কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা নববর্ষ ও চৈত্রসংক্রান্তি
লেখা ও ছবি : আতোয়ার রহমান
ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় স্বাগত জানিয়েছে বাংলা নতুন ১৪২৯ বঙ্গাব্দকে। তাদের প্রতিপাদ্য 'অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা'।
এবারের পহেলা বৈশাখ আয়োজনে নেতৃত্ব দিয়েছে চারুকলা অনুষদ। নতুন বছর পালন শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাহি সাম্যের গান মঞ্চে, অনুষদের শিক্ষার্থীদের প্রভাতী পরিবেশনায়। ছাত্র, ছাত্রীরা নাচ, গানে বাংলা মাসের পহেলা দিনের সকালকে মুখরিত করে তুলেছেন। জাতীয় সঙ্গীত, নজরুলগীতি ও রবীন্দ্র সঙ্গীতের তাল ও ছন্দে উপস্থিত দর্শনার্থীরাও নেচে, গেয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছেন।
পহেলা বৈশাখের আলোচনায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, ‘বাঙালি জাতির ঐতিহ্যই অগ্রগতি ও পরম্পরা। নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে অন্যকে গ্রহণ। বাংলা নববর্ষ আমাদের জানান দেয়, বহুকালের এই সংস্কৃতির ধারকবাহক বাঙালি জাতির অনেক দায়বদ্ধতা আছে। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির গড্ডালিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে বিশ্বায়নের দরুণ আমাদের সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার যে সুযোগগুলো আমাদের এসেছে, আমরা যেন যথাযথভাবে করতে পারি।’
‘ইতোমধ্যে আমাদের মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনেস্কো থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে কিন্তু এ আমাদের শ্লাঘার বিষয় নয়। আমাদের সংস্কৃতির নানা অনুষঙ্গ আন্তর্জাতিকভাবে এখনো তুলে ধরার সুযোগ আছে। সেভাবে আমরা যেন এগিয়ে যেতে পারি।’
অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর আরো বলেছেন, ‘পৃথিবীর বহু জাতির ক্যালেন্ডার নেই। বাঙালি জাতির আছে। এ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাঙালি যে সুশৃঙ্খল, পরম্পরার জাতি তার অন্যতম প্রমাণ এই ক্যালেন্ডার। এই দিনপঞ্জিকায় বাংলা মাসের নামকরণ হয়েছে নক্ষত্র গমনাগমনের ভিত্তিতে। করে। এই ইতিহাসগুলো তরুণ প্রজন্মকে জানাতে হবে।’
‘এই বাংলা নববর্ষ বহু পুরনো। ধারাবাহিকতা আজকের নয়। বাঙালি যে বহু আগের জাতি, বাঙালি যে ভূঁইফোড় নয়, বাঙালি যে দুই-চারশ বছর আগের জাতিমাত্র নয়, তার প্রমাণ আমাদের যে সংস্কৃতিক উপাদান বর্ষ পঞ্জিকা সেটি; দেখলেই তোমরা বুঝতে পারবে। সুদীর্ঘকাল ধরে এই জাতি সবুজ এই বদ্বীপে প্রীতি, সৌভ্রাতৃত্বে বসবাস করে আসছে।’
বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হয়েছে বহুল আকাংখিত মঙ্গল শোভাযাত্রা। উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের নেতৃত্বে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার মঙ্গল অংশ নিয়েছে। ভিসি বাংলোর সামনে থেকে শুরু হয়েছে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে আবার সেখানে এসে শেষ হয়েছে।
বৈশাখী সাজের শোভাযাত্রার সামনে-পেছনে ও মাঝে বাদ্যের তালে, তালে চলেছে নৃত্য, ছাত্র-শিক্ষকের হাতে, হাতে ছিল বাহারি মুখোশ। পুষ্পাকৃতির চরকি, টেপা পুতুল ও পাখির শিল্পকাঠামো শোভাযাত্রাকে দিয়েছে বাঙালির চিরায়ত আবহ।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আহমেদুল বারী, রেজিস্ট্রার ড. মো. হুমায়ুন কবীর, প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান, পরিচালক (ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা) অধ্যাপক ড. তপন কুমার সরকার, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. শেখ সুজন আলী, সাধারণ সম্পাদক তুহিনুর রহমান, পহেলা বৈশাখ উদযাপন কমিটির সভাপতি ড. এমদাদুর রাশেদ সুখন, সদস্য সচিব ড. সিদ্ধার্থ দে, কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি প্রকৌশলী জোবায়ের হোসেন, সাধারণ সম্পাদক রামিম আল করিম, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবুসহ শিক্ষক-কর্মকর্তা ও ছাত্র-ছাত্রীরা।
এরপর ছাত্র, ছাত্রীরা পহেলা বৈশাখের নাচ, গান, আবৃত্তিতে অংশ নিয়েছেন।
রমজানের বৈশাখী উৎসব সরকারি সিদ্ধান্তে দুপুরে বৈশাখী পালা নাটক ও উদিচীর পরিবেশনায় শেষ হয়েছে।
সন্ধ্যায় চৈত্রসংক্রান্তিতে গাহি সাম্যের গান মঞ্চের সামনে ফানুস উৎসব হয়েছে। উপাচার্য উৎসবের উদ্বোধন করেছেন।
ওএস।