আইইআরের নবীনবরণে প্রথম কজন সেরা
গতকাল ৩১, ২০২২ সালের মার্চের শেষ দিনটি ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআরের জন্য খুব খুশির একটি দিন। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট নামের এই শিক্ষাবিদ ও শিক্ষাকর্মী তৈরির বাংলাদেশের প্রধান উচ্চ শিক্ষায়তনে বসেছিল মিলনমেলা।
পুরোনোরা নবীণদের বরণ করেছেন। এটিও নতুন একটি চল-২৭ তম ব্যাচের ছাত্র, ছাত্রীদের বরণ করে নিয়েছেন ২৬ তম ব্যাচের ছেলেমেয়েরা। তারা কী যে কষ্ট করেছেন কটি দিন ধরে-না দেখে বলা যাবে না। ক্লাস শেষ করেই কাজে নেমেছেন। একের পর এক রঙিন চিত্রমালা এঁকেছেন কাগজে, সাজিয়েছেন পুরো ফ্লোরটি।
সারা বছরই সেজে থাকে এই ফ্লোর। ক্লাসের বিরতিতে, ক্লাস শেষে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সবসময় পাঁচটি বর্ষের ছেলেমেয়েরা বসে আড্ডা জমান। গান করেন। পড়ালেখা হয়। সাবেক ও বর্তমান সব ছেলেমেয়েদের কাছে খুব পরিচিত, প্রিয়। সামনের স্টেজটি তারা ‘স্টেজ’ নামে ডাকেন। সামনের জায়গাটিকে বারান্দা।
তাতে চিত্রমালা সাজানো হয়েছে মেয়েদের সৃজনবিদ্যা ও ছেলেদের আগ্রহের জোরে। সবসময় তাদের খোঁজ নিয়েছেন শিক্ষকরা। কাজের দেখভাল করেছেন দুজন শিক্ষক-অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান লিটু ও সহকারী অধ্যাপক রায়হান আরা জামান। তারা সহ-শিক্ষা কমিটিতে আছেন।
রায়হান আরা জামান বলেছেন, ‘৩১ মার্চ সকাল থেকে আমাদের নবীণবরণ হয়েছে। প্রথম ভাগের প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিক্ষা অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল ও বিশেষ অতিথি আইইআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. আবদুল হালিম। ড. মাকসুদ কামাল আমাদের আয়োজনটি দেখে খুব খুশি হয়েছেন। তিনি তরুণ, তরুণীদের এই ধরণের কাজকে আরো বেশি পৃষ্ঠপোষকতা করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলে জানিয়েছেন। নেপথ্যের নায়ক ড. আবদুল হালিম তার অনুষদ এমন একটি কাজ করেছে বলে স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত আনন্দিত। ভাষায় সেটি বলে বোঝানো সম্ভব হয়নি তার পক্ষে। ঘুরে, ঘুরে শেষ পর্যন্ত কাজগুলো দেখেছেন। তার অনুষদের দেওয়ালে সাজানো তখন অনেক নানা ধরণের চিত্রাঙ্কন। স্টেজের পেছনে গাছ, সবুজের সমারোহ নীলের মধ্যে। ফুলের মতো সাজানো পুরোটি। রঙে, রঙিন তার ক্যানভাসটি।’
এই ক্যানভাস আসলে ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’, ‘শিক্ষাই আলো’ নামের দুটি প্রধান শ্লোগান ও কার্যক্রমের মানুষদের গড়ে দেওয়ার। এই ভুবনে তারাই তৈরি হন। গড়ে দেন বলে এবার গড়ে দেবার আনন্দে হালিম স্যারের খুশি বাঁধ মানেনি। নবীনবরণে থেকেছেন তারা সবাই।
নাচ, গান আবৃত্তি, পুঁথিপাঠ ইত্যাদি সব ধরণের আয়োজন ছিল। নবীণবরণে নবীনরা তাদের মেধাগুলো স্বাক্ষর রাখেন। পুরোনোরা তাদের মেধার বিকাশ ঘটান। উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেবার জন্য আসেন সাবেক কৃতি ছাত্র, ছাত্রীরা। তার কোনো কমতি ছিল না। সে গল্পে যাবার আগে বলি, এই আয়োজনের সবকিছুর অনুশীলন হয়েছে। এখানেই।
রায়হান আরা জামান বলেছেন, “আমাদের এই ডেকোরেশন ও নীচতলার ফ্লোরকে পহেলা বৈশাখের মোটিভে সাজাতে ওরা সবাই অনেক কষ্ট করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ বলে আমাদের অনন্যতা আরো বেশি। বসন্তবরণ, নবীনবরণ মিলিয়ে আমরা নাম রেখেছি-‘শতবর্ষের আলোয় স্বপ্নীল সাতাশ’। পড়া বলতে কেবল ক্লাসরুমের পড়া নয়, সহশিক্ষাক্রমিক কাযক্রমেও ভালোভাবে অংশগ্রহণ। তাদের সাফল্যে আমরা খুব খুশি হয়েছি। আমি ছিলাম এই সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমের বিশেষ দায়িত্বের অন্যতম।”
অনেকে আসেন এই ধরণের আয়োজনগুলোতে। পুরোনোদের খুশি আরো বেড়েছে, এবারই প্রথম আইইআর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিশেষ কার্যক্রম সম্মানের সঙ্গে সম্পন্ন করেছে। এটি হলো-‘শিক্ষা সম্মান কোর্সের যারা প্রথম’।
এই ছাত্র, ছাত্রীরা হলেন-প্রথম সংসদ সদস্য প্রথম ব্যাচের সৈয়দা রুবিনা মীরা, প্রথম অধ্যাপক বিশেষ শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. তারিক আহসান, প্রথম সিলেকশন বোর্ড সদস্য দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র ও বিশেষ শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক এবং সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান লিটু, প্রথম বিসিএস পাশ ছাত্র প্রথম ব্যাচের অনুপ তালুকদার, প্রথম বিওজি প্রথম ব্যাচের আলমগীর হোসেন সম্রাট, বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্টজয়ী চতুর্থ ব্যাচের মুসা ইব্রাহীম, প্রথম ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির সভাপতি চতুর্থ ব্যাচের ছাত্র মুরসালিন নোমানী, প্রথম ডাকসুর সম্পাদক ১৭ ব্যাচের ছাত্র আসিফ তালুকদার।
তাদের নিয়ে বিকেল চারটা থেকে দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। তাতে খ্যাতনামা ছাত্র, ছাত্রীদের উত্তরীয় পরানো ও তাদের অনুভূতি ব্যক্ত এবং সম্মানিত করার বিশেষ আয়োজন হয়েছে। এই পর্বের প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুস সামাদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন আইইআরের অধ্যাপক ড. ওহিদুজ্জামান। তিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য।
রায়হান আরা জামান বলেছেন, “আমাদের এই অনুষদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’, ‘বি’ ও ‘ডি’ ইউনিটের ছাত্র, ছাত্রীরা ভর্তি হতে পারে। আমাদের ‘এ’ বা বিজ্ঞান অনুষদের কর্তাব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি আগে। ফলে স্যারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। খুব খুশি হয়েছেন।”
এরপর ছিল সম্মানিত ছাত্র, ছাত্রীদের অনুভূতি জানানো ও ব্যান্ড গানের আয়োজন। নিজের কথা বলেছেন যারা, তাদের মধ্যে মোরসালিন নোমানীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি ঢাকা রিপোটাস ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন। বলেছেন, ‘আমরা যখন পড়ালেখা করেছি, তখন এই বিভাগে পড়ে কী হবে, চাকরির বাজার ইত্যাদি নিয়ে নানা ধরণের অস্পষ্টতা, অস্পূর্ণতা ছিল। সেগুলো কেটে গিয়েছে। আইইআরের শিক্ষাব্যবস্থা ধীরে, ধীরে পূর্ণতা লাভ করছে। আমাদের আরেকজন বিখ্যাত ছাত্র, ক্রিকেটার রুবেল খুব অসুস্থ। আমি তার জন্য দোয়া করি। আমাদের যে কারিকুলাম আছে, বিসিএসের জন্য খুব উপযোগী। অনেক ছাত্র, ছাত্রী সুযোগ পাচ্ছেন। সরকারি বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক সবাই ‘স্কলার’। আমরা অধ্যাপকদের বলি ‘সিনিয়র স্কলার’, ছাত্র-ছাত্রীদের ‘জুনিয়র স্কলার’। জুনিয়র স্কলার হিসেবে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। ছাত্র, ছাত্রী, অধ্যাপক সবাইকে বলেছি-‘জীবনের বা কোনো কাজের লক্ষ্য স্থাপন করে ধীরে, ধীরে এগিয়ে যেতে থাকলে সফলতা আসবেই’।”
আরো বলেছেন, ‘নিজের ঘর থেকে আমার স্বীকৃতি পেয়ে ভালো লাগছে। খুব সম্মানিত বোধ করছি। আমার আইইআর, দেশ ও জাতির প্রতি দায়বদ্ধতা আরো বেড়ে গেল। নতুন উদ্যমে কাজ করতে চাই।’ মনের কথা হতে পারে নিশ্চয়ই মুসা
ইব্রাহীমের। অনুষদটির ছাত্র, ছাত্রীদের মধ্যে অনেক মিল, দারুণ একাত্ববোধ ও মমতা আছে।
তিনি বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্ট জয়ী বলে অনুষদের অন্যতম সম্পদ। অন্যদের চেয়ে আলাদা। মুসা ইব্রাহীম বলেছেন, ‘আমাদের আইইআরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিক্ষা অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামালসহ বিখ্যাত ও কৃতি শিক্ষকদের অনেকে ছিলেন। আমাদের প্রথম ব্যাচ থেকে ২৭তম ব্যাচের অনেক ছাত্র, ছাত্রীকে পেয়েছি। আমরা যখন পড়তে এসেছি, তখন এখানে পড়ে কী করব-এই প্রশ্নের এখন জবাব মিলেছে। বলতে দ্বিধা নেই, আইইআর একটি প্রতিষ্ঠিত ও আগামী দিনের গুরুত্বপূণ কর্মক্ষেত্র। তাদের সবাইকে বলেছি, ‘আমি আশা করব, আপনারা সবাই দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করবেন’।”
সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমকে শিক্ষা ধারণায় অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। খেলতে, খেলতে শেখা; অভিযান ও রোমাঞ্চের শিক্ষা এবং শখ তরুণদের মধ্যে অনেক বেশি। তাতে মুসা ইব্রাহীম আইইআরের গর্ব, আইকনিক ফিগার। তারপর গানের আয়োজন। গেয়েছেন ‘ডি রক স্টার’ শুভ। সপ্তম ব্যাচের সাবেক ছাত্র, নামকরা ব্যান্ড তারকা।