ঢাকাপ্রকাশ-কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন নাট্য ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার
ঢাকাপ্রকাশ-কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন নাট্য ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার
ঢাকাপ্রকাশ-কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন নাট্য ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার
ঢাকার মঞ্চ মাতালেন রাহাত ফতেহ আলী খান। ছবি: সংগৃহীত
সুফি সংগীতের ইতিহাসে ফতেহ আলী খান পরিবার দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে উপমহাদেশের সুরপ্রেমীদের মুগ্ধ করে আসছে তাদের অতুলনীয় সুরের মাধুর্যে। এই পরিবারের অন্যতম প্রতিভাবান শিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খানের বাংলাদেশে আগমন এবং তাঁর মঞ্চে গাওয়া নিঃসন্দেহে দেশীয় সংগীতপ্রেমীদের জন্য একটি স্বপ্নপূরণের মুহূর্ত ছিল।
রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে ‘ইকোস অব রেভল্যুশন’ কনসার্টে মঞ্চ মাতিয়েছেন পাকিস্তানের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খান। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের সাহায্যার্থে আয়োজিত এ কনসার্টে শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে মঞ্চে ওঠেন তিনি।
শনিবার বিকেল চারটার দিকে ব্যান্ড সিলসিলার কাওয়ালি গানের মাধ্যমে কনসার্টটি শুরু হয়। এরপর মঞ্চে আসেন ‘আওয়াজ উডা’ গানের জন্য পরিচিত র্যাপার হান্নান। শুরুতে র্যাপ গানটি পরিবেশন করেন তিনি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গানটি গাওয়ার জন্য জেল খেটেছেন হান্নান। হান্নানের পরিবেশনার পর মঞ্চে আসেন আরেক আলোচিত র্যাপার সেজান। ‘কথা ক’ গান দিয়ে সাধারণ শ্রোতাদের মাঝে পরিচিতি পেয়েছেন সেজান। মঞ্চে গানটি ধরলে শ্রোতাদের মধ্যে সাড়া ফেলে।
বিরতির পর সাড়ে পাঁচটার দিকে মঞ্চে আসে রক ব্যান্ড ‘আফটারম্যাথ’। মাইক্রোফোন হাতে ব্যান্ডের ভোকালিস্ট নাভিদ ইফতেখার চৌধুরী শ্রোতাদের বললেন, ‘এর আগে কখনোই আর্মি স্টেডিয়ামে আফটারম্যাথ কনসার্ট করেনি। প্রথমবারের মতো আর্মি স্টেডিয়ামে গাইছি। এবার স্বপ্ন পূরণ হলো।’
কনসার্টে শুরুতেই ব্যান্ডটি গেয়েছে তরুণদের মধ্যে আলোচিত গান ‘অধিকার’। এরপর ‘উৎসর্গ’, ‘মাটির রোদ’সহ আরও কয়েকটি গান পরিবেশন করেছে আফটারম্যাথ।
সন্ধ্যায় মঞ্চে আসে ব্যান্ডদল চিরকুট। শুরুতে বাদ্যযন্ত্রীরা জাতীয় সংগীতের সুর তোলেন। স্টেডিয়ামে দর্শকের আসনে বসে থাকা শ্রোতারা জাতীয় সংগীতের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। এরপর দেশাত্মবোধক গান ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ দিয়ে পরিবেশনা শুরু করে ব্যান্ডের ভোকালিস্ট সুমি। এরপর ‘মরে যাব’, ‘জাদুর শহর’, ‘আহারে জীবন’-এর মতো গান দিয়ে ঘোরলাগা ছড়িয়ে দেয় ব্যান্ডটি। মোলায়েম সুরের এসব গানে যাতনা খুঁজে খুঁজে ফিরেছেন শ্রোতারা।
এরপর হাজারো দর্শকের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মঞ্চে আসেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খান। পর পর তিনি তার জনপ্রিয় চারটি গান পরিবেশন করেন। এরপর সংগীত পরিবেশন করেন বরেণ্য এই শিল্পীর ছেলে শাজমান খান। সর্বশেষ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মঞ্চে তার পরিবেশনা চলছিল।
বিকেল পর্যন্ত বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে ততটা দর্শক দেখা যায়নি। যদিও স্টেডিয়ামের বাইরে লক্ষ্য করা গেছে অস্বাভাবিক যানজট। সন্ধ্যা নামতেই অবশ্য বদলে যায় দৃশ্য। আসতে শুরু করেন দর্শনার্থীরা। যেন তরুণদের দখলে চলে যায় বনানীর আর্মি স্টেডিয়াম।
শনিবার বেলা দুইটা থেকে দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হয় আর্মি স্টেডিয়ামের গেট। তার আগে থেকেই আর্মি স্টেডিয়ামের বাইরে দর্শনার্থীদের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রোতাদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। তবে স্টেডিয়ামের বাইরে রাস্তায় ভীষণ যানজটে নাকাল অবস্থায় পড়তে হয় মানুষকে। কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ ও স্কাউটরা জানান, বনানীগামী রাস্তা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়, এই তথ্য অনেকে জানতেন না। এ কারণে তাদের যানজটের মুখোমুখি হতে হয়। ওই রাস্তায় চলাচলরত গাড়িগুলো এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে তারা জানিয়েছেন, এক্সপ্রেসওয়েতে আজ টোল নেওয়া হয়নি।
যৌথভাবে এ কনসার্টের আয়োজন করেছে ‘স্পিরিটস অব জুলাই’ প্ল্যাটফর্ম ও স্কাইট্র্যাকার লিমিটেড। কনসার্টে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত পরিবারের শতাধিক সদস্য উপস্থিত রয়েছেন বলে আয়োজকেরা জানান।
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে সহায়তার জন্য এ কনসার্টের আয়োজন করা হয়। এই কনসার্ট থেকে আয় হওয়া সব অর্থ শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবার নিয়ে কাজ করা কল্যাণমূলক সংস্থা ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এ দেওয়া হবে।
কনসার্টে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের’ সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। আয়োজনটি উপস্থাপনা করেছেন জুলহাজ জুবায়ের ও দীপ্তি চৌধুরী।
সাবেক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক। ছবিঃ সংগৃহীত
সাবেক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হকের ৩ ব্যাংকে মোট ১৬টি ব্যাংক হিসাবের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব হিসাবগুলোতে প্রায় ২১ কোটি টাকা জমা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। যা ইতোমধ্যে ফ্রিজ করা হয়েছে।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুদক সূত্রে জানা যায়।
আনিসুল হকের হিসাবগুলোর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক বনানী শাখার ৬টি হিসাবের মধ্যে ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে ৫ কোটি টাকা এবং অন্য এক হিসাবে এসসি গোল্ডেন বেনিফিটস নামে ৫০ লাখ ৮১ হাজার টাকা জমা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া, সিটিজেন ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের ৯টি হিসাব থেকে মোট ১৫ কোটি ১১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বর্তমানে নথিপত্র সংগ্রহ এবং যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। অনুসন্ধান টিম প্রতিবেদন দাখিল করলে কমিশন আইন অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবে।
এ বিষয়ে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ও পাচারের অভিযোগ থাকলেও দুদক দালিলিক প্রমাণ ছাড়া আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে না। আমাদের তথ্য ও সংগ্রহ এবং যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে। যা অংশ হিসাবে তিন ব্যাংকে প্রায় ২১ কোটি টাকা জমা থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং ফ্রিজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই টাকা তার আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বলেই আপাতত মনে হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে বিস্তারিত বলা যাবে।
আনিসুল হক ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিমসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে গত ৭ অক্টোবর থেকে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। যার মধ্যে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিমের বিরুদ্ধে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া অপর এক সহযোগী ফারহানা ফেরদৌস নামে অপর এক নারীর বিরুদ্ধে আসা পৃথক আর একটি অভিযোগও আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করছে দুদকের অনুসন্ধান টিম।
হুমায়ুনের মেহেরপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক। ছবি: সংগৃহীত
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, আধিপত্য বিস্তার ও জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে নরসিংদীর মেহেরপাড়ায় এক ছাত্রদল কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দিনগত রাত ১২টার দিকে নরসিংদীর পাঁচদোনা মেহেরপাড়া বাড়ি আগিণার খেলার মাঠ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
নিহত হুমায়ুন কবির (২৬) মেহেরপাড়া ইউনিয়নের নাগরারহাট এলাকার একরামুল হকের ছেলে। তিনি মেহেরপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য।
নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, আধিপত্য বিস্তার ও জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একই এলাকার বাদল মিয়া, শাহআলম ও আতাউর মেম্বারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছিল হুমায়ুন কবিরের। দ্বন্দ্বের জেরে ইতোমধ্যে দুই পক্ষ একাধিক মামলা করেছে। গতকাল শনিবার দিনগত রাতে নিহত হুমায়ুন বাড়ির পাশের আঙ্গিনায় ব্যাডমিন্টন খেলছিল। রাত ১২টার দিকে দুটি মোটরসাইকেল যোগে শাহ আলম ও টিপুসহ চারজন হুমায়ুনের বাড়ির সামনে আসে। ওই সময় তারা হুমায়ুনকে ব্যাডমিন্টন খেলা থেকে ডেকে পাঁচদোনা বাজার মাছের আড়ৎ মসজিদের দিকে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে সন্ত্রাসীরা তার বুকে, পিঠে ও ঘারে পরপর তিনটি গুলি করে। এ সময় সে মাটিতে লুটিয়ে পরে। গুলির শব্দ শুনে খেলার মাঠ থেকে লোকজন এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরে তারা মটোরসাইকেল যোগে পালিয়ে যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় হুমায়ুনকে হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, হুমায়ুন হত্যার বিচার দাবিতে হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এলাকাবাসী।
নিহত হুমায়ুনের বন্ধু ও মেহেরপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক সুজন ভূইয়া বলেন, ‘স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা ছিল নিহত হুমায়ুনের। তার নেতৃত্বেই পাঁচদোনা মেহেরপাড়া ও মাধবদী আন্দোলন হয়েছিল। এসব ঘটনা নিয়ে সে এলাকার অনেকের রোষানলে পড়ে। এসবের জেরে তার বাড়ি ঘরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। প্রাণ বাঁচাতে সে পালিয়ে থাকে। ৫ তারিখের পর এলাকায় আসে। এর মধ্যেই গতকাল তাকে বাড়ির আঙ্গিনা থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হলো।’
নিহতের বড় ভাই আল মামুন বলেন, ‘আমাদের ১৭ শতাংশ একটি জমি দখল করে নেয় বাদল মিয়ারা। পরে মামলার রায় পাওয়ার পর আমরা জমিটি দখলে নিই। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব তীব্র হয়। এরই জের ধরে তারা আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করেছে। এ ছাড়া স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। এসব নিয়ে অনেকে তাকে দমানোর চেষ্টা করছিল।’
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাডমিন্টন খেলা শেষে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, পূর্ব শত্রুতার জেরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার প্রকৃত কারণ উদঘাটনসহ হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ।’