সোভিয়েত পতনের জন্য গর্বাচেভকে দায়ী করতেন রাশিয়ানরা
সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ নেতা ৯১ বছর বয়সী মিখাইল গর্বাচেভ গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) রাতে তার মৃত্যুর খবর প্রকাশ করে বিভিন্ন গণমাধ্যম।
দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। মিখাইল গর্বাচেভের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা।
মিখাইল গর্বাচেভ ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। মিখাইল সের্গেইভিচ গর্বাচেভ ১৯৩১ সালের ২ মার্চ দক্ষিণ রাশিয়ার স্টাভ্রোপল অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন।
বাবা-মা’র সঙ্গে শিশু গর্বাচেভ
১৯৫৫ সালে মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে স্নাতকে অধ্যায়নের সময় তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
গর্বাচেভ ৫৪ বছর বয়সে ১৯৮৫ সালে ক্ষমতায় আসেন এবং দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান নেতা নিযুক্ত হন। ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে কমিউনিজমের পতন হলে তিনি দেশটির প্রথম ও একমাত্র প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র-সোভিয়েত ইউনিয়নের দীর্ঘদিনের শীতল সম্পর্ক উষ্ণ করতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন।
স্ত্রী রাইসার সঙ্গে গর্বাচেভ
গর্বাচেভ স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটাতে চেয়েছিলেন। তিনি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে পারমাণবিক ও বিভিন্ন অস্ত্র বিলুপ্তির সফলভাবে আলোচনা করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি করেছিলেন। ১৯৯০ সালে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছিল।
গর্বাচেভ পেরেস্ত্রোইকা (পুনর্গঠন) ও গ্লাসনস্ত (উন্মুক্ততা) নীতির প্রবর্তক ছিলেন।
তার গ্লাসনস্ত বা উন্মুক্ততা নীতি মানুষকে এমনভাবে সরকারের সমালোচনা করার সুযোগ দেয় যা আগে অচিন্তনীয় ছিল। কিন্তু এটি দেশের অনেক অঞ্চলে জাতীয়তাবাদী মনোভাব প্রকাশ করে যা শেষ পর্যন্ত এর পতনের দিকে নিয়ে যায়। ১৯৯১ সালে তিনি তার দেশের পতন রোধ করতে পারেননি। এজন্য বহু রাশিয়ান তাকে ও তার সংস্কারবাদী নীতিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের জন্য দায়ী করেন। আবার অনেক রাশিয়ানদের কাছে বীরত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি।
১৯৯১ সালের ২৫ ডিসেম্বর সোভিয়েতের ইউনিয়নের আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তির দিন পদত্যাগ করেন তিনি। গর্বাচেভের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে বিশ্বে চার দশক ধরে চলা স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তি হয়।
পরে ১৯৯৬ সালে তিনি রাজনৈতিতে ফিরে আসার চেষ্টা করেন। সে সময় অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মাত্র ০.৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন তিনি।
আরএ/