মীমের ফুডি ফ্যান্টাসি ও বাহারি কেকের গল্প
রেস্তোরাঁ কিংবা দোকানের কেকের চাইতে বাসার তৈরি (হোমমেইড) কেককেই একটু বেশি প্রাধান্য দেয় স্বাস্থ্যসচেতন মানুষরা। সেইসব কেকের মধ্যে ফুটিয়ে তোলা হয় নানা চিত্র, ফুটে ওঠে প্রকৃতি কিংবা পছন্দের থিম।
একটি কেক শুধুমাত্র কেকই নয় এতে মিশে থাকে আবেগ ও ভালোবাসা। সেসব ভালোবাসার কেক কিংবা খাবারকে যারা যত্ন নিয়ে গ্রাহকের কাছ পৌঁছে দেয় তাদের মধ্যে অন্যতম সামান্তা মীম। মীমের ফুডি ফ্যান্টাসির দারুণ সব কেক নজর কাড়ে ক্রেতাদের, স্বাদেও অতুলনীয়।
ঘরোয়া খাবারের জন্য পুরান ঢাকার কেরানীগঞ্জের মানুষের কাছে জনপ্রিয় নাম ফুডি ফ্যান্টাসি। এই পেজ ফুডি ফ্যান্টাসিতে সামান্তা মীমের কেকের গ্রাহকই বেশি। সামান্তা একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। কেক ছাড়াও পাওয়া যায় বাঙালি ও অন্যান্য খাবার।
জানা যায়, ছোট থেকেই সৃজনশীল কাজের প্রতি আগ্রহ ছিল তার। বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে সৃজনশীলতা ফুটিয়ে তুলছেন কেকের ক্যানভাসে। বিভিন্ন ঘরোয়া ও সামাজিক অনুষ্ঠানে তার তৈরি কেক থাকে অনুষ্ঠানের মধ্যমনি। কেরানীগঞ্জ এর বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে তার কেকের সুনাম। ভবিষ্যতে বড় পরিসরে শুরু করার ইচ্ছা রয়েছে মীমের। বেকিং ও কুকিংকেই প্রফেশন হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি। ভবিষ্যতেও এ নিয়েই এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা তার।
সামান্তা পড়াশোনা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে। সাহিত্যের ছাত্রী হয়েও রপ্ত করেছেন রান্না-বান্নার নানা কলা-কৌশল। তবে মীম সবচেয়ে পাকা ওস্তাদ বাহারি সব কেক বানাতে।
মীমের কেকগুলোতে ফুটে ওঠে কারো ভালোবাসার মানুষের প্রতিচ্ছবি, ফুলপ্রিয় কারো ফুল, খেলাপ্রিয় কারো পছন্দের খেলার চিত্র, পছন্দের কারো পেশার প্রতিচ্ছবিও উঠে আসে সেসব কেকের উপরে। কোনো কোনো কেক দেখে তো মনেই হবে এটা কেক নয় স্পাইডারম্যান কিংবা কারো হলুদের পাঞ্জাবি।
করোনাকালীন চাকরি না খুঁজে নিজেই হয়েছেন উদ্যোক্তা। সেসময়ই যাত্রা শুরু তার ঘরোয়া খাবার সরবরাহের এই পেজটির। আস্তে আস্তে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে তার জনপ্রিয়তা। বর্তমান সময়ে মানুষের চাহিদার কথা চিন্তা করে এখন হোমমেড খাবারের পাশাপাশি হোমমেড কেকও যোগ হয়েছে তার পেজে। সম্পূর্ণ ঘরোয়া পরিবেশে স্বাস্থ্যকর হোমমেড কেক ব্যাপক সাড়া ফেলেছে চারিদিকে। কেরানীগঞ্জসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে আসে কেকের অর্ডারসহ নানা খাবারের অর্ডার, সেসব খাবারেই যেন নিজের সবটা শ্রম দিয়ে ক্রেতার জন্য সেরা খাবারটা তৈরি করেন মীম।
একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিটি মেয়েরই নিজের পায়ে দাঁড়ানো উচিত। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া উচিত। প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যেই কিছু সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে। সেটাকে খুঁজে বের করে কাজে লাগনো উচিত। এতে করে যেমন সম্মান বাড়ে তেমন সম্মানীও পাওয়া যায়। সরকারি বা বেসরকারি চাকরি ছাড়াও নিজ উদ্যোগে হয়ে ওঠা যায় সফল উদ্যোক্তা।
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পড়াশোনার পশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলাম এক্সিভিটিসও চর্চা করতে হবে। জীবনে কোনো না কোনো সময় অবশ্যই তা কাজে লাগানো যায়। আর অবশ্যই রিস্ক নিতে হবে। সাহস করে এক কদম চললেই হাজার কদমের পথচলা একসময় শেষ হয়ে যায়। আর দিনশেষে সফলতা আসে।
সামান্তা জানান, তিন বছর আগে যখন তার পেজ ছিল না। তিনি হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু এখন তিনি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন, তাই একটা মনোবল কাজ করে সবসময়।
সবশেষে তিনি বলেন, সফলতা একদিনে আসে না, এজন্য অনেক ধৈর্যশীল হতে হয়। আর নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করলে অবশ্যই দিনশেষে সফল হওয়া যায়।
ফুডি ফ্যান্টাসিকে তিনি একটি ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড় করাতে চান। এজন্য সবার দোয়া ও ভালবাসা প্রত্যাশা করেন তিনি।
আরএ/