মৃদু কোভিড রোগীরও মস্তিষ্কে নানা ক্ষতি
ছবি: সংগৃহীত
একটি নতুন সমীক্ষা অনুসারে, মৃদু বা মাঝারি মানে আক্রান্ত হলেও কোভিড রোগীদের মস্তিষ্কে নানা ক্ষতিকারক পরিবর্তন ঘটতে পারে।
সোমবার (৭ মার্চ) আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা নেচার জার্নালে গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করা হয়। এই সমীক্ষাটি সবচেয়ে বড় এবং বেশি সংখ্যক মানুষের উপর চালানো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এতে দেখা গেছে, যাদের কোভিড-১৯ ছিল তাদের মস্তিষ্কে কোভিড-১৯ নেই তাদের তুলনায় ধূসর পদার্থ এবং মস্তিষ্কের টিস্যুতে অস্বাভাবিকতার পরিমাণ বেশি ছিল। তাদের মস্তিষ্কের ধূসর পদার্থ অংশটি স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত হারে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে, স্মরণশক্তি নষ্ট হয়। নষ্ট হয় ঘ্রাণশক্তি ও স্বাদক্ষমতা।
কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর মস্তিষ্কের এই পরিবর্তনগুলি স্থায়ী কি না, বা সেই পরিবর্তনগুলো কত দিন পর্যন্ত থাকে ইত্যাদি অবশ্য গবেষণায় খতিয়ে দেখা হয়নি। তাই গবেষকরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেননি। তবে সেই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখার জন্য পরবর্তী পর্যায়ের গবেষণার পথ এই গবেষণা খুলে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
ব্রিটেনে ৫১ থেকে ৮১ বছর বয়সি ৭৮৫ জনের মস্তিষ্কের এমআরআই স্ক্যান করে গবেষকরা এই ফলাফলে পৌঁছান। গড়ে ৩৮ মাস পরে তাদের সবারই মস্তিষ্কে আবার এমআরআই করানো হয়। পাশাপাশি করানো হয় তাদের ‘কগনিটিভ টেস্ট’ও (সচেতনতার মাত্রা মাপার পরীক্ষা)।
মূল গবেষক অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গেনেলে দৌআউদ বলেন, ‘এই প্রথম কোনো গবেষণায় কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার আগেও মস্তিষ্কের এমআরআই করিয়ে দেখা হয়েছে। এমনকি, যারা কোনো দিনই কোভিডে আক্রান্ত হননি স্ক্যান করিয়ে দেখা হয়েছে তাদের মস্তিষ্কও। যারা কোভিডে না হলেও শ্বাসকষ্টের অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তাদেরও মস্তিষ্কের স্ক্যান করানো হয়েছে, কোভিডে আক্রান্তদের সঙ্গে শ্বাসকষ্টের অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের মস্তিষ্কের ফারাক বুঝতে।’
সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সংক্রমণে যে মস্তিষ্কের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়, আগের কয়েকটি গবেষণায় তার ইঙ্গিত মিলেছিল। জানা গেছে, ওই সংক্রমণে মস্তিষ্কের কোনো কোনো অংশের আকার আকৃতি বদলে যায়। ফলে প্রদাহ হয়।
কিন্তু যাদের কোনো দিন কোভিড হয়নি বা স্ক্যান করানোর পরে কোভিড হয়েছে বা যারা শ্বাসকষ্টের অন্যান্য রোগে ভুগছেন এই প্রথম তাদের মস্তিষ্কেরও স্ক্যান করিয়ে গবেষণাটি চালানো হয়েছে। এখানেই এই গবেষণার অভিনবত্ব।
গবেষকরা দেখেছেন, খুব মৃদু বা মাঝারি ধরনের কোভিডে আক্রান্তদেরও মস্তিষ্কে পিরিফর্ম কর্টেক্স, অলফ্যাক্টরি টিউবিকল, অ্যান্টিরিয়র অলফ্যাক্টরি নিউক্লিয়াস অঞ্চলগুলোর খুব ক্ষতি হয়। যাতে স্মৃতিশক্তি, ঘ্রাণশক্তি ও স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতা হ্রাস পায়। তাদের মস্তিষ্কের সেরেবেলাম অংশ ক্ষয়ে যায় বলে তাদের সচেতনতার মাত্রাও কমে যায়।
সাধারণত, মধ্যবয়সিদের বছরে গড়ে ০.২ শতাংশ হারে মস্তিষ্কের ধূসর পদার্থের ক্ষয় হয়। কিন্তু গবেষকরা দেখেছেন, কোভিডে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে ধূসর পদার্থের ক্ষয়ের হার আরও বেড়ে যায়। যা ০.৭ শতাংশ।
অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশিষ্ট স্নায়ুবিজ্ঞানী সারা হেলেওয়েল বলেছেন, ‘এটি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য গবেষণা।’’ তিনি নিজে এই গবেষকদলের সদস্য নন। সারা আরও বলেন, ‘এ বার দেখতে হবে কোভিড রোগীদের মস্তিষ্কের সেই পরিবর্তনগুলো স্থায়ী হয় কি না বা সেগুলোর স্থায়িত্ব হয় কত দিনের। সেগুলো থেকে মস্তিষ্ককে আবার তার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় কি না।’
সূত্র: সিএনএন
আরএ/