ফ্ল্যাটে নয়, রোহিঙ্গারা থাকবে বন্দিশিবিরে: ভারত
দিল্লিতে যাওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফ্ল্যাটে নয়, বন্দিশিবিরে রাখার ঘোষণা দিয়েছে ভারত। বুধবার (১৬ আগস্ট) দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ঘোষণা দেয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দিল্লির একটি আটক কেন্দ্রে রাখা হবে। পরে সেখান থেকে তাদের ফেরত পাঠানো হবে।
এর আগে মিয়ানমার থেকে দিল্লি যাওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফ্ল্যাট ও পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়ার ঘোষণা দেন ভারতের আবাসন ও নগরায়ন বিষয়ক মন্ত্রী হরদিপ সিং পুরি। টুইটারে দেওয়া পোস্টে তিনি বলেন, ‘যারা আশ্রয় চেয়েছে তাদের সবসময়ই স্বাগত জানিয়েছে ভারত। জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশন ১৯৫১-এর প্রতি ভারত শ্রদ্ধাশীল এবং সেটি অনুসরণ করে। জাতি, ধর্ম, বিশ্বাস নির্বিশেষে সবাইকেই আশ্রয় দেয়।’ সেই টুইটে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কেও ট্যাগ করেন পুরী।
আবাসন ও নগরায়ন বিষয়ক মন্ত্রীর ওই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কথা পাল্টায় দিল্লি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, দিল্লিতে রোহিঙ্গাদের ফ্ল্যাট দেওয়ার কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তাদের ডিটেনশন ক্যাম্প বা বন্দিশিবিরে রাখতে বলা হয়েছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, ‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে সংবাদমাধ্যমের একটি অংশে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে স্পষ্টভাবে জানানো হচ্ছে, দিল্লির বক্করওয়ালায় আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির কোটায় রোহিঙ্গাদের ফ্ল্যাট দেওয়ার কোনো নির্দেশ দেয়নি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রোহিঙ্গাদের নতুন জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে তাদের বর্তমান জায়গায় রাখতেই দিল্লির কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।’
অথচ এর আগেই হরদীপ সিং পুরী বলেছিলেন, যারা ভারতে শরণার্থী হিসেবে থাকতে চেয়েছে, তাদের সব সময় স্বাগত জানানো হয়েছে। এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দিল্লির বক্করওয়ালা এলাকায় আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির কোটার ফ্ল্যাটে সব রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তাদের জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক সুযোগ-সুবিধা, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রশংসাপত্র দেওয়া হবে। ২৪ ঘণ্টা দিল্লি পুলিশের সুরক্ষা দেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সেই ঘোষণার পর বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) তোপের মুখে পড়ে নরেন্দ্র মোদি সরকার। তারে বলে, ‘আমরা পুরিকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, ২০২০ সালে সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিবৃতি দিয়েছিলেন যে রোহিঙ্গাদের কখনও ভারতে মেনে নেওয়া হবে না।’
ভিএইচপি বলে, ‘পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু শরণার্থীরা দিল্লির মজনু-কা-টিলায় ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে বসবাস করছেন। যা এই বিষয়টিকে (রোহিঙ্গাদের ফ্ল্যাট দেওয়ার পরিকল্পনা) আরও জটিল করে তুলেছে।’ সেই পরিস্থিতিতে ‘রোহিঙ্গাদের বাড়ি দেওয়ার বদলে তাদের ভারতের বাইরে পাঠানোর জন্য পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়ার’ অনুরোধ জানায় ভিএইচপি।
ভিএইচপির এমন বক্তব্যের কিছু সময় পর রোহিঙ্গাদের ‘অবৈধ বিদেশি’ হিসেবে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলে, ‘আইন অনুযায়ী (নিজেদের দেশে) ফেরত পাঠানো পর্যন্ত অবৈধ বিদেশিদের ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখতে হবে। বর্তমানে যেখানে (রোহিঙ্গারা) থাকেন, সেটাকে এখনও ডিটেনশন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেনি দিল্লি সরকার। অবিলম্বে ওই জায়গাকে ডিটেশন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
টিটি/