‘আওয়ামী লীগকে কোথাও খুঁজে পাবেন না’
দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকটের সমাধান কোন পথে। সামনে আরও কঠিন পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে কি না? আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পেতে কি কি শর্ত পালন করতে হবে-ঢাকাপ্রকাশ-এর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শাহজাহান মোল্লাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব বিষয়ে কথা বলেছেন গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া। তিনি মনে করেন পরবর্তী সরকারকে বিপদে ফেলতে সরকার ইচ্ছে করে ঋণ নিচ্ছে। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে শেষ পর্ব।
ঢাকাপ্রকাশ: চলমান বৈশ্বিক সংকটে অস্থির পুরো বিশ্ব। আমরাও তার বাইরে নয়। বাংলাদেশের সামনে কী আরও গভীর সংকট আসতে পারে?
ড. রেজা কিবরিয়া: এই সরকার যাওয়ার সময় সব ফুরিয়ে যাবে। অর্থনীতিকে শেষ করে যাবে। এমন কিছু কাজ করছে তারা, যে কারণে সামনে যারা আসবে তাদের অর্থনীতি পরিচালনা করতে অসুবিধা হবে। এটা তারা ইচ্ছাকৃতভাবে করছে। এতে জনগণ কষ্ট পাচ্ছে, এটা তারা বোঝে না। এই সরকার বেশিদিন থাকলে এবং আমরা যদি শ্রীলঙ্কার অবস্থায় পড়ি তখন এটা থেকে উত্তোরনের মেয়াদ হয়তো ১৫-২০ বছর লেগে যাবে। এই সরকার তো সারাক্ষণ মিথ্যা কথা বলে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে বিরাট মিথ্যাচার চালিয়েছে। বৈদেশিক রিজার্ভ নিয়ে খুবই সন্দেহ হচ্ছে। বৈদেশিক রিজার্ভের পরিসংখ্যান যদি ঠিক হয় তাহলে তো আইএমএফ এর কাছে যাওয়ার কথা নয়। আইএমএফ এর হাতে দেশটা ঠেলে দিচ্ছে। এটা খুশির খবর না। একটা দেশের খুবই খারাপ অবস্থা না হলে আইএমএফ এর কাছে যায় না। তাদের শর্ত মেনে নেওয়ার মতো সামর্থ্য আছে কি না জানি না।
ঢাকাপ্রকাশ: তাহলে আপনার কাছে কি মনে হয়েছে সরকার বিদায় নিতে যাচ্ছে?
ড. রেজা কিবরিয়া: তাদের কাজ দেখে তাই মনে হয়। তারা এমন লোন নিয়েছে যেটা সামনের সরকারের জন্য একটা বিরাট বিপদ। তারা যদি ভাবত তারা নিজেরা ক্ষমতায় থাকবে তাহলে এই ধরনের লোন তারা নিত না। অকার্যকর প্রজেক্টগুলো তারা নিত না। তারা এসব নিয়েছে সামনের সরকারের উপর মাথা ব্যথা করার জন্য। তারা জানে তারা বেশিদিন নেই। যা পারি দেশটাকে ক্ষতি করে যাই। যেন সামনের সরকারের অসুবিধা হয়। এটা আওয়ামী লীগের স্ট্র্যাটেজি হতে পারে, শেখ হাসিনা ওয়াজেদের স্ট্র্যাটেজি হতে পারে।
ঢাকাপ্রকাশ: যে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিল, সেই আওয়ামী লীগ দেশ ধ্বংস করবে আপনি বিশ্বাস করেন?
ড. রেজা কিবরিয়া: হ্যাঁ, আমি করি। আওয়ামী লীগের পতন হলে ইতিহাসের পাতায় তাদের খুঁজতে হবে। আর কোথাও তাদের পাবেন না। মুসলিম লীগের মতো হবে।
ঢাকাপ্রকাশ: সরকার কি কোনো ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে?
ড. রেজা কিবরিয়া: নিশ্চয়ই। তারা তো কথায় কথায় মিথ্যা কথা বলে।
ঢাকাপ্রকাশ: এই সংকট থেকে বের হওয়ার উপায় কী?
ড. রেজা কিবরিয়া: সরকারের ভেতরের অবস্থা জানা নেই। তারা নিশ্চয়ই খুবই দুরবস্থায় আইএমএফকে ডেকেছে। অনেক কিছু তারা মিথ্যা বলেছে। না হলে তারা আইএমএফ-এ যেত না। সেজন্য যে পরিসংখ্যান তারা দিচ্ছে সেটাতে মনে হয় না আইএমএফ এর কাছে যাওয়া এই মুহূর্তে দরকার ছিল। সরকারের এই সিদ্ধান্তে দেশে-বিদেশে ভাবমূর্তিতে একটা খারাপ প্রভাব পড়বে; কোনো সন্দেহ নাই। আইএমএফ বেল-আউট এটার অর্থনীতি বিপদে পড়ে গেছে। ওরা (সরকার) দেশের অর্থনীতি ঠিক মতো চালাতে পারে না। তাদের হাতে অর্থনীতি থাকলে আমরা বিপদে পড়ব, এটা অনেক আগে থেকেই জানি।
ঢাকাপ্রকাশ: তাহলে আপনি বলছেন আইএমএফ টাকা দেবে না?
ড. রেজা কিবরিয়া: আমি সেটা জানি না। তবে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমি আইএমএফ-এ কাজ করেছি আমার অভিজ্ঞতা আছে। আইএমএফ কাগজপত্র স্টাফরা তৈরি করবে। আইএমএফ বোর্ডে তিন থেকে ৫ মাস পরে সেটা তারা উপস্থাপন করবে। তাদের প্রস্তাবনাটা ৩০ দিন সার্কুলেট করবে। তারপর প্রস্তাবটার উপরে ভোট হবে, সেই ভোটে যদি হ্যাঁ ভোট পড়ে ৫০ শতাংশ তাহলে আমরা লোনটা পাব। তাও কিস্তিতে পাব। একবারে পাব না। দিল্লী দূর আছে।
ঢাকাপ্রকাশ: আপনি যেহেতু আইএমএফ-এ কাজ করেছেন তাহলে একটু বলবেন ‘আইএমএফ’ এর কোন কোন শর্ত যেটা দেশের মানুষের ক্ষতি হতে পারে?
ড. রেজা কিবরিয়া: দেশের মানুষকে কষ্ট করতে হবে। এই বিপদে সরকার ফেলেছে কষ্ট তো করতেই হবে। আইএমএফ দেশকে ক্ষতি করার জন্য করবে না। আইএমএফ চাইবে গ্রোথ রেট কমানো, চাকরির বাজার কঠিন হয়ে যাবে। গ্রোথ রেট কমালে আমদানি বাধাগ্রস্ত হয়। আমদানি রপ্তানিতে প্রভাব পড়বে। অর্থনীতি তাদের (সরকারের) হাতে থাকা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। তারা ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি কমাতে বলবে। এই সরকার তো দুর্নীতির উপরে চলে। তারা এই শর্ত মানতে পারবে না। আইএমএফও তাদের কথা বিশ্বাস করবে না। খরচ কমাতে বলবে, কর বাড়াতে বলবে। অর্থনৈতিক সংকট থেকে উঠে আসতে কিছু আত্মত্যাগ করতে হয়। এই মুহূর্তে আইএমএফ তাদের (সরকারকে) ধরতেও চায় না। সংস্কার না করলে লোন দিতে চায় না। আলোচনাতেই নামতে চায় না, তারা বলছে প্রথমে সংস্কার করেন। সরকার তো সংস্কার করবে না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেশ ঝামেলায় আছে, তার কারণে দেশটা ১০০ থেকে ৭০-এ চলে গেছে।
ঢাকাপ্রকাশ: আপনার কাছে কোনো তথ্য আছে সরকারের কেউ টাকা পাচার করেছে?
ড. রেজা কিবরিয়া: আমার কাছে সেই কাগজগুলো নেই। সরকারে গেলে কাগজগুলো পাব। দেশকে বাঁচাতে এই সরকারকে সরাতে হবে। যদি এই সরকারকে আরও দেড় দুই বছর রাখেন, শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থা হলে ২০ বছর লাগবে সেখান থেকে ফিরে আসতে।
ঢাকাপ্রকাশ: দীর্ঘক্ষণ সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ড. রেজা কিবরিয়া: আপনার মাধ্যমে ঢাকাপ্রকাশ-এর সকলকে ধন্যবাদ।
এনএইচবি/এমএমএ/