আবৃত্তি মঞ্চের হলো ২২
লেখা ও ছবি : রবি হোসাইন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা আবৃত্তি সংগঠন হলো ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি মঞ্চ’। বহু পুরোনো, অনেক আয়োজনের সফল কারিগর তারা। শুরুটি হয়েছে তাদের ২০০০ সালে। সে হিসেবে আজ থেকে ২২ বছর আগে। সংগঠনের কর্মীরা জানিয়েছেন, আমাদের জন্ম তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর। প্রতি বছর জাঁক, জমকের সঙ্গে, নতুন ও পুরোনোদের মিলনমেলায় আমরা উৎসবের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠাবাষিকী পালন করি। থাকে আবৃত্তির নানা আয়োজন।
শুরুর গল্প করতে গিয়ে তারা জানালেন, চারুকলা অনুষদে তখন পড়তেন ফারজানা ছন্দা। তিনি এমএফ বা মাস্টার্স অব ফাইন আর্টসের ছাত্রী ছিলেন। তবে আবৃত্তি পাগল। এই মেয়েটিই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকজন আবৃত্তিকারকে নিয়ে আবৃত্তি চর্চা, অনুষ্ঠানের আয়োজন ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আবৃত্তি অনুশীলন ও পারফরমেন্সের এই সংগঠনটি গড়ে তোলেন। তখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কাজের তেমন কোনো গতি আসেনি। সেভাবে শুরুও হয়নি। ফলে আবৃত্তি মঞ্চের মাধ্যমে পুরো চট্টগ্রামেই সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রার নতুন এক ভুবনের চলা শুরু হলো।
সীমিত নয় অন্যদের মতো, ব্যাপক আকারে ভালোবেসে তারা কাজ করে গিয়েছেন। ফলে এখন দেশ, বিদেশে ছড়িয়ে আছেন তাদের তৈরি অনেক আবৃত্তিকার। এজন্য কত যে বাধার মোকাবেলা করতে হয়েছে সবাইকে। সে কাহিনী আরেক ইতিহাস। তবে সব বাধা পেরিয়ে এগিয়েছেন তারা। আজ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ও আশেপাশে এবং অন্যান্য বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে মোট ‘২২টি প্রমিত উচ্চারণ ও আবৃত্তি কর্মশালা’র আয়োজন করেছে এই আবৃত্তি মঞ্চ।
সেগুলো থেকেই চট্টগ্রামের আবৃত্তিকারদেরও জন্ম। মোট ৪ হাজারের বেশি ছাত্র, ছাত্রীকে আবৃত্তির প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তারা। গড়ে তুলেছেন সেরা আবৃত্তিকারদের।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য ক্যাম্পাসগুলোতে দারুণ সুনাম আছে তাদের বছরভর আয়োজনের জন্য। পহেলা বৈশাখ তো বটেই যেকোনো জাতীয় দিবসে তারা আবৃত্তির আয়োজন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো দিবসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি মঞ্চ আলো ছড়ায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ব হয়।
তাদের আরো আয়োজনের মধ্যে আছে নানা ধরণের বৈঠক। এগুলোকে বৈঠকী আড্ডা বলাই ভালো। বলতে গিয়ে ‘কবি ও কবিতা’, ‘পড়–য়া’-এই আয়োজনগুলোর কথা জানালেন। কোনোটিতে কবি ও তার কবিতার জীবন, কোনোটিকে ভালো কোনো কবিতার আদ্যপান্ত থাকে।
এর বাদেও ‘পলাশ ছোঁয়া স্বপ্ন বানের খোঁজে’ নামে প্রতি বছর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রীদের একক আবৃত্তির প্রতিযোগিতা করেন তারা।
কীভাবে চলেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুদানে, শিক্ষক, আবৃত্তিকারদের সাহায্যে ও সদস্যদের চাঁদায়।
আরো একটি অসাধারণ কাজ করছেন তারা। প্রতি বছর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি মঞ্চ ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি মঞ্চ সম্মাননা’ প্রদান করে। বাংলাদেশের বরেণ্য সমাজকর্মী, বীরাঙ্গনা রমা চৌধুরী, কিংবদন্তী কবি ও আবৃত্তিকার এবং একুশের প্রথম কবিতার কবি চট্টগ্রামের মাহবুবুল আলম চৌধুরী, বরেণ্য সমাজবিজ্ঞানী ও প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ভিসি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা অধ্যাপক সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অনুপম সেন, শহীদ জায়া চট্টগ্রামের বেগম মুশতারী শফি, বাংলাদেশের বিখ্যাত কবি হেলাল হাফিজ ও বিখ্যাত লেখক সেলিনা হোসেনকে সম্মান করতে পেরেছেন তারা।
প্রতি বছর তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নতুন সদস্যদের মঞ্চের সঙ্গী করেন। তারা কবিতাকে ভালোবাসেন, কবিকেও। বাংলা ভাষার কবিতাগুলোর প্রতি তাদের দারুণ প্রেম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে এসে আবৃত্তির চচা করে চলেছেন তারা।
চট্টগ্রাম বিটিভি, চট্টগ্রাম বেতারের অনেক আবৃত্তিকার এভাবে এই সংগঠনের তৈরি। তারা নানা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে যাচ্ছেন।
ওএস।