শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ১৭

বিষাদ বসুধা

পত্রিকায় মোহিনীর একটি ছবি ছাপা হয়েছে। ছবির সঙ্গে বড় হেডলাইনে খবর। অবহেলিত মানুষের পাশে মোহিনী। খবরটি দেখে মোহিনী খুবই বিব্রত। পত্রিকা হাতে নিয়ে তিনি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। মোহিনী যেন একটা পাথরের মূর্তি। তিনি মনে মনে বলেন, কে করল এই কাজটা? কেন করল? যে করেছে সে নিশ্চয়ই আমার ভালো চায় না। নিশ্চয়ই কোনো স্বার্থের জন্য কাজটি করেছে। ছবি ছাপা হবে মন্ত্রী-এমপিদের; যারা রাজনীতি করেন। আমি তো রাজনীতি করি না। রাজনীতির ধারেকাছেও যাই না। আমার ছবি কেন পত্রিকায় ছাপা হবে?

মোহিনীর ভাবনা মিলিয়ে যেতে না যেতেই তার মোবাইল ফোনের রিং বাজে। এই সাত সকালে কে ফোন করল? ফোন ধরতে ইচ্ছা করছিল না তার। দুতিনবার রিং বাজার পর তিনি ফোন কেটে দিয়ে নিজের কক্ষের দিকে যান। টেবিলের উপর পত্রিকা ছুড়ে ফেলে তিনি খাটের উপর বসেন। খবরটি নিয়ে ভাবেন।

আসলে আত্মপ্রচার মোহিনী পছন্দ করেন না। ভালোও লাগে না। তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও পত্রিকায় খবরটি এসেছে। তার অফিসের লোকরাও জানত না, মোহিনী এতো এতো মানুষকে সহায়তা করেছে। পত্রিকায় খবর দেখে অনেকের চোখ কপালে ওঠে। মনে মনে গর্ববোধ করে। অনেকে মোহিনীর অফিসে এসে আবার অনেকে টেলিফোনে তাকে ধন্যবাদ জানায়। এতেও মোহিনী বিব্রত হয়। এটা অবশ্য মোহিনীর ধাতে সওয়ার না। সইবেও না কোনোদিন। কারণ, তার বাপ-দাদার চরিত্রও এমনই। তারাও আত্মপ্রচার একদম পছন্দ করতেন না কিংবা করেন না। মোহিনীর দাদাকে বলা হতো দাতা হাতেমতাই। কারণ তিনি দুই হাতে মানুষকে বিলাতেন। নিজের বা পরিবারের সুখ-শান্তির কথা তিনি ভাবতেন না। তার কথা, যতক্ষণ পর্যন্ত হাতে টাকা থাকবে ততক্ষণ বিলিয়ে যাও। একজন দানবীর হওয়া সত্ত্বেও তিনি তা কাউকে বলতেন না। গোপন রাখতেন। এক হাতে বিলালে অন্য হাত তা জানতে পারত না। পবিত্র কোরআনে নাকি মহান সৃষ্টিকর্তা এরকম নির্দেশনাই তার বান্দাকে দিয়েছেন।

মোহিনীর বাবাও সেই অভ্যাস পেয়েছেন। তিনিও দুই হাতে মানুষকে বিলান। সেই রক্ত মোহিনীর শরীরে বহমান। কাজেই ধাতে সইবে কেন?

অনেকেই আছেন সামান্য সহায়তা করতে গিয়ে বিশাল ঢাকঢোল পেটান। সহায়তা দেওয়ার আগ থেকে শুরু হয়। টানা এক সপ্তাহ দুই সপ্তাহ চলতে থাকে। আত্মপ্রচার কাহাকে বলে তা তারা বুঝিয়ে দেন। ভাবখানা এমন যেন না জানি কি করে ফেলছেন। অথচ তাদের চেয়ে অনেকগুণ বেশি সহায়তা করেও অনেকে কাউকে তা বলেন না। বরং বলতে লজ্জাবোধ করেন। মোহিনী এমনিতেই প্রচারবিমুখ মানুষ। তার ওপর আবার নিজের দান-খয়রাতের কথা অন্য জানাবে! মোটেই না।

মোহিনীর মোবাইলে আবার রিং বাজে। তিনি মনে মনে বিরক্ত হন। কে আবার ফোন করেছে? কেন বার বার ফোন করছে? মোহিনী মোবাইল হাতে নিয়ে দেখেন। নম্বরটা অচেনা। তিনি আবার ফোন কেটে দেন। তিনি বুঝতে পারছেন তার মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে আছে। এসময় ফোন ধরা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তাই তিনি ফোন ধরা থেকে বিরত থাকেন। তিনি ফোনটা হাত থেকে টেবিলের ওপর রাখতে যাবেন এমন সময় ম্যাসেজ আসার টোন পান। তিনি ম্যাসেজ খুলে দেখেন, আসিফের ম্যাসেজ। সে-ই বার বার তাকে ফোন দিচ্ছে। মোহিনী নিজেই ওই নম্বরে ফোন দেন। আসিফ ফোন ধরেই বলেন, সরি তোমাকে সাত-সকালে বিরক্ত করলাম।
না না। বিরক্ত কেন বলছ?
কয়েকবার ফোন দিলাম তো! তুমি ধরোনি। তাই ভাবলাম তুমি বিরক্ত হচ্ছ কি না।
এটা যে তোমার নম্বর সেটাই তো জানি না।
ওহ! তোমাকে এই নম্বরটা দেইনি না?
না তো!
তোমার ওপর একটা লেখা পড়লাম। ভীষণ ভালো লাগল। এটা জানানোর জন্যই তোমাকে ফোন দিয়েছি।
কোথায় পড়েছ?
প্রথম আলোতে।
তাই নাকি?
হুম।
কি লিখেছে?
তুমি পড়ে দেখ। খুব ভালো লিখেছে। সত্যিই খুব ভালো লিখেছে। আমি তোমাকে কতবার বললাম, তুমি যে মানুষকে সহায়তা করছ এটা নিয়ে একটা লেখা ছাপি। তুমি বললে না। আত্মপ্রচার তুমি পছন্দ করো না। আমি নিজেও অবশ্য জানি। তুমি পছন্দ করো না বলে আমি খুব বেশি চাপ দিইনি।
কাজটা কে করল বলতে পার?
আমি জেনে দিতে পারব। তুমি জানতে চাও?
হুম। জানতে চাই। যে করেছে সে হয়ত না জেনেই করেছে।
জেনে করুক আর না জেনে করুক; কাজটা যে খুব ভালো করেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

মোহিনী কোনো কথা বলেন না। তিনি চুপ করে আছেন। মোহিনী কোনো কথা বলছেন না দেখে আসিফ আহমেদ বললেন, কি ব্যাপার! কিছু বলছ না যে! তোমার ওপর আমরা একটা আর্টিকেল করে দিই?
না না। কোনো দরকার নেই। এটা বাবা দেখলে ভীষণ রাগ করবেন। তাকে যে কি করে সামলাবো সেটা নিয়ে ভাবছি।
হুম। উনিও তো আত্মপ্রচার একদম পছন্দ করেন না।
হ্যাঁ। আমার চেয়ে কিন্তু বাবা অনেক বেশি সহায়তা করছেন। অথচ কেউ জানেও না। আসলে বাবা জানতে দেন না। আমারটা দেখলে উনি কি ভাববেন কে জানে?
তুমি তো আর নিজে করাওনি! তুমি এটাই তাকে বলে দেবে।
হুম। তারপর তোমার কথা বলো। কেমন আছ?
আর বোলো না। আয়-রোজগার একেবারেই কমে গেছে। বেসরকারি বিজ্ঞাপন একেবারেই নেই। কিছু সরকারি বিজ্ঞাপন পাচ্ছি। তার টাকা কবে পাওয়া যাবে তার কোনো ঠিক নেই। এদিকে ঠিকমতো বেতন দিতে পারছি না।
সে কী! বেতন দিতে পারছ না মানে? এতো বড় প্রতিষ্ঠান! আর তোমরা বেতন দিতে পারছ না? এটা কেউ বিশ্বাস করবে?
সেটাই তো কথা। মানুষ ভাবে, আমরা না জানি কত সুখে আছি। বড় কোম্পানিতে চাকরি করি। টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই। যত বড় ঝড় আসুক তা সামাল দেওয়া কোনো ব্যাপার না। অথচ আলোর নিচে যে অন্ধকার তা কেউ বুঝতে চায় না। আরও সমস্যা কি জানো?
কি?
বেসরকারি বিজ্ঞাপনদাতারা বলে, এতোবড় কোম্পানির পত্রিকা! আমরা কেন বিজ্ঞাপন দেব? ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন থেকে আমরা বঞ্চিত। ব্যাংকগুলোর বিজ্ঞাপন পাই না। কারণ, আমাদের মূল প্রতিষ্ঠান প্রায় সবগুলো ব্যাংক থেকেই ঋণ নিয়ে বসে আছে। কত যে ঝামেলায় আছি তা যদি বুঝতে?
তাই বলে এই সময় বেতন না দিলে..মোহিনী আমতা আমতা করে বললেন।
সে কথাই তো তোমাকে বলছি। এরা কতই বা বেতন পায়। অথচ আমরা ঠিকমতো বেতন দিতে পারছি না। সবার মধ্যে দুশ্চিন্তা ভর করেছে। কারো মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।
তোমার চেয়ারম্যানকে বলো, বেতনের টাকাটা অন্তত দিক। তোমরা তো মূল প্রতিষ্ঠানের অনেক বিজ্ঞাপনও ছাপো। তাই না?
হ্যাঁ। কিন্তু সেই টাকা চাওয়া যাবে না। বুঝতে পারছ? সেই টাকা চাইতে গেলেই দোষ।
এখন তো একটা বিপদের সময়। তুমি বুঝিয়ে বললে নিশ্চয়ই দেবে।
আসিফ আহমেদ বললেন, তুমি কি ভেবেছ আমি বলিনি? অনেকবার বলেছি। চেয়ারম্যান বললেন, এক পয়সাও আমি দিতে পারব না। আমি দেবো কোত্থেকে? বরং এই পত্রিকা করে আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। কেন যে জেদের বশে পত্রিকা করতে গেলাম! অথচ এই পত্রিকার কারণে যে তারা টিকে আছে সে কথা বেমালুম ভুলে গেছে।
কি আর করবে? ধৈর্য ধরো। এছাড়া আর কি বলব?
ধৈর্য কত ধরা যায়? ধৈর্যেরও তো একটা সীমা আছে। সরি, তোমাকে অনেক কথা বলে ফেললাম মোহিনী। কিছু মনে কোরো না।
না না! কি বলো! শোনো, আমাদের কাছে বিজ্ঞাপনের কোনো টাকা পাওনা থাকলে আমাকে বোলো। আমি দিয়ে দেব।
আসিফ আহমেদ সন্তুষ্টির সঙ্গে বললেন, ধন্যবাদ মোহিনী। অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থেকো। সাবধানে থেকো।
হুম। সাবধানে তো থাকতেই হবে। তা না হলে সবকিছু যে ওলোটপালোট হয়ে যাবে। তুমিও ভালো থেকো। ধন্যবাদ।

মোহিনী টেলিফোন রেখে আবার পত্রিকাটা হাতে নেন। প্রতিবেদনটা ভালো করে দেখেন। এরমধ্যেই রহিমাবিবি হন্তদন্ত হয়ে মোহিনীর কক্ষে ঢুকে বলল, আপামনি, আপামনি! আপনারে খালু ডাকতাছে?
মোহিনী রহিমাবিবির দিকে তাকিয়ে রইলেন। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর তিনি বললেন, বাবা কি করছেন রে?
নাশতা করতেছেন। আপনারে ডাকতেছেন।
মা কোথায়?
খালাম্মাও নাশতা করতেছেন।
ও। আচ্ছা যাচ্ছি।
রহিমাবিবি চলে যায়। মোহিনী ভাবেন, বাবা কি পত্রিকাটা দেখেছেন? আমার নিউজটা তার কি চোখে পড়েছে? এ বিষয়ে বাবা আমাকে কিছু বলতে পারেন। নিশ্চয়ই বলতে পারেন। তা বলুন। আমি তো নিজের থেকে নিউজটা করাইনি। ওরা নিজেরাই করেছে। আমি জানিও না। এ কথাই বাবাকে বলব।
মোহিনী খাবার ঘরে পা রেখেই বললেন, শুভ সকাল বাবা। কেমন আছো?
শুভ সকাল। আমি ভালো আছি মা। তুমি কেমন আছো? ঘুম হয়েছে তো?
হ্যাঁ বাবা। হয়েছে। ভালো ঘুম হয়েছে। বাবা, আজ একটা কাণ্ড ঘটে গেছে।
মোহসীন আহমেদ মুখের খাবার এপাশ ওপাশ করে গিলে ফেললেন। কি ঘটেছে মা?
ও তুমি দেখনি!
দেখেছি। তুমি কি কাণ্ড ঘটেছে সেটা আগে বলো!
বাবা, প্রথম আলো পত্রিকায় আমাকে নিয়ে একটা ফিচার লিখেছে। এটা দেখেছ?
হুম। দেখলাম। তুমি করিয়েছ নাকি?
না না বাবা! আমি কেন করাতে যাব? পড়ে কি তোমার তাই মনে হয়েছে?
না। তা মনে হয়নি।
আনোয়ারা বেগম বললেন, কি লিখেছে রে?
মোহসীন আহমেদ বললেন, ওকে নিয়ে পত্রিকায় একটা ফিচার করেছে। বেশ ভালো লিখেছে। ওর মানবিক কাজের স্বীকৃতি দিয়েছে আর কি!
তাই নাকি! দেখিনি তো! আজকের পত্রিকায়?
মোহিনী বললেন, হ্যাঁ মা। ওরা নিজেরাই করেছে। আমার সঙ্গে কথাও বলেনি।
মোহসীন আহমেদ বললেন, আমি জানতাম, তুমি নিজের থেকে এটা করাবে না। করাতে পার না। আফটারঅল, তুমি আমার মেয়ে।
এই! শুধু আমার মেয়ে কেন বললে? আমি কি মানবিক নই?
সরি সরি। আমাদের মেয়ে।
ঠিক বলেছ বাবা। আমি সব সময়ই সে বিষয়ে সতর্ক। আমি নিজেও আত্মপ্রচার পছন্দ করি না। অনেকেই আমার সাক্ষাৎকার নিতে চেয়েছে। আমাকে অনুরোধ করেছে। আমার এক বন্ধু আছে পত্রিকার সম্পাদক।
তোমার বন্ধু সম্পাদক!
হ্যাঁ বাবা।
কে সে?
আসিফ আহমেদ।
ও তাই নাকি! ও তো খুব ভালো ছেলে! খুবই ভালো সাংবাদিক।
হ্যাঁ বাবা। ভীষণ সৎ।
ও কি বলে? মোহসীন আহমেদ জানতে চাইলেন।
মোহিনী বললেন, আমাকে নিয়ে একটা লেখা লেখাতে চেয়েছিল। আমি রাজি হইনি।
ধন্যবাদ। তারপর, তোমার ব্যবসার কি অবস্থা?
চলছে বাবা। বাইরের কিছু অর্ডার পেন্ডিং আছে। অসুবিধা হবে না আশা করছি।
বেশ বেশ।
বাবা, আমার কাজকর্ম ঠিক আছে তো?
হ্যা মা। একদম ঠিক আছে। ঠিক না থাকলে বলতাম।
ধন্যবাদ বাবা।
মোহিনী পত্রিকাটা তোর কাছে আছে?
হ্যাঁ মা। আমি তোমাকে দেখাচ্ছি।

মোহসীন আহমেদ দরাজ গলায় রহিমাবিবিকে ডাকলেন। রহিমাবিবি, রহিমাবিবি! আজকের পত্রিকাটা নিয়ে আয় তো!
রহিমাবিবি পত্রিকা নিয়ে দৌড়ে খাবার ঘরে এসে মোহসীন আহমেদের হাতে পত্রিকা দেয়। তিনি মোহিনীকে নিয়ে লেখা প্রতিবেদনটি বের করে আনোয়ারা বেগমের হাতে এগিয়ে দেন। তিনি গভীর মনোযোগে পড়তে শুরু করেন। মোহিনী চায়ের কাপ হাতে নিয়ে নিজের কক্ষের দিকে এগিয়ে যান।

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১৬

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১৫

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১৪

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১২

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১১

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১০

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৮

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৭

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৬

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৫

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৪

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১

আরএ/

 

 

 

Header Ad

পঞ্চগড়ে ৫০০ টাকায় সন্তান বিক্রি, অতঃপর যা ঘটল...

ছবি: সংগৃহীত

পঞ্চগড়ে ৫০০ টাকার বিনিময়ে নয় মাসের শিশু সন্তানকে দত্তক দেন শরীফা খাতুন নামে মানসিক ভারস্যমহীন এক মা। বিষয়টি জানতে পেরে গতকাল শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ওই নবজাতককে উদ্ধার করে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশের সহায়তায় ওই শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফেরত দেন।
মানসিক ভারসাম্যহীন নারী শরীফা খাতুন বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের জেমজুট মুসলিমবাগ এলাকায় তিন সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালান।

প্রতিবেশী ও পরিবারের সদস্যরা জানান, গত এক বছর আগে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় শরীফা খাতুনের। এর পর সন্তানদের নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে চলত তার পরিবার।

গত মঙ্গলবার নিজের ৯ মাসের কন্যা সন্তানকে পঞ্চগড় পৌরসভার দক্ষিণ তেলিপাড়া এলাকায় একটি হলুদ খেতে রেখে ভিক্ষা করতে যান শরীফা খাতুন। এ সময় শিশুটিকে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে স্থানীয় রুনা আক্তার নামে এক নারী; একইসঙ্গে শরীফাকেও নিজ বাড়িতে নেন তিনি। রুনা নামে ওই নারীর নিজ সন্তান না থাকায় শিশুটিকে দত্তক নিতে চাইলে, ৫০০ টাকার বিনিময়ে রেখে চলে যান শরীফা।

এরপর চার দিন পর অবশেষে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় নিজ পরিবারের কাছে ফিরেছে শিশুটি। বর্তমানে শিশুটিকে দেখভাল করছেন মানসিক ভারসামহীন শরীফার ১৬ বছরের বড় ছেলে নয়ন।

এ বিষয়ে শরীফার ছেলে নয়ন ইসলাম বলেন, গত চার দিন আগে মা বোনকে নিয়ে হঠাৎ পঞ্চগড়ে যান। পরে একসময় বাড়িতে একাই এসে ঘরে তালা লাগিয়ে বন্দি অবস্থায় থাকতে শুরু করেন। বোন কোথায় তা জানতে চাইলে কোনো কিছুই জানাচ্ছিলেন না।

পরে অনেক কৈশলে বোনের অবস্থান জানতে পারি। এরপর সেই বাড়িতে গিয়ে বোনকে ফেরত চাইলে তারা দিতে অস্বীকার করেন। আরও জানতে পারি মা বোনকে নেবেন না বললে তারা ৫০০ টাকা মাকে খেতে দিয়ে একটা কাগজে স্বাক্ষর করে নেন। শুক্রবার সাংবাদিক ও পুলিশ এসে তদন্ত করে আমার বোনকে আনতে নির্দেশ দিলে মাকে সঙ্গে নিয়ে বোনকে বাড়িতে নিয়ে আসি।

স্থানীয় মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেক আগে থেকে ওই নারীকে দেখছি। তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে পরিবার চালান। তবে কয়েকদিন আগে নিজের সন্তানকে মানুষের কাছে দিয়ে প্রায় পাগল হয়ে বেড়াচ্ছিলেন।

কাজলা নামে স্থানীয় এক নারী বলেন, সকালে শরিফা আমার কাছে এসে আমার পা জড়িয়ে ধরেছেন আর বলেছেন আপু যেভাবেই পারো আমার মেয়েকে এনে দাও।

প্রতিবেশীরা বলেন, স্বামী না থাকায় পরিবারটা চালাতে শরীফা খাতুন ভিক্ষা করতেন। এর মাঝে এমন কাণ্ড ঘটে তিনি পাগল হয়ে গেছেন। তার তিনটা সন্তান। একটা ছেলে ও দুটি মেয়ে। এদের কি হবে আমরা জানি না। তবে সরকারি সহায়তা পেলে তাদের গতি হতো।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, আগের বিষয়টি আমাদের কেউ জানায়নি। খবর পাওয়ার পর পঞ্চগড় সদর থানার ওসিকে জানানো হয়। বিষয়টি পুলিশের হস্তক্ষেপে সুষ্ঠু সমাধান করে ভারসাম্যহীন নারীর কাছে তার বাচ্চা ফেরত দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, যেহেতু ওই নারীর বাড়ি বোদা উপজেলায়, সেখানকার ইউএনওকে জানিয়ে সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।

Header Ad

অ্যান্টিগায় প্রথম দিন শেষে স্বস্তিতে টাইগাররা

ছবি: সংগৃহীত

অ্যন্টিগার পেস সহায়ক উইকেটে নতুন বলের বাড়তি সুবিধা বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছিল বাংলাদেশ। দিনের প্রথম সেশনে দ্রুত দুই উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চাপে ফেলেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সময় গড়াতেই বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় দুই ক্যারিবিয়ান ব্যাটার মিকাইল লুইস ও আলিক অ্যাথানেজকে। জুটি গড়ে দুজনের ছুটতে থাকেন শতকের পথে। কিন্তু দুজনের কারও প্রত্যাশা পূরণ হতে দেয়নি বাংলাদেশ। দিনের শেষভাগে নার্ভাস নাইন্টিতে দুজনকে মাঠ ছাড়া করে প্রথম দিনের ইতি টানে বাংলাদেশ।

টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম দিন শেষে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৫০ রান করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ দিকে বৃষ্টি হানা দেয় ম্যাচে। বৃষ্টি থামার পর আলোক স্বল্পতায় ৮৪ ওভার হওয়ার পরই দিনের খেলা শেষ করেন আম্পায়াররা।

টস জিতে বোলিংয়ে নেমে মেডেন ওভারে শুরুটা ভালো করেন হাসান মাহমুদ। অন্যপ্রান্তে আরেক পেসার শরিফুল ইসলামও মেডেন ওভার নেন। উইকেটের দেখা না পেলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার কার্লোস ব্রাথওয়েট ও লুইসকে বেশ কয়েকবার পরাস্ত করেন বাংলাদেশের দুই পেসার।

ইনিংসের অষ্টম ওভারে প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে আনা হয় তাসকিন আহমেদকে। এই পেসারই প্রথম ব্রেকথ্রু দেন দলকে। ১৪তম ওভারে তাসকিনের অফ স্টাম্পে পড়ে একটু ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে ডিফেন্স করেছিলেন ব্রাথওয়েট। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়কের ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে বল আঘাত হানে পায়ে। বাংলাদেশের ফিল্ডারদের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দেন। যদিও তৎক্ষণাৎ রিভিউ নেন ব্রাথওয়েট। তবে সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয়নি।

তিনে নেমে টিকতে পারেননি কেসি কার্টি। ডানহাতি ব্যাটারকেও ফিরিয়েছেন তাসকিন। উইকেটে আসার পর থেকেই তাড়াহুড়ো করছিলেন তিনি। তাসকিনের মিডল এবং লেগ স্টাম্পের লেংথ ডেলিভারিতে ফ্লিক করার চেষ্টায় লিডিং এজ হয়ে মিড অনে থাকা তাইজুল ইসলামকে ক্যাচ দিয়েছেন কার্টি।

২৫ রানে দুই উইকেট হারানোর পর তৃতীয় উইকেট জুটিতে দলকে পথ দেখান লুইস ও কেভম হজ। তবে হজ ২৫ রান করে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফিরলে ভাঙে ৫৯ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি।

এরপর বাংলাদেশকে বেশ ভুগিয়েছে লুইস ও আথানজে জুটি। দুজনেই সেঞ্চুরির পথে ছিলেন। তবে সম্ভাবনা জাগিয়েও কেউই মাইলফলক ছুঁতে পারেননি।

ইনিংসের ৭৫তম ওভারে মিরাজের বলে বেরিয়ে এসে ছক্কা মারতে গিয়ে টাইমিংয়ে ভুল করেন লুইস। ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় স্লিপে। ক্যাচ নিতে ভুল করেননি শাহাদাত হোসেন দিপু। নব্বইয়ের ঘরে ২৬ বল আটকে থেকে আউট হন লুইস। ফলে ভেঙে যায় ২২১ বলে ১৪০ রানের জুটি। ২১৮ বলে এক ছক্কা ও নয় চারে ৯৭ রান করেন এই ওপেনার।

এর কিছুক্ষণ পরই ফিরেছেন আথানজেও। তাইজুলের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি স্কুপের মতো খেলেছিলেন আথানজে। যদিও তেমন গতি না থাকায় তার ব্যাটে লেগে বল উপরে উঠে যায়। সহজ ক্যাচ নেন উইকেটরক্ষক লিটন। দশটি চার ও একটি ছক্কায় ১৩০ বলে ৯০ রান আসে বাঁহাতি এই ব্যাটারের ব্যাটে। তিন রানের মধ্যে দুই সেট ব্যাটারকে ফিরিয়ে লড়াইয়ে ফেরার সম্ভাবনা জাগায় বাংলাদেশ।

Header Ad

সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন পরীমণির প্রথম স্বামী

ছবি: সংগৃহীত

সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন চিত্রনায়িকা পরীমনির প্রথম স্বামী ইসমাইল হোসেন জমাদ্দার (৪২) ।

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) ভোর রাতে ঢাকা-ভাঙ্গা মহাসড়কের শিবচরের পাচ্চর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত ইসমাইল জমাদ্দার মঠবাড়িয়া উপজেলার মিরুখালী ইউনিয়নের ছোট শৌলা গ্রামের ব্যাংক কর্মকর্তা জাকির হোসেন জমাদ্দারের ছেলে।

নিহত ইসমাইল হোসেনের চাচা কবির হোসেন জমাদ্দার বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে ঢাকা যাচ্ছিলেন ইসমাইল ও তার বন্ধু মনির। শুক্রবার ভোর রাতে ঢাকা-ভাঙ্গা হাইওয়ের শিবচরের পাচ্চর এলাকায় একটি ট্রাক তাদের মোটরসাইকেলটিকে পিছন থেকে ধাক্কা দেয়। আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইসমাইলকে মৃত ঘোষণা করেন।

ইসমাইলের বন্ধু মনিরকে ঢাকা মেডিকেল থেকে আগারগাঁও পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে মনিরের একটি পা কেটে ফেলা হয়েছে। মনির এখনো ওই হাসপাতালেই আছেন, বলে জানান তিনি।

শুক্রবার রাতে ইসমাইলের লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। রাতেই জানাজা শেষে ছোট শৌলা গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়েছে বলেও জানান তার চাচা।

এ বিষয়ে শিবচর হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকিল আহমেদ বলেন, শুক্রবার ভোর রাতের কোন এক সময়ে ঢাকা-ভাঙ্গা মহাসড়কের মাদারীপুরের শিবচরের পাচ্চর এলাকায় একটি দুর্ঘটনায় ইসমাইল হোসেন জমাদার নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে কীভাবে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মরদেহ শনাক্তের পর পরিবারের কাছে তা হস্তান্তর করা হয়েছে।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

পঞ্চগড়ে ৫০০ টাকায় সন্তান বিক্রি, অতঃপর যা ঘটল...
অ্যান্টিগায় প্রথম দিন শেষে স্বস্তিতে টাইগাররা
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন পরীমণির প্রথম স্বামী
বিচারের আগে আ.লীগের মাঠে থাকার সুযোগ নেই: উপদেষ্টা নাহিদ
মাকে হত্যার পর থানায় হাজির ছেলে
৮ ক্রিকেটারসহ ৯ জনকে নিষিদ্ধ করলো বিসিবি
উপদেষ্টাদের যাচ্ছেতাই কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া হবে না: রিজভী
ভিসা কবে উন্মুক্ত করবে সেটা ভারতের নিজস্ব ব্যাপার: হাসান আরিফ
জুরাইন রেলক্রসিং ছাড়লেন রিকশাচালকরা, ৪ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু
পাঁচ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা
সাফজয়ী নারী ফুটবলার আইরিনকে নওগাঁয় সংবর্ধনা
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দেবে পাকিস্তান
বেনাপোলে সীমান্ত থেকে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল উদ্ধার
পুলিশ-অটোরিকশা চালক সংঘর্ষ, ঢাকা-পদ্মা সেতু ট্রেন চলাচল বন্ধ
ভারতীয় সাবমেরিনের সঙ্গে মাছ ধরা নৌকার সংঘর্ষ, নিখোঁজ ২
সংসার ভাঙার দুদিন পরই সুখবর দিলেন এ আর রহমান
ঢাকায় পৌঁছেছেন বাইডেনের বিশেষ প্রতিনিধি
আ.লীগকে নির্বাচনের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে যা বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ
যুদ্ধবিধ্বস্ত লেবানন থেকে ফিরলেন আরও ৮২ বাংলাদেশি
পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা, নিহত ৪৫