বাঁশঝাড়ে ফটিকজল সুরেলা মিষ্টি কণ্ঠে ডাকে
ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
বাড়ির পাশে বাঁশঝাড়। সকাল বিকেল হাটতে হাটতে প্রতিদিনই অনেক রকম পাখিদের কাকলি শুনতে পাই। নওগাঁ শহরের পারনওগাঁ এলাকায় শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে পাখির ছবি তুলতে ক্যামেরা হাতে বাঁশ ঝাড়ে হাজির হলাম।
কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর পাশের পুকুর পাড় থেকে আওয়াজটা সেখান থেকেই আসা। পাখি কি? ক্যামেরা চোখে দিয়ে খুঁজতে থাকি। শেষ বিকেলে সোনাঝরা রোদে ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে দিনের প্রথম পাখির সন্ধান পেয়ে উতফুল্ল লাগতে থাকে।
একটা ফটিকজল। এরকম একটা জায়গায় ফটিকজল দেখতে পাওয়াটা অবাক হবার মতো।
গ্রাম বাংলায় ঝোঁপজঙ্গলের পাখি ফটিকজল। বাংলাদেশের প্রায় সকল স্থানেই এর দেখা পাওয়া যায়। ফটিকজল আকারে চড়ুই পাখির চেয়ে ছোট হলেও বেশ চঞ্চল পাখি। দৈর্ঘ্য ১৪ সেন্টিমিটার। ওজন ১৫ গ্রাম। পৃথিবীতে এর সর্বমোট ১১টি প্রজাতি রয়েছে। বৈজ্ঞানিক নাম Aegithina tiphia. ইংরেজি নাম common lora. ফটিকজল মূলত স্থানিক পাখি।
অর্থাৎ এরা বসবাসের স্থান ছেড়ে অন্য কোথাও যায়না। হিন্দিতে সৌবিগ, তামিলে পাছাপোড়া, পাঞ্চাবি ভাষায় লাটু নামে পরিচিত। বাংলাদেশের কোথাও কোথাও ফটিকজলকে চাতক ও হলুদ টুনি নামে ডাকা হয়। যদিও প্রজাতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। ফটিকজলের চিবুক, গলা, পেট ও কপাল উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের। পিঠ সবুজাভ হলুদ। পা ও ঠোঁট নীলচে-ধূসর। এরা সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় একত্রে থাকতে পছন্দ করে। কীটপতঙ্গ এবং উড়ন্ত পোকা খেয়ে জীবনধারণ করে।
গ্রীষ্মের মধ্যবর্তী সময় থেকে বর্ষার পরবর্তী সময় অবধি এদের প্রধান প্রজনন ঋতু। প্রজননকালে পুরুষ পাখি স্ত্রী পাখিকে নানাভাবে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। শরীর বলের মত গোল করে বসে থাকে। পালক ফুলিয়ে নেচে বেড়ায়। তারপর দুজন মিলে বাসা নির্মাণ করে। বাসা দেখতে অনেকটা পেয়ালার মত গোল আকৃতির। মাটি থেকে বাসার উচ্চতা ২ থেকে ৩০ ফুটের ভিতর হয়ে থাকে।
পাটের সুক্ষ্ম আঁঁশ, শুকনো ঘাস, গাছের চিকন শেকড়, লতা ইত্যাদি বাসা নির্মাণের মূল উপকরণ। বাসা নির্মাণের সময় এরা নিজেদের ডিমের সুরক্ষায় মূল বাসা থেকে খানিকটা দূরে অন্য পাখির ডিম পাড়ার জন্য আরেকটি অসমাপ্ত নকল বাসা নির্মাণ করে। স্ত্রী ফটিকজল সাধারণত ২ থেকে ৩ টি ডিম পাড়ে। স্ত্রী ও পুরুষ দুজন মিলেই ডিমে তা দেয়। ডিমের রং ধূসর সাদা, কখনো গোলাপী। এক মৌসুমে দুবার ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ১৫ থেকে ১৮ দিন সময় লাগে। ছানাদের উড়তে সময় লাগে ১৬ থেকে ১৯ দিন। প্রজনন ঋতুতে ফটিকজলের সুরেলা মিষ্টি কণ্ঠের ডাক শুনতে পাওয়া যায়।