শিক্ষামন্ত্রীকে অভ্যর্থনা নিয়ে অধ্যাপকদের ঝগড়া
লেখা ও ছবি : আতোয়ার রহমান, প্রতিনিধি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
ময়মনসিংহের ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘১৭তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ পালিত হচ্ছে। এই ক্যাম্পাসের জন্মদিনটির দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠানে আজ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণিকে অভ্যর্থনা জানানো ও তাকে ফুল দেওয়ার পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে গতকাল মঙ্গলবার ১০ এপ্রিল সন্ধ্যা ছয়টায় প্রশাসন ভবনের সামনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের সামনে শিক্ষকদের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রীকে কোন, কোন স্থানে কারা থেকে ফুল দেবেন-এই জায়গা ও কীভাবে তাকে বরণ করা হবে ইত্যাদি নানা বিষয়েও অধ্যাপকরা বিবাদে নেমেছেন।
অধ্যাপকদের মধ্যে পক্ষপাত নিয়ে বিবাদের খবরও জানিয়েছেন ঢাকাপ্রকাশ ২৪.কমের প্রতিনিধি আতোয়ার রহমান।
চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সঞ্জয় দে ‘১৭তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন কমিটি’র সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধানের বিরুদ্ধে আয়োজনটিতে গড়মিল করা ও শিডিউলে পক্ষপাত ও ফুল দেওয়ায় পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ করেছেন।
তিনি তাকে বলেছেন, ‘এই ভিসি স্যার (অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর)কে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এইচ.এম. মোস্তাফিজুর রহমান পাননি যে, নিজের মতো করে সব করবেন। বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালনানুষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে কে, কে থাকবেন-এ বিষয়ে আপনি উপাচার্য স্যারের পরামর্শ গ্রহণ করেছেন? তাকে সবকিছু জানিয়েছেন?’
এই প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেছেন, ‘এজন্য একটি উদযাপন কমিটি তৈরি করা হয়েছে। কমিটি তার মতো করে কাজ করছে। আমাদের সব সিদ্ধান্ত আলোচনার মাধ্যমেই গ্রহণ করা হয়েছে।’
সঙ্গে, সঙ্গে অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধানকে সমর্থন করে চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সঞ্জয় দে’র সঙ্গে ঝগড়া করেছেন মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের রেজওয়ান আহমেদ শুভ্র, রিমন সরকার ও নৃবিজ্ঞানের আসিফ ইকবাল আরিফ।
ড. সঞ্জয় দে’কে সমর্থন করে তাদের সঙ্গে ঝগড়া করেছেন নৃবিজ্ঞানের প্রভাষক জুয়েল মোল্ল্যা। তিনি তাদের জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলেও অভিযোগ করেছেন তখন।
এরপর কজন অধ্যাপককে প্রশাসন ভবনের তুমুল হট্টগোলের মধ্যে প্রবেশে বাধা দিয়ে ভেতর থেকে গেটের তালা লাগিয়ে দিয়েছেন ‘১৭তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন কমিটি’র আহবায়ক অধ্যাপক ড. আহমেদুল বারী।
তিনি তখন বলেছেন, ‘যাদের কাছে এই উৎসবের জন্য ইস্যু করা প্রবেশপত্র আছে, তারাই কেবল উপস্থিত থাকতে পারবেন।’
পরে এই প্রতিবেদক বিষয়টি নিয়ে চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সঞ্জয় দে’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, ‘যেটুকু হয়েছে, বিশেষ কিছু নয়।’
এরপর বলেছেন, ‘আমার কোনো অধ্যাপকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। আগামীকালের অনুষ্ঠানটি সফল করাই আমাদের লক্ষ্য। অনুষ্ঠানটি সবার অংশগ্রহণে সফল হোক-এই চাই।’
এই বিষয়ে অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান কোনো মন্ত্য করতে রাজি হননি এই প্রতিবেদকের কাছে।
নৃবিজ্ঞানের প্রভাষক জুয়েল মোল্ল্যা বলেছেন, ‘আমি ছাত্রজীবনে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতি করে এখানে এসেছি। আমাদের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণিও বঙ্গবন্ধুর আদশের এই রাজনীতি করছেন। ফলে তার অনুষ্ঠানে কোনো ঘাটতি থাকুক এটি আমি চাই না।’
জুয়েল মোল্ল্যা আরো বলেন, ‘অধ্যাপকরা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির সঙ্গে জড়িত না থাকলে জ্ঞানপাপী হিসেবে কাজ করেন।’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. শেখ সুজন আলী অধ্যাপকদের ঝগড়া নিয়ে বলেছেন, ‘সবাই মিলে কোনো কাজ করতে গেলে এমন দুই, চারটি কথা হতেই পারে। সবকিছুর উধ্বে প্রগ্রাম বাস্তবায়ন করাই অমাদের মূল কথা।’
এই সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম অধ্যাপকদের ঝগড়াটি নিয়ে বলেছেন, ‘যা কিছু ঘটেছে, খুব নিন্দনীয় ঘটনা। যে ঘটিয়েছেন, তার আচরণ অধ্যাপকের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমি মনে করি, ঘটনাটির বিচার হওয়া উচিত। কারণ এই ধরণের সুন্দর একটি প্রগ্রামে যে এ ধরণের সমস্য সৃষ্টি করেছে, তার উদ্দেশ্য কী জানা দরকার।’
ওএস।