আইইউবি, লুম্বিনির শিক্ষা সহায়তা পাবে বান্দরবান ইউনিভার্সিটি
সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা সহযোগিতা উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ‘বান্দরবান ইউনিভার্সিটি’। ২০১৯ সালে শুরু।
পার্বত্য তিনটি জেলা-বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এবং চট্টগ্রাম বিভাগের রঙ্গুনিয়া, সাতকানিয়া এবং আশপাশের উপজেলাগুলোর মোট ২৫০ জন ছাত্র, ছাত্রীকে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান করা হচ্ছে এখানে। ধীরে ধীরে ছাত্র, ছাত্রী ও শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ছে।
বান্দরবান পৌর শহরে আছে তাদের অস্থায়ী ক্যাম্পাস। তিনটি অনুষদ আছে। কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, ব্যবসায় প্রশাসন, ইংরেজিসহ কটি বিষয়ে পড়ানো হচ্ছে।
বান্দরবান জেলা সদরের প্রবেশপথে সূর্যালোকে ১শ একর জমিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস তৈরি করা হচ্ছে।
আইইউবি-ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ এই দেশের প্রধান বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের কৃষ্টি, কালচার তুলে ধরতে ও তাদের রক্ষা এবং উন্নত করতে নানা ধরণের গবেষণা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছে এই কৃতি শিক্ষক, গবেষক ও ছাত্র, ছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে।
২০০৯ সালে শুরু করা লুম্বিনি লিমিটেড তিন পার্বত্য জেলায় একমাত্র শতভাগ রপ্তানীমুখী তৈরি পোষাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। নিটওয়্যার সোয়েটার তৈরি প্রধান পণ্য। আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬শ শ্রমিক কাজ করেন। পোষাক রপ্তানী করা হয় ইউরোপের বাজারে। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়াম প্রধান ক্রেতা দেশ।
এছাড়াও সামাজিক উন্নয়ন কাজে জড়িয়ে আছে লুম্বিনি লিমিটেড। তাদের বান্দরবান অঞ্চলের সুপেয় পানির সঙ্কট দূর করতে একটি বিরাট পানিবিশুদ্ধকরণ প্রকল্প স্থাপন করা হয়েছে। এই প্রকল্পের বিশুদ্ধ পানি খাচ্ছেন ২শ ৫০টি পরিবার। এর বাদেও লুম্বিনির বিশুদ্ধ পানি স্থানীয় বাজারগুলোতে এবং বিদ্যালয় ও মহামহাবিদ্যালয়সহ অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে দেওয়া হয়।
লুম্বিনি লিমিটেডের কর্মরত শ্রমিক পরিবারগুলোর ছেলে, মেয়েদের পড়ালেখার সুযোগ তৈরি করতে কারখানা কমপ্লেক্সে এই সদাশয় মালিকপক্ষ একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরি করে শিক্ষকদের সব খরচ ও বিদ্যালয়ের আর্থিক যোগান প্রদান করে চলেছেন।
বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় ও তৈরি পোষাক প্রস্তত প্রতিষ্ঠান লুম্বিনি লিমিটেডের সঙ্গে ভাষা এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশের ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি)।
১৩ এপ্রিল,২০২২ সালে বান্দরবান পার্বত্য জেলা সদরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হয়েছে।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, এমপি।
নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আইইউবি'র উপাচার্য অধ্যাপক ড. তানভীর হাসান, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এফ. ইমাম আলী ও লুম্বিনি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ মো. সুলতান উদ্দিন ইকবাল সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছেন।
আরো উপস্থিত ছিলেন লুম্বিনি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহাদাত মোশাররফ খান।
প্রথম সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষর হয়েছে আইইউবি ও বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে। তাতে লেখা আছে, “বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলার নৃ-গোষ্ঠীর লুপ্তপ্রায় ভাষাগুলো সংরক্ষণে আইইউবি'র সেন্টার ফর এনডেনজারড ল্যাংগুয়েজেস’র সঙ্গে যৌথভাবে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করবে বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়। এই সেন্টারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাশিন সেন্টার ফর মাল্টিলিংগুয়াল এক্সেলেন্স’র অন্তভুক্ত একটি আলাদা বিভাগ। এর বাদেও বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা উন্নয়নে সহযোগিতা করবে আইইউবি।”
আরেকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে আইইউবি, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় ও লুম্বিনি লিমিটেডের।
তাতে বলা হয়েছে, ‘বান্দরবানভিত্তিক তৈরি পোষাক প্রস্ততকারী প্রতিষ্ঠান লুম্বিনি লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের দইুজন বাছাইকৃত, সেরা নারী শিক্ষার্থী প্রতিবছর দুটি সেমিস্টার ঢাকার আইইউবি ক্যাম্পাসে পড়বেন। তাদের অন্তত একজন শিক্ষার্থী কোনো নৃগোষ্ঠীর সদস্য হতে হবে।’
‘২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শুরু হবে এই শিক্ষা সহায়তা কার্যক্রম। চলবে এই চুক্তির অধীনে ২০২৭ সাল পর্যন্ত।’
‘প্রতি বছর বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষার্থী লুম্বিনি লিমিটেডে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পাবেন। এই খাতে বছর প্রতি জনপ্রতি শিক্ষার্থীর জন্য আড়াই লাখ টাকা করে মোট পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দেবে লুম্বিনি।’
এই অনন্য কার্যক্রমে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেছেন, “আমাদের পার্বত্য অঞ্চলের ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার আগ্রহ রয়েছে। সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটানো তাদের অনেকের পরিবারের পক্ষেই কঠিন হয়েছে। শিক্ষা যদি তাদের ঘরের দুয়ারে পৌঁছানো যায়, তাহলে তারা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারবে। এজন্যই বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছে। আমরা যারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি, আমাদের আইইউবি'র মতো দেশের প্রধান বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইইউবির সঙ্গে শিক্ষা-সহযোগিতা অভিজ্ঞতা বিনিময় করে সঠিকভাবে এগুনো সম্ভব হবে।”
আইইউবির ভিসি অধ্যাপক ড. তানভীর হাসান বলেছেন, ‘মাতৃভাষাই শিক্ষার মূল বাহন হওয়া উচিত। সরকার ইতোমধ্যে মারমা, চাকমা ও ত্রিপুরা ভাষায় শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেছেন। নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এর বাইরেও আমাদের নৃগোষ্ঠীগুলোর অনেক ভাষা এখনো তাদের শিক্ষাদানের মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। ফলে ভাষাগুলো ধীরে, ধীরে হারিয়ে যেতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা। এই ভাবনা থেকে আইইউবি লুপ্তপ্রায় ভাষাগুলো নিয়ে কাজ করাতে সেন্টার ফর ইন ডেনজার্ড ল্যাংগুয়েজেস প্রতিষ্ঠা ও কাজ করছে।’ তিনি জানিয়েছেন, আদিবাসীদের বান্দরবানে আইইউবির এই কার্যক্রম আগামীদের আলো হবে।
বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এফ. ইমাম আলী বলেছেন, ‘আইইউবি অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা সমঝোতা চুক্তিতে আমাদের বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় ধারণ করবে। আমরা শুধু শিক্ষার্থীদের সনদপত্রই দেব না, তাদের দক্ষ মানবসম্পদ করব। আমরা চাই তাদের মধ্যে মানবিক গুণাবলীরও যেন বিকাশ ঘটে। তাতে তাদের সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতাও তৈরি হবে।’
লুম্বিনি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ মো. সুলতান উদ্দিন ইকবাল বলেছেন, ‘সমঝোতা স্মারকগুলোতে আমরা বান্দরবান জেলায় নারীর ক্ষমতায়নে নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পেরেছি।’
ওএস।