শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ৭

বিষাদ বসুধা

মোহিনী অফিসে চলে যান। আনোয়ারা বেগম মোহিনীর শোবার ঘর গোছগাছ করে রাখেন। কাজের লোক দিয়ে ভালো করে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করান। বিকেলে মোহসীন আহমেদ বাসায় এসে জানতে পারেন যে, মোহিনী নিজের বাসা ছেড়ে চলে এসেছে। তখন তিনি বিস্ময়ের সঙ্গে বলেন, সে কি! ও চলে এসেছে মানে! কেন চলে এসেছে? ওদের কি কোনো সমস্যা হয়েছে?

আনোয়ারা বেগম তাকে জানান, আরেফিন বিদেশে গেছে। বিদেশে যাওয়া নিয়ে সম্ভবত ওদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হয়েছে।

বলো কি! আমি আগেই বলেছিলাম, ওই ছেলের সঙ্গে মোহিনীর বনিবনা হবে না। ওই ছেলের মনমানসিকতা সুবিধার মনে হয়নি। কেন যে ছেলেটাকে মোহিনী পছন্দ করল!

আনোয়ারা বেগম বললেন, তুমি আবার এসব কথা মোহিনীর সামনে বোলো না। ওকে বুঝতেও দিও না তুমি কিছু জানো।

না না। তুমি পাগল হয়েছ! আচ্ছা, মোহিনী কখন ফিরবে?
সন্ধ্যার মধ্যেই হয়তো ফিরে আসবে। তুমি চলো তো, আমরা বাজার করে আসি। মাছ, মাংস, তরিতরকারি কিছু নিয়ে আসি।

বাসায় এলাম। চা খাওয়াবে না?
হ্যাঁ। চা খেয়েই যাবো। তুমি ড্রেস পরিবর্তন করবে না? এই ড্রেসেই যাবে?
আমি অন্য ড্রেস পরে আসছি।

মোহসীন আহমেদ নিজের ঘরে যান। আনোয়ারা বেগম হালিমাকে ডাকেন। তাকে চা নাশতা টেবিলে দেয়ার জন্য বলেন। হালিমা তড়িঘড়ি করে টেবিলে নাশতা দেয়। চা দিয়ে বলে, খালাম্মা টেবিলে নাশতা দিছি। তাড়াতাড়ি আহেন।
আনোয়ারা বেগম খাবার টেবিলে গিয়ে বসেন। তিনি হাফপ্লেটে নাশতা বেড়ে মোহসীন আহমেদকে ডাকেন। তোমার হয়েছে? তাড়াতাড়ি আসো। ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।


মোহসীন আহমেদ দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলেন। চেয়ার টেনে বসেই নাশতা খাওয়া শুরু করলেন। স্ত্রীকে উদ্দেশ করে বললেন, তুমি খাচ্ছো না?

আমি শুধু চা খাবো।
কেন?
আমি ডায়েটে আছি।
এই বুড়ো বয়সে আর ডায়েট করে কি হবে?
এই! তুমি আমাকে বুড়ো বললে কেন? আমি কি বুড়ো হয়ে গেছি?
না না! এখনো তরুণীই আছো। হা হা হা!
নাহ! তোমার হাসিটা ভালো লাগছে না।
সিরিয়াসলি বলছি, ডায়েট করে তুমি বয়স কমিয়ে ফেলেছ।
ফেলতেই হবে। তা না হলে তো চলবে না। কি বলো?
হুম। কথাটা মন্দ বলোনি।

জানি তো! পুরুষ জাতিকে আমার চিনতে বাকি নেই। তারা সব সময় তাদের স্ত্রীদের তরুণী দেখতে চায়। কি ঠিক না?
নিজের স্ত্রীকে তরুণী দেখতে চাওয়া নিশ্চয়ই কোনো অপরাধ নয়। যদি এমন হতো যে তরুণী বিয়ে করার জন্য পাগল হতাশ তাহলে বলতে পারতে।

আনোয়ারা বেগম চোখ বড় করে মোহসীন আহমেদের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমার সাহস তো কম না!
মোহসীন আহমেদ হাসলেন। তারপর বললেন, চলো এবার বাজারে চলো।
আনোয়ারা বেগম মোহসীন আহমেদের পেছনে পেছনে এগিয়ে গিয়ে গাড়িতে উঠলেন। গুলশান দুই থেকে ইউনিমার্ট বেশি দূরে নয়। ইউনিমার্টে ঘুরে ঘুরে সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনলেন। মোহিনীর পছন্দের বিভিন্ন মাছ, দেশি মুরগী এবং খাসির মাংস কিনলেন। বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। ততক্ষণে মোহিনীও বাসায় এসে হাজির হয়েছে। তাকে দেখে মোহসীন আহমেদ ভীষণ খুশি। তিনি মহা উচ্ছ¡াসের সঙ্গে বললেন, আমার আম্মু যে!

কেমন আছো মামনি?
আমি ভালো আছি বাবা। তুমি কেমন আছো?
আমিও ভালো আছি। চীনের খবর শুনে তো মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।
কেন বাবা? চীনের কি খবর শুনেছ?

আমাদের তো কিছু ব্যবসা আছে চীনের সঙ্গে তুই জানিস সেটা। কয়েকজন চীনা নাগরিক আমাদের সঙ্গে কাজও করে। ওরা জানাল, চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে নভেল করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। বেশ কিছু মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।
মোহিনী বিস্ময়ভরা কণ্ঠে বললেন, তাই নাকি!

হুম। ভাইরাসটি প্রাণী থেকে মানবদেহে ঢুকেছে। একে বলা হচ্ছে কভিড-১৯; বা করোনা ভাইরাস। এটি মারাত্মক ছোঁয়াচে। এই ভাইরাস বহনকারী আরেকজনের কাছাকাছি গেলেই সংক্রামিত হবে। তাকে ছোঁয়ারও দরকার নেই। কাজেই একজন মানুষের কাছ থেকে হাজার জনে ছড়িয়ে যেতে পারে। ভয়ঙ্কর। উহান শহরে বাংলাদেশের মানুষের ব্যাপক যাতায়াত আছে। আবার ওখান থেকে এখানেও বিপুল সংখ্যক চীনা কাজ করছে। ফলে আমাদের দেশে ছড়াতে খুব বেশি সময় লাগবে না। তাছাড়া আমাদের দেশের সংস্কৃতি হচ্ছে, করমর্দন, কোলাকুলি। একজন আরেকজনের সঙ্গে করমর্দন না করে পারেই না! এভাবেই বেশি ছড়াবে। কারণ, কে করোনা বহন করছে তা তো কেউ জানতে পারছে না। অজানা ভাইরাস। অজানা আতঙ্ক।

কথাগুলো শুনে মোহিনী যেন নিভে গেলেন। তিনি মনে মনে ভাবেন, আরেফিন তো উহান শহরেই গেছে। ওর কি হবে? কি কি ভালো আছে? ওখানে যাওয়ার পর কিছুই তো জানাল না। হয়তো দুএকদিনের মধ্যেই জানা যাবে। ও যে কেন আমার কথা শুনল না? নিজে যা বোঝে তাই করে। আমার কথার কোনো মূল্য নেই ওর কাছে। ও যদি আক্রান্ত হয়।

মোহিনীকে চুপ থাকতে দেখে মোহসীন আহমেদ বললেন, কিরে মা, কি ভাবছিস?
মোহিনী দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বললেন, না বাবা। কিছু না।
মোহিনী মন খারাপ করে নিজের কক্ষের দিকে গেলেন। তার মন খারাপ দেখে মোহসীন আহমেদ চিন্তায় পড়লেন। মনে মনে বললেন, মেয়েটার আবার কী হলো!

রাতে মা বাবার সঙ্গে খেতে বসেন মোহিনী। মোহিনীকে আনোয়ারা বেগম খাবার তুলে দেন। মোহসীন আহমেদকেও তুলে দিয়েছেন। মোহসীন আহমেদ খাওয়া শুরু করেছেন। কিন্তু মোহিনী খাচ্ছেন না। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে গভীর চিন্তায় নিমগ্ন। তার সামনে যে খাবার দেয়া হয়েছে তাও সে টের পেয়েছে কি না সন্দেহ। মোহসীন আহমেদ মেয়ের দিকে তাকান। আনোয়ারা বেগমও কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলেন, মোহিনী শুরু কর না মা। কি এতো চিন্তা করছিস?


মোহসীন আহমেদও মোহিনীর কাছে তার মন খারাপের কারণ জানতে চান। তারপরও মোহিনীর ঘোর কাটছে না। নানারকম নেতিবাচক চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খায়। আরেফিন যদি ওখানে আক্রান্ত হয়! তাহলে তো মহাবিপদে পড়বে! কে দেখবে ওকে? ও তো আমার সঙ্গে একটু যোগাযোগ করতে পারে। আমাকে নিশ্চিন্ত করতে পারে। ও এমন কেন! আমার কিছু ভালো লাগে না।

মোহসীন আহমেদ আবারও মেয়েকে উদ্দেশ করে বলেন, হ্যা রে মা! কি হয়েছে তোর?
বাবা, চীনের উহানে যেখানে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি; আরেফিন সেখানেই তো গেছে। ওর যে কি অবস্থা খোদা তায়ালাই জানেন। আমি এতো করে বললাম, যেও না। আমার কথা শুনল না। এখন কি হবে?
হুম। আমিও বিষয়টা নিয়ে ভাবছি। গভীরভাবে ভাবছি। ওখানে করোনাভাইরাস যেভাবে ছড়িয়েছে! মাই গড! আচ্ছা, আরেফিন কি টেলিফোন করে? তোর সঙ্গে কোনো কথাবার্তা হয়?

মোহিনী চুপ করে আছেন। তিনি কী বলবেন? কোনো রকম কথাবার্তা তো হয় না। আরেফিন মোহিনীকে একটা ফোন নম্বর দিয়েছিলেন। সেই নম্বরে একবারও মোহিনী তাকে পাননি। আরেফিন ফোন দিলেও দুদিন পর হয়তো একবার দুই মিনিটের জন্য ফোন করেন। মোহিনীকে চুপ থাকতে দেখে মোহসীন আহমেদ বললেন, তার মানে তোকেও সে ফোন করে না? এটা কি কোনো কথা হলো?

আনোয়ারা বেগম বললেন, আসলে ছেলেটা এতো বেশি আত্মকেন্দ্রিক এবং আত্মবিমুখ; ওকে ঠিক বুঝতে পারি না। মোহিনী ওকে কতটুকু চিনেছে জানি না। তবে ওকে চেনা খুব সহজ ব্যাপারও নয়।


মোহিনী চুপ করেই আছেন। কোনো কথা বলছেন না। তিনি যে দ্রুত খেয়ে উঠবেন তাও পারছেন না। খাবার যেন ওর গলা দিয়ে নামছে না। অল্প করে ভাত মুখে দিয়ে এপাশ ওপাশ করেন। দাঁতের শক্তিও যেন হ্রাস পেয়েছে। মাঝেমধ্যে পানি দিয়ে গিলে ফেলেন।

মোহিনীর অবস্থা দেখে দুশ্চিন্তায় পড়েন মোহসীন আহমেদ ও আনোয়ারা বেগম। তারা উভয়েই মোহিনীকে নিয়ে ভাবেন। এক পর্যায়ে পরিস্থিতিটা অন্য দিকে নেয়ার জন্য মোহসীন আহমেদ বলেন, একটা ভালো ব্যাপার লক্ষ্য করলাম। মোহিনী ওর ব্যবসায় বেশ মনোযোগ দিয়েছে। মনোযোগটা আরো বাড়বে বলে মনে হচ্ছে।

তোমাকে এই খবর কে দিল বাবা? মোহিনী জানতে চাইলেন।
মোহসীন আহমেদ হাসলেন। তিনি যে ধারনা করে কথাটা বললেন তা প্রকাশ না করে বললেন, তোর অফিসের লোকজনই আমাকে জানালো।

বাহ! তাহলে তো খুব ভালো খবর! আনোয়ারা বেগম বললেন।
মোহিনী বললেন, আমি সত্যি সত্যিই মনোযোগ বাড়াতে চাচ্ছি। কিন্তু পারছি না। বার বার আরেফিনের কথা মনে পড়ে। ওর জন্য খুব খারাপ লাগছে। ওর যদি কিছু হয়ে যায়!

মোহসীন আহমেদ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন, আসলে জীবনে একবার ভুল করলে তার মাশুল সারাজীবন দিতে হয়। মোহিনী নিশ্চয়ই এখন বুঝতে পেরেছে যে, ও কী ভুল করেছে! তুমি ওর সঙ্গে বেশি বেশি গল্প কোরো। ওকে সময় দাও।


আমি চেষ্টা করছি। নানাভাবে ব্যস্ত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়!
খাওয়া শেষ করে মোহসীন আহমেদ নিজের ঘরে গিয়ে টিভি দেখেন। টিভিতে উহানের খবর দেখে মেয়েকে ডাকেন। মোহিনী, মোহিনী!
মোহিনী দৌড়ে এসে বিস্ময়ভরা কণ্ঠে বলেন, কি বাবা! কি হয়েছে!

দেখ দেখ! টিভিতে উহানের খবর দেখাচ্ছে। প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ার কথা বলা হচ্ছে। আমাদের দেশেও করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রতিদিন যে পরিমাণ মানুষের যাতায়াত!

শুধু বাংলাদেশের কেন বলছ বাবা! সারা দুনিয়ার সঙ্গে চীনের যে যোগাযোগ তাতে এই ভাইরাস সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। শুনলাম, ভাইরাসটা ভয়ঙ্কর ছোঁয়াচে। একজন মানুষ যদি হাজার মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে তাহলে এর ভয়াবহতা তো সহজেই বোঝা যায়! এই গ্রহের কোনো দেশ আর বাদ থাকবে না!

বিস্ময় আর হতাশার সঙ্গে আনোয়ারা বেগম বললেন, হায় হায়! একটা ভাইরাস এতো ভয়ঙ্কর! মোহসীন আহমেদ বললেন, হুম। বড় বিপদ আমাদের সামনে। এখনই দেখছ না! বাজারে আগুন! হঠাৎ হঠাৎ বাজার থেকে চাল উধাও! ডাল উধাও! লবন উধাও! আরো কত কী! সুযোগ পেলেই কিছু কুলাঙ্গার ব্যবসায়ী জোট বেঁধে বাজারে শর্টফল করে। ওমনি শুরু হয় নাই নাই! আর মানুষ হাহাকার করতে থাকে। করোনায় যে কত মানুষকে বিপদে ফেলবে তা ভেবে আমার মাথা খারাপ অবস্থা!

আনোয়ারা বেগম ও মোহিনীর কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।

চলবে..

 

আরও পড়ুন

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৬

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৫

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৪

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১

Header Ad
Header Ad

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন—এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এ নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক, যা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (এএনএফআরইএল)-এর একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।

প্রতিনিধিদলে ছিলেন—সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ব্রিজা রোসালেস, বাংলাদেশ নির্বাচন ও গণতন্ত্র কর্মসূচির পরামর্শক মে বুটয়, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার থারিন্ডু আবেরত্না, প্রোগ্রাম অফিসার আয়ান রহমান খান এবং প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট আফসানা আমেই।

এএনএফআরইএল হচ্ছে এশিয়ার একটি নির্বাচনভিত্তিক নাগরিক সংগঠন, যারা বিগত দুই দশক ধরে সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং নাগরিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে।

সাক্ষাতে প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে তাদের চলমান কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করে। তারা জানান, বাংলাদেশে একটি স্বাধীন ও নাগরিকচালিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা স্টেকহোল্ডার ম্যাপিং ও প্রয়োজন নির্ধারণমূলক কর্মকাণ্ডের কথাও তুলে ধরেন, যা দেশের সুশীল সমাজের কার্যকর সম্পৃক্ততা ও নির্বাচনের স্বচ্ছতা বাড়াতে সহায়ক হবে।

প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।

Header Ad
Header Ad

বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী

ছবি: সংগৃহীত

ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ভারত দাবি করছে—বাংলাদেশ নাকি ধ্বংস হয়ে গেছে, এ দেশ আর টিকে নেই। এসব বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই, এটি দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।

শনিবার দুপুরে নাটোর জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে জিয়া পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। রিজভী বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাদের জাতীয়তাবাদ, স্বাধীনতা ও আত্মপরিচয়ের ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন। সেই পথেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আজও জনগণের দল হিসেবে টিকে আছে। বিএনপি এমন একটি দল, যাকে কোনো ষড়যন্ত্র দিয়ে দমিয়ে রাখা যায় না।

ভারতকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না, তারা চায় এই দেশ ভারতের অনুগত হয়ে থাকুক। তাই তারা একটি তাবেদার রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখেছে। শেখ হাসিনার মাধ্যমে তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনের ছত্রছায়ায় এই সরকার গুম, খুন, দমন-পীড়নের রাজনীতি চালিয়ে গেছে। সেই শাসনব্যবস্থাকে রক্ষা করতে ভারত মদত দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন—ভারতকে যা দিয়েছেন, তারা তা সারা জীবন মনে রাখবে। জনগণ এখন সেই কথার অর্থ বুঝতে পেরেছে। দেশের সম্পদ লুটপাট, টাকা পাচার, বিরোধীদের দমন—সবই করা হয়েছে ভারতের আশীর্বাদে। এখন ভারত তাদের সহানুভূতি দেখাচ্ছে, কারণ তারা চায় বাংলাদেশকে নিজেদের প্রভাবাধীন রাখতেই।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন নাটোর জিয়া পরিষদের সভাপতি আহমুদুল হক চৌধুরি স্বপন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. শফিকুল ইসলাম।

প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। আরও বক্তব্য রাখেন জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী মহাসচিব প্রফেসর ড. মো. এমতাজ হোসেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, রাজশাহী বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সালাম বিপ্লব, নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ, সদস্য সচিব মো. আসাদুজ্জামান আসাদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

বক্তারা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বিদেশি প্রভাবের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার আহ্বান জানান।

Header Ad
Header Ad

ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন ভূঞাপুর ছাড়াও আশপাশের গোপালপুর, ঘাটাইল ও কালিহাতী উপজেলার অসংখ্য মানুষ। তবে জনগুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটি বর্তমানে নিজেই এক অসুস্থ প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে।

বছরের পর বছর ধরে চলে আসা নানা অব্যবস্থাপনা, জনবল ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ—সব মিলিয়ে এই সরকারি হাসপাতালটি এখন রোগীদের ভোগান্তির আরেক নাম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ভিতর ও বাইরের পরিবেশ একেবারেই নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা থেকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ, যা রোগী ও তাদের স্বজনদের দীর্ঘ সময় ধরে সইতে হচ্ছে। বিশেষ করে টয়লেটের অবস্থা ভয়াবহ; অধিকাংশ টয়লেট ব্যবহারের অযোগ্য এবং পরিচ্ছন্নতার কোনো ব্যবস্থাই নেই। পুরুষ ও নারী ওয়ার্ড উভয়ের রোগীরা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

 

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় হাসপাতাল কার্যত অন্ধকারে ডুবে যায়। হাসপাতালে একটি জেনারেটর থাকলেও তা চালু করা হয় না এবং সেটিও বহু পুরনো। হাতে গোনা কয়েকটি চার্জিং বাল্ব থাকলেও সেগুলোর অনেকগুলোর আলো টিকেই না, কিছু সময় পর বন্ধ হয়ে যায়। শিশু ওয়ার্ডের (ডায়রিয়া) মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চার্জিং বাল্ব পর্যন্ত নেই। ফলে রাতের বেলায় এক ভয়ংকর ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আলো না থাকায় নার্সদের মোবাইল ফোনের ফ্ল্যাশলাইট ব্যবহার করে সেবা দিতে দেখা গেছে।

চরম গরমে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা। শিশু ওয়ার্ডে থাকা আটটি ফ্যানের মধ্যে তিনটি সম্পূর্ণ নষ্ট, আর যেগুলো সচল রয়েছে, বিদ্যুৎ না থাকায় সেগুলোও চলে না। ফলে শিশু রোগীরা ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস করছে, তাদের স্বজনরা হাতপাখা বা চার্জার ফ্যান নিয়ে চেষ্টা করছেন কিছুটা স্বস্তি দিতে।

হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রবেশ করে দেখা যায়, মেঝেতে ময়লার দাগ, দেয়ালে থুতু, কফ ও পানের পিকের ছিটা। শয্যা ও ওষুধ রাখার ট্রেগুলোতেও দেখা গেছে মরিচা ও জমে থাকা ময়লা। এসব স্থানে মাছি ঘুরে বেড়াচ্ছে অবলীলায়, যা পুরো হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকে আরও প্রকট করে তুলেছে।

এমন পরিবেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী, যিনি হাসপাতালের বারান্দায় ফ্যানহীন পরিবেশে ভর্তি রয়েছেন। অভিযোগ করে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেওয়ার পরও কোনো বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়নি। টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগিতা নিয়েও তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তিন মাসের শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোজিনা বেগম বলেন, টয়লেটের অবস্থার কারণে তিনি পানি ও খাবার খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন, যেন টয়লেট ব্যবহার না করতে হয়। টয়লেটে ঢোকা তো দূরের কথা, পাশে দাঁড়ানোও কষ্টকর হয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে।

গোপালপুর উপজেলার বড়শিলা গ্রামের রোগীর স্বজন সাজেদা বেগম বলেন, এখানে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীর স্বজনরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কোনো অভিযোগ করার সুযোগ নেই, আর কেউ কিছু বললেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

স্থানীয়দের দাবি, ২০২২ সালে ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) হিসেবে যোগদানের পর থেকেই হাসপাতালের এই বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নার্স জানান, ডা. সোবহান কর্তৃত্ববাদী মনোভাব পোষণ করেন। তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থাকলেও প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো অভিযোগকারীরা বদলি বা হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

তবে আরএমও ডা. খাদেমুল ইসলাম বলেন, “সমস্যা যে নেই, সেটা বলছি না। তবুও আমরা সীমিত জনবল ও সামর্থ্যে কাজ করে যাচ্ছি। শতভাগ কাজ সম্ভব হয় না।”

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান বলেন, “জেনারেটর থাকলেও সেটি চালাতে সরকারি বরাদ্দ নেই। মাঝেমধ্যে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালানো হয়। ক্লিনার মাত্র একজন, মাঝে মাঝে বাইরে থেকে লোক ডেকে এনে পরিষ্কার করাতে হয়। আর ফ্যান বা লাইট যেকোনো সময় নষ্ট হতে পারে, যখন জানা যায়, তখনই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” বীর মুক্তিযোদ্ধার বারান্দায় চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কেভিনের ব্যবস্থা রয়েছে। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সার্বিকভাবে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা যে ভয়াবহ নাজুক অবস্থায় রয়েছে, তা এই চিত্রগুলো স্পষ্ট করে দেয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ নজরদারি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিলে, এই হাসপাতাল রোগীদের সুস্থতার জায়গা হয়ে না থেকে এক ভয়াবহ দুর্ভোগের কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী
ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!
জাতীয় পার্টি কোনো সুবিধাবাদী দল নয়: জিএম কাদের
প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে আইসিইউতে পরিচালক সৃজিত মুখার্জি
জুলাই গণঅভ্যুত্থান যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয় : নাহিদ ইসলাম
আ.লীগের মিছিল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশ
হাসিনা-কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন
নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর সেই শিশু সেহেরিশের লাশ উদ্ধার
আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাজ করছে সরকার
লাল কাপড়ে ঢাকা হবে দেশের সব পলিটেকনিকের ফটক
৬০ বছর বয়সে বিয়ে করলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ
চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে ১২ কেজি রূপার গয়না জব্দ
ফয়জুল করীমকে বরিশালের মেয়র ঘোষণার দাবি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি যুবক নিহত
গোবিন্দগঞ্জে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আটক
বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দিল ভারতীয়রা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠক শনিবার
বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে যা জানাল পাকিস্তান
গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা, শিশুসহ একই পরিবারের ১৩ জন নিহত