আপনার ফুসফুসকে সুস্থ রাখবে যেসব খাবার
ছবি সংগৃহিত
প্রাণায়াম এবং যোগের নিয়মিত অনুশীলন ফুসফুসকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। ফুসফুস আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসে সহায়তা করে এবং আমরা শ্বাস নেওয়ার সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকি। প্রাণায়ামের নিয়মিত অনুশীলন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া আপনাকে সুস্থ ফুসফুস ও সামগ্রিকভাবে একটি সুস্থ শরীর বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে। কিছু নির্দিষ্ট খাবার এবং পুষ্টি আমাদের ফুসফুসের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী প্রমাণিত হয়েছে।
করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ফুসফুস। এ সময় ফুসফুসের যত্ন নেয়া সবচেয়ে জরুরি। শ্বাসনালির মাধ্যমে গলা থেকে এই ভাইরাস ফুসফুসে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে এর কার্যক্ষমতা নষ্ট করে ফেলে। ফলে দেখা দেয় মারাত্মক শ্বাসকষ্ট, কাশি ও ক্লান্তিবোধ।
আসুন জেনে নেই এই উপকারী খাবার এবং এগুলোর স্বাস্থ্য উপকারিতা।
ফুসফুস সুস্থ রাখতে খাদ্য তালিকায় যেসব খাবার রাখা দরকার:
হলুদ : রান্নার উপকরণ হিসেবে পরিচিত হলুদ স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শ্বাস-প্রশ্বাসের পথ পরিষ্কার রাখে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। হলুদ একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ভাইরালও, যা ফুসফুসে প্রভাবিত ভাইরাল সংক্রমণকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। এতে শরীর সুস্থও থাকে।
রসুন : রসুনে প্রদাহ-বিরোধী এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের মতো রোগের ক্ষেত্রে উপকারী। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ফুসফুসের ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে রসুনের প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব রয়েছে এবং এটি ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য কেমোপ্রিভেনটিভ এজেন্ট হতে পারে।
তুলসি : স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন অল্প করে তুলসি পাতার রস খেলে শরীরের শ্বাসযন্ত্রের দূষিত পদার্থ দূর হয়। তুলসি পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় এটি ফুসফুস সুরক্ষায় খুবই কার্যকর। তাই শ্বাসযন্ত্রের দূষিত পদার্থ দূর করতে তুলসি পাতার রস কিংবা এই পাতা পানিতে ফুটিয়ে পান করতে পারেন। এতে ফুসফুস ভালো থাকবে।
আদা : আদা আমাদের ফুসফুসে অনেক স্বাস্থ্য উপকার দেয়। এর প্রদাহবিরোধী গুণের কারণে আদা হাঁপানি রোগীদের ব্রঙ্কোডিলেশন সৃষ্টি করে। বিভিন্ন প্রাণী এবং মানুষের ক্লিনিকাল স্টাডিজ আদার ব্রঙ্কোডাইলেটরি প্রভাব প্রদর্শন করেছে। আদা মোটা শ্লেষ্মাও ভেঙে দেয় এবং শ্লেষ্মা বের করতে সাহায্য করে।
আপেল : এ সময়ে সহজপ্রাপ্য ফলগুলোর মধ্যে আপেল অন্যতম। এক গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে পাঁচটির বেশি আপেল খেলে ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়ে।
কালোজিরা : ফুসফুস ভালো রাখতে কালোজিরা অনেক ভালো কাজ করে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শ্বাসনালীর প্রদাহ রোধ করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন আধা চা চামচ কালোজিরা গুঁড়া এক চা চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ফুসফুস ভালো থাকবে।
মাছ : মাছের তেল ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ যা দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ যেমন ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) রোগীদের জন্য উপকারী। ওমেগা–থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডে প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সিওপিডি রোগীদের ফুসফুসের প্রদাহ কমায়।
আখরোট : আখরোট ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিডে ভরপুর এবং সিওপিডি রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।
আমলকী : ভিটামিন 'সি' সমৃদ্ধ খাবারের গুণের শেষ নেই। ফুসফুসের প্রদাহজনিত সমস্যা রোধ করে এই ভিটামিন। আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় এটি শ্বাসযন্ত্রে অক্সিজেন সরবরাহ করতে সাহায্য করে এবং শ্বাসনালির জীবাণু ধ্বংস করে। লেবুতেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
পেঁয়াজ : পেঁয়াজ হলো বহুল ব্যবহৃত একটি রান্না উপকরণ। এতে প্রচুর পরিমাণে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস এবং ভিটামিন রয়েছে। এটি বহু বছর ধরে সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং ব্রঙ্কাইটিস এবং হুপিং কাশির জন্য ভেষজ প্রতিকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পেঁয়াজের প্রদাহবিরোধী এবং হাঁপানি-বিরোধী কার্যকলাপও রয়েছে।
আপেল:অনেক ক্লিনিকাল গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত একটি আপেল খাওয়া ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। অস্ট্রেলিয়ায় পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, আপেল খেলে হাঁপানির ঝুঁকি কমে। আপেল আমাদের ফুসফুসের সার্বিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
গ্রিন টি ও কফি: ২০১৭ সালে কোরিয়ান একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত যারা গ্রিন টি পান করেন তাদের ফুসফুসের কার্যকারিতা যারা পান করে না তাদের তুলনায় বেশি ভালো। কফি পান করলে ফুসফুসের শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত নানা রোগ থেকে রক্ষা করে পাশাপাশি ফুসফুসের কার্যকারিতা ভালো রাখতে সাহায্য করে।
গুড় ও মধু: আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, গুড় ফুসফুসকে উষ্ণ রাখতে ও বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে থাকে। আর মধু ফুসফুস পরিষ্কার রাখতে কার্যকর পাশাপাশি এটি এন্টিঅক্সিডেন্ট, এন্টি মাইক্রোবিয়াল ও এন্টিইনফ্ল্যামেটরি হিসেবে কাজ করে।