পাকিস্তানে রেকর্ড বন্যায় প্রাণ হারিয়েছে ৬৫০ জনের বেশি
মৌসুমি বর্ষার ধ্বংসযজ্ঞে বিধ্বস্ত পাকিস্তান। ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (এনডিএমএ) বলছে, চলতি বছরের জুনের মাঝামাঝি বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে সারাদেশে ৬৫০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এনডিএমএর প্রাথমিক অনুমান বলছে দেশটির ১০০টিরও বেশি জেলা প্রবল বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ও দরিদ্র প্রদেশ বেলুচিস্তান।
প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) অনুসারে, বেলুচিস্তানে ২০০ জনেরও বেশি লোক মারা গেছে। তাদের মধ্যে ৫৮ জন শিশু। এ ছাড়া ১০ হাজারেরও বেশি লোক তাদের বাড়িঘর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
এদিকে বেলুচিস্তান কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্যায় ৪০ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে ২২ হাজারটি বিলীন হয়ে গেছে। প্রদেশ জুড়ে প্রায় ৭ লাখ একর (২ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর) জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত এ বন্যায় মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনুমান করেছেন ১০ মিলিয়ন ডলার।
তবে এ ধ্বংসযজ্ঞ শুধু বেলুচিস্তানেই সীমাবদ্ধ নয়, প্রায় পুরো পাকিস্তানেই এই বছর অস্বাভাবিক পরিমাণ বৃষ্টিপাতের সম্মুখীন হয়েছে। ১৭ অগাস্ট পর্যন্ত এনডিএমএ ডেটা অনুযায়ী, এই বছরের গড় বৃষ্টিপাত ছিল ২৬৭ মিমি। যেখানে ৩০ বছরের গড় ১১৯ মিমি। প্রায় ১২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে দেশটির গড় বৃষ্টিপাত।
আর বেলুচিস্তানের ৩০ বছরের গড় ছিল মাত্র ৫৫ মিমি, যা এ বছর নাটকীয়ভাবে ২৮৯ শতাংশ বেড়ে ২০০ মিমি বৃষ্টি হয়েছে।
বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা মীর জিয়াউল্লাহ লাঙ্গাউ বলেছেন, প্রাদেশিক সরকার স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করছে এবং তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করছে।
তিনি আল জাজিরাকে বলেছেন, 'আমরা বৃষ্টির ধরনের বিবেচনা করে বুঝতে পেরেছি যে, সেখানে অবশ্যই এমন লোক থাকতে হবে যাদের ত্রাণ দেওয়া হয়নি, তবে আমাদের দলগুলো সর্বত্র নিষ্ঠার সঙ্গে পারফর্ম করেছে। আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি।
পিডিএমএর আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এ বছর বৃষ্টি অপ্রত্যাশিত ছিল। তিনি দাবি করেছেন যে, সরকার জনগণকে অবহিত করছে এবং ত্রাণ তৎপরতার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে।
বেলুচিস্তান ফেডারেল সরকারের কাছে প্রদেশে মেরামত ও পুনর্বাসনের জন্য ২৭ মিলিয়ন ডলারের একটি বিশেষ প্যাকেজের আবেদন করেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বুধবার টুইট করে জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র 'প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তুলতে' ১ মিলিয়ন ডলার প্যাকেজের উপরে পাকিস্তানকে তাৎক্ষণিক ত্রাণ হিসাবে ১ লাখ ডলার দেবে।
আবার কেউ কেউ সরকারের নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হাজি রহিম (৭৪) আল জাজিরাকে বলেন, বন্যায় তিনি তার বাড়ি ও ২৫ একরেরও বেশি কৃষি জমি হারিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'সরকার মানুষকে সাহায্য করার জন্য বড় কথা বলছে, কিন্তু আমি তাদের এখানে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। এটি শুধু দাতব্য কর্মীরা ও কিছু রাজনৈতিক দল তাদের নিজেদের উদ্যোগে সাহায্য করে'।
ক্লাইমেট চেঞ্জ রিস্ক ইনডেক্স-২০২১ অনুসারে বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণে এক শতাংশেরও কম অবদান থাকা সত্ত্বেও জলবায়ু সংকটের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে পাকিস্তান অষ্টম স্থানে রয়েছে।
টিটি/