শিশুর কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার (বিশৃঙ্খল আচরণ)
শিশুরা তাদের সমস্যাগুলো সাধারণত আচরণের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করে থাকে। যা বাবা-মায়ের জন্য অনেক দুশ্চিন্তার কারণ হয়। দেখা যায়, অনেক সময় অভিভাবকরা তাদের সন্তানের আচরণ নিয়ে ভীষণ সমস্যায় পরে যান। যেমন— সন্তান তাদের কথা শুনছে না, মিথ্যা কথা বলছে, ঘর থেকে জিনিসপত্র চুরি করছে, স্কুল পালাচ্ছে, অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া দীর্ঘ সময় বাইরে থাকছে।
ধীরে ধীরে সমস্যাগুলো আরও বাড়ছে। বড় হওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের আচরণের ভিন্নতা দেখা যায়। যেমন— মারামারি করা, নিয়ম না মানা, বুলি করা, অন্যকে ভয় দেখানো। এ সব কারণে বাবা-মাকে নালিশ শুনতে হয়। দেখা যায়, এই সব সমস্যার জন্য বাচ্চার মধ্যে কোনো অনুশোচনা দেখা যায় না।
এ সব আচরণগুলো দেখলে বুঝতে হবে আপনার সন্তান হয়ত কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার জনিত সমস্যায় ভুগছে।
কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার এ আচরণের চারটি গ্রুপে সমস্যা দেখা যায়—
আগ্রাসী আচরণ: মারামারি করা, বুলি করা, অন্যকে ভয় দেখানো, অসদাচরণে অন্যকে বাধ্য করা।
ধ্বংসাত্মক আচরণ: জিনিসপত্র ভাঙচুর করা, আগুন লাগানো।
প্রতারনামূলক আচরণ: মিথ্যা বলা, চুরি করা, কর্তব্যবিমুখতা।
নিয়ম ভঙ্গ করা: স্কুল পালানো, অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া দীর্ঘ সময় বাড়ির বাইরে থাকা।
উপরোক্ত আচরণগুলো কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডারে বেশি দিন ধরে থাকলে শিশুর পারিবারিক, সামাজিক এবং তার পড়াশোনা ও সম্পর্কের অবনতি হয়ে থাকে।
কারো কারো আচরণ আরও সিরিয়াস হয়। যেমন— সিগারেট খাওয়া, মদ-গাঁজা বা অন্য নেশা করা, অল্প বয়সে সেক্সুয়াল বিহেভিয়ার এ জড়িয়ে পড়া।
এই সমস্যা বাচ্চার মধ্যে একদিনে তৈরি হয় না। ১০ থেকে ১২ বছরের স্কুলপড়ুয়া ছেলেদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা দিতে পারে। মেয়েদের মধ্যে আর পরে ১৪-১৬ বছরে দেখা যায়। তুলনামূলকভাবে মেয়েদের চাইতে ছেলেদের মধ্যে কন্টাক্ট ডিসঅর্ডার বেশি দেখা যায়।
বিশেষ করে যে সব বাচ্চাদের সঙ্গে পরিবারের সদস্য বা সমবয়সীদের সম্পর্ক খারাপ থাকে, অথবা যারা আইনি জটিলতায় জড়িয়ে গেছে তাদের মধ্যে সুইসাইড করার প্রবণতাও দেখা যায়।
বিভিন্ন কারণে এই সমস্যা তৈরি হতে পারে—
১. শিশুর প্রতি বাবা মায়ের রুঢ আচরণ, বিশৃঙ্খল বাড়ির পরিবেশ, বিবাহ বিচ্ছেদ শিশুর ভেতর আগ্রাসী আচরণ তৈরি করতে পারে।
২. পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতা শিশুর আচরণের উপর প্রভাব পড়ে থাকে।
৩. শিশু যখন বিশৃঙ্খলা ও অবহেলায় বড় হয়, তখন শিশুর অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ অস্বাভাবিক হয়। তারা সাধারণত রাগী হয়, পাশাপাশি হতাশা ও অবসাদে ভোগে।
৪. শিশুরা যখন খুব অল্প বয়স থেকে পরিবারের অথবা অন্য কোনো জায়গায় ভায়োলেন্ট ব্যবহার দেখে এবং শারীরিক ও সেক্সুয়াল অ্যাবিউজের শিকার হয়, তখন তাদের মধ্যে এই ধরনের আচরণ দেখা দিতে পার।
৫. ব্রেইনের frontal lobe এর কাজে বিঘ্ন ঘটলে শিশুরা নেতিবাচক অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শেখা, পরিকল্পনা করা, নিজের নিরাপত্তা বজায় রাখতে পারে না।
৬. কঠিন মেজাজের (difficult temperament) শিশুরা কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডারের জন্য হাই রিস্ক থাকে।
৭. literature review তে দেখা গেছে violent game এর সঙ্গে শিশুদের শারীরিক অস্থিরতা, আগ্রাসী মনোভাব এবং ব্যবহারের সম্পর্ক আছে।
শিশুদের কিছু মানসিক সমস্যার সঙ্গে কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডার ডেভেলপ করার প্রবণতা থাকে। যেমন— মুড এবং অ্যাংজাইটি, পিটিএসডি, সাবস্টেন্স অ্যাবিউজ, এডিএসডি, লার্নিং ডিসঅর্ডার।
পরিবারে কোনো শিশু যদি এই সমস্যায় ভোগে। অভিভাকরা দেরি না করে অবশ্যই মানসিক চিকিৎসক/কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
এই সমস্যা প্রতিরোধ করার জন্য অভিভাবকরা ‘পজেটিভ প্যারেন্টিং’ শিখবেন। তাহলে বাবা মায়ের সঙ্গে শিশুর ভালো সম্পর্ক তৈরি হবে এবং পরিবারে শিশুর জন্য নিরাপদ ও স্থিতিশীল পরিবেশ গড়ে উঠবে।
লেখক: অ্যাডাল্ট অ্যান্ড চাইল্ড সাইকিয়াট্রিস্ট, এভার কেয়ার হাসপাতাল
আরএ/