শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ৮

বিষাদ বসুধা


আরেফিন ঘুম থেকে উঠে অভ্যাস বসত খবরের কাগজ খোঁজেন। পত্রিকাটা সাধারণত দরজার নিচ দিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে না পেয়ে তিনি দরজা খুলে বাইরে যান। বাইরেও কোনো পত্রিকা নেই। তার মনে প্রশ্ন জাগে। কি হলো? পত্রিকা আজ দেয়নি?

আরেফিন রুমে এসে রুমকিপারকে ফোন দিয়ে পত্রিকার বিষয়ে জানতে চান। রুমকিপার তাকে জানায়, পত্রিকা আজ বের হয়নি। আগামী কয়েকদিন পত্রিকা বের হবে কি না সন্দেহ।

আরেফিন এর কারণ জানতে চাইলে রুমকিপার সরাসরি এর উত্তর না দিয়ে বলল, টিভি দেখুন না স্যার! টিভিতে খবর দেখুন।

টিভিতে চীনা ভাষার খবর হয় বলে আরেফিন টিভি ছাড়েন না। তিনি মনে মনে বিরক্ত হন। দেশ-দুনিয়ার কোনো খবর জানা যাবে না! এটা কী করে সম্ভব! সকালে পত্রিকা না পড়তে পারলে মনে হয়, কি যেন করা হয়নি। নিজেকে বড় অসম্পূর্ণ লাগে। মন খারাপ করে কিছুক্ষণ সোফায় বসে থাকে। মোহিনীর কথা তার খুব মনে পড়ে। তিনি ফোন হাতে নিয়ে মোহিনীকে ফোন করেন। না। মোহিনীকেও পাওয়া যাচ্ছে না। তারপর তিনি ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে মোহিনীকে ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু ম্যাসেঞ্জার খোলা যাচ্ছে না। উইচ্যাট ছাড়া অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কাজ করছে না। হতাশ হয়ে আরেফিন বসে থাকেন। ঘড়ির দিকে তাকান। ঘড়ির কাঁটা তখন নটার ঘরে। সাড়ে নটায় নাস্তার সময় শেষ হয়ে যাবে।

আগে নাশতা করতে যাবে নাকি গোসল করবেন? এই নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে কিছুটা সময় পার হয়ে যায়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আর মাত্র পনের মিনিট হাতে আছে। এখন গোসল করতে গেলে নাশতা পাওয়া যাবে না। তাই তিনি তাড়াহুড়া করে জামা-প্যান্ট গায়ে দিয়ে নাশতা করতে ছুটে যান। রেস্তোরাঁয় এসে তিনি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকান। পরিবেশটা কেমন যেন অচেনা লাগে। চেনা মানুষগুলোও অচেনার মতো আচরণ করছে। দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। তিনি মনে মনে ভাবেন, হঠাৎ কি হলো? কেউ কাউকে যেন চেনে না। ফাঁকা ফাঁকা করে বসে আছে। কেউ কারো সঙ্গে কথা বলে না। গল্প করে না। একেকজন দূরে দূরে বসে রোবটের মতো খাবার খাচ্ছে। এ কী অবস্থা!

নাশতা করতে গিয়ে আরেফিন রীতিমতো গোলকধাঁধায় পড়ে। শত শত আইটেমের খাবার সাজানো। কিন্তু কোনটা তিনি নেবেন তা খুঁজে পান না। চীনে এসে তিনি প্রথম টের পেলেন তার জন্য খাবারের সমস্যা কতটা প্রকট।

আরেফিন দেখলেন, নাশতার সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। অনেক চিন্তাভাবনার পর তিনি প্লেটে করে ডিম, রুটি, ফলের রস আর কিছু কাটা ফল নিলেন। অনেকটা নাকেমুখে দেওয়ার মতো অবস্থা। তৃপ্তি সহকারে খেতে পারলেন না।

যদিও সকালবেলাই আরেফিন সারাদিনের খাবার খান। সকালে যে আইটেমগুলো থাকে সেগুলো অন্তত মুখে দেওয়া যায়। দুপুরের এবং রাতের খাবারের কোনো আইটেমই তিনি ঠিকমতো খেতে পারেন না। সব খাবারেই তার সন্দেহ। সাপ, কেচো, বেজি, শুকর অথবা পোকামাকড় খেয়ে ফেলার ভয়। কোনো কিছু খেতে গেলেই শরীরের রোমকূপগুলো খাড়া হয়ে ওঠে। বমি বমি ভাব আসে। আজ সকালে যে নাশতা করেছে তা দিয়ে সারাদিন টেকা দায়। তাই তার মাথায় সারাদিনের চিন্তা।

অনেকটা হতাশা নিয়েই রিসিভশনের দিকে এগিয়ে যান আরেফিন। রিসিভশনে গিয়ে পত্রিকা না পাওয়ার বিষয়টি জানান। রিসিভশনিস্ট মুসকি হেসে বলল, দুঃখিত, আজ পত্রিকা দেয়নি।

বিষয়টা আরেফিনের কাছে বিস্ময়কর মনে হয়। বিস্ময়ভরা কণ্ঠে তিনি আবারও বললেন, পত্রিকা দেয়নি! না দেওয়ার কারণ কি জানতে পারি?

আপনি হয়তো জানেন না, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ব্যাপকভাবে বিস্তারলাভ করায় এখানে লকডাউন শুরু হয়েছে। লকডাউন মানে বুঝতে পারছেন তো? সবকিছু বন্ধ। কেউ কোথাও মুভ করতে পারছেন না। সব ধরনের চলাচল বন্ধ।

আরেফিনের চোখেমুখে বিস্ময়। তিনি কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। তিনি কিছুক্ষণ হাবাগোবার মতো দাঁড়িয়ে থেকে রুমের দিকে হাঁটা দিলেন। সকাল থেকেই হোটেলের পরিবেশটা কেমন যেন হয়ে গেল। হোটেলের প্রাণবন্ত পরিবেশে মলিনতা ভর করল। লিফটে একজন উঠলে দ্বিতীয়জন লাইনে অপেক্ষা করে। কেউ উঠতে গেলেও আরেকজন বলে, প্লিজ উঠবেন না।

আরেফিন রুমে গিয়ে সেভ করলেন। গোসল সারলেন। কর্মশালায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। আরেফিনের রুম যে ফ্লোরে সেই ফ্লোরেই তাদের কর্মশালা। তিনি পায়ে হেঁটে সেমিনার কক্ষে গেলেন। সেখানে গিয়েও তিনি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। তিনি দেখলেন, সেমিনার কক্ষের চেহারা একদিনের মধ্যে পাল্টে গেছে। আরেকদিন আসনগুলো ছিল পাশাপাশি। একজনের খুব কাছাকাছি আরেকজন। আজ নিরাপদ দূরত্বে আসনগুলো সাজানো হয়েছে। একজন ভলান্টিয়ার দূরত্ব বজায় রেখে আরেফিনের সামনে এসে দাঁড়াল। তারপর বিনয়ের সঙ্গে বলল, আপনার আসনে নেমপ্লেট রয়েছে। আপনার নেমপ্লেট যেখানে রয়েছে আপনি সেখানেই বসবেন।
তারপর একে একে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী সবাই এসে উপস্থিত হলেন। প্রশিক্ষকরাও এসে যার যার আসনে বসলেন। শুরুতেই আয়োজকদের একজন কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিষয়ে কথা বললেন। তিনি সবাইকে খুব সাবধানতা অবলম্বনের তাগিদ দিয়ে বললেন, করোনাভাইরাস ভয়ঙ্কর ছোঁয়াচে। একজন আক্রান্ত ব্যক্তি হাজারজনকে সংক্রমিত করতে পারেন। সুতরাং খুব সাবধান! আর এখানে যারা প্রশিক্ষক এবং প্রশিক্ষণার্থী সবাই হোটেলেই অবস্থান করছেন। কাজেই বাইরে থেকে কারো আসার সুযোগ নেই। আপনারা বাইরের কারো সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করবেন না। কারো সঙ্গে করমর্দন করবেন না। দূরত্ব বজায় রেখে চলবেন। করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে সাবধনতা।

আরেফিন দুশ্চিন্তায় পড়েন। তিনি জানতে পারেন, কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তার লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়। প্রিয়জনরা দেখতেও পারে না। আরেফিনের ভেতরে ভয় ঢোকে। আক্রান্ত হওয়ার ভয়।

আরেফিন উহান শহর নিয়ে অনলাইনে কিছু পড়াশুনা করেন। এই শহর সম্পর্কে কিছুটা জানার চেষ্টা করেন তিনি। উহান, হুবেই প্রদেশের রাজধানী শহর। এই শহরে প্রায় দেড় কোটি মানুষের বসবাস। ঢাকা শহরের মতোই ঘনবসতি। কিন্তু নিয়মশৃঙ্খলা মানার ব্যাপারে উহানবাসী খুবই সচেতন। লকডাউন ঘোষণার পর সবাই ঘরে ঢুকে যায়। বিশেষ প্রয়োজনেও কেউ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। যদিও লকডাউনের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু সে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন ঘোষণা করল, কেউ বাড়ির বাইরে বের হবেন না। সবাই ঘরে থাকবেন। ব্যাস, সবাই পুলিশের ঘোষণা শতভাগ মেনে নিল।

সতের বছর আগে এই শহরে সার্স ভাইরাসের আক্রমণ হয়েছিল। কিন্তু এবারের আক্রমণটা আরও বেশি ভয়ঙ্কর বলে ধারণা করছেন নগরবাসী। লোকজনের সঙ্গে কথা বলে সেই তথ্যও জানতে পারলেন তিনি। তার ভেতরে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। অজানা ভাইরাস নিয়ে অজানা আতঙ্ক। এমন আতঙ্ক আগে কখনো সে অনুভব করেননি। এখন করছেন। রুমের মধ্যে তার কেবলই মনে হচ্ছে, চারদিক থেকে ভাইরাসগুলো জাতিসাপের মতো ফণা তুলে ধেঁয়ে আসছে।

আরেফিন ভাবতে ভাবতে হঠাৎ চিৎকার দিয়ে উঠেন। চিৎকারের এক পর্যায়ে তিনি তার মাকে ডাকেন। মা বাঁচাও! অনেক দিন পর তার মা’র কথা মনে পড়ল। বিপদের সময় তার মা’র কথা খুব মনে পড়ে। আজও তার খুব মনে পড়ছে। মনে মনে তিনি ভাবেন, আমার মা কেমন আছেন গ্রামে? বাবা কি এখনো মাকে মারেন? তার বংশ তুলে গালি দেন? মা’ বাপের বাড়ির জমি বিক্রি করে টাকা আনতে বলে? বাবাটা এতো স্বার্থপর কেন? এই রকম একটা নীচুঘরে আমি কেন জন্ম নিলাম? কেন আমার উচুঘরে জন্ম হলো না? তাহলে আমার জীবনটা অন্য রকম হতে পারত। মোহিনীর সঙ্গে আমার জীবনটাকে অন্যভাবে সাজাতে পারতাম। উচু-নীচুর দ্বন্দে! না হলো সংসার! না হলো ভালোভাবে বেঁচে থাকা।

আরেফিন মোহিনীর কথা ভাবেন। এখন মোহিনী কি করছে? কোথায় আছে সে? সে কি তার বাপের বাসায় চলে গেছে? নাকি নিজের বাসায় আছে? ওই বাসাটিও তো ওর কেনা। কাজেই বাপের বাসা কিংবা নিজের বাসায় যাওয়া আসা কোনো কিছুই ম্যাটার করে না। কিন্তু সে আমার ওপর এতোটা রেগে গেল কেন? আমি তাকে চীনের আসার কথা আগে থেকে বলিনি। এটাই কি আমার অপরাধ? এর চেয়ে বড় অপরাধ তো আগেও করেছি। সেটাতে তো এতোবেশি রিঅ্যাক্ট করেনি! হ্যাঁ, আমি ওর কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। ওর হাত ছুঁয়ে বলেছিলাম, আমি ভুল করেছি। ভবিষ্যতে আর ভুল হবে না। সেই প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেছি। কাজটা আমার ভুলই হয়েছে। প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করা অপরাধ। আমার উচিত ওর কাছে ক্ষমা চাওয়া। কিন্তু আমার ফোন তো সে ধরছে না! কি করে ক্ষমা চাইব? দেখি তো আবার চেষ্টা করে!

আরেফিন মোবাইল ফোনে মোহিনীকে ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু মোহিনীকে পান না। একবার নয় দুইবার নয়, পাঁচছয় বার। তারপর তিনি মোবাইলটা বিছানার ওপর ছুড়ে ফেলেন। দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বলেন, দুর্ভাগ্য!

আরেফিন মনের অস্থিরতা দূর করার জন্য টিভি ছাড়েন। টিভিতে সিনেমা দেখবেন বলে রিমোটের বোতাম চাপতে থাকেন। একের পর এক চ্যানেলে যান। কোনোটাই যুৎসই মনে হয় না। তিনি রিমোট ছুড়ে ফেলে বিছানায় গা এলিয়ে দেন। বালিশে মুখ গুজে নিজের মনকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। ওই চেষ্টাই সাড়। মনের ছটফটানি কিছুতেই দূর হচ্ছে না। আরেফিন মনে মনে বলেন, ক্যারিয়ারের স্বার্থে কর্মশালায় এসে আমি কি সবই হারালাম!

চলবে…

আরও পড়ুন

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৭

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৬

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৫

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৪

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১

Header Ad
Header Ad

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন—এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এ নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক, যা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (এএনএফআরইএল)-এর একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।

প্রতিনিধিদলে ছিলেন—সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ব্রিজা রোসালেস, বাংলাদেশ নির্বাচন ও গণতন্ত্র কর্মসূচির পরামর্শক মে বুটয়, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার থারিন্ডু আবেরত্না, প্রোগ্রাম অফিসার আয়ান রহমান খান এবং প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট আফসানা আমেই।

এএনএফআরইএল হচ্ছে এশিয়ার একটি নির্বাচনভিত্তিক নাগরিক সংগঠন, যারা বিগত দুই দশক ধরে সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং নাগরিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে।

সাক্ষাতে প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে তাদের চলমান কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করে। তারা জানান, বাংলাদেশে একটি স্বাধীন ও নাগরিকচালিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা স্টেকহোল্ডার ম্যাপিং ও প্রয়োজন নির্ধারণমূলক কর্মকাণ্ডের কথাও তুলে ধরেন, যা দেশের সুশীল সমাজের কার্যকর সম্পৃক্ততা ও নির্বাচনের স্বচ্ছতা বাড়াতে সহায়ক হবে।

প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।

Header Ad
Header Ad

বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী

ছবি: সংগৃহীত

ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ভারত দাবি করছে—বাংলাদেশ নাকি ধ্বংস হয়ে গেছে, এ দেশ আর টিকে নেই। এসব বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই, এটি দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।

শনিবার দুপুরে নাটোর জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে জিয়া পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। রিজভী বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাদের জাতীয়তাবাদ, স্বাধীনতা ও আত্মপরিচয়ের ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন। সেই পথেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আজও জনগণের দল হিসেবে টিকে আছে। বিএনপি এমন একটি দল, যাকে কোনো ষড়যন্ত্র দিয়ে দমিয়ে রাখা যায় না।

ভারতকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না, তারা চায় এই দেশ ভারতের অনুগত হয়ে থাকুক। তাই তারা একটি তাবেদার রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখেছে। শেখ হাসিনার মাধ্যমে তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনের ছত্রছায়ায় এই সরকার গুম, খুন, দমন-পীড়নের রাজনীতি চালিয়ে গেছে। সেই শাসনব্যবস্থাকে রক্ষা করতে ভারত মদত দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন—ভারতকে যা দিয়েছেন, তারা তা সারা জীবন মনে রাখবে। জনগণ এখন সেই কথার অর্থ বুঝতে পেরেছে। দেশের সম্পদ লুটপাট, টাকা পাচার, বিরোধীদের দমন—সবই করা হয়েছে ভারতের আশীর্বাদে। এখন ভারত তাদের সহানুভূতি দেখাচ্ছে, কারণ তারা চায় বাংলাদেশকে নিজেদের প্রভাবাধীন রাখতেই।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন নাটোর জিয়া পরিষদের সভাপতি আহমুদুল হক চৌধুরি স্বপন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. শফিকুল ইসলাম।

প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। আরও বক্তব্য রাখেন জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী মহাসচিব প্রফেসর ড. মো. এমতাজ হোসেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, রাজশাহী বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সালাম বিপ্লব, নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ, সদস্য সচিব মো. আসাদুজ্জামান আসাদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

বক্তারা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বিদেশি প্রভাবের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার আহ্বান জানান।

Header Ad
Header Ad

ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন ভূঞাপুর ছাড়াও আশপাশের গোপালপুর, ঘাটাইল ও কালিহাতী উপজেলার অসংখ্য মানুষ। তবে জনগুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটি বর্তমানে নিজেই এক অসুস্থ প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে।

বছরের পর বছর ধরে চলে আসা নানা অব্যবস্থাপনা, জনবল ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ—সব মিলিয়ে এই সরকারি হাসপাতালটি এখন রোগীদের ভোগান্তির আরেক নাম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ভিতর ও বাইরের পরিবেশ একেবারেই নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা থেকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ, যা রোগী ও তাদের স্বজনদের দীর্ঘ সময় ধরে সইতে হচ্ছে। বিশেষ করে টয়লেটের অবস্থা ভয়াবহ; অধিকাংশ টয়লেট ব্যবহারের অযোগ্য এবং পরিচ্ছন্নতার কোনো ব্যবস্থাই নেই। পুরুষ ও নারী ওয়ার্ড উভয়ের রোগীরা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

 

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় হাসপাতাল কার্যত অন্ধকারে ডুবে যায়। হাসপাতালে একটি জেনারেটর থাকলেও তা চালু করা হয় না এবং সেটিও বহু পুরনো। হাতে গোনা কয়েকটি চার্জিং বাল্ব থাকলেও সেগুলোর অনেকগুলোর আলো টিকেই না, কিছু সময় পর বন্ধ হয়ে যায়। শিশু ওয়ার্ডের (ডায়রিয়া) মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চার্জিং বাল্ব পর্যন্ত নেই। ফলে রাতের বেলায় এক ভয়ংকর ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আলো না থাকায় নার্সদের মোবাইল ফোনের ফ্ল্যাশলাইট ব্যবহার করে সেবা দিতে দেখা গেছে।

চরম গরমে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা। শিশু ওয়ার্ডে থাকা আটটি ফ্যানের মধ্যে তিনটি সম্পূর্ণ নষ্ট, আর যেগুলো সচল রয়েছে, বিদ্যুৎ না থাকায় সেগুলোও চলে না। ফলে শিশু রোগীরা ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস করছে, তাদের স্বজনরা হাতপাখা বা চার্জার ফ্যান নিয়ে চেষ্টা করছেন কিছুটা স্বস্তি দিতে।

হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রবেশ করে দেখা যায়, মেঝেতে ময়লার দাগ, দেয়ালে থুতু, কফ ও পানের পিকের ছিটা। শয্যা ও ওষুধ রাখার ট্রেগুলোতেও দেখা গেছে মরিচা ও জমে থাকা ময়লা। এসব স্থানে মাছি ঘুরে বেড়াচ্ছে অবলীলায়, যা পুরো হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকে আরও প্রকট করে তুলেছে।

এমন পরিবেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী, যিনি হাসপাতালের বারান্দায় ফ্যানহীন পরিবেশে ভর্তি রয়েছেন। অভিযোগ করে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেওয়ার পরও কোনো বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়নি। টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগিতা নিয়েও তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তিন মাসের শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোজিনা বেগম বলেন, টয়লেটের অবস্থার কারণে তিনি পানি ও খাবার খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন, যেন টয়লেট ব্যবহার না করতে হয়। টয়লেটে ঢোকা তো দূরের কথা, পাশে দাঁড়ানোও কষ্টকর হয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে।

গোপালপুর উপজেলার বড়শিলা গ্রামের রোগীর স্বজন সাজেদা বেগম বলেন, এখানে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীর স্বজনরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কোনো অভিযোগ করার সুযোগ নেই, আর কেউ কিছু বললেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

স্থানীয়দের দাবি, ২০২২ সালে ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) হিসেবে যোগদানের পর থেকেই হাসপাতালের এই বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নার্স জানান, ডা. সোবহান কর্তৃত্ববাদী মনোভাব পোষণ করেন। তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থাকলেও প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো অভিযোগকারীরা বদলি বা হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

তবে আরএমও ডা. খাদেমুল ইসলাম বলেন, “সমস্যা যে নেই, সেটা বলছি না। তবুও আমরা সীমিত জনবল ও সামর্থ্যে কাজ করে যাচ্ছি। শতভাগ কাজ সম্ভব হয় না।”

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান বলেন, “জেনারেটর থাকলেও সেটি চালাতে সরকারি বরাদ্দ নেই। মাঝেমধ্যে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালানো হয়। ক্লিনার মাত্র একজন, মাঝে মাঝে বাইরে থেকে লোক ডেকে এনে পরিষ্কার করাতে হয়। আর ফ্যান বা লাইট যেকোনো সময় নষ্ট হতে পারে, যখন জানা যায়, তখনই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” বীর মুক্তিযোদ্ধার বারান্দায় চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কেভিনের ব্যবস্থা রয়েছে। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সার্বিকভাবে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা যে ভয়াবহ নাজুক অবস্থায় রয়েছে, তা এই চিত্রগুলো স্পষ্ট করে দেয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ নজরদারি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিলে, এই হাসপাতাল রোগীদের সুস্থতার জায়গা হয়ে না থেকে এক ভয়াবহ দুর্ভোগের কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী
ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!
জাতীয় পার্টি কোনো সুবিধাবাদী দল নয়: জিএম কাদের
প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে আইসিইউতে পরিচালক সৃজিত মুখার্জি
জুলাই গণঅভ্যুত্থান যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয় : নাহিদ ইসলাম
আ.লীগের মিছিল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশ
হাসিনা-কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন
নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর সেই শিশু সেহেরিশের লাশ উদ্ধার
আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাজ করছে সরকার
লাল কাপড়ে ঢাকা হবে দেশের সব পলিটেকনিকের ফটক
৬০ বছর বয়সে বিয়ে করলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ
চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে ১২ কেজি রূপার গয়না জব্দ
ফয়জুল করীমকে বরিশালের মেয়র ঘোষণার দাবি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি যুবক নিহত
গোবিন্দগঞ্জে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আটক
বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দিল ভারতীয়রা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠক শনিবার
বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে যা জানাল পাকিস্তান
গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা, শিশুসহ একই পরিবারের ১৩ জন নিহত