নওগাঁ সদর উপজেলার নলখাগড়া বিলে খাস জমিতে পুকুর খননের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় কৃষকেরা। শনিবার (১২ এপ্রিল) বেলা ১১ টার দিকে স্থানীয় এলাকাবাসী ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে স্থানীয় কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশ নেন।
বক্তারা বলেন, নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের চকতারতা, মুরাদপুর, মোক্তারপাড়া, শ্যামপুর, আলাদাদপুর, পাহাড়পুরসহ অন্তত ১৫টি গ্রামের ফসলি মাঠের পানি নামে নলগাড়া বিল দিয়ে। ধানী জমির ওই বিলে পুকুর খননের মহোৎসব চলছে। সম্প্রতি ওই বিলের ২০ একর ৫৮ শতক (৬৪ বিঘা) জমি দখল করে সেখানে ছোট-বড় ১০টি পুকুর খনন করেছেন মনির হোসেন নামের এক ব্যক্তি। এর ফলে বিলের পানি নিষ্কাশনে ব্যাপক বাধাগ্রস্ত হবে এবং জলাবদ্ধতার কারণে ওই মাঠে কয়েকশ বিঘা জমির ফসল আবাদ ব্যাহত হবে।

মানববন্ধনে বক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সারওয়ার কামাল চঞ্চল, ইউপি সদস্য সোহানুর রহমান মামুন, ফাহিম হোসেন, বাছাড়ীগ্রামের বাসিন্দা আইনুল হক, সাইদুল ইসলাম, জাহিদুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ইউপি সদস্য সোহানুর রহমান বলেন, 'নওগাঁ সদর উপজেলার নলগাড়া বিলে ৪৩৮ দাগে ২০ একর ৫৮ শতক (প্রায় ৬৪ বিঘা) খাস জমি রয়েছে। বিলের মাঝ বরাবর অবস্থিত কিছুটা নিচু ওই জমিগুলোতে ছোট ছোট কুয়া (ডোবা) খুঁড়ে স্থানীয় জেলেরা মাছ চাষ করতেন। কুয়ার উঁচু পাড় না থাকায় বিলের পানি নিষ্কাশনে তেমন সমস্যা হতো না। কিন্তু গত ঈদুল ফিতরের ছুটির মধ্যে নওগাঁ পৌরসভার পার-নওগাঁ এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন নামের বিলের ওই সব খাস জমি দখল করেন নিয়ম না মেনে পুকুর খনন করছেন। আশপাশের ধানি জমি থেকে একেকটি পুকুরের পাড় ১০ থেকে ১২ ফুট উঁচু করা হয়েছে। এর ফলে বিলের পানি নিষ্কাশন ব্যাপক বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানোর পর কৃষি জমিতে পুকুর খননের অভিযোগে মনির হোসেনকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা ও পাঁচটি এক্সকেভেটর মেশিন জব্দ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে থানায় ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হয়। আমাদের দাবি হচ্ছে, বিলের খাস জমিতে খনন করা পুকুরের পাড় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ভেঙে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।'
সরজমিনে নলগাড়া বিলে গিয়ে দেখা যায়, সুবিশাল বিলের মাঝ বরাবর পাশাপাশি ছোট-বড় ১০টি নতুন পুকুর খনন করা হয়েছে। পুকুরগুলোর চারপাশের জমিতে বোরো ধানের খেত। অবৈধভাবে ফসলি জমিতে পুকুর খননের অভিযোগে মাটি খনন কাজে ব্যবহৃত পাঁচটি এক্সকেভেটর মেশিন জব্দ করেছে প্রশাসন। জব্দ করা খননযন্ত্রগুলো মাঠের মধ্যেই পড়ে থাকতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইবনুল আবেদিন বলেন, ‘কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন না করে কিংবা কোনো প্রকার প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়া যেখাইে পুকুর খননের খবর পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেই অভিযান চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি ঈদের ছুটির মধ্যে আমাদের কাছে খবর আসে যে নলগাড়া বিলে রাতের আঁধারে বিলের খাস খতিয়ানভুক্ত ফসলি জমিতে পুকুর খননের কাজ করছেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় পাঁচটি খননযন্ত্র জব্দ করা হয় এবং মাটি খননের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। শুধু তাই নয় অবৈধভাবে কৃষি জমিতে পুকুর খননের দায়ে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা-২০২৩ আইনে থানায় নিয়মিত মামলা করা হয়েছে। কৃষি জমি ও কৃষকের ক্ষতি করে কোনোভাবেই পুকুর খনন করতে দেওয়া হবে না।’
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে অবৈধভাবে খনন করা পুকুর পাড় ভেঙে দেওয়ার জন্য বক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানকে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আসন্ন বর্ষার আগেই পুকুর পাড় ভেঙে দিয়ে বিলের পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করা হবে।

বক্তারপুর ইউপি চেয়ারম্যান সারওয়ার কামাল বলেন, নলগাড়া বিল নওগাঁ সদর উপজেলার অন্যতম ধানী জমির বিল। ওই বিল দিয়ে বর্ষায় অন্যান্য বিল ও ফসলি মাঠের পানি নিষ্কাশিত হয়ে খালে পড়ে। নলগাড়া বিলের মাঝ বরাবর সরকারি খাস জমিতে পুকুর কাটায় অন্তত ৫০০ বিঘা জমির ফসল জলমগ্ন হয়ে পড়বে। পানি নিষ্কাশিত হতে না পারলে নলগাড়া বিল ছাড়াও অন্যান্য বিল ও ফসলি মাঠেও জলাবদ্ধতার সমস্যা দেখা দেবে। একজন ব্যক্তির বাণিজ্যিক মাছ চাষের জন্য শত শত কৃষক ফসল আবাদ করতে না পেরে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন। প্রশাসন ও থানা পুলিশের মধ্যস্ততায় বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা চলছে।’
অভিযোগের বিষয়ে মনির হোসেন বলেন, ‘বিলের যেসব জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে সেগুলো কোনো খাস জমি না। ১৫ বছর মেয়াদি অঙ্গীকারনামায় কৃষকদের কাছ থেকে লিজ নিয়ে বিলের জমিতে আমি পুকুর খনন কাজ শুরু করি। এগুলো জলাভূমি, সেখানে কোনো ধান আবাদ হয় না। কুয়া খনন করে এতোদিন স্থানীয় জেলেরা এসব নীচু জমিতে মাছ চাষ করতেন। এখন যেহেতু মামলা হয়েছে, বিষয়টি আমি আইনিভাবে মোকাবিলা করব।’