কুষ্টিয়ার বিরল লাল তেঁতুল গাছ
তেঁতুলের কথা শুনলেই জিভে জল আসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। গাছে থোকায় থোকায় ধরে আছে অসংখ্য তেঁতুল।
সেই তেঁতুল যদি হয় সিঁদুর বর্ণের লাল টকটকে আর স্বাদটা যদি হয় একটু ভিন্ন, তাহলে তো যেকোনো মানুষেরই এর স্বাদ পেতে লোভ হবে।
বাইরে ধূসর সবুজ, ভেতরে লাল টকটকে সিঁদুর রঙা তেঁতুলের কথা শুনলে খাওয়ার জন্য না হলেও লাল রঙের তেঁতুল গাছে ঝুলে থাকার কথা জানলে যেকোনো মানুষের একবার হলেও ইচ্ছে হবে সেই তেঁতুল গাছটি এবং সেই গাছের তেঁতুল দেখার।
লাল রঙের ভিন্নরকম এই তেঁতুল গাছ ও তেঁতুল দেখতে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু দর্শনার্থী ছুটে আসছেন কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ওসমানপুর ইউনিয়নের হিজলাবট গ্রামের গড়াই নদীর তীরের লাল তেঁতুল গাছের নিচে।
এদিকে প্রায় তিনশত বছরের পুরাতন ঐতিহ্যবাহী এই তেঁতুল গাছটিকে সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয়রা। গাছটি দেখতে আসা দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য সরকারি উদ্যোগ গ্রহণের দাবিও জানান স্থানীয় সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দা হেকতম আলী শেখ বলেন, আমার বয়স ৮৮ বছর। আমার আব্বা আমার কাছে গল্প করেছেন যে, তার দাদা তার কাছে গল্প করেছেন এই গাছ এখন যেমন আছে তিনিও এই গাছগুলোকে এখনকার মতো দেখেছেন। ব্রিটিশ শাসনের সময় ইংরেজ সাহেবরা এই গাছ লাগিয়েছে। ব্রিটিশ ইংরেজদের কাছ থেকে গাছ কিনে নেন হিরাম্বর বাবু নামে এক হিন্দু ব্যবসায়ী।
তিনি আরও বলেন, সারা বাংলাদেশে একটাই লাল তেঁতুল গাছ খোকসার এই হিজলাবটে।
এই এলাকার আরেক বাসিন্দা শাহনাজ বেগম পিকলু বলেন, দেশের আমার সবচেয়ে প্রিয় গাছ এই লাল তেঁতুল গাছটা। এই গাছের ছায়াতে আমরা বান্ধবীদের নিয়ে অনেকবার পিকনিক করেছি। শুধু আমরাই নয় কুষ্টিয়া শহর থেকে আসছে, ঢাকা থেকেও অনেকেই আসছে এখানে পিকনিক করতে। এখানে সেই সময় এত বাড়ি-ঘর ছিল না। সামনে শুধু নীলকুঠি ও একটা সেগুন বাগান ছিল, সেটা নদীতে ভেঙে গেছে এখন নীলকুঠির অবশিষ্ট একটা বিল্ডিং আছে আর তিনটা তেঁতুল গাছ আছে। লাল তেঁতুল গাছটা ব্রিটিশ নীলকররা লাগিয়েছিলেন। এই তেঁতুল কাঁচা অবস্থায় ভাঙলে একদম সিঁদুরের মতো লাল টকটকে। কিন্তু এই তেঁতুল পাকলে অন্য সব সাধারণ তেঁতুলের মতোই রং ধারণ করে।
ব্রিটিশ ভারতে যে সময় শোষক নীলকররা এ অঞ্চলে নীলকুঠি স্থাপন করেন সেই সময় ইংরেজরা এই তেঁতুল গাছগুলো এখানে রোপণ করেছিলেন। এখানে এক সারিতে রয়েছে তিনটি তেঁতুল গাছ। এই তিনটি তেঁতুল গাছের মধ্যে একটিতে এমন সিঁদুর রঙা লাল তেঁতুল ধরে। আর অন্য দুটি গাছে সাধারণ সাদা রঙের তেঁতুল ধরে।
টিটি/