ড্রেনে পড়ে নিহতদের তথ্য তলব করেছে হাইকোর্ট
চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদ মাজার গেট এলাকার খোলা ড্রেনে পড়ে কতজন নিহত, নিখোঁজ ও আহত হয়েছেন সেই তথ্য জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। দুই মাসের মধ্যে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার (৫ ডিসেম্বর) এ আদেশ দেয়।
সংশ্লিষ্ট এক মামলার শুনানিতে এই আদেশ দেয় উচ্চ আদালত। আদেশে ওই ড্রেনে পড়ে নিহত বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী সেহরীন মাহবুব সাদিয়ার (১৯) পরিবারকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।
আদেশে চট্টগ্রাম উন্নয়ন করপোরেশনসহ দেশের সব সিটি করপোরেশনে উন্নয়নমূলক কাজ করার সময় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
নিহত সেহরীন মাহবুব সাদিয়ার পরিবারকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেয় আদালত। আইনজীবী মো. শাহীনুজ্জামান শাহীন আদেশের বিষয়টি জানিয়েছেন।
আইনজীবী জানান, গত ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদ মাজার গেট এলাকার খোলা ড্রেনে পা ফসকে পড়ে নিখোঁজের পর মারা যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী সেহরীন মাহবুব সাদিয়ার পরিবারকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদনটি করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ২৫ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় শিক্ষার্থীর মামা জাহিদ উদ্দিন বেলাল, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ও সিসিবি ফাউন্ডেশনের পক্ষে আইনজীবী অনিক আর হক এ রিট দায়ের করেন।
এতে স্থানীয় সরকার সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী সেহরীন মাহবুব সাদিয়ার ড্রেনে পড়ে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা জানাতে বলা হয়েছে। ড্রেনে পড়ে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা রোধে সংশ্লিষ্ট বিবাদীরা তদন্ত করেছেন কি না, ক্ষতিপূরণের বিষয়ে বা অন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন কি না তারও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করতে বলা হয়েছে রিটে।
গত ১৯ অক্টোবর এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে সিসিবি ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আব্দুল হালিম ও ইশরাত হাসান সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। নোটিশে বলা হয়েছিল, নোটিশ পাওয়ার সাতদিনের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এর আইনী প্রতিকার চেয়ে উচ্চ আদালত হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হবে। এর ধারাবাহিকতায় এই রিটটি করা হয়।
‘চট্টগ্রামে নালায় পড়ে মৃত্যু: দায় কার?’ এই শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সবজি ব্যবসায়ী সালেহ আহমদের পর চট্টগ্রাম নগরীতে নালায় পড়ে সেহরীন মাহবুব সাদিয়ার মৃত্যুতেও দায় নিতে চাইছে না সিটি করপোরেশন কিংবা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ।
সরকারি দুটি সংস্থা একে অন্যকে দোষ দিচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বলছে, দুদিকে ফুটপাত করলেও খালের মুখটি অরক্ষিত রেখেছে সিডিএ। তাই এর দায় সিডিএর। অন্যদিকে, সিডিএ বলছে, খালের মালিকানা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের। তাই খালের মুখে সুরক্ষা নিশ্চিতের দায়িত্বও তাদের।
অন্যদিকে, নালা-খালে একের পর এক মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ নগরবাসী। তারা বলছেন, দায় এড়ানোর এই প্রবণতা প্রমাণ করে সেবা সংস্থার মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো স্বাচ্ছন্দ্যের পরিবর্তে নগরবাসীর ‘মৃত্যুফাঁদে’ পরিণত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে এক আত্মীয়সহ চশমা কিনে বাসায় ফেরার পথে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ মাজার গেট ও আগ্রাবাদ মোড়ের মাঝামাঝি এলাকায় ডায়মন্ড রেস্টুরেন্টের বিপরীত পাশের খোলা ড্রেনে পা ফসকে পড়ে নিখোঁজ হন সেহরীন মাহবুব সাদিয়া। তিনি চট্টগ্রামের ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের স্নাতক প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। নিখোঁজের পাঁচ ঘণ্টা পর তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এমএ/এএন