ছাত্র ও কর্মচারীর মারামারি, কর্মবিরতিতে সব কর্মচারী
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসচালক ও ছাত্রদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়েছে। তাতে আহত হয়েছেন প্রতিবাদকারী ছাত্র। তাকে হামলা করার জেরে দুজন বাস চালকও আহত হয়েছেন। তবে এই মারামারির বিচারের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে গিয়েছেন কর্মচারীরা। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো গাড়ি চলছে না। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার বন্ধ রয়েছে। ক্লাস ও পরীক্ষায় সময় মতো অসতে পারছেন না তিন দিন ধরে ছাত্র, ছাত্রী ও শিক্ষকরা।
জানা গিয়েছে, ৩ এপ্রিল রবিবার বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র, ছাত্রীদের নিয়ে বাসটি ক্যাম্পাস থেকে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী যাবার পথে ঘোনাপাড়ার পাশের দোলা সিএনজি পাম্পের কাছে অনাকাংখিত ঘটনাটি ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদশী একজন শিক্ষার্থী বলেছেন, বাসটির চালক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শেখ আহসান ফয়সালের ঝগড়া থেকে মারামারি হয়েছে ও তারা দুজনেই আহত হয়েছেন।
আহত ছাত্র শেখ আহসান ফয়সাল বলেছেন “আমি হোন্ডা নিয়ে ঠিক সাইডে ছিলাম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসটির চালক রং সাইডে গাড়ি চালিয়ে এলেন। আমি প্রতিবাদ করলে তিনি মা-বাবা তুলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। কে গালি দিল জানতে চাইলে তিনি আমার কলার ধরে টান দিয়ে মা-বাপ তুলে গালি দিতে থাকেন। ফলে আমিও তাকে মেরেছি। তখন আমার চাবির গোছা তার মুখের ওপরের দিকে লাগে। এর ফলে কেটে যায়। তখন সেখানে উপস্থিত অন্য গাড়ির চালকরা আমাকে একত্রে মারধর করেছেন।’ সেখানেও তাদের সবার মধ্যে মারামারি হয়েছে।
এরপর সেদিন সন্ধ্যা সাতটায় এই ঘটনার জেরে ছাত্ররা গাড়ির চালকদের মুখোমুখি হন। তাদের মধ্যে আবার ঝগড়া বাঁধে। এরপর মারামারি হয়।
তারপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার মোরাদ হোসেন স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশ জারি হয়। তাতে বলা হয়েছে-‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শেখ আহসান ফয়সালের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত ঘটনার প্রেক্ষিতে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ড্রাইভার রবিউল ইসলাম ও আতিকুর রহমান ঝন্টুকে দায়িত্ব থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। কমিটির সুপারিশক্রমে বিধি মোতাবেক পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এই ঘটনার প্রতিবাদে ও বাস চালকের উপর হামলার বিচারের দাবির নামে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে গিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারি সমিতি। তারা বিবৃতিতে বলেছেন, “এতদ্বারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারি সমিতির সকল সদস্য ও মাস্টার রোল এবং দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কর্মরত সব কর্মচারীদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, গতকাল ড্রাইভার জনাব রবিউল ইসলামকে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী জনাব ফয়সাল শেখ বিকাল ৪টার টার সময় চরম বেয়াদবীসহ গাড়ির চাবি দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেছেন। রাত ৭.৩০ মিনিটে ড্রাইভার জনাব মো. বাহারুল শেখকে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র নামের সন্ত্রাসী জনাব মোর্শেদ তার গ্যাং নিয়ে মোবাইলে ফোন করে পূর্ববর্তী ঘটনা জানার জন্য বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যান। শেখ রেহানা হলের পাশের মোড়ে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী নামের সন্ত্রাসী নিয়ে অতর্কিত হামলাসহ বেধড়ক মারপিট করেছেন। এমনটি প্রমাণ করে, সন্ত্রাসী দলটি বাহারুলকে প্রাণে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। অথচ আমরা শিক্ষার্থীদের সন্তানের মতো দেখি। তাদের কাছ থেকে এহেন জঘন্য ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আশা করিনি। ফলে এই ধরণের অপরাধের তীব্র নিন্দা জানাই। সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি প্রদান না করা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সমিতির ‘কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি’ অনির্দিষ্টকাল অব্যাহত থাকবে। সংশ্লিষ্ট সব কর্মচারীকে সক্রিয় অংশগ্রহণে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হল।”
তাতে গেল তিনদিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রও বন্ধ। বাস চলাচল ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে ছাত্র, ছাত্রীরা। হলের বাইরের দূরের ছাত্র, ছাত্রীরা ক্লাসে আসতে পারছেন না। সঠিক সময়ে পরীক্ষাও দিতে পারছেন না। লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়ালেখা করতে পারছেন না।
সব কর্মচারীর একত্রে কর্মবিরতির ঘটনায় ভোগান্তিতে পড়া পরিসংখ্যান বিভাগের অন্যতম ছাত্র সাইমুন হাসান রাব্বি বলেছেন, ‘রোজার মধ্যে এমন কাজ অনাকাংখিত। দ্রুত সমাধান হোক, আমরা এ ভোগান্তি থেকে মুক্তি চাই।’
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারী সমিতির সভাপতি তরিকুল ইসলাম বলেছেন, “এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাব। তবে উপাচার্য স্যার আমাদের জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব নিয়ম আছে, সে অনুসারে দোষীদের বিচার করা হবে।”
বাস চালকদের ছাত্রদের সঙ্গে মারামারি এবং কর্মবিরতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক তাপস বালা মোবাইলে বলেছেন, “আজ (৫ এপ্রিল) সকাল থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. কিউ.এম. মাহবুবব স্যারের সঙ্গে এ বিষয়ে মিটিং হলেও এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি।’ তবে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি হচ্ছে জানিয়ে বলেছেন, “আগামীকালের (আজ ৬ এপ্রিল) মধ্যে কোনো সমাধান না হলে যান চলাচল সচল রাখাতে আমরা বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
ওএস।