জবির টয়লেটগুলোর অবস্থা খুবই অস্বাস্থ্যকর
দেশের অন্যতম উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শৌচাগার গুলো দেখে যে কেউই একবার হলেও থুথু ফেলবেন। সামনে দিয়ে হেটে গেলে বমিও করতে পারে অনেকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের টয়লেটগুলোর অবস্থা পাবলিক টয়লেটের চেয়েও নোংরা। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ থাকলেও ছোট বিষয় বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন অনেকেই।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনের শৌচাগারগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণে সেগুলোতে শ্যাওলা জমে মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অধিকাংশ শৌচাগারে সাবান ও টিস্যুর ব্যবস্থা নেই। এমনকি টিস্যু ফেলার পর্যাপ্ত ঝুড়িও রাখা হয়নি। কিছু কিছু শৌচাগারে দরজা বন্ধ করার খিল পর্যন্ত নেই। সেখানে কলম দিয়ে গোপনীয়তা রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। নেই পানির ব্যবহার করার জন্য বদনাও।
এর মধ্যে ক্যান্টিনের পেছনে শৌচাগারের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনগুলো বিকাল ৩:৩০ মিনিটের পর বন্ধ হয়ে যায়। এরপর লাইব্রেরিতে পড়তে আসা শিক্ষার্থী, ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা দশনার্থী এবং শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে ক্যানটিনের পেছনে শৌচাগার ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না করায় শৌচাগারগুলোতে শ্যাওলার আস্তরণ জমে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
ব্যবহারের অযোগ্য শৌচাগারের তালিকায় এর পরেই রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়াম সংলগ্ন শৌচাগারটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে আসা বিভিন্ন অতিথি এবং দর্শনার্থীদের এ শৌচাগারটি ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় এই শৌচাগারে কোন সেনিটাইজেশন ব্যবস্থা নেই। টিস্যু এবং টিস্যু ফেলার জন্য নির্দিষ্ট কোন ঝুড়ি নেই। যার কারণে শৌচাগারের বেসিনগুলো পানি ভর্তি ও নোংরা অবস্থায় দেখা যায়।
এ ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন ভবন ও অনুষদ গুলো ঘুরে দেখা যায় সেখানে শিক্ষার্থী অনুপাতে পর্যাপ্ত শৌচালয়ের ব্যবস্থা নেই।
কলা ভবন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদেও রয়েছে বাথরুমের অপর্যাপ্ততা। এর মধ্যে রফিক ভবন উল্লেখযোগ্য। রফিক ভবনে অধ্যায়নরত চারুকলা, বাংলা এবং ইতিহাস বিভাগের প্রায় এক হাজার পুরুষ ও নারী শিক্ষার্থীর জন্য ভবনের চতুর্থ তলায় দুইটি এবং নিচতলায় রয়েছে ৪টি শৌচাগার রয়েছে। এতে মেয়েদের জন্য দেওয়া ওয়াশরুম মাত্র একটি আরেকটি থাকে সবসময় তালাবদ্ধ।
অন্যদিকে দেখা যায়, রফিক ভবনের নিচে অবস্থিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের বাথরুমের আলাদা চিত্র। লাগিয়ে রাখা হয়েছে তালা। এক মেডিকেল সেন্টারের জন্যই বরাদ্দ দুইটি বাথরুমের যদিও মেডিকেল সেন্টারে কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছে সাত জন। এ ছাড়া, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য আলাদা বাথরুমের ব্যবস্থা রয়েছে।
এ ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়নরত নারী শিক্ষার্থীরা রয়েছে প্রচুর স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। নারী শিক্ষার্থীদের বিশেষ পরিছন্নতার প্রয়োজন থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শৌচাগারে তাদের জন্য সাবান টিস্যু এবং স্যানেটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থা নেই।
এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শিহাব বলেন, এখানে তো আসাই যায় না। এত নোংরা বাথরুমগুলো। ছিটকানিও নেই, এটা নেই ওটা নেই। সবসময় ময়লা থাকে। এসব কর্তৃপক্ষের দেখা প্রয়োজন।
সুমি ও শিমলা জাহান নামের দুই বান্ধবী মেয়েদের ওয়াশরুম নিয়ে অভিযোগ করে বলেন, আমাদের এখানে অনেক মেয়ে শিক্ষার্থী কিন্ত পর্যাপ্ত বাথরুম নেই। একটা মাত্র বাথরুম নিচতলায় এটা দিয়ে কীভাবে কি হয়। এত নোংরা থাকে অনেক সময় যাওয়াই যায় না। স্যানিটারি প্যাডের কথা নাইবা বললাম।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, ‘ওয়াশরুমগুলো আগামীকাল এর মধ্যে পরিষ্কার করে দেওয়া হবে, শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে। তাই নিয়মিত পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা হবে। আমাদের ওয়াশরুম গুলো ওপেন ওয়াশরুম, তাই ওপেন ওয়াশরুমে ন্যাপকিন দেওয়া সম্ভব নাকি? তবে মেয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে, বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা চেষ্টা করব।’
এ বিষয়ে জানতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এমএমএ/