শিশু আচরণগত পরিবর্তন ঘটাতে কী করবেন
ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে বাচ্চাদের সমস্যা সংক্রান্ত আচরণবিধি কিভাবে প্যারেন্টসরা পরিবর্তন করতে পারেন। আজকের আলোচনার বিষয়বস্তুতে মৃদু শাস্তির প্রক্রিয়াগুলো বিশ্লেষণ করা হলো।
খারাপ ব্যবহার শোধরানোর জন্য মৃদু শাস্তি হিসেবে যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়-
১. টাইম আউট-টাইম আউট বলতে বোঝায় স্বল্প সময়ের জন্য শিশুকে তার পরিচিত environment থেকে দূরে সরিয়ে ঢাকা । টাইম আউট পদ্ধতির লক্ষ্য হলো শিশুর খারাপ আচরণ বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্য দিয়ে অপসারণ করতে সাহায্য করা। সবচেয়ে কার্যকরি হাল্কা শাস্তি হল Time out. ২ থেকে ১২ বৎসর বয়সের শিশুদের জন্য এই পদ্ধতি প্রযোজ্য।
২. তিরস্কার করা এবং অনুমোদন না করা। বাচ্চারা যখন কোন অন্যায় করে থাকে তখন তাকে তা বুঝিয়ে বলা এবং অন্যায় কে প্রশ্রয় না দেয়া।
৩. খারাপ ব্যবহারের স্বাভাবিক (natural) পরিনতি। বাচ্চাদের খারাপ আচরণ কি কিভাবে স্বাভাবিক ভাবে আমরা বুঝিয়ে বলতে পারি তার একটি উদাহরণ দেয়া হলো। যেমন- একটি বিড়ালকে বেশি চাপাচাপি করলে আঁচড় খেতে হবে, তেমনি কোনো অন্যায় করলে তার জন্য শাস্তি পেতে হবে।
৪. খারাপ ব্যবহারের যৌক্তিক (logical) পরিনতি-এই পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যুক্তিগত ব্যাখ্যার মাধ্যমে বাচ্চাকে বুঝিয়ে বলা হয়। যেমন–শাকসবজি না খেলে মিষ্টি খেতে পাবে না।
৫. নিয়ম ভঙ্গের জন্য প্রদত্ত শাস্তি ( Behavior penalty): বাচ্চারা যখন কোন নিয়মের মধ্যে না থাকে, প্যারেন্টস হয় তখন তাদেরকে মৃদু শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারেন। যেমন–মা বাবার সাথে মিথ্যা কথা বললে, একদিন টিভি দেখা বন্ধ।
শিশুকে শাস্তি দিতে হবে সুচিন্তিত ( rationally) এবং নন অ্যাগ্রেসিভ ভাবে।
টাইম আউট যেহেতু খুব কার্যকরী পদ্ধতি,তাই এটা নিয়ে কিছু আলোচনা করব।
কোন খারাপ ব্যবহার করলে শিশুকে কোন রকম আনন্দ পাওয়া থেকে সরিয়ে রাখা হলো টাইম আউট ।
টাইম আউটের জন্য উপযুক্ত জায়গা
-একটি নিরানন্দময় জায়গা বেছে নিন
-পরিবারের কোন সদস্য কাছে থাকবে না ( খুব ছোট শিশুর নিরাপত্তার জন্য দৃষ্টির মধ্যে রাখবেন)।
- খেলনা, টিভি, বই, পোষা প্রাণী বা সৌখিন কোন কিছু শিশুর কাছে থাকবে না।
-স্থানটি হবে নিরাপদ,আলোকিত এবং ভীতিকর হবে না।
-শিশুকে ১০ সেকেন্ডের মধ্যে ঐ জায়গায় নেয়া যাবে।
২ থেকে ৪ বৎসরের শিশুদের জন্য পিঠ সোজা বড় চেয়ার ভালো টাইম আউটের জায়গা।
চেয়ারটি আপনার কাছাকাছি রাখবেন যাতে আপনার দৃষ্টির মধ্যে থাকে, কিন্তু শিশুর চোখের দিকে তাকাবেন না। শিশুর চেয়ার থেকে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে চেয়ারটি নরম কার্পেটের উপর রাখতে পারেন। শিশু চেয়ারে বসে থাকবে, দাঁড়াবে না বা লাফাবে না। শিশু চেঁচামেচি, কান্নাকাটি করলেও তার সাথে কোন কথা বলবেন না।
এদের জন্য মেঝের একটি কোনাও ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫ থেকে ১২ বৎসরের শিশুর জন্য টাইম আউটের জায়গা-
বাথরুম, লন্ড্রিরুম, আপনার শোওয়ার ঘর, হল ওয়ে বা উটিলিটি রুম টাইম আউটের জন্য ভাল জায়গা হতে পারে। কখনই শিশুর শোবার ঘর ব্যবহার করবেন না।
অনাকাঙ্খিত ব্যবহার করলে-
১. শিশুকে ১০ সেকেন্ডের মধ্যে টাইম আউট নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যান। ১০ টার বেশি কথা বলবেন না।
২. টাইমার শিশু শুনতে পায় এমন জায়গায় রাখুন, প্রতি বৎসরের জন্য ১ মিনিট হিসাব করুন।
৩. টাইমার বাজার জন্য অপেক্ষা করুন এবং শিশুকে কোন মনযোগ দিবেন না।
৪. টাইমার বাজার পর শিশুকে টাইম আউটের কারন জিজ্ঞাসা করুন। যতক্ষণ পর্যন্ত বাচ্চার কাছ থেকে পাওয়া উত্তরে আপনি সন্তুষ্ট না হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত টাইম আউট প্রক্রিয়াটি চালাতে থাকবেন। বাচ্চা যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাইম আউট এর কোন নিয়ম নীতি ভঙ্গ করে থাকে তাহলে পুনরায় শুরু থেকে আবার টাইম আউট প্রক্রিয়াটি আরম্ভ করতে হবে।
একটি শিশুর আচরণ গড়ে ওঠে তার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে। যা শিশুর নিজস্ব মেজাজ এবং আচরণ তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। বিহেভিয়ার অ্যাপ্রোচে দেখা যায় যে, শিশুদের ভালো এবং খারাপ ব্যবহার পরিবর্তন করা যায় বিহেভিয়ার মেথড ব্যবহার কর। (US and other countries) দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন বিহেভিয়ার মেথড ব্যবহার করে শিশুদের অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যবহার ৫০℅ থেকে ৯০% কমানো সম্ভব হয়েছে।
তাই বাবা-মায়েদের উদ্দেশ্যে বলা যায়,বাচ্চাদের মেজাজের ভিন্নতা দেখে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ না হয়ে বাচ্চাদের সাহায্য করা। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
লেখক: এডাল্ট অ্যান্ড চাইল্ড সাইক্রিয়াট্রিস্ট, এভার কেয়ার হাসপাতাল