ইরানের মিসাইল হামলায় ইরাকের কুর্দিস্তানে নিহত ১৩
ইরানের মিসাইল ও ড্রোন হামলায় ইরাকের কুর্দিস্তানে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইরানের কুর্দি বিরোধীরা এ হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছেন ইরাকের কর্মকর্তারা।
বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) এ হামলা চালানো হয়েছে বলে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলে ইরানি কুর্দি বিরোধী দলগুলোর ঘাঁটি ছিল বলে দাবি করেছে তেহরান। হামলায় নিহতদের মধ্যে একজন গর্ভবতী নারীও রয়েছেন বলে জানা গেছে।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বলেছে, তারা ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের’ ওপর হামলা চালিয়েছে যারা ইরানের সাম্প্রতিক ‘দাঙ্গাকে’ সমর্থন করেছিল।
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে হিজাববিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে। হিজাব না পরার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর মাশা আমিনি নামে ২২ বছর বয়সী এক তরুণী পুলিশি হেফাজতে মারা যাওয়ার পর দেশটিতে হিজাববিরোধী বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহিংসতায় কয়েকডজন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে কট্টর রক্ষণশীল দেশটিতে।
ইরানের নৈতিকতা পুলিশ যখন মাশা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে তখন তিনি তেহরানে তার ভাইয়ের সঙ্গে ছিলেন। হিজাব ও বোরকা না পরে বাড়ির বাইরে বের হওয়ার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে একটি ডিটেনশন সেন্টারে নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই তিনি পড়ে যান ও কোমায় চলে যান।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২২ বছর বয়সী আমিনিকে হাসপাতালে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার আগে তিন রাত ধরে তিনি তেহরানের নৈতিকতা পুলিশের কেন্দ্রে বন্দি ছিলেন এবং মাথায় হিজাব না পরার জন্য তার ওপর নিপীড়ন চালানো হয় বলে অভিযোগ করা হয়।
তবে পুলিশ দাবি করেছে, হঠাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে আমিনি একটি ডিটেনশন সেন্টারে পড়ে যান। কিন্তু তার পরিবার তা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং অভিযোগ করেছে যে তাকে অফিসাররা মারধর করেছে। তিন দিন কোমায় থাকার পর হাসপাতালে মারা যান তিনি।
কুর্দি মানবাধিকার গোষ্ঠী হেনগাও সোমবার বলেছে, ১৮ জন কুর্দি বিক্ষোভকারী নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৮৯৮ জন আহত হয়েছে এবং এক হাজারেরও বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে। মূলত ইরানি কর্তৃপক্ষ এই অঞ্চলের পাশাপাশি অন্যত্রও ভিন্নমতকে দমন করার চেষ্টা করছে।
ইরান হিউম্যান রাইটস নামে আরেকটি মানবাধিকার গ্রুপ বলছে, দেশব্যাপী বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে রাষ্ট্রীয় মিডিয়া জানিয়েছে, নিরাপত্তা কর্মী ও সরকারপন্থি মিলিশিয়াসহ ৪১ জন মারা গেছে।
এদিকে ইরানের সরকার বলছে, বিদেশি শত্রুদের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাঙাবাজরা এ হামলা চালিয়েছে। তারা বলছে, ইরানের কুর্দিবিরোধী গ্রুপ প্রতিবেশী দেশ ইরাকে এ হামলা চালিয়েছে।
বুধবার ইসলামিক রেভোলিউশন গার্ড বাহিনী জানায়, তারা কোমলার প্রধান ঘাঁটি ইরানি কুর্দিস্তানের ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিকেআই) এবং কুর্দিস্তান ফ্রিডম পার্টি (পিএকে) ‘নির্ভুল নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র এবং আক্রমণকারী ড্রোন’ দিয়ে গত চার দিনের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো হামলা চালিয়েছে। এ হুমকি পুরোপুরি দমন না হওয়া পর্যন্ত হামলা অব্যাহত থাকবে বলেও ইরানি এই বাহিনী হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
কোমলা নিশ্চিত করেছে যে, জার্গওয়েজ এলাকায় ১০টি ড্রোন হামলা হয়েছে। পিএকে বলেছে, শেরাওয়াতে তাদের সদর দপ্তরে হামলা হয়েছে এবং পিডিকেআই বলেছে, কোয় সানজাকে অবস্থিত তাদের ঘাঁটি এবং সদর দপ্তরে হামলা করা হয়েছে।
কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে বিরোধী দলগুলোর ওপর হামলা যেকোনো অজুহাতেই একটি ভুল কাজ।’
ইরাকের ফেডারেল সরকারও এই হামলার নিন্দা করেছে। এ ছাড়া ইরাকে জাতিসংঘের মিশন ইরানকে সতর্ক করেছে, ‘রকেট কূটনীতি একটি বেপরোয়া কাজ যার পরিণতি ধ্বংসাত্মক’।
এসএন