শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ১১

বিষাদ বসুধা

ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখে মোহিনী হঠাৎ বিছানা থেকে লাফিয়ে ওঠেন। ভয়ঙ্কর এক স্বপ্ন। এ রকম স্বপ্ন তিনি আগে কখনো দেখেননি। তিনি স্বপ্নে দেখেন, আজব ধরনের একটি প্রাণী পৃথিবীকে গ্রাস করছে। চন্দ্রগ্রহণ সূর্যগ্রহণ যেমনিভাবে হয় ঠিক সে রকমভাবেই পৃথিবী নামক গ্রহটি আজব প্রাণীর পেটে চলে যাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখার পর ভয়ে আতঙ্কে তিনি থরথর করে কাঁপছেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে ঘুমানোর পরও তার শরীর ঘামে চুপচুপে হয়ে গেছে। মুখাবয়বে ছোপ ছোপ ঘাম জমেছে।

সকালে চা দিতে এসে রহিমাবিবি থমকে দাঁড়ায়। সে মোহিনীর দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। তারপর বিস্ময়ের সঙ্গে বলে, কি হএচে আপামণি। আপনের কি হএচে? আপনেরে এই রকম বিধ্বস্ত লাগতেছে কেন আপামণি?

মোহিনী কোনো কথা বলেন না। তিনি চুপচাপ বসে আছেন। রহিমাবিবি তার কাছে এগিয়ে যায়। নরম গলায় বলে, আপামণি আপনেরে এই রকম কেন লাগতেছে। ইহ! ঘরডা তো ঠান্ডা! আপনে এমন কইরা ঘামতেছেন কেন? আপামণি আমারে কন তো!
মোহিনীর দিকে তোয়ালে এগিয়ে দিয়ে রহিমাবিবি বলে, মুখটা মোছেন আপামণি। চা নেন।
মোহিনীর মুখে কোনো কথা নেই। তিনি যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছেন। স্বপ্নের ঘোর। ঘোরটা কিছুতেই কাটছে না। তিনি যতই ঘোর কাটানোর চেষ্টা করছেন ততই যেন ঘোরের অতলে তলিয়ে যাচ্ছেন। রহিমাবিবি খালা খালা বলে ডাকতে ডাকতে ভেতরের কক্ষের দিকে এগিয়ে যায়। মনোয়ারা বেগম কোনো একটা কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি রহিমাবিবির চিৎকার শুনে বিস্ময়ের সঙ্গে বলেন, কি রে রহিমা! কি হয়েছে? এমন করে ডাকছিস কেন?
খালামণি, আপামণির কি জানি হইচে। আপামণি কেমন জানি করতেছে।
সে কী! কি হয়েছে?
জানি না। তাড়াতাড়ি আপনে গিয়া দেহেন খালামণি।
আনোয়ারা বেগম দৌড়ে মেয়ের কক্ষের দিকে এগিয়ে যান। তার সঙ্গে রহিমাবিবিও দৌড়ায়। মোহিনী তখনো স্থির। তিনি একটুও নড়াচড়া করছেন না। আনোয়ারা বেগম মেয়ের পাশে গিয়ে বসলেন। তার দুই কাঁধে হাত রাখলেন। তারপর নরম গলায় বললেন, মা, মা মোহিনী! কি হয়েছে মা?
মোহিনী ঘাড়টা একটু বাঁকা করে আনোয়ারা বেগমের দিকে তাকালেন। আনোয়ারা বেগম মোহিনীর হাত থেকে তোয়ালে নিয়ে তার মুখ মুছে দিতে দিতে বললেন, কক্ষটা তো বেশ ঠান্ডা। তারপরও তুই ঘামছিস মা! ঘটনা কি! তোর শরীর খারাপ নাকি?
আনোয়ারা বেগম কপালে, চোয়ালের নীচে হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন। শরীর স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক! তার কাছে অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। তিনি বললেন, ঠিকই তো আছে। কি হয়েছে মা? বল তো আমাকে?
মোহিনী কোনো কথা বলছেন না। তিনি কী যেন ভাবছেন। তাকে স্বাভাবিক করার জন্য আনোয়ারা বেগম ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তিনি মগ থেকে কাপে চা ঢেলে মেয়ের হাতে দিয়ে বলেন, নে চা নে মা। স্বাভাবিক হ তো! দেখি, আমার দিকে ফিরে বস।
মোহিনী আনোয়ারা বেগমের দিকে ফিরে বসেন। তারপর চায়ের কাপ হাতে নেন। আনোয়ারা বেগম চা খাওয়ার জন্য বলেন। মোহিনী চায়ে চুমুক দেন। আনোয়ারা বেগম তৃপ্তির নিঃশ্বাস ছাড়েন। রহিমাবিবির দিকে তাকিয়ে বলেন, তুই যা। তাড়াতাড়ি নাশতা তৈরি কর। তোর আপা খাবে।
রহিমাবিবি চলে যায়। আনোয়ারা বেগম মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন, এবার বল, কি হয়েছে তোর?
ধরা গলায় মোহিনী বললেন, আমি একটা খুব বাজে স্বপ্ন দেখেছি মা।
বাজে স্বপ্ন! বলিস কি! কি দেখেছিস বলবি আমাকে?
মা, আমি দেখি একটা অদ্ভুত প্রাণী পৃথিবীটাকে গিলে খাচ্ছে। ঠিক চাঁদ সূর্যের যেমন গ্রহণ লাগে তেমনি। প্রাণীটা পৃথিবীকে গিলছে আর সবকিছু ঘোর অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে।
বলিস কী রে!
হ্যাঁ মা। এই স্বপ্নটা দেখে আমার এমন ঘোর লাগছে! আমি কিছুতেই আর ঘোর কাটাতে পারছি না।
আমার মনে হয়, এটা কোনো সতর্কবার্তা। গভীর কোনো সংকট আমাদের সামনে আসছে। করোনা আমাদেরকে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে ঠেলে দিতে পারে।
আমারও ঠিক এ কথাটাই মনে আসছে মা। কিন্তু ভীষণ একটা ভয় মনের মধ্যে ঢুকেছে। আমরা কি সত্যিই শেষ সময়ের দিকে এসে গেছি! মানে, পৃথিবীর আয়ুস্কাল কি ফুরিয়ে এসেছে?
হতে পারে। নানা ধরনের আলামত দেখা যাচ্ছে। তুই ওঠ মা। আজ অফিসে যাবি না?
আজ ভালো লাগছে না।
আচ্ছা ঠিক আছে। তুই বরং গোসল-টোসল করে আয়। আমরা একসঙ্গে নাশতা করি।
যাচ্ছি মা।
যাচ্ছি না। এখনই ওঠ মা। গোসল করে আয়। দেখবি ফ্রেশ লাগছে।
আমিও তাই ভাবছি। ভালো করে গোসল করে আসি।
তাহলে আর দেরি করিস না মা। অনেক বেলা হয়েছে। ওঠ।
তুমি যাও। আমি উঠছি।
আনোয়ারা বেগম চলে গেলেন। মোহিনী অলস ভঙ্গিতে বিছানা থেকে ওঠেন। একপা দুইপা করে বাথরুমের দিকে এগিয়ে যান। ওঠার সময় তিনি হাত পায়ে ব্যথা অনুভব করেন। শরীরের কোনো কোনো জায়গায় ব্যথা টের পান তিনি। মনে মনে বলেন, রাতে কি জ¦র হয়েছিল নাকি? এমন ব্যথা লাগছে কেন? হাঁটতে গিয়েও হাঁটু কেমন ভেঙে আসছে। মনটা আবার খারাপ হয় তার। তিনি আবার বিছানার কাছে ফিরে যান। সাবধানে বিছানার ওপর বসেন। হাতপা নাড়াচাড়া করেন। মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করেন। এরমধ্যে আনোয়ারা বেগম মোহিনী মোহিনী বলে ডাক দেন। তার ডাক মোহিনীর কানে আসে। কিন্তু তিনি কোনো জবাব দিচ্ছেন না। জবাব দিতে ইচ্ছাই করছে না। এখন তার মাথাটা ঝিমঝিম করছে। শরীরটা আরাম চাচ্ছে। তিনি যে বাথরুম পর্যন্ত যাবেন সেই শক্তিও যেন তার শরীরে নেই। আসলে শরীর সায় না দিলে কোনো কিছুই ভালো লাগে না। মোহিনী এবার আড়াআড়িভাবে বিছানায় শুয়ে পড়লেন। শোয়া মাত্রই তার চোখে রাজ্যের ঘুম চলে এলো।
আনোয়ারা বেগম নাশতা রেডি করে মোহিনীকে ডাকেন। মেয়ের সঙ্গে একত্রে নাশতা করবেন। রহিমাবিবিকে ডেকে বললেন, দেখ তো তোর আপামণির কি হলো?
রহিমাবিবি আবার মোহিনীর কক্ষে এলো। তাকে শুয়ে থাকতে দেখে চিৎকার দিয়ে আনোয়ারা বেগমকে ডাকে। খালামণি, খালামণি!
আনোয়ারা বেগম পায়ে পায়ে ছুটে আসেন মোহিনীর কক্ষের দিকে। কাছাকাছি এসে বিস্ময়ের সঙ্গে বলেন, কি হয়েছে! কি হয়েছে রহিমা!
আপামণি আবার ঘুমাই পড়ছে।
আনোয়ার বেগম থ। তিনি ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন। কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর বললেন, থাক। ঘুমাক। চল আমরা যাই।
আনোয়ারা বেগম খাবার ঘরের দিকে পা বাড়ালেন। তার পেছনে পেছনে এগিয়ে যায় রহিমাবিবি।

টিভির সামনে বসে আছেন মোহিনী। তিনি খবর দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন। আনোয়ারা বেগম তার পাশে বসে আছেন। রহিমাবিবি তাদের দুজনের সামনে কফি দিয়েছে। কফির ঘ্রাণটা নাকের ভেতরে এক ধরনের সুড়সুড়ি দিচ্ছে। কফি শপের চেয়েও রহিমার হাতের কফি অনেক বেশি মজার। মোহিনী তাকে এই সার্টিফিকেট দিতে রাজি। তিনি বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে পারলেন না। কফির মগটা হাতে নিয়ে চুমুক দিলেন। রহিমাবিবি মোহিনীর দিকে বিপুল বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল। আপমণির একটা মন্তব্য শোনার অপেক্ষা করছেন তিনি। সেই মন্তব্যটুকুই তার কাছে হাজার টাকার পুরস্কার। এরমধ্যে খবর শুরু হয়েছে। মোহিনী, আনোয়ারা বেগম উভয়েরই গভীর মনোযোগ খবরের দিকে। শুরুতেই করোনা ভাইরাসের খবর। দেশে গত চব্বিশ ঘণ্টায় নভেল করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার সাতশ’ পঁচাত্তর জন। মারা গেছেন একান্ন জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে মারা গেছে আরো এগারো জন। বিশ্বে প্রতি মিনিটে দশ জন মারা যাচ্ছে করোনায় আক্রান্ত হয়ে। এরমধ্যেই বিশ্বের ২০১ টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে করোনা। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এক লাখ পঁচাত্তর হাজার ছয়শ’ উনসত্তর জন্য আক্রান্ত হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইতালি। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ পাঁচ হাজার সাতশ’ বিরানব্বই জন। ইতালির পর স্পেনের অবস্থান। সেখানে আক্রান্ত হয়েছে চৌরানব্বই হাজার চারশ’ সতেরো জন। এশিয়া অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ইরানে। করোনার উৎপত্তি স্থল চীন আছে দ্বিতীয় অবস্থানে। বাংলাদেশে দ্রুত করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। মাস্ক ব্যবহারের জন্য সরকারি তরফ থেকে বার বার নির্দেশনা জারি করা হলেও অনেকেই তা মানছেন না।
খবর শেষ হওয়ার আগেই রহিমাবিবি বলল, আপামণি আমার কফি কেমন হইচে কইলেন না?
ওহ! সেটা শোনার জন্য তুই বসে আছিস? আমি তো ভাবলাম, তুই খবর শুনছিস!
আনোয়ারা বেগম তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বললেন, ও শুনবে খবর! ও ওর কফির প্রশংসা শোনার জন্য বসে আছে।
ওহ! তোর কফি সত্যিই খুব ভালো হয়েছে। কফি শপ তোর কাছে ফেল।
মোহিনীর মুখে প্রশংসা শুনে রহিমাবিবির মুখে হাসি ফোটে। সে আনন্দে লাফিয়ে ওঠে। পারলে সে তার আপামণিকে জড়িয়ে ধরে। এই আনন্দটুকুই হয়তো তার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

চলবে...

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১০

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৯

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৮

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৭

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৬

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৫

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৪

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১

Header Ad
Header Ad

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন—এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এ নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক, যা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (এএনএফআরইএল)-এর একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।

প্রতিনিধিদলে ছিলেন—সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ব্রিজা রোসালেস, বাংলাদেশ নির্বাচন ও গণতন্ত্র কর্মসূচির পরামর্শক মে বুটয়, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার থারিন্ডু আবেরত্না, প্রোগ্রাম অফিসার আয়ান রহমান খান এবং প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট আফসানা আমেই।

এএনএফআরইএল হচ্ছে এশিয়ার একটি নির্বাচনভিত্তিক নাগরিক সংগঠন, যারা বিগত দুই দশক ধরে সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং নাগরিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে।

সাক্ষাতে প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে তাদের চলমান কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করে। তারা জানান, বাংলাদেশে একটি স্বাধীন ও নাগরিকচালিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা স্টেকহোল্ডার ম্যাপিং ও প্রয়োজন নির্ধারণমূলক কর্মকাণ্ডের কথাও তুলে ধরেন, যা দেশের সুশীল সমাজের কার্যকর সম্পৃক্ততা ও নির্বাচনের স্বচ্ছতা বাড়াতে সহায়ক হবে।

প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।

Header Ad
Header Ad

বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী

ছবি: সংগৃহীত

ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ভারত দাবি করছে—বাংলাদেশ নাকি ধ্বংস হয়ে গেছে, এ দেশ আর টিকে নেই। এসব বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই, এটি দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।

শনিবার দুপুরে নাটোর জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে জিয়া পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। রিজভী বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাদের জাতীয়তাবাদ, স্বাধীনতা ও আত্মপরিচয়ের ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন। সেই পথেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আজও জনগণের দল হিসেবে টিকে আছে। বিএনপি এমন একটি দল, যাকে কোনো ষড়যন্ত্র দিয়ে দমিয়ে রাখা যায় না।

ভারতকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না, তারা চায় এই দেশ ভারতের অনুগত হয়ে থাকুক। তাই তারা একটি তাবেদার রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখেছে। শেখ হাসিনার মাধ্যমে তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনের ছত্রছায়ায় এই সরকার গুম, খুন, দমন-পীড়নের রাজনীতি চালিয়ে গেছে। সেই শাসনব্যবস্থাকে রক্ষা করতে ভারত মদত দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন—ভারতকে যা দিয়েছেন, তারা তা সারা জীবন মনে রাখবে। জনগণ এখন সেই কথার অর্থ বুঝতে পেরেছে। দেশের সম্পদ লুটপাট, টাকা পাচার, বিরোধীদের দমন—সবই করা হয়েছে ভারতের আশীর্বাদে। এখন ভারত তাদের সহানুভূতি দেখাচ্ছে, কারণ তারা চায় বাংলাদেশকে নিজেদের প্রভাবাধীন রাখতেই।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন নাটোর জিয়া পরিষদের সভাপতি আহমুদুল হক চৌধুরি স্বপন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. শফিকুল ইসলাম।

প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। আরও বক্তব্য রাখেন জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী মহাসচিব প্রফেসর ড. মো. এমতাজ হোসেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, রাজশাহী বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সালাম বিপ্লব, নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ, সদস্য সচিব মো. আসাদুজ্জামান আসাদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

বক্তারা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বিদেশি প্রভাবের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার আহ্বান জানান।

Header Ad
Header Ad

ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন ভূঞাপুর ছাড়াও আশপাশের গোপালপুর, ঘাটাইল ও কালিহাতী উপজেলার অসংখ্য মানুষ। তবে জনগুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটি বর্তমানে নিজেই এক অসুস্থ প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে।

বছরের পর বছর ধরে চলে আসা নানা অব্যবস্থাপনা, জনবল ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ—সব মিলিয়ে এই সরকারি হাসপাতালটি এখন রোগীদের ভোগান্তির আরেক নাম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ভিতর ও বাইরের পরিবেশ একেবারেই নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা থেকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ, যা রোগী ও তাদের স্বজনদের দীর্ঘ সময় ধরে সইতে হচ্ছে। বিশেষ করে টয়লেটের অবস্থা ভয়াবহ; অধিকাংশ টয়লেট ব্যবহারের অযোগ্য এবং পরিচ্ছন্নতার কোনো ব্যবস্থাই নেই। পুরুষ ও নারী ওয়ার্ড উভয়ের রোগীরা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

 

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় হাসপাতাল কার্যত অন্ধকারে ডুবে যায়। হাসপাতালে একটি জেনারেটর থাকলেও তা চালু করা হয় না এবং সেটিও বহু পুরনো। হাতে গোনা কয়েকটি চার্জিং বাল্ব থাকলেও সেগুলোর অনেকগুলোর আলো টিকেই না, কিছু সময় পর বন্ধ হয়ে যায়। শিশু ওয়ার্ডের (ডায়রিয়া) মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চার্জিং বাল্ব পর্যন্ত নেই। ফলে রাতের বেলায় এক ভয়ংকর ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আলো না থাকায় নার্সদের মোবাইল ফোনের ফ্ল্যাশলাইট ব্যবহার করে সেবা দিতে দেখা গেছে।

চরম গরমে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা। শিশু ওয়ার্ডে থাকা আটটি ফ্যানের মধ্যে তিনটি সম্পূর্ণ নষ্ট, আর যেগুলো সচল রয়েছে, বিদ্যুৎ না থাকায় সেগুলোও চলে না। ফলে শিশু রোগীরা ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস করছে, তাদের স্বজনরা হাতপাখা বা চার্জার ফ্যান নিয়ে চেষ্টা করছেন কিছুটা স্বস্তি দিতে।

হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রবেশ করে দেখা যায়, মেঝেতে ময়লার দাগ, দেয়ালে থুতু, কফ ও পানের পিকের ছিটা। শয্যা ও ওষুধ রাখার ট্রেগুলোতেও দেখা গেছে মরিচা ও জমে থাকা ময়লা। এসব স্থানে মাছি ঘুরে বেড়াচ্ছে অবলীলায়, যা পুরো হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকে আরও প্রকট করে তুলেছে।

এমন পরিবেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী, যিনি হাসপাতালের বারান্দায় ফ্যানহীন পরিবেশে ভর্তি রয়েছেন। অভিযোগ করে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেওয়ার পরও কোনো বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়নি। টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগিতা নিয়েও তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তিন মাসের শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোজিনা বেগম বলেন, টয়লেটের অবস্থার কারণে তিনি পানি ও খাবার খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন, যেন টয়লেট ব্যবহার না করতে হয়। টয়লেটে ঢোকা তো দূরের কথা, পাশে দাঁড়ানোও কষ্টকর হয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে।

গোপালপুর উপজেলার বড়শিলা গ্রামের রোগীর স্বজন সাজেদা বেগম বলেন, এখানে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীর স্বজনরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কোনো অভিযোগ করার সুযোগ নেই, আর কেউ কিছু বললেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

স্থানীয়দের দাবি, ২০২২ সালে ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) হিসেবে যোগদানের পর থেকেই হাসপাতালের এই বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নার্স জানান, ডা. সোবহান কর্তৃত্ববাদী মনোভাব পোষণ করেন। তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থাকলেও প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো অভিযোগকারীরা বদলি বা হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

তবে আরএমও ডা. খাদেমুল ইসলাম বলেন, “সমস্যা যে নেই, সেটা বলছি না। তবুও আমরা সীমিত জনবল ও সামর্থ্যে কাজ করে যাচ্ছি। শতভাগ কাজ সম্ভব হয় না।”

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান বলেন, “জেনারেটর থাকলেও সেটি চালাতে সরকারি বরাদ্দ নেই। মাঝেমধ্যে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালানো হয়। ক্লিনার মাত্র একজন, মাঝে মাঝে বাইরে থেকে লোক ডেকে এনে পরিষ্কার করাতে হয়। আর ফ্যান বা লাইট যেকোনো সময় নষ্ট হতে পারে, যখন জানা যায়, তখনই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” বীর মুক্তিযোদ্ধার বারান্দায় চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কেভিনের ব্যবস্থা রয়েছে। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সার্বিকভাবে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা যে ভয়াবহ নাজুক অবস্থায় রয়েছে, তা এই চিত্রগুলো স্পষ্ট করে দেয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ নজরদারি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিলে, এই হাসপাতাল রোগীদের সুস্থতার জায়গা হয়ে না থেকে এক ভয়াবহ দুর্ভোগের কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী
ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!
জাতীয় পার্টি কোনো সুবিধাবাদী দল নয়: জিএম কাদের
প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে আইসিইউতে পরিচালক সৃজিত মুখার্জি
জুলাই গণঅভ্যুত্থান যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয় : নাহিদ ইসলাম
আ.লীগের মিছিল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশ
হাসিনা-কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন
নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর সেই শিশু সেহেরিশের লাশ উদ্ধার
আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাজ করছে সরকার
লাল কাপড়ে ঢাকা হবে দেশের সব পলিটেকনিকের ফটক
৬০ বছর বয়সে বিয়ে করলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ
চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে ১২ কেজি রূপার গয়না জব্দ
ফয়জুল করীমকে বরিশালের মেয়র ঘোষণার দাবি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি যুবক নিহত
গোবিন্দগঞ্জে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আটক
বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দিল ভারতীয়রা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠক শনিবার
বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে যা জানাল পাকিস্তান
গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা, শিশুসহ একই পরিবারের ১৩ জন নিহত