চবির ক্যাম্পাস যেন ময়লার ভাগাড়
যেখানে-সেখানে পড়ে আছে কফ-থুতু, পান-বিড়ির উচ্ছিষ্টাংশ, ফলমূলের খোসা, কাগজ, প্লাস্টিকের ব্যাগ, পানির বোতল, চিপসের প্যাকেটসহ বিভিন্ন খাবারের প্যাকেট বা পলিথিন।
ক্যাম্পাসে নির্ধারিত জায়গা ও পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকায় যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ফলে পুরো ক্যাম্পাস যেন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ক্যাম্পাসে ঢুকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বার থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পয়েন্টে এমন দৃশ্যই চোখে পড়বে।
এদিকে আবর্জনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য করা বিভিন্ন ড্রেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে মশার উপদ্রব বেড়ে গিয়েছে। বিভিন্ন সময় প্রশাসন থেকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আশ্বাস দিলেও গত কয়েক বছরে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
অপরদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের জন্য দৃষ্টিনন্দন ফটক নির্মাণ করা হলেও সামনে গড়ে উঠছে আবর্জনার স্তূপ। বছরের পর বছর এমন নোংরা পরিবেশে চলছে সকল কার্যক্রম। কিন্তু এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই কর্তৃপক্ষের।
তা ছাড়া ময়লা পরিষ্কারের জন্য পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নকর্মী না থাকায় আবর্জনার স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ফলে দূষিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন রাখার লক্ষ্যে কয়েকটি সংগঠন বা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্তরিকতা থেকে কাজ করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কখনো কোনো কাজ বা উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি আবাসিক হল, ১০টি অনুষদ ও ১টি প্রশাসনিক ভবনসহ আশপাশের স্থানগুলোতে ময়লা ফেলার কোনো সুব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া প্রতিদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে প্রায় হাজার হাজার লোকের পদচারণ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২১০০ একরের এই ক্যাম্পাসে। কিন্তু প্রশাসনের উদ্যোগে কোনো ডাস্টবিন নেই ক্যাম্পাস এরিয়ায়। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও কোনো উদ্যোগ মেলেনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনুষভুক্ত ক্যাফেটেরিয়া, সকল অনুষদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়কের দু-পাশে, শহীদ মিনারের পাশে এবং আবাসিক হলগুলোর পাশে ময়লার স্তূপ হয়ে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ এবং বাণিজ্য অনুষদের পেছনে ও সামনে ময়লার স্তূপ পড়ে আছে। আবার বিভিন্ন স্থানের আবর্জনা সরিয়ে নেওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কয়েকদিন পরে সেটি পুড়িয়ে ফেলতে হয়। এর ফলে ক্যাম্পাসের বায়ু দূষণের মাত্রা বাড়ছে। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আবর্জনা থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।
পরিবেশ দূষণের ফলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন হেপাটাইটিস ‘বি’, হেপাটাইটিস ‘সি’, যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়ার মতো রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
একাধিক শিক্ষার্থী ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, আমাদের সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাস আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এটা মানতে পারছে না। ক্যাম্পাস এখন পিকনিক স্পটে পরিণত হয়েছে। এ কারণেই ক্যাম্পাস বেশি নোংরা হচ্ছে। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না।
তবে ক্যাম্পাসে এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকায় বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুশান্ত বসাক বলেন, 'আমার কাছে প্রথমে মনে হয় এটা সচেতনতার অভাব। ব্যবস্থাপনারও অভাব আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী হয়েও যদি পরিবেশ রক্ষার ন্যূনতম জ্ঞান না থাকে তাহলে আমাদের কাছ থেকে কী আশা করা যায়। আরেকটা বিষয় হলো আমাদের প্লাস্টিকের বিকল্প চিন্তা করতে হবে। যা সহজে পচন যোগ্য। এক্ষেত্রে আমরা পাটকে প্রাধান্য দিতে পারি। তাহলে আমি মনে করি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হবে না।'
বাংলা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সৌরভ পাল বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন নেই। সেজন্য এই নোংরা পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। তা ছাড়া বেশি বেশি সেমিনারের আয়োজন করা উচিত। পরিবেশ রক্ষার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর ভেতরে কিছু না কিছু সচেতনতা বোধ আছে। তারা জানা সত্ত্বেও যত্রতত্র ময়লা ফেলে। এখানে মানসিকতার পরিবর্তন করা দরকার। দেয়ালে বা বিভিন্ন জায়গায় চিকা মেরে সবার ভেতরে সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে হবে। নোংরা, ময়লা, আবর্জনা থেকে এই সুন্দর ক্যাম্পাস রক্ষা করতে হলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর এস এম মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি পারমানেন্ট ডাস্টবিনের জন্য প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করব। কীভাবে ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যায়। আমরা সবাই শিগগিরই মিটিং করব এটা নিয়ে।
পরিচ্ছন্নতা কর্মীর নিয়োগের ব্যাপারে তিনি বলেন, 'আমাদের যথেষ্ট পরিচ্ছন্নতা কর্মী আছে। কিন্তু তারা ঠিকঠাক মতো কাজ করে না। আমি প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি একটা সমাধান আসবে।'
পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংখ্যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী ছৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজলের কণ্ঠে ভিন্ন সুর। তিনি বলেন, 'আমাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংকট আছে। বলা যায় অপ্রতুল। এ বিশাল ক্যাম্পাসে আমার মাত্র ৪ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী আছে। আর কোথায় কী আছে আমি জানি না। ডাস্টবিনের ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমার সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা করা হয়নি বা লিখিত অভিযোগও আসেনি।'
তবে ঢাকাপ্রকাশের সাথে কথা হওয়ার পর তিনি বলেন, আমি প্রক্টর অফিসের সঙ্গে দুয়েকদিনের মধ্যে মিটিংয়ে বসব। এর একটা সুষ্ঠু সমাধানের জন্য।
টিটি/