ভারতে করোনাকালে বেড়েছে শিশু যৌন নির্যাতন
২০১৯ সালের শেষ দিকে করোনাভাইরাসের আগমন ঘটে। এ ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় চীনে উহান প্রদেশে। এরপর কয়েক মাসে সেটা দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ফলে করোনার থাবা থেকে রেহাই পাননি ভারতবাসীরাও। করোনা মহামারির ফলে দেশটি যখন বির্পযস্ত, তখন সেখানে বেড়েছে শিশু যৌন নিপীড়নের হার।
২০২০ সালের জুলাই মাসে একটি ফেসবুক পেজে যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুদের ছবি এবং ভিডিও প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতের আসামের পুলিশ তদন্ত শুরু করলে প্রায় এক মাস পর ২৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। আসামের রাজধানী গুয়াহাটির কাছে একটি গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্রেফতার হওয়া ওই ব্যক্তির মোবাইলে শিশুদের যৌন হয়রানির ভিডিও রয়েছে।
পুলিশের অভিযোগ, ওই ব্যক্তি ফেসবুক পেজটিতে এসব ভিডিও অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করেন এবং অ্যাপসের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে এসব ভিডিও বিক্রি করেন। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন।
এ ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা গীতাঞ্জলি ডলি বলেন, ‘এসব ভিডিও দেখার পর অনেক রাত পর্যন্ত ঘুমাতে পারিনি।’
এদিকে জামিনে মুক্তি পেয়ে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন ওই ব্যক্তি। তিনি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সংস্থা বিবিসিকে বলেন, ‘আমি কখনোই শিশুদের যৌন নির্যাতনের ভিডিও ডাউনলোড করিনি। আমি কখনোই সেগুলো শেয়ার করিনি।’
যদিও শিশু যৌন নির্যাতনের ছবি এবং ভিডিও প্রকাশ ভারতীয় আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ। তারপরও করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশটিতে যখন ভয়াবহ পরিস্থিতি চলছে তার মধ্যে এ ধরনের ভিডিও প্রকাশের হার আরও বেড়েছে।
অ্যাক্টিভিস্ট এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, গত বছর থেকে দেশে শিশু নির্যাতনের ছবির অনলাইন চাহিদা ও প্রচার বৃদ্ধি পেয়েছে।
জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, যৌন অপরাধ থেকে শিশুদের সুরক্ষা আইনের অধীনে ৪৩ হাজার অপরাধ ২০২০ সালে নথিভুক্ত হয়। প্রতি ১২ মিনিটে গড়ে একটি করে মামলা।
ভারতের কেরালা রাজ্যের পুলিশ সাইবারডোমের প্রধান মনোজ আব্রাহাম জানান, করোনা মহামারির মধ্যে রাজ্যটিতে এই অপরাধের হার প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের অপরাধের রিপোর্ট সাধারণত দায়ের করা হয় না। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপরাধকারীরা পরিবারের সদস্য বা ভুক্তভোগীর পরিচিত ব্যক্তি হয়ে থাকে।
দেশটির অন্যান্য রাজ্যেও এর ভিন্নতা নেই। ইন্ডিয়া চাইল্ড প্রোটেকশন ফান্ডের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, রাজধানী দিল্লি এবং মুম্বাইসহ ভারতের প্রায় ১০০টি শহরে শিশু যৌন নির্যাতনের ভিডিও অনলাইনে শেয়ারের হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। সংস্থাটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে অনলাইনে এ ধরনের শেয়ার করা কন্টেন্ট ট্র্যাক করেছে।
মনোজ আব্রাহাম বলেন, সন্তানদের অনলাইন কার্যক্রমের উপর নজর রাখা বাবা-মায়ের কাজ। আপনার সন্তানের চারপাশে প্রত্যেককে সন্দেহ করা উচিত।
এদিকে এ ধরনের অপরাধ মোকাবেলা করার জন্য একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কেরালা পুলিশ। উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক সফটওয়্যার ব্যবহার করা। যা অভিযুক্ত অপরাধীদের আইপি এড্রেস ট্র্যাক করবে। এই কৌশলটি অবলম্বন করে গত দুই বছরে প্রায় দেড় হাজার অনুসন্ধান এবং ৩৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের একজন কর্মকর্তা।
এসআইএইচ/এসএ/