মস্তিষ্কের ক্ষতি করে যেসব বদ-অভ্যাস
ছবি সংগৃহিত
মাথাই তো সব। মস্তিষ্ক ছাড়া কি আর অস্তিত্ব থাকে? মস্তিষ্ক ১০০ বিলিয়ন কোষ দিয়ে তৈরি। মস্তিষ্ক যতই ব্যবহৃত হয়, ততই শক্তিশালী আর কার্যকর হয়। বয়স ৪০-এর পর মস্তিষ্ক ক্রমশ সংকুচিত হতে থাকে। তাই এ সময় পড়াশোনার ধার কমে আসে। বয়স ৬০-এর পর মস্তিষ্ক দ্রুত সংকুচিত হতে থাকে। তাই এ সময় অনেক স্মৃতি হারিয়ে যায়। অনেকে ডিমেনশিয়া (স্মৃতিভ্রংশ) ও আলঝেইমার রোগে ভোগেন। দৈনন্দিন জীবনে আমরা জেনে না-জেনে এমন সব কাজ করি, যেগুলো আমাদের মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি করে। কী সেগুলো? বিজনেস গ্রোথ মেন্টর অনুসারে জেনে নেওয়া যাক।
অতিরিক্ত অন্ধকারে থাকা
অতিরিক্ত অন্ধকারে থাকার অভ্যাস আমাদের মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি করে। আমাদের ভেতর বিষণ্নতার সৃষ্টি করে। এ বিষণ্নতা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা মন্থর করে। এ কারণেই শীতপ্রধান দেশে আত্মহত্যার হার বেশি। প্রাকৃতিক আলোতে থাকলে আমাদের মস্তিষ্ক ভালোভাবে কাজ করে।
দীর্ঘসময় একাকী থাকার অভ্যাস
সামাজিকীকরণ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একা একা খুব বেশি সময় কাটানো মস্তিষ্কের জন্য ঠিক ততটাই খারাপ হতে পারে যতটা পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া। আপনি যখন ক্রমাগত অন্যান্য মানুষের কাছাকাছি থাকেন, তখন আপনার মস্তিষ্ক সামাজিক মিথস্ক্রিয়া থেকে উদ্দীপনা পায়। দীর্ঘসময় একাকী থাকা বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং এমনকি ডিমেনশিয়ার ঝুঁকিও বাড়াতে পারে। মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতেচাইলে নিয়মিত বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর বিকল্প নেই।
অত্যধিক রাগ
বলা হয় রাগ আমাদের বিবেককে ধ্বংস করে। কিন্তু কিছু মানুষ ছোটখাটো বিষয়ে রেগে যায়। রাগের কারণে রক্তের ধমনিতে চাপ পড়ে, যার খারাপ প্রভাব পড়ে মানুষের মনে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই শপথ নিন আপনি অত্যধিক রেগে যাবেন না।
সকালের নাস্তা না খাওয়া
সকালের খাবার শরীরের জন্য জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। এটি গ্রহণ না করলে আপনার মস্তিষ্ক দিনের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না। এর প্রভাব আপনার মস্তিষ্কে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে আপনার মস্তিষ্ক ঠিক মতো কাজ করতে পারে না। তাই স্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্ট খান।
অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে স্ত্রিনের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম ক্লান্তি এবং অনিদ্রার কারণ হতে পারে। বড়দের মতো শিশুরাও যদি স্ক্রিনে অতিরিক্ত সময় কাটায় তাহলে তা তাদের মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে। এ কারণে সবারই স্ক্রিন টাইম সীমিত করা প্রয়োজন।
কম পানি খাওয়া
পানি মস্তিষ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অনেকেই দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করেন না। এই অভ্যাস আপনার স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগকে প্রভাবিত করতে পারে। এ কারণে সারা দিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। বিশেষ করে শারীরিক কার্যকলাপের আগে এবং পরে,মস্তিষ্ককে উজ্জীবিত রাখতে পানি পান প্রয়োজন।
প্রয়োজনের চেয়ে বেশি চিনি
অতিরিক্ত চিনি খাওয়া শরীর ও মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। এদিকে বার্গার, ফ্রাই, পটেটো চিপস বা কোমল পানীয়ের মতো জাঙ্ক ফুড শিখন, স্মৃতি ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মস্তিষ্কের কার্যকর অংশগুলোকে ক্রমশ সংকুচিত করে ফেলে। অন্যদিকে সবুজ শাকসবজি, ফল ও বাদামজাতীয় খাবার মস্তিষ্কের ক্ষয় রোধ করে।
অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড খাওয়ার অভ্যাস
যে সমস্ত মানুষের খাদ্য তালিকায় বার্গার, ফ্রাই, পটেটো চিপস বা কোমল পানীয়ের মত খাবার থাকে তাদের শিখন, স্মৃতি ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মস্তিষ্কের কার্যকর অংশগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট হয়ে যায়। অন্যদিকে সবুজ শাকসবজি, বেরি ও বাদামজাতীয় খাবার মস্তিষ্কের ক্ষয় রোধ করে।
হেডফোনে উচ্চ শব্দে গান
হেডফোনে ফুল ভলিউমে গান মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে একজনের শ্রবণশক্তি লোপ ঘটাতে পারে। বয়স্কদের মধ্যে শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়ার সাথে মস্তিষ্কের রোগ আলজেইমার ও ব্রেইন টিস্যু নষ্ট হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। এর একটা কারণ হতে পারে, আশপাশের ঘটনাগুলো বোঝার জন্য এ ধরনের সমস্যায় ভোগা লোকজনের মস্তিষ্ককে অধিক পরিশ্রম করতে হয়। তাই ডিভাইসের ভলিউম ৬০% এর বেশি বা একটানা দুই ঘণ্টার বেশি গান শোনা এড়িয়ে চলুন।
শরীরচর্চা না করা
নিয়মিত শরীরচর্চা না করলে ডিমেনশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। শুধু মস্তিষ্কের রোগই নয় এর ফলে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়। আর এর সবগুলোই আলজেইমারের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এর থেকে মুক্তি পেতে ম্যারাথনের মত দৌড়ের প্রয়োজন নেই। পার্কে বা বাসার আশপাশে আধ ঘণ্টার হাঁটাই এর জন্য যথেষ্ট। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
ধূমপান ছাড়তে না পারা
ধূমপান মস্তিষ্কের আয়তন ছোট করে ফেলতে পারে। স্মৃতিশক্তি হ্রাসের জন্য এই বদভ্যাসটিকে দায়ী করা হয়। সেই সাথে ডিমেনশিয়া ও আলজেইমার রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয় ধূমপান। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক ও উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কা বৃদ্ধি করে এটি।
প্রাকৃতিক আলোর অভাব
পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলোর অভাব বিষণ্ণতা বা অবসাদের মত মানসিক সমস্যা তৈরি করতে পারে যা মস্তিষ্ককে মন্থর করে ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে প্রাকৃতিক আলো থাকলে ভালোভাবে কাজ করে আমাদের মস্তিষ্ক।