পাকিস্তানে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে
পাকিস্তানে জলবায়ুগত পরিবর্তন ও ভারী বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যায় কৃষি, অর্থনীতি ও অবকাঠামোজনিত ক্ষতি এক হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। সংকটাপন্ন দেশটির মন্ত্রী ও একাধিক কর্মকর্তা এ দাবি করেছেন।
পাকিস্তানের পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবাল আনুমানিক এ ক্ষতির হিসাব প্রকাশ করেন। তিনি সিএনএনকে বলেন, 'পাকিস্তান ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বকে পাকিস্তানের সহায়তায় আসতে হবে।'
পাকিস্তান এ নজিরবিহীন বন্যার কারণে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে লড়াই করছে। বন্যা ও তীব্র বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৩৩ মিলিয়ন (৩ কোটি ৩০ লাখ) মানুষ, যা ২২ কোটি জনসংখ্যার ১৫ শতাংশেরও বেশি। এমনটিই জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি (আইআরসি)।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সোমবার দক্ষিণ এশীয় এ দেশটির ঋণের বাধ্যবাধকতা এড়ানোর জন্য ১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার বেলআউট তহবিল ছেড়েছে।
পাকিস্তানের ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (এনডিএমএ) বলেছে, বন্যায় ৩৮৬ জন শিশুসহ কমপক্ষে ১ হাজার ১৩৬ জন নিহত হয়েছেন। জুনের মাঝামাঝি থেকে ১ হাজার ৬৩৪ জন আহত হয়েছেন। অবিরাম বৃষ্টির কারণে আরও প্রাণহানির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলেও জানায় সংস্থাটি। এনডিএমএ অনুসারে, বন্যায় ১৩০টিরও বেশি সেতু এবং প্রায় অর্ধ মিলিয়ন বাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে।
দেশটির জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শেরি রেহমান এ পরিস্থিতিকে ‘মহাকাব্যিক পর্যায়ের জলবায়ুজনিত মানবিক সংকট’বলে অভিহিত করেছেন।
শেরি রেহমান বৃহস্পতিবার তুর্কি নিউজ আউটলেট টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে বলেছেন, বৃষ্টি শেষ হলেও পাকিস্তানের এক চতুর্থাংশ বা এক তৃতীয়াংশ পানির নিচে রয়ে গেছে। গবেষকরা ও সাহায্যকারী গোষ্ঠীগুলো বলছে, বন্যার আগেও পাকিস্তান জলবায়ু সংকটের কারণে অসামান্য সংকটে ভুগছিল।
গত বছর অলাভজনক গ্রুপ জার্মানওয়াচের গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্সে, ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় পাকিস্তানের অবস্থান ছিল অষ্টম।
সোমবার এক বিবৃতিতে আইআরসি’এর পাকিস্তান কান্ট্রি ডিরেক্টর শবনম বালোচ বলেছেন, 'দেশটি বিশ্বের কার্বন ফুটপ্রিন্টের এক শতাংশেরও কম উৎপাদন করা সত্ত্বেও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে বিশ্বের নিষ্ক্রীয়তার পরিণতি ভোগ করছে। স্বাস্থ্যবিধি সুবিধা ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব প্লাবিত এলাকায় রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়িয়েছে। প্রায় ২০ হাজার মানুষের গুরুতর খাদ্য সরবরাহ ও চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন।'
তিনি বলেন, 'আমাদের পর্যবেক্ষণ মূল্যায়ন করে দেখা গেছে, আমাদের মধ্যে ইতিমধ্যে ডায়রিয়া, ত্বকের সংক্রমণ, ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য অসুস্থতা ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা অবিলম্বে দাতাদের সমর্থন বাড়াতে এবং আমাদের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করছি।'
এদিকে আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এবং অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের কারণে প্রতিকূল বাহ্যিক পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আইএমএফ অতীতে ঋণগ্রহণকারী দেশগুলোর উপর কঠোরতা আরোপ করার জন্য সমালোচিত হয়েছে, সরকারগুলোকে সামাজিক কর্মসূচি কমাতে এবং জাতীয় শিল্প বেসরকারিকরণে বাধ্য করেছে। একই সঙ্গে আইএমএফ’এর নির্ধারিত শর্তগুলো আকাশচুম্বী মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে বিদ্যুতের শুল্ক বৃদ্ধি ও জ্বালানির দাম দ্বিগুণ করার মতো অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে পাকিস্তান সরকারকে বাধ্য করেছে।
২০১০ সালের বন্যার চেয়েও এ বছরের বন্যা আরও ভয়াবহ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ওই বছর বন্যায় মৃতের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি ছিল, যা এই বছর অতিক্রম করতে পারে বলে শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
পাকিস্তানের জিও নিউ টেলিভিশনকে ইসমাইল বলেন, 'আমরা ভারত থেকে সবজি আমদানির কথা বিবেচনা করতে পারি।'
পাশাপাশি তুরস্ক ও ইরানসহ খাদ্যের অন্যান্য উৎসগুলোও বিবেচনায় রাখা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বন্যার কারণে ফসল নষ্ট হওয়ায় ও সড়ক যোগাযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পাকিস্তানে এরইমধ্যে খাদ্য পণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে।
পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়েছে এবং এরই মধ্যে কয়েকটি দেশ ত্রাণ সরবরাহ ও উদ্ধারকারী দল পাঠিয়ে সাড়া দিয়েছে।
সোমবার চীন সরকার জানিয়েছে, তারা অতিরিক্ত মানবিক ত্রাণ হিসেবে আরও ৩ লাখ ডলার নগদ অর্থ ও ২৫ হাজার তাঁবু পাঠাচ্ছে। এর আগে পাকিস্তানকে ৪ হাজার তাঁবু, ৫০ হাজার কম্বল ও ৫০ হাজার ত্রিপল পাঠিয়েছে চীন।
সোমবার কানাডার সরকারও পাকিস্তানের বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ৫০ লাখ ডলার মানবিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র ৩ কোটি ডলারের মানবিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা করেছে।
টিটি/