শীত আসন্ন, ত্বকের মলিনতা ধরে রাখতে করণীয়
ছবি সংগৃহিত
শরতের পরই আসে হেমন্ত, আর হেমন্ত নিয়ে আসে শীতের আগমনী বার্তা। এই আগমনী বার্তা প্রকৃতিতে যেমন প্রভাব ফেলে, তেমনি মানুষের ত্বকেও। দীর্ঘ গরমের পর এ সময়টায় প্রকৃতিতে শীতের ছোঁয়া লাগতে শুরু করে। গাছের পাতা সবুজ থেকে হলুদ হতে হতে পোড়ামাটির রং ধারণ করে শীতে। গাছের শুষ্ক পাতার মতোই ত্বক হারিয়ে ফেলে তার আর্দ্রতা।
ত্বকের আলাদা যত্ন নিতে হয় শীত আসার আগে থেকেই। সে ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উপায়ে যত্ন নেওয়াটা বেশি কার্যকর। কেননা শরীর ভেতর থেকে আর্দ্র না হলে ত্বকের ওপর এর প্রভাব পড়বেই। আবার ত্বকের উপরিভাগ যেন পানিশূন্য হয়ে না যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখা চাই।
বেশি করে পানি পান করা
অনেকে সারা দিনে খুব অল্প পরিমাণে পানি পান করেন। এই অভ্যাস ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে ত্বক খসখসে ও রুক্ষ হয়ে যায়। ত্বক ও শরীর সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত। পাশাপাশি ডাবের পানি, ফলের রসও পান করতে পারেন।
ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন
শীতের আগে থেকে ত্বকে ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা জরুরি। প্রায় সব ধরনের ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল ময়শ্চারাইজার হিসেবে খুব উপকারী। শুষ্কতা থেকে রক্ষা পেতে অলিভ অয়েল সারা শরীরে ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া এর সঙ্গে মধু ও চিনি মিশিয়ে ঘন ক্রিমের মতো প্যাক তৈরি করে স্ক্রাবার বানিয়ে নিতে পারেন। এটি ব্যবহারের ফলে ত্বকের মরা কোষ উঠে যায়। কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগালে ঠোঁট ফাটা বন্ধ হবে। মুখ ও শরীরের অন্যান্য অংশের ত্বকের পাশাপাশি গোড়ালি, হাঁটু, কনুইয়েরও বিশেষ খেয়াল রাখা প্রয়োজন। না হলে এ জায়গাগুলো রুক্ষ ও কালো হয়ে যায়। এসব অংশের যত্নে ব্যবহার করতে পারেন নারকেল তেল। এ জন্য প্রথমে ত্বক ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এরপর হাতের তালুতে তেল আলতো করে ওই জায়গাগুলোতে লাগিয়ে নিন। নারকেল তেল রাতে ঘুমানোর আগে ব্যবহার করা ভালো। আপনার ত্বক তেলতেলে খুব, ঘাম হবে, বা স্রেফ বিরক্ত লাগছে এসব বাহানায় ময়েশ্চারাইজারকে ভুলে থাকবেন না। খুব পাতলা ময়েশ্চারাইজার হলেও তা নিয়মিত ত্বকে ব্যবহার করা উচিৎ। লক্ষ্য রাখবেন শীতে ত্বকের যত্ন নিতে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজারকে সঙ্গী করে নিবেন।
মধু
প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে রূপচর্চায় মধু অপরিহার্য। যেকোনো প্যাকের সঙ্গে নিশ্চিন্তে মধু ব্যবহার করতে পারেন। এটি নিমেষে ত্বকের শুষ্কতা দূর করে। ত্বকের যেকোনো সমস্যায় মধু ওষুধের মতো কাজ করে।
পাকা কলা
ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল করতে পাকা কলার জুড়ি মেলা ভার। বেসন, দুধ ও কলা ব্লেন্ড করে মুখ, গলা, হাত ও পায়ে লাগাতে পারেন। ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর ধুয়ে ময়শ্চারাইজার লাগান। এটি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ত্বক পাবে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা, হয়ে উঠবে নরম ও কোমল।
কমলালেবু
কমলালেবুতে থাকা ভিটামিন ‘সি’ ত্বকের বলিরেখা রোধ করে। কমলালেবুর খোসা, সর বাটা, ময়দা বা বেসনের প্রলেপের ব্যবহার রূপটান হিসেবে বহুদিন প্রচলিত। এ সময়টায় কমলালেবু খাবেন এবং অবশ্যই তার খোসা ফেলবেন না। খোসা সরাসরি ব্যবহারের পাশাপাশি রোদে শুকিয়ে রেখে দিন। পরে গুঁড়া করে ব্যবহার করতে পারবেন।
গোলাপজল ও গ্লিসারিন
শীত বা শীতের আগে শুষ্কতায় গোলাপজল ও গ্লিসারিন বড় ভূমিকা রাখে ত্বকের যত্নে। এ দুটি একসঙ্গে মিশিয়ে লাগালে ত্বক সুন্দর থাকে, থাকে মসৃণ। গ্লিসারিন যেকোনো ত্বকে খুব দ্রুততার সঙ্গে যেমন কাজ করে, তেমনি রাখে মোলায়েম ও প্রাণবন্ত। ত্বকে থাকা নানা সমস্যাও দূর করে। মিশ্রণটি রাতে ঘুমানোর আগে ব্যবহার করাই ভালো। শীতের আগে থেকে যথাযথভাবে ত্বকের যত্ন নিলে তার ফল পাওয়া যাবে শীতকালেও। ত্বক থাকবে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত।
সানস্ক্রিন ব্যবহার
অনেকেই ভাবেন শীতকালে সানস্ক্রিন ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। কিন্তু শীত হোক বা গ্রীষ্ম রোদ সবসময় স্কিনের জন্য ক্ষতিকর। বাইরে বের হওয়ারর ৩০ মিনিট আগে মুখে, হাতে সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিন।
হাতের যত্ন নিন
মুখের ত্বক নিয়ে যত বেশি মানুষ ঘামান, ততটা কেউই মাথা ঘামান না হাতের ত্বক নিয়ে। অথচ হাতের ত্বকও শীতকালে অনেক বেশি রুক্ষ হয়ে পড়ে। আমাদের এখানে এতটাও শীত পড়ে না যে, তার জন্য গ্লাভস পরে থাকার প্রয়োজনীয়তা আছে। কিন্তু হাতে ভাল করে ময়শ্চারাইজার মাখা দরকার।
পায়ের যত্ন
শীত কালে মোজা পরে থাকার বিকল্প হয় না। এ ছাড়া পেট্রোলিয়াম জেলি কিংবা গ্লিসারিন জাতীয় কোনও কিছু দিয়ে পা ম্যাসেজ করতে পারেন। সপ্তাহে একবার এক্সফোলিয়েট করে পায়ের মৃত কোষ তুলে নিন। প্রত্যেক রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময়ে সামান্য পায়ের চর্চা করতেই পারেন।
বেশি গরম পানিতে গোসল না করা
অনেকের হট বাথ নেওয়ার নামে বেশি গরম পানি গায়ে ঢালেন। কিন্তু খুব বেশি গরম পানি গায়ে দিলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
খাওয়াদাওয়ার প্রতি নজর দিতে হবে
শীতের কবল থেকে ত্বক সুরক্ষিত রাখতে সুষম খাবার খান। জলের পরিমাণ বেশি এমন কিছু ফল বেশি করে খান। সবুজ শাকসব্জি খান। শীতকালীন আবহাওয়ায় ত্বক বুড়িয়ে যায়। সেই অকাল বার্ধক্যের মুখোমুখি হতে না চাইলে এখন থেকেই কী খাচ্ছেন সে দিকেও লক্ষ রাখুন।
চর্ম বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন
অনেকেই শীত কালে রুক্ষ ত্বকের সমস্যায় ভোগেন। কারও কারও আবার ত্বক শুষ্ক হয়ে রক্তাক্ত হয়ে যায়।সে ক্ষেত্রে দেরি না করে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন।