পুরস্কারের মধ্য দিয়ে বাচ্চাকে আত্মনির্ভরশীল করতে পারি
জন্মগত মেজাজের উপর ভিত্তি করে শিশুদের তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে কঠিন প্রকৃতির শিশু ১০ শতাংশ (Difficult Child), সহজ প্রকৃতির শিশু ৪০ শতাংশ (Easy Child) এবং মিশ্র প্রকৃতির শিশু ৫০ শতাংশ (slow to warm up 50%)।
সাধারণত মা এবং শিশুদের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া না হলে শিশুর গঠন এবং আচরনে সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে অনেক বাবা-মা নিজেদের অবস্থান থেকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। শিশুকে ঘুম পাড়ানো থেকে শুরু করে খাওয়ানো কান্না থামিয়ে শান্ত করানো ইত্যাদি নিয়মিত কাজে সমস্যা হলে বাবা-মা নিজেদের দায়ী করে থাকেন এবং অনুশোচনায় ভোগেন। তাই প্রথমেই যদি বোঝা যায়, আপনার শিশুটির কোন প্রকৃতির সেক্ষেত্রে শিশুর লালন-পালন সহজ হয়ে থাকে। বিশেষ করে প্রথমেই বোঝার চেষ্টা করতে হবে শিশুটি কঠিন মেজাজের কি না।
বেশিরভাগ কঠিন প্রকৃতির শিশু পরবর্তী সময়ে নানারকম মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে।
একটি শিশুর আচরণ গড়ে ওঠে তার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে। যা শিশুর নিজস্ব মেজাজ এবং আচরণ তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। বিহেভিয়ার অ্যাপ্রোচে দেখা যায় যে, শিশুদের ভালো এবং খারাপ ব্যবহার পরিবর্তন করা যায় বিহেভিয়ার মেথড ব্যবহার কর। দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন বিহেভিয়ার মেথড ব্যবহার করে শিশুদের অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যবহার ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ কমানো সম্ভব হয়েছে।
শিশু লালন পালনের ক্ষেত্রে অভিভাবকবৃন্দ বা পিতা মাতা যদি কিছু নিয়ম-নীতি মেনে চলে তাহলে শিশু লালন পালন করা সহজ হয়ে থাকে।
শিশু লালনপালনের তিনটি নিয়ম–
- ভালো ব্যবহারকে সঙ্গে সঙ্গে এবং প্রায়ই পুরস্কৃত করা।
- ভুল করেও কোনো খারাপ ব্যবহারকে পুরস্কৃত না করা।
- অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যবহারের জন্য মৃদু শাস্তি দেওয়া।
ভালো ব্যবহার তৈরি করার সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকরি উপায় হচ্ছে ভালো ব্যবহারের জন্য শিশুকে Reward বা পুরস্কার দেওয়া। শিশুরা স্বভাবগতভাবেই অনুকরণ প্রিয়। একটি সুন্দর ব্যবহারের জন্য শিশুকে পুরস্কৃত করা হলে তারা পরবর্তী সময়ে ভালো ব্যবহার করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত বোধ করে। যা তাদের সঠিক মানসিক গঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমরা আমাদের শিশুকে বিভিন্ন কাজের মধ্য দিয়ে রিওয়ার্ড দিতে পারি।
রিওয়ার্ড গুড বিহেভিয়ার: শিশুরা স্বভাবসুলভ অনুকরণপ্রিয়। শিশুরা যে কোন কাজের আগে বড়দের অনুসরণ করে থাকেন। তাই বড়রা যদি শুরু থেকেই শিশুদের কাজের প্রতি মনোযোগী হোন, তাহলে শিশুর মানসিক বিকাশ ভালোভাবে হবে। যেমন–শিশু যখন সুন্দর করে কথা বলে, নিজের কাজ নিজে করে, খেলনা শেয়ার করে এরকমই ভালো কাজের ক্ষেত্রে শিশুদের পুরস্কৃত করুন। তাদেরকে ভালো কাজ করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করুন ও প্রশংসা করুন। শিশু যদি ভালো কাজের ক্ষেত্রে উৎসাহ এবং প্রশংসা পায় তাহলে সে কাজটি করার প্রতি আরও উৎসাহিত হবেন।
রিওয়ার্ড বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যেমন–সোশ্যাল, অ্যাক্টিভিটি রিওয়ার্ড এবং ম্যাটেরিয়াল রিওয়ার্ড।
সোশ্যাল রিওয়ার্ড: ছোট্ট বাচ্চাদের যে কোনো কাজের ক্ষেত্রে মনোযোগ দেওয়া, তাদের কাজের প্রশংসা করা, জড়িয়ে ধরে তাদেরকে আদর করা, হাসি দিয়ে তাদের কথাটি শোনা, তালি দিয়ে তাদের কাজকে অভিবাদন জানানো। এসব কাজের মধ্য দিয়ে আমরা বাচ্চাকে আত্মনির্ভরশীল হতে সাহায্য করতে পারি।
অ্যাক্টিভিটি রিওয়ার্ড: বাচ্চাদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের কাজে বাবা মা সহ অংশগ্রহণ করা। যেমন–বাচ্চাকে নিয়ে বাবা-মা একসঙ্গে হাঁটতে যেতে পারেন, একসঙ্গে বসে খেলা করা, টিভি দেখা, কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাওয়া। এই ধরনের অ্যাক্টিভিটি মধ্য দিয়ে বাবা-মা তাদের বাচ্চার সঙ্গে নিজেদের সম্পর্কের উন্নতি করতে পারেন।
ম্যাটেরিয়াল রিওয়ার্ড: কথাটার মধ্য দিয়ে আমরা বুঝতে পারি, বস্তুগত কোনো জিনিসের মধ্য দিয়ে বাচ্চাকে পুরস্কৃত করা; কিন্তু মনে রাখতে হবে যেন উপহারটি অতিরিক্ত দামের না হয়। ছোট ছোট উপহার এর মধ্য দিয়ে আমরা শিশুকে খুশি করতে পারি যেমন আইসক্রিম কিনে দেওয়া, বল কিনে দেওয়া, বাচ্চা পছন্দ করে এরকম ছোট ছোট বিষয়গুলোতে আমরা উপহার দিতে পারি।
লেখক: এডাল্ট অ্যান্ড চাইল্ড সাইক্রিয়াট্রিস্ট, এভার কেয়ার হাসপাতাল
এসএ/