ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় যেসব খাবার
ছবি সংগৃহিত
পৃথিবীতে কোনো খাবারই ক্যান্সার প্রতিরোধের নিশ্চয়তা দিতে পারে না৷ তবে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন কিছুটা উন্নতি করাতে পারে। মূলত দুই তৃতীয়াংশ সবজি জাতীয় খাবার এবং এ তৃতীয়াংশ প্রাণীজ আমিষের সম্মিলনে আদর্শ খাদ্যতালিকা গড়ে নেওয়া যায়।
চিকিৎসকদের ভাষায় ক্যানসারকে বলা হয়‘মাল্টি ফ্যাকেটেরিয়াল ডিজিজ’। কারণ কোনো নির্দিষ্ট কারণে এ রোগ হয় না। আবার কোনো নির্দিষ্ট খাবার ক্যানসার প্রতিরোধও করতে পারে না। তবে সুষম পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। একদিকে যেমন কিছু কিছু খাবার নিয়মিত পাতে রাখার অভ্যাস করতে হবে, অন্যদিকে কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এমন অনেক খাদ্যই আমাদের আশেপাশে খুঁজে পাওয়া যাবে। নিয়মিত এই খাবারগুলো খেলে আপনার উপকার হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। আসুন জেনে নেই কোন খাবারগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে।
ভিটামিন সি জাতীয় খাবার
ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল প্রাকৃতিকভাবে ডিএনএ মেরামত করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন কেমোথেরাপির পর কিউয়ি ফল রোগীর শরীরে খুব ভালো কাজ করে।
রঙিন শাকসবজি ও ফলমূল
দৈনিক একধরনের সবজি না খেয়ে বিভিন্ন ধরনের রঙিন শাকসবজি খেতে হবে। কারণ, একটি রঙিন ডায়েট আপনার ক্যানসার লড়াইয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। বিভিন্ন রঙিন শাকসবজিতে ক্যারোটিন, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন (সি, ই, ফলিক অ্যাসিড ইত্যাদি), মিনারেল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, পলিফেনল ও ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।
টকজাতীয় যেসব ফল ক্যানসাররোধী
টক ফলে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি রয়েছে, যা কোষ রক্ষাকারী হিসেবে ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে কাজ করে। এ ছাড়া ভিটামিন সি কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও অ্যানিমিয়া রোধ করতে সাহায্য করে। সাইট্রাস ফলে ভিটামিন সি ছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ, আঁশ, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম। টকজাতীয় ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আঁশ আছে কমলালেবুতে। এরপরই আছে জাম্বুরা। কমলা ও আঙুরে মোট ফাইবারের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ হলো দ্রবণীয়, যা কোলেস্টেরল কমাতে আর রক্তে শর্করার বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করে। টক ফলের পাল্প ও রসে বিভিন্ন প্রকার ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে। এ ছাড়া টক ফলের খোসায় লিমোনয়েড ও ট্যানগেরিটিন নামক ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে। এসব উপাদান কেমোপ্রতিরোধী এজেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা কোলন ক্যানসারসহ একাধিক ক্যানসারের প্রতিরোধক। জুসের থেকে গোটা ফল খেলে ৫ গুণ বেশি ফ্ল্যাভোনয়েড পাওয়া যায়। ফ্ল্যাভোনয়েডে ভালো অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ক্যানসারের কার্সিনোজেন নির্মূল করে প্রদাহ কমায়।
নাস্তায় পরিবর্তন আনুন
প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন ফোলেট নামক উপাদান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন বি এর উৎস। এই উপাদান কোলন, রেকটাম এবং ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। নাস্তায় যদি ফাইবারজাতীয় খাবার যেমন ওটস, রুটি বা সিরিয়াল খাওয়া যায়, তাহলে ভালো হয়।
প্রসেস করা মাংস খাওয়া বাদ দিন
প্রসেস করা মাংস যেমন বার্গার, কাবাব, শর্মা খাওয়া বাদ দিন। বাজারে জাংক ফুড বা ফাস্ট ফুডের মাংস সচরাচর বিভিন্ন উপায়ে প্রসেস করা হয়। তাছাড়া প্যাকেটজাত বা ফ্রিজে অনেকদিন সংরক্ষণ করা মাংস স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর। কোলন ক্যান্সার, রেকটাম ক্যান্সারের মতো সমস্যাও হতে পারে৷ তাই প্রসেস করা মাংস খাওয়া বাদ দিতে হবে।
টমেটো
লাইকোপেন নামক পিগমেন্টের কারণে টমেটো লাল বর্ণের হয়। আর বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে টমেটো বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। বিশেষত প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে টমেটো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
গ্রিন টি
গ্রিন টি বেশকিছু ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। প্রোস্টেট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার সহ আরো কিছু ক্যান্সার প্রতিরোধে গ্রিন টির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। এমনকি ফুসফুসের টিস্যু গঠনেও এর ভূমিকা আছে। তাই নিয়ম করে গ্রিন টি পান করার অভ্যাস করুন।
পরিমিত পানি খান
ব্ল্যাডার ক্যান্সার খুবই ভয়ংকর। মূত্রথলীতে ক্যান্সার হতে পারে এমন উপাদানকে দ্রবীভূত করতে পারে পানি। তাই পরিমিত পানি পান করুন।
মাশরুম
ক্যানসার প্রতিরোধক খাবারের নামের তালিকায় প্রথমেই যে খাবারের নাম চলে আসে, তা হলো মাশরুম। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। শরীরের ক্যানসার প্রতিরোধে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এই খাবার ডায়েটলিস্টে রাখতে পারেন।
রসুন
ক্যানসার প্রতিরোধে রসুনের বিকল্প নেই। রসুনের অ্যালিসিন নামক যৌগ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের আশঙ্কা কমাতে সাহায্য করে। এটি মূলত ক্যান্সারের কোষগুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। তাই রান্নায় রসুনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। দুপুরের খাবারে এক কোয়া রসুনও রাখতে পারেন।
তৈলাক্ত মাছ
ইলিশ, পাঙাশ, রুই, স্যামন, সার্ডিনের মতো তৈলাক্ত মাছে ভিটামিন বি, পটাশিয়াম, ওমেগা–থ্রির মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি রয়েছে। গবেষণার তথ্য বলছে, যাঁদের খাবারে এ ধরনের তৈলাক্ত মাছ বেশি ছিল, তাঁদের কোলেরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি ৫৪ শতাংশ কম ছিল; পাশাপাশি প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকিও কম ছিল।