নার্সারি নয় যেন ফুলের বাগান
গোলাপ, গাঁদা, ডালিয়া, কসমস, পিটুনিয়া, সেলফিয়া, পিঞ্জি, চন্দ্রমল্লিকা, স্নোবল, ডানিংটাচ, সূর্যমুখী, কোটালিকা, ল্যান্টানা, নয়নতারা, পঞ্চটিয়া, লিলিয়ানসহ বাহারি সব নাম। দেশি-বিদেশি শীতের ফুলগুলোর নামের মতোই তাদের রং-রূপও আলাদা। নার্সারিতে লাল, হলুদ, বেগুনি, সাদা, গোলাপি রঙের যেন মেলা বসছে। শৌখিন ক্রেতারা নার্সারি থেকে ফুলের চারা নিয়ে যাচ্ছেন নিজ বাড়িতে। ঘরের শোভা বাড়াতে এসব নার্সারিতে মধ্যবিত্ত ও শৌখিন মানুষ আসেন ফুলের চারা কিনতে। ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার দুধমুখা নার্সারি ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। এ যেন নার্সারি নয়, ফুলের বাগান।
নার্সারির মালিক হুমায়ুন কবির জানান, ২০২২ সালের মার্চ মাসে ১৪ লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে ১০ শতাংশ জায়গার লিজ নিয়ে তিনি এই নার্সারি গড়ে তোলেন। লাভের মুখ দেখতে আরও এক বছর অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান তিনি। ফুল ফোঁটা ৮০০ টব ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে এখানে।
তার নার্সারিতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ ও চারা- এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলে- পিটুনিয়া, ইনকা গাঁদা, সেলফিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, পয়েন সুর্চিয়া, কাটা মুকুট, মালা গাঁদা, কালার বাগান বিলাস, চায়না টগর, কাঠগোলাপ, থাই জবা, চায়না রঙ্গন, জাপানি রঙ্গন, বিভিন্ন জাতের গোলাপ, জুঁই, বেলি, কাশ গাঁদা, পদ্ম, এস্টার, কম্বেশান, রাঁধাচূড়া, কসমস, পিঞ্জি, স্নোবল, ডানিংটাচ, কোটালিকা, ল্যান্টানা, নয়নতারা, পঞ্চটিয়া, লিলিয়ান।
ফলের চারার মধ্যে রয়েছে- মিয়াজাকি আম, কিউজাই আম, ব্রুনাই কিং, থাই কচমিচা, ব্যাল্কস্টোন, আম্রপলি, ব্যানানা মাংগো, বারি-৪, বারি-১, ভিয়েতনাম মাল্টা, পয়সা মাল্টা, থাই জাম্বুরা, থাই পেয়ারা, কাজী পেয়ারা, মাধুরী পেয়ারা, আপেল কুল, থাই কুল, গ্লোবেল কুল, থাই তেতুল, থাই আমড়া, মিষ্টি করমচা, চাইনিজ পেয়ারা, থাই আতা, থাই কাঁঠাল, থাই সফেদা, স্ট্রবেরি পেয়ারা, অ্যাভোকাডো, লংগান, থাই আমলকি, স্টার আপেল।
নার্সারিতে ঢুকতেই দোকানি বলে যাচ্ছিলেন বিভিন্ন ফুল ও ফলের নাম। শীতের ফুল দেখে ক্রেতার মুখে হাসি দেখা দিলেও তা নার্সারির মালিক ও শ্রমিকদের মুখে হাসি ফোটাতে পারছে না। ফুলগুলোকে সুন্দর দেখাতে নিয়মিত পানি দিতে হয়। যত্ন করতে হয়। একবার ফুল ঝরে গেলে তখন সেই চারা বিক্রি হয় না। আবার ফুল ফোটার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। কেননা গাছে ফুল না দেখলে ক্রেতাদের মন ভরে না। এত সব করার পরও যে পরিমাণ বিক্রি হয়, তাতে লাভ বেশি থাকে না। কিছু কিছু ফলু শুধু শীতকোলে থাকে। পরে মরে যায়। অথচ অন্যান্য চারা সারা বছর বিক্রি করা যায়। তাই পুরোটাই ‘লস প্রজেক্ট’। এসব চারা ছোট পলি প্যাকে এবং ফুল ফোটাগুলো পাওয়া যায় টবে। বিক্রেতা জানালেন, পলি প্যাকের চারার গড়পড়তা দাম প্রতিটি ২৫ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। বড় চারার দাম ফুল ও ফলের জাত, আকার আকৃতির উপর নির্ভর করে।
দুধমুখা নার্সারির শ্রমিক আবুল হোসেন জানালেন, পঞ্চটিয়া দামি ফুল। সবুজ পাতার ওপরেই লাল রঙের এই ফুল ৫০০-৭০০ টাকাতেও বিক্রি হয় অনেক সময়। এ ছাড়া শীতের সময় গোলাপ, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা বেশি বিক্রি হয়।
তিনিও কিছুটা আক্ষেপ নিয়েই বললেন, শীতে ব্যবসা কম হয়। যা বিক্রি করি, তা শ্রমিকদের খরচসহ অন্যান্য খরচ মেটাতেই চলে যায়।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ফাতেমা মামুন নার্সারি ঘুরে দেখছিলেন কী কী কেনা যায়। তিনি শুধু শীতের ফুলের চারা কেনার জন্য এ নার্সারিতে এসেছেন। নিজের ঘরের বারান্দা শুধু গাছ দিয়ে সাজিয়েছেন। সেখানে শীতের নতুন ফুল না থাকলে মন ভরে না। তাই খুঁজছেন পছন্দের ফুলটি।
নার্সারিতে ঢুঁ দিয়ে ফুলের চারার পাশাপাশি মরিচ, লেটুসপাতা, বেগুন, কমলা, মালটা, পেঁপেসহ বিভিন্ন চারা কিনেও বাড়ি ফিরছেন অনেকে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল খালেক জানান, নার্সারিটি স্থাপনে হুমায়ুন কবিরকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। তার এই নার্সারি, যেন নার্সারি নয়, ফুলের বাগানে পরিণত হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ফুল ও ফলের চারা কিনতে আসছেন।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল-মারুফ জানান, বাংলাদেশের অন্য কোথাও এরকম ফুলে চোখ জুড়ানো নার্সারি আছে কি না আমার জানা নেই। তবে এই উপজেলার অন্য কোথাও কেউ যদি এরকম নার্সারি স্থাপন করতে চান, তাদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
দাগনভূঞা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মজুমদার জানান, দুধমুখার এই নার্সারিতে বাংলাদেশে একটি মডেল নার্সারি হতে পারে। এখানে যারাই চারা কিনতে আসছেন তারা ফুলের সুবাসে মোহিত হচ্ছেন ও চোখ জুড়াচ্ছেন। সেলফি তুলছেন ও ঘণ্টাখানেক ফুলের নৈসর্গে হারিয়ে যাচ্ছেন।
এসএন