তাসমিন আফরোজ রেখে গেলেন ফাগুন বনের কবিতা

‘ভেঙে গেল রেশমি চুড়ি, বেলফুলের পাপড়ি, চন্দ্রোদয় মেশানো প্রাণ-
তবুও এই আমি বিবর্তনে পৃথিবীর উঠোনে তুলে রাখি জ্যোস্নাময় ঘরবাড়ি, ফাগুন বন,
তোমাদের জন্য নিরব ভূমিকায় ভালোবাসার ক্ষণ...’
জীবনের অনেক কাজ অসমাপ্ত রেখে বিদায় নিয়েছেন কবি তাসমিন আফরোজ। রেখে গেলেন- জোছনাময় ঘরবাড়ি, ফাগুন বনের আবহে লেখা কবিতা।
রংপুরের যে কয়েকজন কবি-লেখক রয়েছেন তালিকায়, তাদের একজন ছিলেন কবি তাসমিন আফরোজ। তার কবিতায় যেমন ফুটে ওঠে জীবনের পরাবাস্তবতা, যাপনচিত্র, উত্থান-পতন, তেমনি ফুটে ওঠে প্রকৃতির গান, দেশপ্রেম। মানুষ হিসেবে তিনি যেমন কোনোরকম ভনিতা বা বেশ ধরা পছন্দ করতেন না, কবি হিসেবেও করতেন না।
তাসমিন আফরোজের ডাক নাম নিশিদা। তার মেয়েবেলা ছিল কবি ও কবিতায় বসবাস। তিনি বেড়ে উঠেছেন পারিবারিক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে। কবিতা রচনা, আবৃত্তি আর উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে আশির দশকে মঞ্চ ও বেতারে সদা বিচরণ তাকে পরিচিতি দিয়েছে, প্রশংসিত করেছে। এসব প্রতিভার কারণে শিক্ষা জীবনেই অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছিলেন। একসময় ছাত্র জীবনে নৃত্যশিল্পী ছিলেন, পেয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কারও। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। বাংলাদেশ বেতারের আবৃত্তিশিল্পী ছিলেন। লিখেছেন ছোটোগল্প ও কবিতা। ৯৭ সালে ‘চলতিপত্র’ পত্রিকায় তার লেখা ছোটগল্প শ্রেষ্ঠ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল। এ ছাড়া রাঁধুনি আয়োজিত রান্নার প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলেন ২০০৭ সালে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশুনা করলেও মানুষের মনোজগৎ নিয়ে লেখালেখি করতে আনন্দ বোধ করতেন তাসমিন আফরোজ। দীর্ঘ ৩৩ বছর দেশের নানা প্রান্তে বসবাসের সুবাদে অর্জন করেছেন রূপ ও অরূপের বিস্তীর্ণ অভিজ্ঞতা।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করছিলেন ফিরে দেখা সংগঠনের সহসভাপতি হিসেবে। এ ছাড়াও বিভিন্নভাবে যুক্ত ছিলেন, স্বর্ণ নারী অ্যাসোসিয়েশন, বেগর রোকেয়া নারী সংগঠন, বিভাগীয় লেখক পরিষদসহ আরও সংগঠনের সঙ্গে।
তার পিতা ছিলেন আজিম উদ্দিন আহামেদ ও মাতা দৌলতুন্নেসা খাতুন। ১৯৭৭ সালের দিকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন প্রয়াত ছড়াকার উপাধ্যাক্ষ রকিবুল হাসান বুলবুলের সঙ্গে। পড়াশুনা করেছেন আদর্শ গার্লস হাই স্কুল রংপুর থেকে (এসএসসি), কারমাইকেল কলেজ থেকে (এইচএসসি) ও (অনার্স)।
তিনি ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৩ রংপুর মহানগরে জন্মগ্রহণ করেন। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। পরে সেপটিক শকে আক্রান্ত হন। গত ২৭ জুন ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬০ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এসএন
