গাজায় নিহত ছাড়াল ৩০ হাজার
ত্রাণের লাইনে গুলি করে ৮১ জনের প্রাণ কাড়ল ইসরায়েল
ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ শহর গাজায় দিনের পর দিন অনাহারে থেকে মৃতপ্রায় বহু মানুষ গিয়েছিলেন ত্রাণ নিতে। ত্রাণ নিয়ে আর ফিরতে পারেননি তাদের অনেকেই। ইসরায়েলি বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে বৃহস্পতিবার তাদের মধ্যে অন্তত ৮১ জনকে হত্যা করেছে।
প্রাণ কেড়ে নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি বর্বর ইসরায়েলি সেনারা। মৃতদেহের ওপর ট্যাঙ্ক চালিয়ে দিয়েছে। গাজা শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি গোলচত্বরে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় অন্তত ৭০০ জন আহত হয়েছে।
এই প্রাণহানির মাধ্যমে ১৪৬ দিনের ইসরায়েলি আগ্রাসনে উপত্যকায় মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি হিসাবেই ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বাস্তবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে। ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হওয়া ভবনগুলোর ভেতরে এখনও আটকে পড়ে আছেন বহু ফিলিস্তিনি। তাদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষীণ।
ইসরায়েলি হামলার পর মৃতদেহ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। আরও ইসরায়েলি হামলার আশঙ্কায় উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেনি।
আলজাজিরা জানায়, কয়েকদিন ধরে উত্তর গাজার বাসিন্দারা খাদ্যের সন্ধানে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ক্রমবর্ধমান অপুষ্টি ও অনাহারের মধ্যে অনেকে হেঁটে দক্ষিণের দিকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিচ্ছেন।
এদিকে গতকাল গাজার নুসাইরাত, বুরেইজ এবং খান ইউনিস ক্যাম্পে ইসরায়েলি বিমান হামলা ও গোলাগুলিতে অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩০ হাজার ৩৫ জন নিহত এবং ৭০ হাজার ৪৫৭ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ২১ হাজারের বেশি নারী ও শিশু।
দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন বলেছে, গাজায় ‘শিশুদের ধীরগতির হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী বিশ্ব।’ গাজার ২৩ লাখ জনসংখ্যার প্রায় ১.৩% শতাংশ গত ৫ মাসের ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে।
গাজায় ত্রাণপ্রার্থীদের ওপর হামলাকে ‘নজিরবিহীন যুদ্ধাপরাধ’ বলে মন্তব্য করেছে হামাস। বিবৃতিতে দলটি বলেছে, এই হামলা ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমি থেকে সম্পূর্ণভাবে বাস্তুচ্যুত করার এবং ফিলিস্তিনি আন্দোলনকে ‘নিশ্চিহ্ন’ করার জন্য ইসরায়েলের প্রচেষ্টার অংশ। আরব দেশগুলো এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে জরুরিভিত্তিতে গাজায় গণহত্যা এবং জাতিগত নির্মূল বন্ধ করার জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে প্রতিরোধ গোষ্ঠীটি।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলেছে, ফিলিস্তিনি বেসামরিক গণহত্যার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে বাইডেন প্রশাসন ‘সম্পূর্ণ দায়ী’।
একবিংশ শতাব্দীতে বেশ কয়েকটি বড় যুদ্ধ দেখেছে বিশ্ব। এর মধ্যে রয়েছে ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেন ও ইউক্রেনে বিদেশি শক্তির আগ্রাসন ও ধ্বংসযজ্ঞ। তবে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞের হার এসব যুদ্ধকে ব্যাপক ব্যবধানে পেছনে ফেলেছে।
ব্রিটেনভিত্তিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম জানুয়ারির শুরুতেই বলেছে, ইসরায়েলের আগ্রাসনে ফিলিস্তিনে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা একুশ শতকের অন্য যে কোনো বড় সংঘাতকে ছাড়িয়ে গেছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী যুদ্ধের শুরুতে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করছে; যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর যে কোনো বড় যুদ্ধে দৈনিক মৃত্যুর চেয়ে বেশি।
রাশিয়ার মধ্যস্থতায় হামাস-ফাতাহ বৈঠক: হামাস এবং ফাতাহসহ ফিলিস্তিনের সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা গতকাল রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে মিলিত হন। গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ ফিলিস্তিনি সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনা করবেন তারা।
আলজাজিরা বলছে, বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে ব্যাপক ‘অনিশ্চয়তা’ থাকলেও দলগুলো একটি সম্মিলিত কৌশল প্রণয়নের জন্য তিন দিন আলোচনা চালাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি এই ধরনের চতুর্থ বৈঠক। স্পষ্টতই রাশিয়া ফিলিস্তিনি দলগুলোর মধ্যে পুনর্মিলন ঘটাতে মধ্যস্থতা করছে। তবে বৈঠকের আগে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ মালকি বলেছেন, তিনি বৈঠক থেকে ‘অলৌকিক’ কিছু আশা করেন না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আলোচনার আয়োজক ও মধ্যস্থতাকারী হিসেবে রাশিয়ার ভূমিকা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। মস্কো ইউক্রেনে অগ্রযাত্রার মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাব বিস্তার করতে চাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।