়ে করলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ
চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে ১২ কেজি রূপার গয়না জব্দ
ফয়জুল করীমকে বরিশালের মেয়র ঘোষণার দাবি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি যুবক নিহত
গোবিন্দগঞ্জে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আটক
বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দিল ভারতীয়রা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠক শনিবার
বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে যা জানাল পাকিস্তান
গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা, শিশুসহ একই পরিবারের ১৩ জন নিহত