মধ্যম আয়ের বাংলাদেশে উদ্ভাবনের চ্যালেঞ্জ নিতে হবে
আমাদের দেশ নানামুখী চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছে। এখানে অর্থনীতি, সুশাসন, রাজনীতি- সব জায়গায় একটি সংকট যেমন স্পষ্ট, তেমনি এর সঙ্গে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ একত্র হয়ে সমস্যা আরও তীব্রতর হচ্ছে। কিন্তু এসব সমস্যা তো আমাদেরই সমাধান করে এগোতে হবে। তাই এর মধ্যেও সমাধানমুখী চিন্তা লালন করা, সফলতা থেকে শিক্ষা নেওয়া, সংকট মোকাবিলায় নিজের মধ্যে প্রেরণা তৈরি করা- সব মিলিয়েই আমাদের ভাবতে হবে।
পরিবর্তন একটি নিত্য প্রক্রিয়া। অর্ধশতাধিক বছর ধরে আমরা নানামুখী পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। আগের সমস্যা আর এখনকার চ্যালেঞ্জ এক নয়। পুরোনো ও নতুন চ্যালেঞ্জ সমাধানে নিজের মধ্যে এক ধরনের সংকল্প ও পরিবর্তনের তাগিদ অনুভব করা জরুরি। অন্যদের মধ্যেও এই তাগাদা তৈরি করা জরুরি। সংকট সমাধানে সে জন্য উদ্ভাবনী চিন্তা, সুনির্দিষ্ট কৌশলও এর বাইরে নয়। ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষের জীবন পরিবর্তন করার চ্যালেঞ্জ এখনো স্পষ্ট। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও নারীর অধিকারসম্পন্ন সুন্দর সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখতে হবে।
বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন একটি সংকট। সুপেয় পানির সংকট কোথাও কোথাও বড় সমস্যা। নগর দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর উন্নম্নয়ন- সব ক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করছি এবং এগোচ্ছি। সব সমাধান আমরা জেনে গেছি- এমন আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। প্রতিনিয়ত কাজ করে যাওয়া এবং তার কার্যকারিতার পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া মানুষের কর্মসংস্থানেও এটি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। আড়ংয়ের উদাহরণ নেওয়া যায়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ যেটি ঘটেছে সেটি হলো, গ্রামীণ নারীদের সুযোগ তৈরি।
বলাবাহুল্য, সময়ের আলোকে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। ক্ষুদ্রঋণ এখন আর সেই অর্থে ক্ষুদ্র নেই। একটা সময় ছিল, যখন গ্রামের নারীদের অল্প কিছু ঋণ দেওয়া হতো এবং কিস্তিতে তারা সেটি শোধ করতেন। এখন ক্ষুদ্রঋণের কয়েকটি ধরন তৈরি হয়েছে। যারা কিছুটা অবস্থাপন্ন, ব্যবসার জন্য তাদের ঋণ দেওয়ার কার্যক্রম হলো প্রগতি। প্রগতি এসএমই অর্থাৎ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ দেয়। তারা প্রয়োজন অনুসারে অর্থ পেয়ে থাকেন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম ইউপিজি-আল্ট্রা পুওর গ্র্যাজুয়েশন। অর্থাৎ যারা একেবারে হতদরিদ্র তাদের দারিদ্র্য থেকে বের করার কার্যক্রম রয়েছে। ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আমরা লক্ষ্য করছি।
আগামীতেও সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থার যথাযথ ভূমিকার প্রয়োজন রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সরকারের দিক থেকে আগ্রহ লাগবে। যেমন সরকার শিক্ষা খাতে ব্যাপক ব্যয় করছে। তারপরও সেখানে সমস্যা রয়ে গেছে। বিশেষ করে শিক্ষক প্রশিক্ষণের কথা বলা যায়। সরকার চাইলে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবস্থা করা উচিত। নগর স্বাস্থ্য, বিশেষ করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় আমাদের যে সাংগঠনিক দক্ষতা রয়েছে, সেটি কাজে লাগাতে পারে। আবার বিচার ব্যবস্থায় মামলার যে জট রয়েছে, সেখানে মামলাজট কমাতে এডিআর তথা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে উন্নয়ন সংস্থাগুলোকেও কাজে লাগাতে পারে। আমরা জানি, বিমানবন্দরে আমাদের বিশেষ অভিবাসী কর্নার রয়েছে। সেখানে কোনো অভিবাসী সমস্যায় পড়লে সরকারের দায়িত্বশীলরাই সমাধানের জন্য আমাদের কাছে পাঠান। ফলে উন্নয়ন সংস্থাগুলো এক ধরনের ভূমিকা রাখছে। সরকার নিয়ন্ত্রণমূলক মানসিকতা না নিয়ে, তাদের উপর আস্থা রেখে কাজে লাগালে নিঃসন্দেহে আরও ভালো উদাহরণ তৈরি হবে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের পরিবর্তনে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেরও ব্যাপক অবদান রয়েছে।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান: নির্বাহী চেয়ারম্যান, পিপিআরসি ও চেয়ারম্যান, ব্র্যাক
এসএন