রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১৩

বাইশ বছর আগে আমার ইজিপ্টশিয়ান বন্ধু লামিয়ার সাথে যখন পরিচয় হয়েছিল তখনই তার কাছে থেকে প্রথমবারের মতো জেনেছিলাম লক্সর না এলে মিশর ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বাইরের পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ কায়রো এসে পিরামিড এবং স্ফিংস দেখে, জাতীয় মিউজিয়াম এবং খানে খলিলি বাজারে একটা চক্কর দিয়ে, বড় জোর আলেক্সান্দ্রিায়ার নিমজ্জিত বাতিঘর এবং হাজার বছরের পুরোনো লাইব্রেরি দেখেই ফিরে যায়। কিন্তু ফারাও সম্রাটদের প্রাচীন মিশরকে জানতে হলে আবু সিম্বেল, কোমওম্বো এবং বিশেষ করে লক্সর আসতেই হবে। লামিয়ার ভাষায়, প্রাচীন লক্সরের পুরোটাই আসলে ওপেন এয়ার মিউজিয়াম। বিকেলের দিকে আমাদের জাহাজ সেই উন্মুক্ত জাদুঘরের শহরে এসে নোঙ্গর করলো। জাহাজ ঘাটে ভেড়ার পরপরই আমরা দ্রুত জলযান ছেড়ে আমাদের নির্ধারিত মাইক্রোবাসে উঠে পড়লাম। এবারেও পথপ্রদর্শক মোস্তফা এবং সঙ্গী সাথী বলতে সেই পুরোনো ছয়জন। আমাদের প্রথম গন্তব্য কর্নাক। দূর অতীতে লক্সরের নাম ছিল থিবস। থিবস নগরীর পথ দিয়ে কর্নাকের পথে ছুটতে ছুটতেই প্রায় ভুলে যাওয়া ব্রেখটয়ের একটি কবিতার কয়েকটি লাইন মনে পড়ে গেল। 


Who built Thebes of the seven gates?

In the books you will find the name of kings.

Did the kings carry the lumps of rock?’

সত্যিই আমরা তো পিরামিড বা থিবস নগরীর নির্মাতা হিসাবে ফারাও সম্রাটদের কথাই জানি। যেমন তাজমহলের নির্মাতা হিসাবে জানি সম্রাট সাজাহানের নাম। কত সহস্র শ্রমদাসের কত বছরের উদয়াস্ত নিরলস কর্মযজ্ঞের শ্রমে ঘামে গড়ে উঠেছিল লক্সর তার হিসাব কেউ রাখেনি। অতীতের গৌরবোজ্জ্বল থিবস হাজার চারেক বছর পরে নাম বদলে লক্সর হলেও শহরটি তার অতীতের মতোই এখনো সুন্দর সাজানো একটি জনপদ। ফুটপাথের দুপাশে গাছের সারি, সড়ক দ্বীপের পুষ্পোদ্যান এবং মাঝে মাঝেই সবুজ তরু পল্লবের ফাঁকে দূরে উঁকি দিয়ে যায় উঁচু নিচু ধূসর পাহাড়ের সারি। কিছু পরেই আমরা যখন নীল নদ হাতের বাঁ দিকে রেখে এগোচ্ছি, তখন বাঁ দিকের পায়ে চলার পথ জুড়ে নাম না জানা একটি ঝাঁকড়া গাছের সারি আমাদের সাথে সাথে চলতে থাকে। জাহাজ থেকে নামার মিনিট পনের পরেই পৌঁছে গেলাম কর্নাক টেম্পল কমপ্লেক্স।


বিপুল সংখ্যক বিস্ময়কর প্রাচীন স্থাপনা ও বিশালাকৃতির স্মৃতিস্তম্ভের সমাবেশ ঘটেছে কর্নাকের মন্দিরে। আরবিতে কর্নাক শব্দের অর্থ সুরক্ষিত। এই নাম থেকেই ধরে নেয়া যায় নীল নদের পূর্ব তীরে বর্তমান লক্সর প্রশাসনিক অঞ্চলের কর্নাক অতীতে কোনো এক সময় ছিল দুর্গ-দেয়াল, প্রহরা-পরিখা বেষ্টিত একটি সুরক্ষিত নগরী। কর্নাক মন্দির কম্প্লেক্সটি পুরাকালের একটি পুর্ণাঙ্গ গ্রামের আকারে মন্দির, উপাসনালয় এবং অন্যান্য ভবন নিয়ে খ্রিস্টপূর্ব ২০৫৫ অব্দ থেকে শুরু করে ১০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দুই হাজার বছরের বেশি সময় ধরে তিলে তিলে তিলোত্তমা হয়ে গড়ে উঠেছিল। এর যাত্রা শুরু হয়েছিল সম্ভবত দেবতা আমুন, মুত এবং খানসুকে উৎসর্গ করা একটি ধর্মীয় মন্দির হিসাবে। ধর্মীয় উদ্দেশ্যে নির্মিত প্রাচীন মন্দিরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এলাকা জুড়ে থাকা বৃহত্তম ভবন হিসাবে প্রাচীন মিশরীয়দের কাছে কর্নাকের পরচিতি এবং গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। 

সৌরভ আগেই বলেছিল মিশরের প্রাচীন মন্দিরগুলোর মধ্যে কর্নাক এবং ফিলাই তার সবচেয়ে পছন্দের দুটি জায়গা। ফিলাই ছোট্ট একটি দ্বীপে এবং কর্নাক তার বিশাল পরিসরে ফারাও যুগের অনন্য প্রত্মতাত্ত্বিক নির্দশন হিসাবে সারা বিশ্বের প্রত্মপ্রেমিক মানুষের কাছে এই একবিংশ শতাব্দীতেও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে। আমরা কর্নাক মন্দির কমপ্লেক্সের বিশাল চত্বরে নামার পরপরই মোস্তফা যথারীতি প্রবেশপত্র সংগ্রহ করে এনেছে।  ভেতরে ঢুকেই একটা বড় হলঘরে পুরো মন্দির এলাকায় রেপ্লিকা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এখান থেকে প্রাথমিক ধারণা পাবার পরে কোন অংশে কতোটা সময় দেয়া দরকার সে ব্যাপারে পর্যটকেরা ইচ্ছে মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আমাদের হাতে সময় কম, মডেল দেখে সময় নষ্ট করার চেয়ে আমি বাস্তব নিদর্শনগুলো যতোটা সম্ভব দেখে নিতে চাই। কাজেই হলঘর থেকে বেরিয়ে আবারও একটা দীর্ঘ বাধানো চত্বর পেরিয়ে আমরা এগোতে থাকি।  


কর্নাক মন্দির চত্বর তিনটি পরস্পর সংযুক্ত এলাকায় ভাগ করা। আমুনের সীমানা, মুটের সীমানা এবং মনটুর সীমানায় বিভক্ত মন্দির চত্বরটির মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং বিচিত্র নির্মাণ শৈলীতে পরিপূর্ণ আমুনের চত্বরটিই সবচেয়ে আকর্ষণীয়। বেশিরভাগ পর্যটক এই এলাকাটি ঘুরে দেখেই তাদের কর্নাক পরিদর্শন শেষ করেন। আমুনের সীমানায় প্রবেশের আগেই হাতের ডান দিকে একটা মসজিদ দেখে কৌতূহলী হয়ে মোস্তফার কাছে এর ইতিবৃত্ত জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের আরবি ভাষাভাষী মুসলমান ভাই সম্ভবত ফারাওদের সম্পর্কে যতোটা জানেন মসজিদ সম্পর্কে তাঁর ধারণা ততোটা স্পষ্ট নয়। তাই তার কাছে থেকে তেমন সদুত্তর না পেয়ে আমরা একটি সেতুর উপর দিয়ে পরিখা পেরিয়ে মূল মন্দির চত্বরের প্রবেশ পথে পৌঁছে গেলাম। এখানে দুপাশে দীর্ঘ সারিতে অসংখ্য স্ফিংস মৃর্তি থাবা পেতে বসে আছে। থাবা সিংহের মতো হলেও আসলে তাদের চেহারা যে কার বলা কঠিন। সারিবদ্ধ মূর্তিগুলোর অনেকেরই মুণ্ড কাটা পড়েছে, তবে ভালো করে দেখলে বোঝা যায় এরা যাদের প্রতিনিধিত্ব করছে, তারা ছাগল বা ভেড়ার চেয়ে উন্নততর কোনো প্রাণী নয়।  

ডমশরের নিউ কিংডোম যুগে শুরু করে পরবর্তী কয়েক শতাব্দী ধরে ফারাও শাসকরা একে একে দশটি  তোরণের একটি সিরিজ নির্মাণ করে। দেয়াল দিয়ে যুক্ত তোরণগুলোর ধারণা অনেকটা সিংহ দুয়ারের মতো, একটিকে ভবন বা স্থাপনাকে অতিক্রম করে পরবর্তী প্রবেশ দ্বার পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া যায় এই বিশাল তোরণের ভেতর দিয়ে। আমরা প্রথম তোরণ পেরিয়ে ঢুকে পড়ি একশ চৌত্রিশটি প্রকাণ্ড কলাম বিশিষ্ট আমুনের চত্বরে। এই হাইপোস্টাইল হল মিশরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থাপনা। বিপুলায়তন জটিল এবং দৃষ্টিনন্দন প্রাচীন জগৎ ঘুরে দেখে বিস্মিত হবার সুযোগ যখন পেয়েছি, তখন মোস্তফাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ইতিকথা শোনার কোনো মানে হয় না। এক একটি পিলারের কাছে দাঁড়ালে নিজেকে ভীষণ ক্ষুদ্র বলে মনে হয়। আড়াই কিংবা তিন হাজার বছর আগে যখন এই বিশাল পাথরের কাঠামো নতুন করে তৈরি হয়েছে, তখন কি তা সে যুগের মানুষের কাছে আশ্চর্যজনক কিছু বলে মনে হয়েছে! বড় বারোটি স্তম্ভ সত্তর ফুট এবং বাকি একশ বাইশটি স্তম্ভের প্রতিটির উচ্চতা চল্লিশ ফুট। সম্রাট সেতির রাজত্বকালে, অর্থাৎ ১২৯০ থেকে ১২৭৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নির্মিত হয়েছিল এই বিশাল মিলনায়তন। হলের দেয়ালে সেতি এবং তার উত্তরসূরী দ্বিতীয় রামেসেসের লিবিয়া ও সিরিয়ার যুদ্ধ শত্রæদের পরাজিত করার দৃশ্য চিত্রিত হয়েছে। 


আমরা দেয়ালের এবং স্তম্ভের শরীরে আঁকা শিল্পকর্ম দেখতে দেখতে প্রথমে বাঁ দিকের ভগ্নদশা ভবন এবং পরে ডান দিকের সুরক্ষিত চত্বর ঘুরে আসি। মন্দিরের ভেতরে তেমন কোনো গাছপালা না থাকলেও এখানে সেখানে দুই একটা খেজুর গাছ মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তবে খেজুর গাছের উচ্চতা ছাড়িয়ে যে বিশাল প্রস্তর মূর্তি, সেটি সম্রাট দ্বিতীয় রামসেসের। তাঁর দুই চরণযুগলের মাঝখানে একটুখানি জায়গা করে নিয়েছেন রাণী নেফারতারি! রাজার প্রিয়তমা পত্মীরই যদি এই দশা হয় তাহলে তাঁর অন্যান্য রাণীদের অবস্থান যে কোথায় ছিল তা বলা নিষ্প্রেয়োজন।  সম্রাটের সমাজ্ঞী কিংবা সাধারণের স্ত্রী, সকল নারীর অবস্থান আগে যেমন ছিল এখনো তাই আছে। আমাদের দুজনের সাথে রামসেস এবং নেফারতারিকে একফ্রেমে রেখে রানা ভাই খুব কষ্ট করে কয়েকটা ছবি তুললেন। কিন্তু ফারাওয়ের বিশালত্বের কাছে খর্বকায় আমাদের ছবিতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়ে গেল।   

মন্দিরের চতুর্থ পেরিয়ে আমরা ওয়াতজেত হলে। চতুর্থ এবং পঞ্চম তোরণের মাঝে ওয়াতজেত হলটি তৈরি হয়েছিল সম্রাট প্রথম থুতমোজের সময়কালে। হাইপোস্টাইল হলের মতো বিশাল না হলেও এর দৈর্ঘ্য প্রস্থও নেহায়েত কম নয়। রাজার অভিষেক, হেব-সেড ফেস্টিভ্যাল অথবা ধর্মীয় উৎসব আনন্দের সমাবেশ ঘটতো এই মিলনায়তনে। তবে পরবর্তী সময়ে বৃহত্তম হলটি নির্মিত হলে গুরুত্বপূর্ণ আচার অনুষ্ঠান হাইপোস্টাইল হলে স্থানান্তরিত হয়ে যায়। কোনো একজন রাজাধিরাজ তাঁর রাজত্বকালের ত্রিশতম বছরে হেব-সেড উৎসবটির আয়োজন করতেন। পুরোহিতদের একচ্ছত্র আধিপত্যের বিপরীতে ফারাওদের ঐশ্বরিক ক্ষমতা প্রদর্শন এবং ধর্মীয় নেতৃত্বকে শক্তিশালী করতে সম্রাট চতুর্থ আমেনহোটেপ তাঁর রাজত্বকালে দেবতা অ্যাতনকে উৎসর্গ করে এই উৎসবের প্রচলন করেছিলেন। বলা যায় ত্রিশ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন সুশাসন নিশ্চিত করার পরে এটি রজত জয়ন্তী বা সুবর্ণ জয়ন্তীর মতো একটি অনুষ্ঠান। এই উৎসবের মাধ্যমে রাজা তাঁর শক্তি ও ক্ষমতা প্রদর্শন করে পরবর্তী বছরগুলোতে তাঁর শাসন সুসংহত করতেন। এরপর থেকে তেত্রিশ, ছত্রিশ, ঊনচল্লিশ এমনি করে প্রতি তিন বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হতো এই উৎসব। ধর্মীয় উদ্দেশ্য বা দেব দেবীদের খুশি করার এই আয়োজনের আবরণ আসলে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার একটি প্রক্রিয়া মাত্র। 

মিশরের ‘নিউ কিংডোমে’ যুগে কর্নাক ছিল ধর্ম বিশ্বাসের কেন্দ্রভূমি কিন্তু ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ছিল সেই থিবস নগরীতে। কর্নাকের তাৎপর্যের প্রতিফলন ঘটেছে এর নির্মাণের আড়ম্বরে এবং বিশাল আকার আকৃতিতে। কর্নাকের মন্দিরটিও এখন প্রকৃতপক্ষে একটি উন্মুক্ত জাদুঘর। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে নির্মিত ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোর মধ্যে কর্নাক আজও বৃহত্তম হিসাবে স্বীকৃত। এর চুয়ান্ন হাজার বর্গফুটের মহা মিলনায়তন নটরড্যাম ক্যাথেড্রালের চেয়েও বড়। ধর্মীয় গুরুত্ব ছাড়াও ফারাওদের নতুন রাজত্বকালে কর্নাক খকনো কখনো প্রশাসনিক কেন্দ্র, সম্রাটদের প্রাসাদ এবং কোষাগার হিসাবেও ব্যবহৃত হয়েছে। আশি হাজার পরিচারক এবং ক্রীতদাস আমুন রা’র সেবায় সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত ছিল। মহামহিম দেবতার সম্মানে নির্মিত হয়েছিল পাঁচ হাজার মূর্তি। সন্ধ্যা হয়ে আসছিল বলে ষষ্ঠ ও সপ্তম তোরণের মাঝের চত্বরে দ্রুত একটি চক্কর দিয়ে বাইরের পথ ধরলাম। আরও অনেকটা সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে প্রতিটি দেয়াল প্রতিটি স্তম্ভ খুঁটিয়ে দেখা সম্ভব হলে ভালো হতো। দুই হাজার বছরের বেশি সময় নিয়ে গড়ে ওঠা কোনো স্থাপত্য, কোনো মন্দির বা কোনো শিল্পকর্ম দু চার ঘণ্টা বা দু চার দশ দিনে হয়তো চোখের দেখা দেখে শেষ করা সম্ভব। কিন্তু গভীরভাবে বুঝতে পারা বা উপলব্ধি করা হয়তো কখনোই সম্ভব নয়। 

আমরা বাইরে বেরিয়ে আসার আগেই কর্নাকের মন্দির সংলগ্ন মসজিদ থেকে মাগরিবের আজান ভেসে আসতে শুরু করেছে। তবে সে আজানের আহবান এতোটাই মৃদু যে আজানে অনভ্যস্ত পর্যটককে তা হঠাৎ করে চমকে দেয় না। কর্নাকের তোরণ পেরিয়ে মসজিদের পাশ দিয়ে আমরা পশ্চিমের রক্তিম আকাশের দিকে হেঁটে যাই। 

 


চলবে...    

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১১

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১০

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৯

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৮

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৭

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৬

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৫

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৪

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৩

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১

Header Ad
Header Ad

হজের ফ্লাইট শুরু মঙ্গলবার, উদ্বোধন করবেন ধর্ম উপদেষ্টা

হজের ফ্লাইট শুরু মঙ্গলবার। ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র হজ ফ্লাইট শুরু আগামী মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল)। ওই দিন ৪১৯ জন সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। হজের প্রথম ফ্লাইট উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।

চলতি বছর ৮৭ হাজার ১০০ জন পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরব যাবেন। এর মধ্যে ৫ হাজার ২০০ জন হজযাত্রী সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং বাকি ৮১ হাজার ৯০০ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালন করবেন।

প্রথম ফ্লাইটটি রাত ২টা ১৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। হজ ব্যবস্থাপনাকে নির্বিঘ্ন করতে সরকারি পর্যায়ে ১১২ জন এবং বেসরকারি পর্যায়ে ১ হাজার ৭৪৩ জন গাইড দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি ৭০ জন মোয়াল্লেম হজযাত্রীদের সার্বিক সহায়তা করবেন।

হজযাত্রী পরিবহনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ তিনটি এয়ারলাইনস। ৩১ মে পর্যন্ত হজের ফ্লাইট চলবে। ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ১০ জুন এবং শেষ হবে ১০ জুলাই।

পবিত্র হজ উপলক্ষে এ বছর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পরিচালনা করবে ১১৮টি, সাউদিয়া ৮০টি এবং নাস এয়ারলাইনস ৩৪টি ফ্লাইট।

হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আরাফাতের ময়দানে হজের খুতবা, যা ৯ জিলহজ মসজিদে নামিরা থেকে প্রদান করা হয়। এবারও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে হজের খুতবা, এবং তাৎক্ষণিক অনুবাদ করা হবে ২০টি ভাষায়। 

যেসব ভাষায় হজের খুতবা অনুবাদ করা হবে সেগুলো হলো- বাংলা, ফরাসি (ফ্রেঞ্চ), মালয়, উর্দু, ফারসি, চাইনিজ, তুর্কি, রাশিয়ান, হাউসা, ইংরেজি, সুইডিশ, স্প্যানিশ, সোয়াহিলি, আমহারিক, ইতালিয়ান, পর্তুগিজ, বসনিয়ান, মালায়লাম, ফিলিপিনো এবং জার্মান। 

উল্লেখ্য, ১৪৪৬ হিজরির ৯ জিলহজ (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৫ সালের ৫ জুন) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।

Header Ad
Header Ad

ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক

ছবি: সংগৃহীত

ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহিদ রাজিতে ভয়াবহ রাসায়নিক বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৪ জন। আহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৭৫০ ছাড়িয়ে গেছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে হরমুজগান প্রদেশের রাজধানী বন্দর আব্বাসের কাছে অবস্থিত এই বন্দরে ঘটে বিপর্যয়টি।

ইরানের জরুরি সেবাবিভাগের মুখপাত্র বাবাক ইয়াকতেপেরেস্ট বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে এখনও উদ্ধার তৎপরতা চলছে, তবে বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মুখপাত্র হোসেন জাফারি জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে নাশকতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি বার্তাসংস্থা আইএলএনএ-কে জানান, একটি কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক পদার্থ থেকেই এই বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়। তিনি বলেন, “বিভিন্ন মাধ্যমে অনেক গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তবে সেগুলোতে কান না দিয়ে সরকারি তথ্যের জন্য অপেক্ষা করা উচিত।”

সরকারি বার্তাসংস্থা ফার্স নিউজ জানিয়েছে, ছোট পরিসরে আগুন লাগার পর তা দ্রুত আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং একাধিক বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয় আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত গরম এবং পরিবেশে দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুনের তীব্রতা দ্রুত বেড়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের শক্তি এতটাই প্রবল ছিল যে ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, দুর্ঘটনাকবলিত কনটেইনারগুলোর মধ্যে সালফারজাতীয় রাসায়নিক থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যদিও কনটেইনারগুলোর সুনির্দিষ্ট উপাদান এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

সরকারি বার্তাসংস্থা ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়, শহিদ রাজি বন্দরটি ইরানের সবচেয়ে আধুনিক সামুদ্রিক বন্দরগুলোর একটি। এটি হরমুজ প্রণালির উত্তরে, বন্দর আব্বাস থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। এই প্রণালি দিয়েই বিশ্বের মোট উৎপাদিত তেলের পাঁচ ভাগের এক ভাগ পরিবহন করা হয়, ফলে এ বন্দরের নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Header Ad
Header Ad

ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

প্রতীকী ছবি

জুলাই আন্দোলনে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে শহীদ পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার জসিম উদ্দিনের মেয়ে লামিয়ার (১৭) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে রাজধানীর শেখেরটেকের ৬নং রোডের ভাড়া বাসা থেকে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এই কলেজছাত্রীর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর দুমকিতে। তিনি গত ১৮ মার্চ দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।

‎প্রতিবেশী ও স্থানীয়রা জানান, রোববার বিকেলে মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল তার। শনিবার মার্কেট থেকে কিছু কাপড়ও কিনেছেন। রাত আটটায় নিহতের মা ছোট মেয়েকে বাসার পাশেই মাদরাসায় দিয়ে আসতে যান। সেই সুযোগে রাত নয়টার দিকে রুমের ভেতর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন লামিয়া।

এরপর স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যান।

‎নিহতের মামা সাইফুল ইসলাম জানান, আমি দোকানে বসা ছিলাম। হঠাৎ ফোনে জানতে পারি, আমার ভাগনি মারা গেছে। আমি দৌঁড়ে হাসপাতালে এসে দেখি আমার ভাগনির মরদেহ হাসপাতালে পড়ে আছে। জুলাই আন্দোলনে আমার বোন স্বামীহারা হলো। এখন মেয়েকে হারিয়েছে। এখন আমার ভাগনি চলে গেছে। আমরা কার কাছে বিচার চাইব। কে বিচার করবে আমাদের।

নিহত কলেজছাত্রীর চাচা বলেন, শনিবার রাত ১১টার দিকে তার ভাতিজির আত্মহত্যার খবর পান তিনি। এরপর তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান।

আদাবর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কমল চন্দ্র ধর বলেন, শেখেরটেকের একটি বাসা থেকে ওই কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তার মৃত্যুর ঘটনাটি আত্মহত্যাজনিত। তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হবে। পুলিশ পুরো ঘটনাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করছে।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা জানিয়েছিলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে তার স্বামী গুলিবিদ্ধ হন। ১০ দিন পর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার শহীদ স্বামীকে দুমকি উপজেলার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

ভুক্তভোগীর মা বলেন, ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়িতে ফেরার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন তার কলেজ শিক্ষার্থী মেয়ে। ধর্ষণের সময় এজাহারভুক্ত আসামিরা তার নগ্ন ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলেন। এরপর ভুক্তভোগী তার মা ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ২০ মার্চ থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। সন্ধ্যায় অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু হয়।

মামলার এজাহারে উপজেলার একটি ইউনিয়নের দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলা হওয়ার দিন রাতে এজাহারভুক্ত ১৭ বছর বয়সী কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ২১ মার্চ অন্য আসামিকে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালতের মাধ্যমে তাদের যশোর শিশু সংশোধনাগারে পাঠানো হয়।

জানা যায়, গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাসিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে শহিদ জসীম উদ্দিনের মেয়ে তার বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানাবাড়ি পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে যাচ্ছিলেন। পথে নলদোয়ানী থেকে অভিযুক্তরা পিছু নেয়। হঠাৎ পেছন থেকে মুখ চেপে ধরে পার্শ্ববর্তী জলিল মুন্সির বাগানে নিয়ে যায় সাকিব ও সিফাত। একপর্যায়ে কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। এমনকি তার নগ্ন ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় তারা।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

হজের ফ্লাইট শুরু মঙ্গলবার, উদ্বোধন করবেন ধর্ম উপদেষ্টা
ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক
ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
সিন্ধুর পানি ছাড়ল ভারত, হঠাৎ বন্যায় ডুবলো পাকিস্তানের কাশ্মীর
রিয়ালের হৃদয়ভাঙা রাত, কোপা দেল রে চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা
উত্তরায় সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় তরুণ-তরুণীর মৃত্যু
জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক ত্রুটিতে ১০ জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট
আবারও দুই ধাপে ৬ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা
পাকিস্তানি হামলার আশঙ্কায় বাঙ্কারে আশ্রয় নিচ্ছেন ভারতীয়রা
চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করলো বিএনপি
আওয়ামী লীগ ভারতের গোলামী করা দল : নুরুল হক নুর
ইরানের রাজাই বন্দরে শক্তিশালী বিস্ফোরণ, আহত ৫১৬ জন
প্রায় দুই ঘণ্টা পর মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক
গোবিন্দগঞ্জে মৃত আওয়ামী লীগ নেতার নামে জামাতের মামলা
গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেফতারের দাবি পুলিশের
নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই বাসীর গলার কাঁটা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অবশেষে সংস্কার
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ
গোবিন্দগঞ্জে গাঁজাসহ ট্রাকের চালক-হেলপার গ্রেপ্তার
আদমদীঘিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা তোহা গ্রেপ্তার
নাটকীয়তা শেষে রাতে ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল-বার্সা