গুজব ছড়ানোর তালিকায় ভারতের ৪৯ গণমাধ্যম
ছবি: সংগৃহীত
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন এবং ভারতে আশ্রয় নেন। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৫ বছরের শাসনামলের অবসান ঘটে। এরপর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এই সময় থেকে গত ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশের প্রসঙ্গে একের পর এক ভুয়া খবর প্রচার করা হয়।
আন্তর্জাতিক ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানারের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে অন্তত ৪৯টি ভারতীয় গণমাধ্যমে ১৩টি ভুয়া খবর শনাক্ত করা হয়েছে। সর্বাধিক ৫টি ভুয়া খবর প্রচার করেছে রিপাবলিক বাংলা। এরপর রয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস, জি নিউজ এবং লাইভ মিন্ট, যারা প্রত্যেকে অন্তত ৩টি করে গুজব প্রচার করেছে। এছাড়া রিপাবলিক, ইন্ডিয়া টুডে, এবিপি আনন্দ এবং আজতক অন্তত ২টি করে ভুয়া খবর ছড়িয়েছে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারানোর পর, তার নামে একটি খোলা চিঠি প্রচারিত হয় যেখানে তিনি নিজের ক্ষমতাচ্যুতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন বলে দাবি করা হয়। অনুসন্ধানে দেখা যায়, চিঠিটি সম্পূর্ণ ভুয়া। এটি প্রথমে ফেসবুকে ছড়ানো হয় এবং পরে ভারতীয় পত্রিকা ত্রিপুরা ভবিষ্যৎ-এর একটি স্ক্রিনশট আকারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়, একজন হিন্দু ব্যক্তি তার নিখোঁজ সন্তানের সন্ধানে মানববন্ধন করছেন। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্যক্তি আসলে মুসলিম এবং তার নাম বাবুল হাওলাদার। তিনি ২০১৩ সালে নিখোঁজ হওয়া ছেলের সন্ধানে মানববন্ধন করেছিলেন।
গণমাধ্যমগুলোতে দাবি করা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গুরুতর অসুস্থ হয়ে আইসিইউতে ভর্তি হয়েছেন। তবে ছবিটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটের এবং ড. ইউনূস সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন।
কিছু গণমাধ্যম দাবি করে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কিছু নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে এই দাবি মিথ্যা এবং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ নেই।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের পর দাবি করা হয়, ড. ইউনূস ফ্রান্সে পালিয়ে গেছেন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি ভিত্তিহীন এবং ব্যবহৃত ছবি পুরোনো।
ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়, ১৯৭১ সালে অস্ত্র পরিবহনকারী পাকিস্তানি জাহাজ আবার চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করেছে। রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, এটি একটি বাণিজ্যিক জাহাজ যা কাঁচামাল ও পণ্য পরিবহন করে।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তার এবং আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষ নিয়ে নানা মিথ্যা খবর ছড়ানো হয়। নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে চিন্ময়ের আইনজীবী হিসেবে প্রচার করা হয়, যা ভুল।
একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়, বাংলাদেশে হিন্দু মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। কিন্তু ভিডিওটি ভারতের পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রতিমা বিসর্জনের দৃশ্য।
যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ সতর্কতা নিয়ে বাংলাদেশে সম্ভাব্য জঙ্গি হামলার দাবি প্রচার করা হয়। কিন্তু এটি বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ সতর্কতার অংশ।
প্রতিবেদনে স্পষ্ট করা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর এমন ভুয়া খবর ছড়ানো এক ধরনের পরিকল্পিত অপপ্রচার। রিউমর স্ক্যানার এসব গুজবের ভিত্তিহীনতা তুলে ধরেছে এবং বিষয়গুলো নিয়ে আরও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।