শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫ | ৫ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ১৪

বিষাদ বসুধা

শাহবাজ খান মোহিনীর মতো দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্যবসায়ী। তবে তার বাবা বৈরম খানের উত্থানও খুব বেশি দিনের নয়। বৈরম খানের জমির ব্যবসা। জমি কিনে জমি বেচেন। তা দিয়েই তিনি বড়লোক। লোকে বলে, বৈরম খান পানি কেনেন। কিন্তু বেচেন জমি। ঢাকার আশপাশের জলাশয় কিনে রাখেন। তারপর তা ভরাট করে প্লট বানিয়ে বিক্রি করেন। এক সময় জহিরুল ইসলাম এই ব্যবসা করে ধনী হয়েছিলেন। জমির ব্যবসা করেই বাংলাদেশের প্রথম ধনী হন জহিরুল ইসলাম। বৈরম খান সেই পথেই হাঁটছেন। জহিরুল ইসলাম তার স্বপ্ন পুরুষ। তিনিই তার চোখ খুলে দিয়েছেন। তিনি নতুন করে স্বপ্ন বুনলেন। মনে মনে বললেন, ঢাকা শহরের জমি সোনার চেয়ে দামি। তাই তিনি স্ত্রীর সোনা-দানা যা ছিল সব বিক্রি করে জমির ব্যবসা শুরু করলেন।

ঢাকা শহরের অদূরে আমিন বাজারের বিপরীত দিকে বিশাল জলাশয় কিনলেন বৈরম খান। তার জমি কেনার ধরন দেখে লোকে টিপ্পনি কেটে বলল, হালায় বোকার হদ্দ। ট্যাকা এইভাবে কেউ পানিতে ফালায়! লোকের কথা শুনে বৈরম খান মিটিমিটি হাসতেন। কিছুই বলতেন না। শুধু মনে মনে বলতেন, একটু সবুর কর। বোকা কে সেটা পরে বুঝবি!

বৈরম খান কড় গুণে গুণে ঠিক পাঁচ বছর পর জমির কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। ততদিনে জলাশয় ভরাট হয়ে গেলো। জলাশয় হয়ে গেলো ধানি জমি। জমির সামনে দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে বৈরম খান বলেন, এইবার দেখ কে বোকা? আমি না তোমরা?

ধানি জমিতে প্লট বানিয়ে বিক্রি শুরু করলেন বৈরম খান। প্রথমবারই তিনি টেক্কা মেরে দিলেন। কারি কারি টাকা জমা করলেন ব্যাংকে। সেই টাকা দিয়ে ঢাকার আশপাশে আরো ডোবা-নালা কিনতে শুরু করলেন। দিনে দিনে তিনি বিশাল বিত্তবৈভবের মালিক হয়ে উঠলেন। কিন্তু মানুষ তাকে মাটি খেকো, ভূমি দস্যু, জমির দালাল ইত্যাদি বলে তিরস্কার করতে শুরু করল। এতে তিনি অস্বস্তিবোধ করেন। মনে মনে বলেন, ছি ছি! জমির ব্যবসা করতে গিয়ে এমন দুর্নাম! না না! এটা হতে পারে না। এই দুর্নাম ঘোচাতে হবে। অন্য ব্যবসায় হাত দিতে হবে।

নতুন কী করা যায় তা নিয়ে ভাবে বৈরম খান। অনেক ভাবনাচিন্তার পর তিনি ঠিক করলেন গার্মেন্টস ব্যবসায় হাত দেবেন। তখন গার্মেন্টস ব্যবসা সবে চালু হয়েছে। কেউ কেউ বিদেশে তৈরি পোশাক পাঠাচ্ছে। এই ব্যবসা অনেকদিন ধরে চলবে। তিনি ছেলে শাহবাজ খানের হাতে কোটি টাকার চেক দিয়ে বললেন, যাও গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করো।

শাহবাজ খান শুরু করল গার্মেন্টস ব্যবসা। বাবার হাতে জমির ব্যবসা আর ছেলের হাতে গার্মেন্টস ব্যবসা। শুরুতে শাহবাগ খান হোচট খাচ্ছিল। কিছুতেই দাঁড়াতে পারছিল না। বার বার হোচট খেতে খেতে এক পর্যায়ে বলল, বাবা পথটি খুবই পিচ্ছিল। দাঁড়াতেই পারছি না।

বৈরম খান বললেন, ধৈর্য ধরো। ব্যবসায় ধৈর্য ধরতে হয়। কথায় আছে না, সবুরে মেওয়া ফলে। আমাকে দেখ না! আমি কি পরিমাণ ধৈর্য ধরেছি। জমি কিনে পাঁচ দশ বছর ফেলে রেখেছি। মানুষে গালি দিয়ে বলতে, হালায় বোকা নাকি! টাকা কেউ এভাবে জলে ফেলে! সেই জলে যে সোনা ছিল তা তো তারা দেখেনি। আমি দেখেছি। তাই আমি আজ অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছি। তোমাকেও এগিয়ে থাকতে হবে।

জমি বিক্রির কাচা টাকা ঢালতে থাকলেন গার্মেন্টস ব্যবসায়।

ব্যবসা শুরুর আগে বৈরম খান ছেলেকে নানা রকম ছবক দেন। সেই ছবকের নমুনা এরকম, অন্যকে না ঠকালে সে বড় হতে পারবে না। কথায় বলে না, শ্রমিক চুষে বড়লোক! কথাটা মনে রাখতে হবে। শ্রমিকদের বেশি বেতন দেয়া যাবে না। সব সময় বেতন বকেয়া রাখতে হবে। তাদেরকে সব সময় বলতে হবে, ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। ভালো ব্যবসা করতে পারলে অবশ্যই তোমাদের দেয়া হবে।

শাহবাজ খান বাবার কথা মনে রেখে শ্রমিক ঠকানো শুরু করলেন। অল্প বেতন। তাও আবার ঠিকমতো না দেয়ার কৌশল নিলেন। দুতিন মাসের বেতন বকেয়াই থাকে। ফলে বকেয়া আদায়ের জন্য অল্প বেতনেই সবাই চাকরি করে। শ্রমিক ঠকাতে ঠকাতেই শাহবাজ খানের ব্যবসা বড় হয়ে ওঠে। একটা, দুইটা তিনটা। এভাবে বাড়তে থাকে একটার পর একটা গার্মেন্টস। এখন সাত সাতটি গার্মেন্টসের মালিক শাহবাজ খান। গার্মেন্টস ব্যবসা দিয়ে কানাডা ও মালয়েশিয়ায় বাড়ি কিনেছেন। এখন বেশির ভাগ সময় বিদেশেই কাটান।

করোনার কারণে দেশে আটকা পড়েন শাহবাজ খান। তার ব্যবসায়ও ধ্বস নামে। বায়ারদের অর্ডার বাতিল করায় তাকে সবগুলো গার্মেন্টস বন্ধ করে দিতে হয়। বাসায় বসে অলস সময় কাটান শাহবাজ খান। কিন্তু বাসায় শুয়ে বসে কত আর সময় কাটানো যায়। একদিন তিনি টেলিফোনে মোহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মোহিনীর কাছ থেকে তার ব্যবসার খোঁজখবর জানতে চান।
মোহিনী তাকে তার ব্যবসায়িক নীতির কথা জানালে শাহবাজ খান বললেন, এতো নীতিফিতি নিয়ে চললে তুমি বড় ব্যবসায়ী হতে পারবে না।

কৌতুহলের বশে মোহিনী জানতে চান, কেন?
এখন তোমার কোন ব্যবসা নেই। অথচ তুমি সবাইকে বেতন দিয়ে যাচ্ছো! এই করোনা কবে শেষ হবে তা কি জানো?
না। আমি কেন, কেউ জানে না।
আমি জানি।
কি জানো?
করোনার রেশ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকবে। আর অর্থনীতির ধকল আগামী দুই বছরেও কাটিয়ে ওঠা যাবে কি না সন্দেহ আছে।
হুম। তোমার তো গার্মেন্টস ব্যবসা; তাই না?
হ্যাঁ।
তোমার ব্যবসার কি অবস্থা?
খুবই খারাপ। আমার সাতটি গার্মেন্টসই বন্ধ।
বলো কি?
শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে দিয়েছ?
তা তো বটেই।
বেতন দিয়েছ?
কিসের বেতন? প্রোডাকশন নেই, আবার বেতন কিসের?
তাহলে তাদের উপায় কি হবে?
তাদের উপায় কি হবে তা নিয়ে আমি ভাবলে চলবে। তাহলে তো তাদের সঙ্গে আমারও পথে বসতে হবে!
তাই বলে তুমি তাদের বেতন দেবে না?
তুমি দাও। মানবিকতা দেখাও। তারপর বুঝবা?
দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে মোহিনী বললেন, আসলেই আমরা বোকা। তুমি অনেক বুদ্ধিমান।
শোন, টিপ্পনি কাটো আর যাই কাটো, অবশ্যই আমি বুদ্ধিমান। বুদ্ধিমান না হলে কি সাতটি গার্মেন্টসের মালিক হতে পারতাম! কানাডা-মালয়েশিয়ায় বাড়ি কিনতে পারতাম!
তাই নাকি! ভালো ভালো। তুমি ভাই সুখে শান্তিতে থাকো। আমাদের জন্য পারলে প্রার্থনা কোরো। আমরা যেন এই করোনা নামক বিপদ থেকে উদ্ধার হতে পারি।
শোন শোন! এখন তো আমার কথা শুনবা না! একদিন আমাকে মনে করবা। করোনা দেশের অর্থনীতিকে যে কোথায় নিয়ে যাবে তা কি তুমি জানো না! ভয়ঙ্কর সময় আসছে।
দেখা যাক। যখন ভয়ঙ্কর সময় আসবে তখন মোকাবেলা করব। ভূত আসছে, ভূত আসছে বলে যদি ভূতের ভয়ে ঘরে ঢুকে যাই তাহলে তো কিছুই করা যাবে না। আর আমি মনে করি, একটা মানুষ মানবিক না হলে সে কিসের মানুষ? অমানবিক মানুষকে আমি মানুষ বলেই গণ্য করি না। সরি, অনেক কথা বলে ফেললাম। কিছু মনে কোরো না। ফোন কোরো। যোগাযোগ রেখো। আমি রাখছি। ভালো থেকো।

মোহিনী ফোন রেখে ভাবতে শুরু করলেন। এটা কি কোনো কথা হলো! একটিমাত্র গার্মেন্টস থেকে সাত সাতটি গার্মেন্টস করল। বিদেশে বাড়ি করল। বিদেশি ব্যাংকে টাকা গচ্ছিত রাখল। তারপরও তাদের অভাব দূর হয় না। তারপরও তারা শ্রমিকদের ঠকায়। শ্রমিকদের টাকা মেরে খায়। নাহ! এরা মানুষ না! এরা মানুষ না!

মোহিনী শুধু নিজের অফিসের লোকদেরই সহায়তা করছেন না; তিনি তার অফিসের কয়েকজন লোককে নিয়ে ঢাকা শহরের অভাবী মানুষদের সহায়তা করতে শুরু করলেন। প্রতিদিন তার অফিস থেকে দরিদ্র পরিবারের মধ্যে চাল, ডাল, লবণ, তেল এবং আলু বিতরণ করা হয়। নিত্যপণ্যগুলো কিনে কিছু লোক অফিসে বসে সারাদিন প্যাকেজ করে। বিকেল থেকে শুরু হয় বিতরণ। সহায়তার প্যাকেট নিয়ে দুটি মাইক্রোবাস ছুটে যায় শহরের অলিতে গলিতে।

করোনা শুরু হওয়ার পর ঢাকা শহরের মানুষের মধ্যে যে হাহাকার অবস্থা শুরু হয়। অনেকেই বাজার থেকে চাল ডাল লবন তেল কিনে বাসায় ভর্তি করে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে দুর্ভিক্ষ লেগে গেছে। মানুষ যে কী! সহায়তা করার জন্যও চাল ডাল লবন তেল কিনতে পাওয়া যায় না! অবশ্য সে অবস্থা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। ঢাকা জেলা অফিস, পুলিশ বিভাগ থেকেও সহায়তা দেয়া হয় দরিদ্র মানুষগুলোকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কিছু এনজিও কর্মীও সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। কিন্তু এর শুরুটা হয় মোহিনীর হাত ধরে। মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষেরাও তাদের প্রতিবেশিদের খাবার সহায়তা দিচ্ছে। এটা দেখে মোহিনী তৃপ্তির নিশ্বাস ছেড়ে বলেন, কে বলেছে দেশটা শেষ হয়ে গেছে! দেশে এখনো মানবিকতা আছে। কাজেই ভাবনার কিছু নেই।

শাহবাজ খান বাসায় ঝিমমেরে বসে আছেন। তিনি কারো সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না। কারো সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। কেউ তাকে খুঁজেও পাচ্ছে না। তিনি যখন নিজে নিজে আত্মগোপন করেন তখন তাকে কেউ খুঁজে পায় না। মোবাইল ফোন, বাসার ফোন সব বন্ধ করে রাখে। বাসার পিওন-দারোয়ানদের বলে দেয়, কাক-পক্ষীও যেন না জানে যে তিনি বাসায় আছেন। তিনি এমন সব কাণ্ড করেন যে স্ত্রী, ছেলে-মেয়েকেও এড়িয়ে চলছেন। তিনি তার বাসার অফিস ঘরে নিঃসঙ্গ সময় কাটান। আজ তিনি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছেন। তারপর দুই গ্লাস পানি গিলে অফিস ঘরের চেয়ারে বসে একটার পর একটা সিগারেট টানছেন। মোহিনীর কথা তার বার বার মনে পড়ছে। মোহিনী তাকে রীতিমতো জ্ঞান দিয়ে দিল। মোহিনী যে তার চেয়ে অনেক বড় মনের সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিল। এটা শাহবাজ খানের জন্য খুবই অপমানের। কথা বলার সময় ফিল না করলেও এখন তিনি ফিল করছেন। কিন্তু মোহিনী এতো মানবিক হতে পারলে আমি কেন পারব না? বাবা আমাকে কি শিক্ষা দিয়েছেন? মানবিকতার শিক্ষা তো পরিবার থেকেই পাওয়া যায়। রক্তের ভেতরে থাকে। বাবা কি শুধু আমাকে টাকাই চিনিয়েছেন? মানবিকতার কোনো দীক্ষা দেননি! কেন? আমি মারা গেলে আমার টাকা পয়সা কে খাবে? আমি কি এসব কবরে নিয়ে যেতে পারব? মোহিনীর কথাই তো ঠিক। একটা মানুষ মানবিক না হলে সে কিসের মানুষ!

শাহবাজ খান মনে মনে ভাবেন, ফালতু কাজে কত টাকা খরচ করছি! কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশে মৌজ করছি। জুয়া খেলে দুই হাতে টাকা উড়াচ্ছি। অথচ আমাদের দেশের মানুষ না খেয়ে মরছে! আমার মা বাবা, আমার পরিবারের কেউ তো কখনো বলল না, মানবিক হও। সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াও। মানুষকে সহযোগিতা কর। আমি কি বাবার মুখোমুখি দাঁড়াবো। তার কাছে জানতে চাইব, কেন তিনি আমাকে মানবিকতার শিক্ষা দেননি। তিনিই বা কেন দরিদ্র মানুষকে সহায়তা করেন না।

শাহবাজ খানের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে। গ্রামের মানুষ তাদের বাড়িতে সহায়তা চাইতে এলে বৈরম খান তাদেরকে দূরদূর করে তাড়িয়ে দিতেন। তার সামনে কেউ হাত পাতলে গালমন্দ করতেন। বলতেন, কাজ করে খেতে পারিস না? অন্যের কাছে টাকা চাইতে লজ্জা করে না? নিতান্তই সমস্যায় না পড়লে কোনো মানুষ কি আরেকজন মানুষের কাছে হাত পাতে? কি জানি। শাহবাজ খান কিছু সহায়তা দিতে গেলেও বাবার চোখ রাঙানি তাকে সইতে হতো।

শাহবাজ খান কখনো তার পরিবারে অর্থ কষ্ট দেখেননি। দারিদ্র শব্দটির সঙ্গে সে পরিচিত নয়। কখনো ক্ষুধার কষ্ট পায়নি। মুখ দিয়ে বলামাত্রই তার সামনে খাবার হাজির হয়ে গেছে। তার বাড়িতে খাবার যায়নি এমন কোনো পাঁচ তারকা হোটেল কিংবা নামিদামি কোনো রেস্তোরাঁ বাদ নেই। কেউ তার কানে দিতে পারলেই হোলো, ওমুক রেস্তোরাঁর খাবার মজাদার। ব্যাস, সঙ্গে সঙ্গে খাবার নিয়ে আসা হয়। তার মানে তিনি কি ভোজনবিলাসী? না। তাও নয়। সখ। সখের কারণেই তিনি এসব করেন। নিজে অল্প খান। বাকি খাবার খায় তার চারপাশের লোকজন। তাকে চাটুকাররা যখন বলে, স্যার খাবারটা খুব মজার! তিনি তখন হাসি ছড়িয়ে দিয়ে বলেন, তাই তাই? খা। বেশি করে খা। পেট ভরে খা।

লেখাপড়ার ব্যাপারে তেমন কোনো আগ্রহই ছিল শাহবাজ খানের। যদিও তার বাবা সখ করে ছেলেকে ঢাকা শহরের সবচেয়ে নামকরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন। অনেক কষ্টে এ লেভেল করেছে। তারপর লেখাপড়ার নাম করে আমেরিকায় গিয়ে ঘোরাঘুরি। বছর খানিক পর দেশে ফিরে এসে বাপের দেয়া টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করে। শুরুতে একজন আনাড়ি মাঝির যেমন হাল ধরতে কষ্ট হয়; তেমনি নতুন ব্যবসা করতে গেলে হোচট খেতে হয়। বুঝতে কিছুটা কষ্ট হয়। সময় লাগে। কারো একটু বেশি আবার কারো কম। হোচট খেতে খেতেই রপ্ত হয়ে যায়। সেই সময়টুকু শাহবাজ খানকেও দিতে হয়েছে। গার্মেন্টস সেক্টরে তিনি এখন বড় ব্যবসায়ী।

শাহবাজ খান আবার মোহিনীর কথা ভাবেন। মোহিনী কি আমার চেয়ে বেশি ধনী? সে কি অনেক টাকার মালিক? না না! সেটা হওয়ার কথা না। তাহলে সে এতো মানবিক হতে পারলে আমি কেন পারব না?

মানবিক হওয়ার চেষ্টা যে শাহবাজ খান করেননি তা নয়। করেছেন। কিন্তু অন্য মানুষকে টাকা দিতে গেলেই তার হাত কাঁপে। বুকের মধ্যে ধরফর করে। মনে হয়, অন্যকে বিলাতে গেলে তার টাকা ফুরিয়ে যাবে। তিনি বিপদে পড়বেন। তার বিপদে কেউ তাকে সাহায্য করবে না। এ কারণে তিনি কাউকে সাহায্য করতে পারেন না।

সাহায্য সহযোগিতার বিষয়টি অভ্যাসের ব্যাপারও। চিরায়ত নিয়ম বা পারিবারিক ঐতিহ্য বলেও একটা কথা চালু আছে। পরিবারে ছোটবেলা থেকে দান-খয়রাত সংস্কৃতি চালু থাকলে নিশ্চয়ই তা রপ্ত করা সম্ভব হতো। এ ধরনের সংস্কৃতি শাহবাজ খানের পরিবারে কখনোই ছিল না। কাজেই অভ্যাসে পরিণত হওয়া কিংবা রপ্ত হওয়ার বিষয়টি একেবারেই নেই।

শাহবাজ খান মনস্থির করেছেন যে, আজ তিনি তার বাবার মুখোমুখি হবেন। তার সামনে গিয়ে দাঁড়াবেন। তার সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। কেন তার বাবা মানবিক নয় তা স্পষ্ট করে শুনবেন।

অতঃপর শাহবাজ খান তার বৈরম খানের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। তার কাছে জানতে চান, বাবা তুমি কেন মানবিক নও? কেন তুমি দান-খয়রাতকে নিরুৎসাহিত করো? কেন তুমি দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করো না? আমাকে খোলাখুলি বলবে?

বৈরম খান ছেলের কথায় রেগে গেলেন। এমনিতেই তিনি রকচটা মানুষ। তাকে কেউ প্রশ্ন করবে এটা তিনি কিছুতেই মানতে পারেন না। তিনি সবাইকে নাজেহাল করবেন। তিনি সবাইকে বকাবাজি করবেন। কিন্তু তাকে কোনো কিছুর জন্য জবাবদিহি করতে হবে না। তিনি জবাবদিহির উর্ধ্বে। আসলে আচার আচরণে তিনি রাজা-বাদশাদের মতো। কিন্তু স্বভাব-চরিত্র ফকিরের মতো। যক্ষের ধনের মতো তিনি টাকা-পয়সা আকড়ে রাখেন। একটা কানাকড়িও যাতে বাজে খরচ না হয় সেদিকে তার কড়া দৃষ্টি। অথচ নিরাপত্তার কাজে তিনি বিপুল খরচ করেন।

বৈরম খানের ধারনা, টাকাপয়সার লোভে তাকে কেউ মেরে ফেলতে পারে। সেজন্য তিনি সব সময় নিরাপত্তা বেস্টনীর মধ্যে থাকেন। বডিগার্ড নিয়ে চলেন। ছেলেকেও সেভাবেই তৈরি করেছেন। ছেলেকে এমন ধারনা দিয়েছেন যে, তারা রাজা-বাদশা। বাকিরা সবাই সাধারণ। সাধারণের কাছ থেকে তাদের দূরে থাকতে হবে। তাদেরকে আলাদা ভাবতে হবে। সাধারণের কথা ভেবে নিজেদের সুখ-সাচ্ছন্দ্য বিনষ্ট করা যাবে না। অথচ সেই ছেলেই কি না আজ বৈরম খানের কাছে জবাব চাইছে? এতোবড় দুঃসাহস তার কি করে হলো?

বৈরম খান রেগে আগুন। তিনি রাগলে কোনো কিছুই তার মাথায় থাকে না। চেঙ্গিশ খানের রূপ ধারণ করেন। তখন তিনি মানুষ খুনের চেয়েও বড় কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারেন। ছেলে না হয়ে অন্য কেউ হলে হয়তো আজ মহাপ্রলয় ঘটে যেত। মহাপ্রলয়ের আগে যে রকম হয় সে রকমই একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে বৈরম খানের বাড়িতে। বৈরম খানের রুদ্র মূর্তি দেখে শাহবাজ খান আত্মগোপন করেছে। বসার ঘরে ঘূর্ণিঝড় কুন্ডুলি পাচাচ্ছে দেখে বৈরম খানের স্ত্রী পারভীন বেগম শোবার ঘরে গিয়ে খিল আটকে বসে আছেন। তিনি মনে মনে ছেলেকে বকাবাজি করছেন। তিনি সব সময় ছেলেকে সতর্ক করতেন এই বলে যে, বাপকে কখনো রাগাবি না। তাহলে কিন্তু মহাবিপদে পড়বি। শাহবাজ খান নিজেও তা জানে। ছোটবেলা থেকে দেখেও আসছে, বৈরম খান রাগতে পারেন এমন কোনো কাজ কেউ করে না। করতে পারে না।

শাহবাজ খান বন্ধুর অপমান সহ্য করতে না পেরে তিনি তার বাবার মুখোমুখি হন। এরফলে কী বিপদেই না পড়েছেন তিনি! সারা বাড়িতে তুলকালাম কাণ্ড শুরু হয়েছে। যে-ই বৈরম খানের সামনে পড়ছে তাকেই ভয়ানক গালাগাল শুনতে হচ্ছে। এরমধ্যেই বাড়ির চাকর-বাকর দু’তিন জনের চাকরি চলে গেছে। কারণ তারা শাহবাজ খানকে খুঁজে বের করতে পারেননি। আত্মগোপনের সময় শাহবাজ খানও তাদেরকে হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন, কেউ তার খোঁজ দিলে চাকরি যাবে। ফলে বাপ-ছেলের ক্রসফায়ারের মধ্যে পড়ে চাকর-বাকরদের চিড়েচ্যাপ্টা অবস্থা!

এখন আর কেউ বৈরম খানের সামনে পড়ছে না। সামনে পড়লেই কোনো না কোনো বিপদে পড়তে হবে। সেই আশঙ্কায় সবাই দূরে দূরে থাকে। কাউকে না পেয়ে বৈরম খানের মেজাজ আরো বিগড়ে যায়। তিনি পাগলের মতো বাড়ির মধ্যে ছোটাছুটি করেন আর ছেলেকে গালমন্দ করেন। জেদে নিজের চুল নিজে ছেড়েন। চিৎকার চেঁচামেচির এক পর্যায়ে তার বুকে ব্যথা ওঠে। বুকে হাত দিয়ে তিনি বসে পড়েন। তারপর অসহায়ের মতো বললেন, কে আছিস! আমাকে ধর!

বাড়ির লোকজন ছোটাছুটি করে বৈরম খানকে ধরার জন্য এগিয়ে যায়।

শাহবাজ খান বেশ কিছুদিন তার বাবার বাড়িতে যায়নি। বৈরম খানের সঙ্গে কথা বলেনি। বলতে গেলে বাপ-ছেলের মুখ দেখাদেখিই বন্ধ। বৈরম খান বেশ কয়েকবার শাহবাজ খানকে ডেকে পাঠিয়েছেন। কিন্তু সে তার বাবার ডাকে সাড়া দেয়নি। এ নিয়ে বাবা আর ছেলের মধ্যে বেশ কিছুদিন মান-অভিমান চলে। এক পর্যায়ে বৈরম খানই ছেলের মান ভাঙান। তবে তাদের মধ্যে ব্যবসা পরিচালনা নিয়ে ঝুট-ঝামেলা লেগেই আছে। আগে বাবা যা বলতেন তা অক্ষরে অক্ষরে ছেলে পালন করত। এখন শাহবাজ খান নিজের বুদ্ধিতে কিংবা তার আশপাশের লোকজনের পরামর্শে কাজ করেন। বৈরম খান কোনো নির্দেশ দিলে তা উল্টে যায় শাহবাজ খানের নির্দেশে। এ এক আজব খেলা শুরু হয়েছে বৈরম খানের পরিবারে। বাপ আর ছেলের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব।
সাধারণত রাজ-পরিবারে এ ধরনের পরিস্থিতি দেখা যায়। ক্ষমতার মোহে বাপ-ছেলে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু একটা সাধারণ পরিবারেও যে ক্ষমতা দেখানোর প্রবনতা প্রবল হয়ে উঠছে তা বৈরম খানের পরিবার না দেখলে উপলব্ধি করা কঠিন! বাপ-ছেলের দ্বন্দ্বের কারণে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিপদে পড়েছে। তারা কার নির্দেশ মানবে? কার মন রক্ষা করে চলবে তা নিয়ে রীতিমতো সংকটে পড়ে। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় কি তা নিয়ে গভীর ভাবনায় ডুবে যায় তারা।

 

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১২

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১১

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১০

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৮

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৭

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৬

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৫

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৪

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১

Header Ad
Header Ad

ভেঙে গেল পরীমনি-সাদীর প্রেম? রহস্যময় পোস্টে তোলপাড় নেটদুনিয়া

নায়িকা পরীমনি ও গায়ক শেখ সাদী। ছবি: সংগৃীত

ঢালিউডের আলোচিত নায়িকা পরীমনি ও তরুণ গায়ক শেখ সাদীর প্রেমের গুঞ্জন অনেকদিন ধরেই ছিল ‘ওপেন সিক্রেট’। সোশ্যাল মিডিয়ায় একসঙ্গে সময় কাটানোর ছবি, একে অন্যের পোস্টে ভালোবাসার মন্তব্য, এমনকি সাদীর মায়ের বানানো পিঠার ভিডিও শেয়ার—সবই তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ইঙ্গিত দিত।

তবে হঠাৎ করেই যেন সেই সম্পর্কের আবহে ছন্দপতন। সম্প্রতি ফেসবুকে পরীমনি ও সাদীর রহস্যময় পোস্ট ঘিরে নেটিজেনদের মনে প্রশ্ন—তবে কি ভেঙে গেল সম্পর্ক?

পরীমনি তার ফেসবুক ওয়ালে কালো ব্যাকগ্রাউন্ডে লিখেছেন: ‘ব্ল্যাকমেলার’।

অন্যদিকে সাদী পোস্ট করেছেন শুধু তিনটি ডট (...), যা অনেকেই সম্পর্ক ভাঙনের দিকেই ইঙ্গিত করছে বলে মনে করছেন।

নেটদুনিয়ায় প্রতিক্রিয়াও এসেছে ঝড়ের মতো। একজন মন্তব্য করেছেন, “শেষ পর্যন্ত পরীও ছ্যাঁকা দিয়ে দিল।” আরেকজন লিখেছেন, “এত তাড়াতাড়ি এমন পোস্ট আশা করিনি, সাদী ভাই।”

দুজনের কেউই এখনও সম্পর্ক ভাঙনের ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেননি। তবে পরীর পোস্টে কমেন্ট অপশন বন্ধ থাকলেও, তার ভক্তরা পোস্টটি শেয়ার করে সরাসরি সাদীকে ট্যাগ করছেন।

অনেকে বলছেন, “নিশ্চয়ই সাদী কিছু করেছেন, নইলে এমন পোস্ট দিতেন না পরীমনি।”

চিত্রনায়ক শরীফুল রাজের সঙ্গে বিয়েবিচ্ছেদের পর গায়ক শেখ সাদীর সঙ্গে পরীমনির ঘনিষ্ঠতা ছিল অনেকটাই প্রকাশ্য। একসঙ্গে ঘোরাঘুরি, পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং এমনকি পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার সময় সাদীর জামিনদার হওয়া—সব মিলিয়ে দুজনের সম্পর্ককে ভরসাময় ও গভীর বলেই মনে করা হতো।

এক সাক্ষাৎকারে পরীমনি বলেছিলেন, “বিপদের সময় যে পাশে থাকেন, সে জীবনের জন্য আশীর্বাদ।”

সাদীও বলেছিলেন, “আমি তার মঙ্গল কামনা করি সবসময়।”

ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, পরীমনির বাসায় কিছুদিন কাজ করা এক গৃহকর্মীর অপপ্রচারে তৈরি হয়েছে ভুল বোঝাবুঝি। ওই কর্মী পরীমনির বাসা থেকে বের হওয়ার পর নানাভাবে তাদের সম্পর্ক নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে মুখরোচক কথা ছড়িয়েছেন।

তবে পরীমনির ঘনিষ্ঠজনরা এ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তাদের মতে, এসব অপপ্রচারই মূলত সম্পর্কের মাঝে টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছে।

পরীমনি বর্তমানে তার সন্তান ও সিনেমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। অন্যদিকে সাদীও নিজের সংগীতজগতে সক্রিয় আছেন।

Header Ad
Header Ad

বগুড়া বিমানবন্দর চালুর প্রস্তুতি চূড়ান্ত, জুলাই থেকেই শুরু হতে পারে ফ্লাইট চলাচল

বগুড়া বিমানবন্দর। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়া বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালুর প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। ১১ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে বিমানবন্দরের রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, ডাম্বল এবং এপ্রোন সারফেসের উন্নয়ন কাজ চলছে পুরোদমে। সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোলে আগামী জুলাই মাসেই বগুড়া থেকে অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল শুরু হবে।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ—বেবিচক। শুধু বগুড়াই নয়, দেশের আরও সাতটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দর সচল করতে কাজ করছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, কুমিল্লা, শমসেরনগর (মৌলভীবাজার) এবং রাজধানীর তেজগাঁও বিমানবন্দর।

বেবিচক সূত্র বলছে, এসব পরিত্যক্ত বিমানবন্দর চালু হলে সড়ক ও রেলপথের ওপর চাপ কমবে এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সংযোগ আরও সহজ হবে। ফলে শিল্প, ব্যবসা ও পর্যটনে নতুন গতি সঞ্চার হবে।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে জানান, “বাণিজ্যিকভাবে বিমান পরিচালনার জন্য কিছুটা সময় লাগবে। তবে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে এসব বিমানবন্দর পুরোপুরি সচল করা যাবে।”

তবে এসব বিমানবন্দরে যাত্রী পরিবহনের মতো ফ্লাইট পরিচালনায় সবচেয়ে বড় বাধা রানওয়ের দৈর্ঘ্য ও অবকাঠামো। অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি যাত্রীবাহী বিমানের ওঠানামার জন্য ৬ থেকে ৮ হাজার ফুট রানওয়ে দরকার, অথচ পরিত্যক্ত এই বিমানবন্দরগুলোতে রানওয়ের দৈর্ঘ্য মাত্র ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার ফুট।

বেবিচক জানিয়েছে, ইতোমধ্যে হুদাবাসি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট ফার্মের সহায়তায় বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। যেখানে সংস্কার কাজ আগে শেষ হবে, সেখানে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হবে আগে।

উল্লেখ্য, দেশে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয়েছিল ২৮টি বিমানবন্দর। বর্তমানে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কক্সবাজারে। অভ্যন্তরীণ রুটে সচল রয়েছে রাজশাহী, যশোর, সৈয়দপুর ও বরিশাল বিমানবন্দর।

নতুন করে চালু হতে যাওয়া সাতটি বিমানবন্দর যুক্ত হলে দেশের অভ্যন্তরীণ বিমান যোগাযোগে বড় বিপ্লব ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Header Ad
Header Ad

বেনজীরকে বোট ক্লাব থেকে বহিষ্কার, ৩২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ছবি: সংগৃহীত

সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে ঢাকা বোট ক্লাব থেকে বহিষ্কারের কারণ প্রকাশ করেছেন ক্লাবের বর্তমান প্রেসিডেন্ট নাসির মাহমুদ। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে ক্লাবের রিভারভিউ লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, বেনজীর আহমেদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্লাব দখল করে রেখেছিলেন এবং আর্থিক অনিয়মে জড়িত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে নাসির মাহমুদ বলেন, “বেনজীর আহমেদ কোনো নির্বাচনের মাধ্যমে নয়, জোর করে ক্লাবের সভাপতি পদে বসেছিলেন। সামাজিক সম্মান পেতেই তিনি এই পদে ছিলেন, তবে ক্লাবের নিয়ম-কানুন তিনি মানেননি। এমনকি আমি নিজে তিন বছর ক্লাবে আসার সাহস পাইনি, কারণ তিনি তাঁর প্রভাব খাটিয়ে আমাকে ক্লাবে প্রবেশ করতে দেননি।”

তিনি জানান, ক্লাবের প্রায় ৩২ কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম খতিয়ে দেখতে পুনরায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট ফার্ম হুদাবাসিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অনিয়মের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।

নাসির মাহমুদ অভিযোগ করেন, বেনজীরের ভয়ে তিনি ক্লাবে যাওয়া বন্ধ করে দেন, তবে আইনি লড়াই চালিয়ে গেছেন। “তিনবার আমি তাঁকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছি। পরে তিনি বুঝতে পারেন আমি আইনগতভাবে সঠিক পথে আছি এবং তখনই আলোচনায় বসতে চান।”

তিনি আরও বলেন, “ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হয়ে বেনজীর কেউকেটা হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কোনো নিয়ম মানেননি, কোনো রিপোর্ট সাবমিট করেননি। ক্লাবের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়ে গিয়েছিল।”

ক্লাবের সাবেক সেক্রেটারি লে. কমান্ডার (অব.) তাহসিন আমিনকেও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ক্লাবের প্রথম নির্বাচিত নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই বহিষ্কার কার্যকর করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথাও জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আলোচিত পরীমনি ঘটনার প্রসঙ্গও আসে। এ নিয়ে নাসির মাহমুদ বলেন, “পরীমনি এই ক্লাবের সদস্য ছিলেন না, তিনি অতিথি হয়ে এসেছিলেন। অনুমতি ছাড়াই ক্লাবে প্রবেশ করেছিলেন। আমি এর প্রতিবাদ করায় উল্টো আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

নাসির মাহমুদ দাবি করেন, বেনজীরের প্রভাব ও চাপের কারণে তাঁরা একসময় প্রেসিডেন্ট পদ ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। তবে নির্বাচনের দাবিতে বারবার নোটিশ দেওয়ার পর ২০২৩ সালের ২৪ জুন নির্বাচনের তারিখ দিতে বাধ্য হন বেনজীর।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. নকিব সরকার অপু, মো. জেসমুল হুদা মেহেদী অপু, আসমা আজিজ, এ কে এম আইয়াজ আলী (খোকন), আলীম আল কাজী (তুহিন), খালেদা আক্তার জাহান, মির্জা অনিক ইসলাম প্রমুখ।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ভেঙে গেল পরীমনি-সাদীর প্রেম? রহস্যময় পোস্টে তোলপাড় নেটদুনিয়া
বগুড়া বিমানবন্দর চালুর প্রস্তুতি চূড়ান্ত, জুলাই থেকেই শুরু হতে পারে ফ্লাইট চলাচল
বেনজীরকে বোট ক্লাব থেকে বহিষ্কার, ৩২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
ঢাকায় আবারও আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, ড. ইউনূসের পদত্যাগ দাবি
২০২৬ বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে আশাবাদী মেসি, সিদ্ধান্ত নেবেন সময়মতো
পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশের মন্তব্য ‘অযৌক্তিক’: ভারত
দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবলের আত্মহত্যা
দাদা ও চাচার বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীকে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগ
গত ৯ মাসে এক আকাশ ভালোবাসা অর্জন করেছি : প্রেসসচিব
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজে আগ্রহ দেখায়নি বেসরকারি চ্যানেল, দেখাবে বিটিভি
সন্ত্রাসী তালিকা থেকে তালেবানকে বাদ দিলো রাশিয়া
ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে, জানালেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
ব্রাজিলের ভক্তদের ‘বানরের’ সঙ্গে তুলনা, নিষেধাজ্ঞার মুখে আর্জেন্টিনা
নারীরা কেন বয়সে ছোট পুরুষের সঙ্গে প্রেমে জড়াচ্ছেন?
জুলাই-মার্চ মাসে ৩০.২৫ বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ
সংঘর্ষে উড়ে গেছে বাসের ছাদ, তবুও ১০ কিলোমিটার চালিয়ে ৬০ যাত্রীকে বাঁচালেন চালক
কোলের সন্তান বিক্রি করে অলংকার, মোবাইল কিনলেন মা
চুয়াডাঙ্গায় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে দু’জন নিহত
ইয়েমেনের তেল বন্দরে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৩৮
হবিগঞ্জে ট্রাক-পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ৪