প্রতিদিন কতটুকু পানি পান করা উচিত
ছবি সংগৃহিত
পানির অপর নাম জীবন। টিকে থাকতে প্রত্যেক প্রাণীর পানিগ্রহণ অত্যাবশ্যক। আমাদের শরীরের ৭০ ভাগই পানি। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে একজন প্রাপ্তবয়স্ককে অবশ্যই দৈনিক ৩ লিটার পানি পান করা উচিত। তবে দিনে কতটুকু পানি পান করতে হবে, তা নির্ভর করে মূলত আবহাওয়া ও শারীরিক শ্রমের ওপর। শরীরের বর্জ্য বের করে দিতে, শরীরের তাপমাত্রা রক্ষায়, সংবেদনশীল টিস্যু সুরক্ষাসহ বহু কারণে পরিমিত পরিমাণে পানি খাওয়া দরকার।
শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রেখে শরীরে জমে থাকা দূষিত পদার্থ বের করে দিতে পরিমাণমতো পানি পান করা প্রয়োজন। অথচ আমরা অনেকেই পানি খাওয়ার কোনো হিসাবই রাখি না। ওষুধ, খাবার খাওয়ার সময় হিসাব রাখলেও পানির বেলায় গোলমাল হয়ে যায়।
এক গবেষণায় বলা হয়, মহিলাদের দৈনিক ২.৭ লিটার এবং পুরুষের ৩.৭ লিটার পানিপান করতে পারলে ভালো। তবে সব পরিস্থিতিতে নয়, সব সময় নয়, এমনকি সব বয়সেও নয়।
আমাদের শরীরের ৬০ শতাংশ পানি জাতীয় কিছু দিয়ে তৈরি। এজন্যই হয়তো পুরনো কথা চালু আছে- পানির অপর নাম জীবন। শরীরের অর্ধেকের চেয়ে বেশি আসলে তরল জাতীয় পদার্থ দিয়ে তৈরি। জন্মের সময় একটি বাচ্চার শরীরের ৭০ শতাংশ কেবল পানি দিয়ে তৈরি। বয়স বাড়লে তা কমে আসে।
মস্তিষ্ক এবং হৃদপিণ্ডে, এ দুটো অঙ্গের ৭৩ শতাংশ জলীয়। সবচেয়ে বেশি পানি থাকে ফুসফুসে। ফুসফুসের ৮৩ শতাংশ পানি। এমনকি শুনতে অবাক হলেও আমাদের চামড়ার ৬৪ শতাংশ জলীয় পদার্থ দ্বারা তৈরি। রক্তকে অনেকে শরীরের সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জলীয় পদার্থ মনে করে। বরং রক্তের মাত্র ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ জলীয়। যে হাড় আমরা এত শক্ত ভাবি, তার ৩১ শতাংশ তরল পদার্থ দিয়ে গঠিত।
৭০ কেজি ওজনের কারও শরীর ৪২ থেকে ৪৫ লিটার পানি দিয়ে তৈরি। এদের ২৮ লিটার থাকে কোষের ভেতর, ১০ লিটার থাকে কোষের বাইরে এবং মাত্র ৮ লিটার থাকে রক্তে। এখানে একটি মজার ব্যতিক্রম আছে। মহিলাদের শরীরে পুরুষের চেয়ে চর্বি জাতীয় টিস্যুর পরিমাণ বেশি।
কখন পানি পান করবেন:
১. মর্নিং হাইড্রেশন: ঘুম থেকে ওঠার পর সকালে পানি পান করলে তা অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকে সক্রিয় করতে এবং শরীরকে পুরো দিনের জন্য প্রস্তুত করতে সহায়তা করে।
২. খাবারের আগে: খাবারের আধা ঘণ্টা আগে পানি পান করলে হজমশক্তি ভালো হয় এবং অতিরিক্ত খাওয়া রোধ হয়।
৩. খাওয়ার পরে: একই নিয়ম প্রযোজ্য। খাবার হজম করার জন্য আপনার শরীরকে আধা ঘণ্টা সময় দেওয়া উচিত এবং তারপরে পানি পান করা উচিত।
৪. স্বাস্থ্য সমস্যা: শরীরে পানির ঘাটতি হলে তা নানাভাবে প্রকাশ পায়। প্রস্রাবের গাঢ় হলুদ রং ডিহাইড্রেশন নির্দেশ করতে পারে। শুকনো ফাটা ঠোঁট ডিহাইড্রেটেড শরীরের অন্যতম লক্ষণ। এই পরিস্থিতিতে আরও পানি পান করার চেষ্টা করুন।
৫. অসুস্থ বোধ করলে: শরীরের কার্যকারিতা বাড়াতে এবং দ্রুত সেরে ওঠার জন্য অসুস্থ হলে সঠিক হাইড্রেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৬. ক্লান্ত বোধ করলে: ক্লান্ত হয়ে পড়লে পানি পান করুন। এটি আপনার সিস্টেমকে পুনরায় শক্তি জোগাতে সাহায্য করতে পারে এবং একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বুস্ট প্রদান করতে পারে।
পর্যাপ্ত পানি পানের সুফল:
পর্যাপ্ত পানি পানে কিডনি, যকৃৎ, হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্ক ভালো থাকে। শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। পানি শরীরের ভেতরের কোষগুলোকে সবল ও স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। পানি পানের ঘাটতি দেখা দিলে এই কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি পানের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। কেননা পান করার পানি বিশুদ্ধ না হলে ডায়রিয়া, কলেরা ও টাইফয়েডের মতো পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কমপক্ষে আধঘণ্টা ভালো করে ফুটিয়ে তারপর ঠান্ডা করার মধ্য দিয়ে পানি জীবাণুমুক্ত হতে পারে। অথবা সঠিক পদ্ধতিতে ফিল্টার করেও পানি পান করা যেতে পারে। এ ছাড়া বাজার থেকে বোতলজাত পানি কেনার ক্ষেত্রেও সেগুলো দেখে শুনে কেনা উচিত।
যেভাবে পানি পান করবেন:
* বসে পানি পান করুন। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরের তরল পদার্থের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। আপনি যদি বসে পান করেন তবে আপনার পেশীগুলো আরও ভালো উপায়ে উপকার পায় এবং তা আরও শিথিল হয়।
* এক নিঃশ্বাসে অনেকটা পানি পান করবেন না। স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নেওয়ার সময় ধীরে ধীরে পানিতে চুমুক দেওয়া ভালো।
*ঠান্ডা পানির বদলে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করুন। ঠান্ডা পানি হজমের জন্য ভালো নয়। গরমের দিনে স্বাভাবিক তাপমাত্রা বা মাঝারি ঠান্ডা পানি পান করুন। হালকা গরম পানি আরও ভালো কারণ এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।