শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ১২

বিষাদ বসুধা

অফিসের গেটের সামনে মোহিনীকে বহনকারী পাজেরো জিপটি এসে থামে। ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে পেছনের দরজা খোলার জন্য এগিয়ে যায়। দরজা খুলে কুর্ণিশের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকে সে। এই কাজটি মোহিনীর পছন্দ নয়। অনেকবার ড্রাইভারকে তিনি বলেছেন। ওমন কুর্ণিশের ভঙ্গিতে তুমি দাঁড়াবে না। আমার ভালো লাগে না। তারপরও সে এই কাজটি করে। আসলে এটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আগে যেখানে সে চাকরি করত— সেখানে এ রকম নির্দেশনাই ছিল। সেখানে সে টানা দশ বছর চাকরি করেছে। অজ্ঞাত কারণে তার চাকরি চলে যায়। মাস খানেক আগে সে মোহিনীর ড্রাইভার হিসেবে যোগ দিয়েছে। দশ বছরের অভ্যাস হঠাৎ করে বদলাবে কি করে?

মোহিনী হাতে ব্যাগ নিয়ে গাড়ি থেকে নামল। দুএক কদম সামনে এগোতেই মোহিনী কিছুটা হোচট খেলেন। তিনি গেটের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়ালেনও। চারদিকে তাকিয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করলেন। হঠাৎ তার বুকটা কেমন যেন কাঁপন দিয়ে উঠল। আগে কখনো এমনটি হয়নি। এমন থমথমে পরিবেশও কখনো দেখেননি। হাজারো প্রশ্ন তার মাথায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে। পরিবেশটা এমন মনে হচ্ছে কেন? কি হয়েছে? কোনো অঘটন কি ঘটেছে?

মোহিনী মনে মনে ভাবেন, নিশ্চয়ই কিছু ঘটেছে। তা না হলে এমন লাগবে কেন? এমন হবেই বা কেন? আমার নিজের অফিস। অথচ নিজের কাছেই অচেনা মনে হয়। কি ঘটতে পারে? এমনটি ভাবতে ভাবতেই মোহিনীর সিঁড়ির উপর পা রাখলেন। এরমধ্যেই মোহিনীর একান্ত সহকারি শাহনাজ বেগম হুড়মুড় করে তার সামনে দাঁড়াল। কাচুমাচু করে বলল, সরি ম্যাম, একটু দেরি হয়ে গেল!
শাহনাজ, অফিসে কি হয়েছে বলো তো?
জি ম্যাম বলছি। আপনি অফিসে বসার পর বলি!
আচ্ছা ঠিক আছে। অফিসের কি অবস্থা? সবাই এসেছে তো?
জি ম্যাম।
অফিসের কারো কোনো সমস্যা হয়েছে?
জি ম্যাম।

কার সমস্যা? কি সমস্যা? তুমি এমন রাগঢাক কেন করছ? তাড়াতাড়ি বলো।
বলছি ম্যাম। আপনি বসুন।

মোহিনী হাতের ব্যাগ পাশে রেখে নিজের চেয়ারে বসলেন। শাহনাজ বেগম এই সময়টুকুর জন্যই অপেক্ষা করছিল। মোহিনী চেয়ারে বসার পরই বলল, ম্যাম একটা দুঃসংবাদ আছে।
সেটাই তো আমি জানতে চাচ্ছি। দুঃসংবাদটা কি?

শফিকুর রহমান সাহেব করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তার লাশ পরিবারের কাছে দেয়নি। সরকারিভাবে দাফন করা হয়েছে।
তাই নাকি! ওহ! বুঝতে পারছি। ছোঁয়াচে রোগ। অন্যদের মধ্যে যাতে না ছড়াতে পারে সেজন্যই এই ব্যবস্থা। আচ্ছা, তার বাসায় কে কে আছে?
তার স্ত্রী আর দুই ছেলে মেয়ে।
তার স্ত্রীকে ফোনে ধরো। আমি কথা বলব।
জি ম্যাম।

শাহনাজ বেগম মোহিনীর কক্ষ থেকেই ফোন করে শফিকুর রহমানের বাসায়। শফিকুর রহমানের স্ত্রী সুলেখা ফোন ধরেন। শাহনাজ বেগম ফোনে বলে, আমি শফিক সাহেবের অফিস থেকে বলছি। ম্যাম কথা বলবেন। তারপর সে ফোনের রিসিভারটা মোহিনীর হাতে এগিয়ে দেয়। মোহিনী ফোন ধরতেই টেলিফোনের ওপাশ থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসে। মোহিনী ফোনের রিসিভার কানে ধরে থাকেন। মোহিনী কারো কান্না সহ্য করতে পারেন না। কান্নার শব্দ তাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। তার চোখে পানি আসে। তিনিও কাঁদেন। এক পর্যায়ে সুলেখা বললেন, আমরা বুঝতেই পারলাম না, কিভাবে কী হয়ে গেল! হঠাৎ করেই শফিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। হাসপাতালে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোমায় চলে যায়। সেখান থেকে আর ফিরল না। আমরা তাকে এক নজর দেখতেও পারলাম না! এখন আমাদের কি হবে? আজ বিকালে আমাদের তিনজনকেই হাসপাতালে নিয়ে যাবে। আমরাও আক্রান্ত কি না তা পরীক্ষা করবে।
মোহিনী বেদনাহত কণ্ঠে বললেন, আপনি কোনো চিন্তা করবেন না ভাবি। আমরা আছি আপনার পাশে। আমরা থাকবো সব সময়। আমাদের প্রতিষ্ঠানেই আপনি চাকরি করবেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুলেখা শফিক বললেন, ধন্যবাদ আপা। শুনছি আপনি মানুষকে অনেক উপকার করেন। সাধারণ মানুষের পাশে থাকেন। সেই জন্যই কিছুটা ভরসা পাচ্ছি। অন্তত ছেলে মেয়ে নিয়ে পথে বসতে হবে না।

না না। কি বলেন? এ ধরনের নেতিবাচক চিন্তা মনেও আনবেন না। যে কোনো প্রয়োজনে আমাকে ফোন দেবেন। কোনো রকম দ্বিধা রাখবেন না। শফিক সাহেব অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি এই প্রতিষ্ঠানে অনেক দিয়েছেন। আমরা থাকতে তার পরিবার বিপদে হাবুডুবু খাবে তা হতে পারে না। আপনাদেরকে কোন হাসাপাতালে নেবে, কুর্মিটোলায় নাকি মুগদাতে?
সম্ভবত কুর্মিটোলায়। আমি জানাবো। আপনার মোবাইল নম্বরটা যদি দেন…।

মোহিনী মোবাইল নম্বর দিয়ে সুলেখা শফিকের কাছ থেকে বিদায় নিলেন। তারপর শাহনাজ বেগমকে উদ্দেশ করে বললেন, তুমি ওনার সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রেখ। যখন যা দরকার হয় তা দিও। তাকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে কোনো রকম কার্পণ্য করবে না। তুমি বরং এখনই তার বাসায় কাউকে দিয়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দাও। বুঝতে পারছ?
জি ম্যাম।
দেরি কোরো না। উনি হাসপাতালে যাওয়ার আগেই তার হাতে যেন টাকাটা পৌঁছে।
জি জি।
আর শোন, প্রশাসনের জিএমকে আমার কক্ষে পাঠাও।
জি ম্যাম।

শাহনাজ বেগম বের হয়ে নিজের কক্ষে যায়। ইন্টারকমে প্রশাসনের জিএম আবুল কালামকে ফোন মোহিনীর কক্ষে যাওয়ার জন্য বলে। আবুল কালাম সঙ্গে সঙ্গে মোহিনীর কক্ষে এসে হাজির হয়। মোহিনী তাকে উদ্দেশ করে বলেন, শফিক সাহেবের সঙ্গে যারা কাজ করতেন তাদেরকে হোম কোয়ারিন্টিনে পাঠিয়ে দেন। পুরো অফিসকে আবারও খুব ভালো করে সেনিটাইজ করান। বাইরের লোক আসা-যাওয়া আপাতত বন্ধ রাখুন। আর অফিসের সামনে সেনিটাইজ করার যাবতীয় ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে। বুঝতে পারছেন?
জি জি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কোথাও সেনিটাইজার পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু কি সেনিটাইজার! ডেটল, স্যাভলন থেকে শুরু করে জীবানু নিরোধন যা যা আছে সব কিনে নিয়ে গেছে।
বলেন কী!
তাহলে আর বলছি কী ম্যাম! হুজুগে বাঙালি কি খামাখা বলে! মানুষ পাগলের মতো বাজার থেকে সব কিনে নিয়ে গেছে। যে যা পেরেছে। আমরা কারওয়ান বাজারে লোক পাঠিয়েছি। যেখান থেকে ফোন করে জানালো কিচ্ছু নেই! পরে আর কী করা, ডেটল কোম্পানিকে বললাম, আমাদেরকে কিছু সেনিটাইজার দিতে। ওরা বলল, কাল সকালে ব্যবস্থা করবে।
মাই গড! এই অবস্থা! তাহলে সাধারণ মানুষের কী হবে! যার টাকা ছিল সে কিনে নিয়ে গেছে। যার টাকা নেই সে নিশ্চয়ই এগুলো কিনতে পারেনি! তাদের সংখ্যাই তো বেশি। তাদের কি হবে?
তাদের আর কী হবে? তাদের ভরসা আল্লাহ!

দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়েন মোহিনী। কিছুক্ষণ পর তিনি বললেন, আরেকটা কথা, আমরা তো অনেককে ছুটি দিয়েছি তাই না?
জি ম্যাম।
তারপরও এতো লোক কেন?
ম্যাম, তারা আমাদের অফিসের গাড়িতেই যাতায়াত করে।
তা করুক। তাদের মুভমেন্ট তো হচ্ছে। ব্যবসা অনেক করেছি। এখন মানুষের বাঁচা-মরার প্রশ্ন। আগে বাঁচতে হবে। বেঁচে থাকলে অনেক ব্যবসা করা যাবে। এরমধ্যেই আমাদের একজন গুরুত্বপূর্ণ লোককে আমরা হারিয়েছি। আর কাউকে হারাতে চাই না।
জি ম্যাম।

চলবে…

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১১

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১০

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৮

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৭

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৬

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৫

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৪

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১

Header Ad
Header Ad

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন—এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এ নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক, যা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (এএনএফআরইএল)-এর একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।

প্রতিনিধিদলে ছিলেন—সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ব্রিজা রোসালেস, বাংলাদেশ নির্বাচন ও গণতন্ত্র কর্মসূচির পরামর্শক মে বুটয়, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার থারিন্ডু আবেরত্না, প্রোগ্রাম অফিসার আয়ান রহমান খান এবং প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট আফসানা আমেই।

এএনএফআরইএল হচ্ছে এশিয়ার একটি নির্বাচনভিত্তিক নাগরিক সংগঠন, যারা বিগত দুই দশক ধরে সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং নাগরিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে।

সাক্ষাতে প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে তাদের চলমান কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করে। তারা জানান, বাংলাদেশে একটি স্বাধীন ও নাগরিকচালিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা স্টেকহোল্ডার ম্যাপিং ও প্রয়োজন নির্ধারণমূলক কর্মকাণ্ডের কথাও তুলে ধরেন, যা দেশের সুশীল সমাজের কার্যকর সম্পৃক্ততা ও নির্বাচনের স্বচ্ছতা বাড়াতে সহায়ক হবে।

প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।

Header Ad
Header Ad

বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী

ছবি: সংগৃহীত

ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ভারত দাবি করছে—বাংলাদেশ নাকি ধ্বংস হয়ে গেছে, এ দেশ আর টিকে নেই। এসব বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই, এটি দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।

শনিবার দুপুরে নাটোর জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে জিয়া পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। রিজভী বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাদের জাতীয়তাবাদ, স্বাধীনতা ও আত্মপরিচয়ের ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন। সেই পথেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আজও জনগণের দল হিসেবে টিকে আছে। বিএনপি এমন একটি দল, যাকে কোনো ষড়যন্ত্র দিয়ে দমিয়ে রাখা যায় না।

ভারতকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না, তারা চায় এই দেশ ভারতের অনুগত হয়ে থাকুক। তাই তারা একটি তাবেদার রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখেছে। শেখ হাসিনার মাধ্যমে তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনের ছত্রছায়ায় এই সরকার গুম, খুন, দমন-পীড়নের রাজনীতি চালিয়ে গেছে। সেই শাসনব্যবস্থাকে রক্ষা করতে ভারত মদত দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন—ভারতকে যা দিয়েছেন, তারা তা সারা জীবন মনে রাখবে। জনগণ এখন সেই কথার অর্থ বুঝতে পেরেছে। দেশের সম্পদ লুটপাট, টাকা পাচার, বিরোধীদের দমন—সবই করা হয়েছে ভারতের আশীর্বাদে। এখন ভারত তাদের সহানুভূতি দেখাচ্ছে, কারণ তারা চায় বাংলাদেশকে নিজেদের প্রভাবাধীন রাখতেই।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন নাটোর জিয়া পরিষদের সভাপতি আহমুদুল হক চৌধুরি স্বপন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. শফিকুল ইসলাম।

প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। আরও বক্তব্য রাখেন জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী মহাসচিব প্রফেসর ড. মো. এমতাজ হোসেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, রাজশাহী বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সালাম বিপ্লব, নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ, সদস্য সচিব মো. আসাদুজ্জামান আসাদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

বক্তারা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বিদেশি প্রভাবের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার আহ্বান জানান।

Header Ad
Header Ad

ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন ভূঞাপুর ছাড়াও আশপাশের গোপালপুর, ঘাটাইল ও কালিহাতী উপজেলার অসংখ্য মানুষ। তবে জনগুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটি বর্তমানে নিজেই এক অসুস্থ প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে।

বছরের পর বছর ধরে চলে আসা নানা অব্যবস্থাপনা, জনবল ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ—সব মিলিয়ে এই সরকারি হাসপাতালটি এখন রোগীদের ভোগান্তির আরেক নাম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ভিতর ও বাইরের পরিবেশ একেবারেই নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা থেকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ, যা রোগী ও তাদের স্বজনদের দীর্ঘ সময় ধরে সইতে হচ্ছে। বিশেষ করে টয়লেটের অবস্থা ভয়াবহ; অধিকাংশ টয়লেট ব্যবহারের অযোগ্য এবং পরিচ্ছন্নতার কোনো ব্যবস্থাই নেই। পুরুষ ও নারী ওয়ার্ড উভয়ের রোগীরা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

 

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় হাসপাতাল কার্যত অন্ধকারে ডুবে যায়। হাসপাতালে একটি জেনারেটর থাকলেও তা চালু করা হয় না এবং সেটিও বহু পুরনো। হাতে গোনা কয়েকটি চার্জিং বাল্ব থাকলেও সেগুলোর অনেকগুলোর আলো টিকেই না, কিছু সময় পর বন্ধ হয়ে যায়। শিশু ওয়ার্ডের (ডায়রিয়া) মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চার্জিং বাল্ব পর্যন্ত নেই। ফলে রাতের বেলায় এক ভয়ংকর ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আলো না থাকায় নার্সদের মোবাইল ফোনের ফ্ল্যাশলাইট ব্যবহার করে সেবা দিতে দেখা গেছে।

চরম গরমে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা। শিশু ওয়ার্ডে থাকা আটটি ফ্যানের মধ্যে তিনটি সম্পূর্ণ নষ্ট, আর যেগুলো সচল রয়েছে, বিদ্যুৎ না থাকায় সেগুলোও চলে না। ফলে শিশু রোগীরা ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস করছে, তাদের স্বজনরা হাতপাখা বা চার্জার ফ্যান নিয়ে চেষ্টা করছেন কিছুটা স্বস্তি দিতে।

হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রবেশ করে দেখা যায়, মেঝেতে ময়লার দাগ, দেয়ালে থুতু, কফ ও পানের পিকের ছিটা। শয্যা ও ওষুধ রাখার ট্রেগুলোতেও দেখা গেছে মরিচা ও জমে থাকা ময়লা। এসব স্থানে মাছি ঘুরে বেড়াচ্ছে অবলীলায়, যা পুরো হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকে আরও প্রকট করে তুলেছে।

এমন পরিবেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী, যিনি হাসপাতালের বারান্দায় ফ্যানহীন পরিবেশে ভর্তি রয়েছেন। অভিযোগ করে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেওয়ার পরও কোনো বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়নি। টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগিতা নিয়েও তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তিন মাসের শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোজিনা বেগম বলেন, টয়লেটের অবস্থার কারণে তিনি পানি ও খাবার খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন, যেন টয়লেট ব্যবহার না করতে হয়। টয়লেটে ঢোকা তো দূরের কথা, পাশে দাঁড়ানোও কষ্টকর হয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে।

গোপালপুর উপজেলার বড়শিলা গ্রামের রোগীর স্বজন সাজেদা বেগম বলেন, এখানে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীর স্বজনরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কোনো অভিযোগ করার সুযোগ নেই, আর কেউ কিছু বললেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

স্থানীয়দের দাবি, ২০২২ সালে ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) হিসেবে যোগদানের পর থেকেই হাসপাতালের এই বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নার্স জানান, ডা. সোবহান কর্তৃত্ববাদী মনোভাব পোষণ করেন। তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থাকলেও প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো অভিযোগকারীরা বদলি বা হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

তবে আরএমও ডা. খাদেমুল ইসলাম বলেন, “সমস্যা যে নেই, সেটা বলছি না। তবুও আমরা সীমিত জনবল ও সামর্থ্যে কাজ করে যাচ্ছি। শতভাগ কাজ সম্ভব হয় না।”

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান বলেন, “জেনারেটর থাকলেও সেটি চালাতে সরকারি বরাদ্দ নেই। মাঝেমধ্যে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালানো হয়। ক্লিনার মাত্র একজন, মাঝে মাঝে বাইরে থেকে লোক ডেকে এনে পরিষ্কার করাতে হয়। আর ফ্যান বা লাইট যেকোনো সময় নষ্ট হতে পারে, যখন জানা যায়, তখনই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” বীর মুক্তিযোদ্ধার বারান্দায় চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কেভিনের ব্যবস্থা রয়েছে। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সার্বিকভাবে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা যে ভয়াবহ নাজুক অবস্থায় রয়েছে, তা এই চিত্রগুলো স্পষ্ট করে দেয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ নজরদারি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিলে, এই হাসপাতাল রোগীদের সুস্থতার জায়গা হয়ে না থেকে এক ভয়াবহ দুর্ভোগের কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী
ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!
জাতীয় পার্টি কোনো সুবিধাবাদী দল নয়: জিএম কাদের
প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে আইসিইউতে পরিচালক সৃজিত মুখার্জি
জুলাই গণঅভ্যুত্থান যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয় : নাহিদ ইসলাম
আ.লীগের মিছিল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশ
হাসিনা-কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন
নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর সেই শিশু সেহেরিশের লাশ উদ্ধার
আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাজ করছে সরকার
লাল কাপড়ে ঢাকা হবে দেশের সব পলিটেকনিকের ফটক
৬০ বছর বয়সে বিয়ে করলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ
চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে ১২ কেজি রূপার গয়না জব্দ
ফয়জুল করীমকে বরিশালের মেয়র ঘোষণার দাবি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি যুবক নিহত
গোবিন্দগঞ্জে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আটক
বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দিল ভারতীয়রা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠক শনিবার
বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে যা জানাল পাকিস্তান
গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা, শিশুসহ একই পরিবারের ১৩ জন নিহত