ইউক্রেনের পারমাণবিক কেন্দ্র ছাড়ছে না জাতিসংঘের পরিদর্শন দল
রাফায়েল গ্রোসি
ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র জাপোরিঝঝিয়ায় পৌঁছানোর পর সেখানেই অবস্থান করছে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শন দলটি। জাপোরিঝঝিয়া প্ল্যান্টেই তারা এখন অবস্থান করবে বলে জানিয়েছেন আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি।
বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) তিনি ঘোষণা দেন বলে জানায় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। রাফায়েল গ্রোসি এ দলের নেতৃত্ব দেন।
রাফায়েল গ্রোসি বলেন, 'আমরা কোথাও যাচ্ছি না। আইএইএ এখন এই প্ল্যান্টেই থাকবে, এখান থেকে আমরা নড়ছি না।'
তিনি বলেন, আইএইএ বিশেষজ্ঞদের একটি দল প্ল্যান্টের পেছনে অবস্থান করছিল। পারমাণবিক কেন্দ্রের পরিস্থিতির একটি নিরপেক্ষ ও প্রযুক্তিগতভাবে সঠিক মূল্যায়ন প্রদান করবে দলটি।
রাফায়েল গ্রোসি বলেন, আমি চিন্তিত, যতক্ষণ পর্যন্ত পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হবে তা অত্যন্ত চিন্তার ও উদ্বেগের। খবর পাওয়া গেছে, কয়েক দিন আগে পারমাণবিক চুল্লির খুব কাছাকাছি বেশ কয়েকটি শেল পড়েছিল। এটি একটি প্রধান উদ্বেগের কারণ। মাটিতে কতটুকু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। একই সঙ্গে জাপোরিঝঝিয়ায় অবস্থানরত কর্মীদের নিরপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।'
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার পরিদর্শন দলটি জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পৌঁছানোর এক ঘণ্টা আগেও ওই এলাকায় তীব্র গোলাবর্ষণের শব্দ পাওয়া যায়। পরে বেশ কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর দলটি পারমাণবিক কেন্দ্রে পৌঁছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্ল্যান্টের কাছে গোলাবর্ষণের কারণে চেরনোবিলের মতো বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এর জন্য ইউক্রেন ও রাশিয়া পরস্পরকে অভিযুক্ত করেছে। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে রাশিয়া প্ল্যান্টটি দখল করেছে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে তার বাহিনীকে রক্ষা করতে এবং রাশিয়ান পাওয়ার গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত করে ইউক্রেনের আউটপুট চুরি করার পরিকল্পনা করার অভিযোগও করেছে কিয়েভ। যদিও মস্কো এ অভিযোগ অস্বীকার করে। একই সঙ্গে প্ল্যান্ট থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের আন্তর্জাতিক আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে রাশিয়া।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, প্ল্যান্টটি যাতে নিরাপদে কাজ করতে পারে এবং আইএইএ পরিদর্শকরা যাতে তাদের কাজ শেষ করতে পারে তার জন্য মস্কো সবকিছু করছে।
এর আগে, ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা এনারগোঅটম বলেছিল, রাশিয়ান গোলাগুলি সাইটে এখনও কাজ করা দুটি চুল্লির একটি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে দেশটি।
ইউক্রেনকে দোষারোপ করতে এবং আইএইএ সফরে বাধা দেওয়ার জন্য এই গোলাগুলির ঘটনা মঞ্চস্থ করেছে বলে রাশিয়ানদের অভিযুক্ত করেছে কিয়েভ।
মার্চ মাসে রাশিয়ার দ্বারা এটির দখলের পর থেকে প্ল্যান্টটি রাশিয়ান সৈন্যদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। তবে এটি এখনও ইউক্রেনীয় কর্মীদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
উভয় পক্ষই ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চল পুনরুদ্ধারের জন্য নতুন ইউক্রেনীয় আক্রমণকে যুদ্ধক্ষেত্রে সাফল্যের দাবি করেছে। যদিও এখন পর্যন্ত বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়নি। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা তাদের অগ্রগতি সম্পর্কে সামান্য তথ্য প্রকাশ করেছেন।
লাখ লাখ মানুষ ইউক্রেন থেকে পালিয়ে গেছে, হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং শহরগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এ চলমান ঘটনাকে কিয়েভ ও পশ্চিমারা রাশিয়ার বিনা প্ররোচনাহীন আগ্রাসন বলে ব্যাখ্যা করছে।
এদিকে ইউক্রেনকে জাতীয়তাবাদীদের হাত থেকে মুক্ত করতে এবং রুশ-ভাষী সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে মস্কো তাদের পদক্ষেপকে একটি 'বিশেষ সামরিক অভিযান' বলে অভিহিত করেছে।
টিটি/